ছোটবেলা থেকেই মায়ের অনেক আজ্ঞাবহ ছিলাম আমি ৷ মা দেখতো সারাদিন স্টার প্লাস এর হিন্দী সিরিয়াল বাধ্যগত সন্তান হিসেবে পাশে বসে বসে আমিও দেখতাম! তখন থেকেই পরিচয় শিমলার সাথে ৷ শিমলা ছিলো সিরিয়াল এর জাতীগত মধুচন্দ্রিমার জায়গা ৷
তখন অবশ্য শিমলা শহরটাকে অধরাই মনে হতো!! সেদিনও যে শিমলা পৌছেছিলাম নিজেকে বিশ্বাস করাতে অনেক টা সময় লেগেছিলো ৷
শিমলার নতুন বাস স্টেশন থেকে আগামী ৩ দিনের জন্যে একটা জ্বীপ ভাড়া করে নেই আমরা ৷ জ্বীপে চড়ে হোটেলের কাছে এসে নামি যখন তখন শিমলা শহরে ৮ টা বাজে ৷
ততক্ষনে প্রথম হোচট টা খেলাম, বাস স্টেশন এই ট্যুরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাগ টা ফেলে এসেছি ৷ সেই ব্যাগেই তাবু,স্লিপিং ব্যাগ আরও অনেক কিছু ৷ দুজন চলে যায় আবারও বাস স্টেশন এ, আমরা হোটেলে চলে যাই ৷ হোটেলের মালিক আশ্বাস দিয়েছিলো ব্যাগ হারাবে না বলে, ঠিক সেরকম টাই হয়েছে ৷ ব্যাগ তার অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র হেরফের হয়নি ৷
হোটেলের ব্যালকনি থেকে পুরো শহরটাই দেখা যায়, অসাধারণ লাগছিলো সবকিছু দেখতে ৷
সকাল ৬ টার সময় উঠে গেছি ঘুম থেকে ৷ স্নিগ্ধ এক শহর শিমলা, ঠান্ডা হিম বাতাস ৷ চারপাশে পাহাড়, ৭০০০ ফিট উপরের শহর ৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিলস্টেশন শিমলা ৷ পরিষ্কার একটি শহর, ভারতে এটি আমার দ্বিতীয় হিলস্টেশন এ আসা ৷ হিলস্টেশন গুলোর বৈশিষ্টই অন্যরকম, ভালোলাগার মতো, প্রেমে পরার মতো ৷
চলে গেলাম শিমলা রেলওয়ে স্টেশন এ ৷ কালকা থেকে প্রতিদিন পাহাড়ী আকা বাকা পথ পেরিয়ে টয় ট্রেন চলে শিমলা পর্যন্ত ৷ স্টেশন টা এমন যায়গায় করা যেখান থেকে শহরের চারপাশেই দেখা যায় ৷ স্টেশন টাও আশ্চর্যজনক পরিষ্কার ৷ যেদিকে তাকাই সেদিকেই স্বপ্ন, মনে হচ্ছিলো এত এত স্বপ্ন কেনো চারপাশে!
