সারারাত বাতাসের ঝড় বয়েছিলো আমাদের কটেজের উপর। হটাত হটাত ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো বাতাসের শব্দে।
পরদিন ভোর হলো, বাইরে কি চলছিলো তার বিন্দুমাত্র ও ধারনা ছিলোনা আমাদের। একটু বাইরে বের হয়ে দেখি জাউবারি থেকেই দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনঝঙ্গা ও এভারেস্ট।
কিন্তু এরকম শীত আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি, ১ মিনিটের মধ্যে হাত জমে ফ্রিজ, নাক দিয়ে পানি ছুটেছে! অস্বাভাবিক শীত আর সাথে ঘাতক হিসেবে বাতাস!
জাউবারি তে সূর্য উঠার পর আবহাওয়া টা কিছুটা সহন্সিলতায় এসেছিলো, হোটেলের দরজায় বসে কিছুক্ষণ রোদ পোহায়া নিলো সবায়।
আরো একটি বড় দিনের শুরু। শুরু করলাম হাটা, রাতের ঘুমে অনেকের ই ব্যাথা যা ছিলো তা কমেছে। প্রথমে ৩ কিলোমিটার নামতে হয়েছে শুধু, সকাল ৯ টা নাগাদ আমরা পৌছাই গারিবাস গ্রামে।
গারিবাস থেকে আবারো শুরু শুধু উপরে উঠা! সান্দাকফু এখান থেকে আরো ১২ কিলোমিটার দূরে। এখান থেকে প্রথমে শুরু হয় কিছুক্ষণ ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেকিং। এটা রেড পাণ্ডা দের সংরক্ষিত এলাকা!
অনেক পথ উঠতে গিয়ে ইকবাল ভাই এর রগ এ আবারো টান লেগেছে। তারপর থেকে উনারে নিয়ে আস্তে আস্তে এক পা দু পা করে এগুতে হচ্ছিলো সবার।
ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাটতে হয়েছে আরো বেশ কিছুক্ষণ। বেলা ১১ টায় পাই ছোট একটা গ্রাম কাইয়াকাটা। এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিলাম সবায়।
এখান থেকে আবারো শুরু হাটা, পরবর্তী টার্গেট দুপুরের আগে কালিপোখ্রি পৌঁছানো। কালিপোখ্রি নেপালের একটি গ্রাম,যার নাম হয়েছে লেকের নামে। এবারে অসাধারণ কিছু আকা বাকা পথ পেয়েছিলাম সামনে। পথ ই মনে হয় সকল ভালো লাগার বিষয় বস্তু।
মেঘের ভিতর দিয়ে চলাচল শুরু হয়ে গেছে,এতো উচ্চতায় আমরা পৌঁছে গেছি যেখানে মেঘের ভেলা ভাসে!
অবশেষে দুপুরে আমরা পৌছাই কালিপোখ্রি গ্রামে ।
কালিপোখ্রি লেক নিয়ে একটা রহস্য আছেঃ
ইলেকের পানি কখনো বরফ হয় না.. চারদিকে বরফ পরলেও লেকের পানি সব সময় তরল.। লেকের পানিতে কোন ময়লা পরে না.. চারপাসে গাছ থাক্লেও সেই পাতা লেকের পানিতে দেখা যায় না..অথবা পরলেও পাখি তা ঠোটে করে তুলে ফেলে দেয়। আমার এই টুকুই মনে আছে। তবে নিজের চোখে দেখা হল আশেপাশে বরফ পরেছিল কিন্তু লেকের পানি ছিল তরল। ( লেখাঃ মনিরা ইয়াসমিন সেতু আপু)
দুপুরের খাবারের জন্নে এখানে চাওমিন ছাড়া আর কিছুই পাইনি, আমি তো আগেই জানি দুনিয়ার অখাদ্দের মধ্যে চাওমিন হলো একটা। তাই নিজের জন্নে না বলে বাকি সবার জন্নে অর্ডার দিয়েছিলাম!
১ জন বাদে বাকি কেও গলাধকরন টাও করতে পারেনি! সান্দাকফু এখান থেকে আর মাত্র ৬ কিলোমিটার! আমাদের গাইড বহু চেষ্টা করেছিলো আমাদের ক ভিখে ভাঞ্জাং এ রাতে রাখার জন্নে। কিন্তু আমি ছিলাম আমার সিধান্তে অনড়। আমরা আজ ই সান্দাকফু জাবো,হাতে এখনো অনেক সময় বাকি আসে।
হাটা শুরু করলাম আবারো, হাটতে হাটতে প্রায় শেষ বিকাল। ঠিক তখনই সান্দকাফু আর ১ কিলোমিটার এর মাইল ফলক। সবার যত ক্লান্তি ছিলো নিমিষেই দূর। আবারো নতুন উদ্যমে শুরু। বিকেল ৪ঃ৩০ টায় পৌছাই সান্দাকফু ০ কিলোমিটার এ । যদিও এটা শুধু মাত্র সান্তনা।
এখান থেকে আরো প্রায় ২০ মিনিট উপরে উঠার পর মূল সান্দাকফু এরিয়া তে পৌছাতে হয়। সন্ধায় পৌঁছেছি সান্দাকফু তে, মারাত্মক শীত আর বাতাস। দ্রুত ABC Trekkers Hut B তে আমরা উঠি। শীতের চোটে আর বাইরে বের হতে পারিনি।
সান্দাকফু তে রাতে যা খেয়েছিলাম, তা নিঃসন্দেহে আমার জিবনের শ্রেষ্ঠ খাবার!
খিচুরি,আলুভাজি,সসা,ফুলকপি! আহ এখানে বসে এই খাবার খেতে পারবো কল্পনাও করিনি। রাতে জলদি ঘুমিয়ে পরি,কারন পরের দিনের জন্নে প্রস্তুত হতে হবে।
পরদিন সকাল! সূর্য উঠার আগেই বের হয়ে গেছি। যা দেখেছি তা নিজেকে বিশ্বাস করাতেও কস্ট হচ্ছিলো।
হোচট একটা খেয়েছিলাম ইকবাল ভাই এর আজ আবার ২১ কিলোমিটার ট্রেক করার অবস্থা নেই দেখে! সবার জন্নে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো সান্দাকফু থেকেই অন্য পথে নামার! ১০ টা পর্যন্ত ছিলাম সান্দাকফু তে,নিচে নামার সময় কিছুতেই মন চাচ্ছিলো না কাঞ্চন ঝঙ্গা কে ছেড়ে যেতে!
আগামি পর্বে করবো সেপি যাওয়ার গল্প !
চলবে ....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৯