স্টেশন থেকে ফিরে চলে যাই শিমলা শহরের বিখ্যাত মল রোড এ ৷ মল রোড কে ঘিরেই শিমলার সকাল দোকান ৷ মল রোড থেকে একটু সামনে হলো স্ক্যানডাল পয়েন্ট ৷ স্ক্যানডাল পয়েন্ট মল রোড ও দা রিজ চার্চ এর রোড একত্রিত করেছে ৷ শিমলার এই যায়গাটিতে এসে প্রতিটি মানুষ বাধ্য একে ইউরোপ এর সাথে তুলনা করতে ৷ অন্যরকমের সৌন্দর্য, স্থাপনা গুলোতে একধরনের আভিজাত্যের ছাপ ৷ এখানে ছিলো মাহাত্না গান্ধী পয়েন্ট, যেখান থেকে শহরের নিচু প্রান্ত গুলো দেখা যায় ৷
১১ টা দিকে আমরা রওনা দেই কুফরীর পথে ৷ আমাদের সাথে আছে দেবেন্দ্র, আমাদের ড্রাইভার ৷ কুফরীর পথে যেতেই পরে গ্রীন ভ্যালি নামক এই যায়গা টি ৷ যেদিকে তাকাই শুধু পাইন গাছের বন ৷
শিমলা থেকে কুফরীর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার ৷
পথেই আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নেই, ভ্রমনের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার ছিলো এটি ৷
কুফরী মূলত এডভেন্চার ভ্যালি ৷ সেখানে গিয়েই আমরা ঘোড়া ঠিক করে নেই ফাগু ভ্যালি তে যাওয়ার জন্যে ৷ সবার জীবনের প্রথম ঘোড়ায় চড়া এটি ৷ পুরো রাস্তায় কাদা মাখা, ঘোড়া উপর দিকে উঠছিলো ৷ প্রথমে অতোটা কমফোর্ট রাইড হয়নি ৷ ফাগু ভ্যালি পৌছাতে সময় নিয়েছিলো ৩০ মিনিট ৷
ফাগু ভ্যালি তে গিয়ে একটি জ্বীপে করে আনরা চলে যাই এডভেন্চার পয়েন্টে ৷ সবার প্রথমে ছিলো যিপলাইন৷ আমাকে দিয়েই শুরু, পাহাড়ের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়া!! অসাধারন লাগছিলো, একে একে সবায় যিপলাইল শেষ করে চলে যাই আমরা ভ্যালি ক্রসিং এ ৷ ভ্যালি ক্রসিং টা সম্পূর্ন পেরেছিলো মাত্র ৩ জন, আমি অর্ধেকের একটু বেশী গিয়েই চলে এসেছিলাম ৷
ভ্যালি ক্রসিং শেষে চলে যাই রোপ ক্লাইম্বিং এ, যেটাতে রোপ ক্লাইম্ব করার পর একটা ছোট ফ্রি ফল!! এটাতে সক্ষমতার হার আরও কম মাত্র ২ জন আমরা সম্পূর্ন শেষ করতে পেরেছিলাম, বরাবরের মতোই আমি পারিনি
তারপর ছিলো ব্যালেন্স রোপ ক্রসিং, সেটা তো আমি করিইনি ৷ বাশ আর দড়ির সমন্বয়ে একটা ব্রীজ ছিলো, যেটা পেরিয়ে ৮০ ফিট এর একটা ফ্রি ফল ৷ এটাতে সফল হওয়া ছাড়া উপায় নেই,কেননা ব্রীজ এ চড়লে ফিরার পথ ফ্রি ফল এই শেষ হয় ৷ সবগুলো এক্টিভিটি শেষ করতে করতে প্রায় শেষ বিকেল ৷
জ্বীপের কাছে ফিরে এসে অবাক, দূরে বরফ ঢাকা হিমালয় দেখা যাচ্ছে!! ঐ দূরে উত্তরাখান্ড এর গারহাল হিমালয় রেন্জের সর্বোচ্চ পিক নান্দা দেবী(ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) দেখা যাচ্ছিলো ৷
ফিরার পথে ঘোড়ায় চড়ে ভালোই লাগলো, তারেক ভাই তো এমন ভাবে ঘোড়া চালিয়েছে যে পুরো কুফরীর মানুষ বাহ বাহ দিচ্ছিলো!! তারেক ভাইয়ের ঘোড়ার ছুটে চলা দেখে রেজওয়ান ভাই এর ধপাস!! আর কাদায় গড়াগড়ি রেজওযান ভাইয়ের! !
স্বপ্নীল একটা দিন পার করে আমরা রওনা দিলাম মানালীর পথে, গাড়ী ছুটছে মানালী ৷ জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনের অপেক্ষায় ♥ ৷
আগামী পর্বে থাকবে কুল্লু ও মানালীর গল্প ৷
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৬