পুরো ভ্রমনের ভিডিওঃ Click This Link
চেরাপুঞ্জি মেঘালয়ের সৌন্দর্যের রাজধানী, স্থানীয় ভাবে সোহরা নামেই পরিচিত। সোহরা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত এর অঞ্চল। সোহরা তে প্রবেশ করা মাত্রই আমরা মেঘের চাদরে ঢেখে যাই পুরো। বিকেল ৪ টার দিকে আমরা পৌছাই শহরে। একটি রুম নিয়ে নেই ৭ জনের হোটেল এ। তারপর বের হই আবহাওয়া টা অনুভব করার জন্যে।
শীতের পরিমান ভালই ছিলো, নেটওয়ার্ক কানেকশন পেলে হয়তো তাপমাত্রা দেখে ভয় ই পেয়ে যেতাম। :-p
রাতে যম্পেশ একটা ঘুম হল। আজ স্বপ্নের দিন ভ্রমনের, আজ আমরা দেখা পাবো সেভেন সিস্টার ফলস এর। মনটা খারাপ হয়ে গেছিলো বাইরের আবহাওয়া দেখে,তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘে ঢেকে আছে জনজীবন। সকালের নাস্তা সেড়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম।
প্রথম গন্তব্য থাংকারাং পার্ক। সেভেন সিস্টার এর সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম কিন্তু কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না।
পার্ক এর ভিতর খুব বেশি দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিলো না, তবে পার্ক টি অত্যন্ত পরিস্কার ছিলো। ঘন গাছের মধ্যে মেঘ যেনো পরিবেশ টাকে ভুতুড়ে করার জন্যে যথেষ্ট ছিলো।
একটা ভিঊপয়েন্ট ছিলো যেটা থেকে একটা বিশাল ঝর্না দেখা যেতো,কিন্তু আমরা তখন শুধু শব্দ শুনছিলাম, জুবায়ের তো সেই ঝর্নার উপরে গিয়ে বসেই ছিল। সবকিছু দেখা গেলে হয়তো এখানে বসতে বুক টা কাঁপত।
ভিঊপয়েন্ট থেকে তাকিয়ে ছিলাম, হঠাত হঠাত ঝলক পেতাম প্রিয় দেশের চিত্র।
ফিরতি পথেও দেখা পাইনি সেভেন সিস্টার এর, চলে গেলাম মস্মাই গুহাতে। ভিতরে প্রচন্ড ধুরগন্ধ ছিলো, ভয়ানক তো ছিলোই।
গিয়েছিলাম সেভেন সিস্টার ঝর্নার উপরে,ইকো পার্ক এ। কিন্তু সেখান থেকে তো আর ভিউ পাওয়া জায়না,দেখা যায় শুধুই অবিরাম পানির বর্ষণ।
চলে গেলাম এবার নোহকালিকাই ফলস এর উদ্দেশে। সেখানেও প্রথম কিছুক্ষন কিছুই দেখতে পাইনি, অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর হাল্কা ঝলক পেয়েছিলাম ১১৪৫ ফিট উপর থেকে পরা ভারতের সবচেয়ে উঁচু ঝর্নার।
ফিরছি শহরে,হঠাত আমাদের সফর এর সবচেয়ে বড় পাওয়া। যেনো স্বয়ং আল্লাহ আমাদের উপহার দিয়েছিলো।
সারাটা দিন যে এতো সুন্দর শহরে ছিলাম দেখতেই পারিনি।
সারাদিন বৃষ্টি আর মেঘের মাঝে ঘুরতে ঘুরতে যখন বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম,চিন্তা করছিলাম কখন যে এক মুহুরতের জন্য তার দেখা পাব।কিন্তু মেঘ যেন কথাই শুনছিল না। হঠাত বৃষ্টি থেমে মেঘ যখনই উধাও ড্রাইভার পল কে বললাম 'Just Go Fast '। একটানে চলে আসলাম সেভেন সিস্টার দেখার জন্যে। এ এক মনোরম দৃশ্য। চোখের কোনে এক চিলতে পানিও ছিলো, মনে হচ্ছিলো যেনো জীবনের সবটাই এই সৌন্দর্যে। দেখতে পাচ্ছিলাম নিজের দেশ কে।
মনে শান্তি নিয়ে রউনা হলাম নংরিয়াত গ্রামের উদ্দেশে, পথে আরো অনেক অনেক ঝর্না দেখছিলাম। কিছু জায়গা থেকে বাংলাদেশ একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। পথ টা ছিলো অমায়িক সুন্দর,এই পথ যদি কখনো শেষ না হতো!
সন্ধ ঘনিয়ে এসেছে,আমরা পৌছাই তীর্ণা গ্রামে। এখান থেকে ৩৭৩৩(গাইডের মতে) সিড়ি পেড়িয়ে আমাদের পৌছাতে হবে আজ রাতের গন্তব্যে। নামতে শুরু করলাম অন্ধকার এর মধ্যেই।
প্রায় ৪০ মিনিট যাওয়ার পরেই সামনে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ। তুমুল বৃষ্টির কারনে নিচে পানির শব্দে কান ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা। প্রথম ব্রিজ টা পার করলাম। এতক্ষন শুধু নিচেই নামছিলাম, এবার শুধু উঠার পালা। আরো কিছুদুর যাওয়ার পর আরো একটি ঝুলন্ত ব্রিজ। এর উপরেও একটি সদ্য নির্মিত ব্রিজ উদ্বোধন এর অপেক্ষায়। ব্রিজে উঠে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিলো হয়তো দিনের আলো আর দেখা হবেনা, গাইড বলছিলো ব্রিজ টি পরিতাক্ত। কত হাজার বার বড় খতমের দোয়া পড়ছিলাম আন্দাজ করা মুশকিল। রাতের অন্ধকারে জীবন নিয়ে হেটে চলছিলাম অজানায়। আরও ২০ মিনিট পর পেলাম নংরিয়াত গ্রাম। রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুম দিলাম। আজ রাতের ঘুম টাও ভালোই হলো।
সকাল হলো বাইরে এখনো বৃষ্টি। দেখতে চলে গেলাম পৃথিবীর একমাত্র ডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ( গাছের শিকড় দ্বারা নির্মিত)।
পানির অতিরিক্ত স্রোতের কারনে রেইনবো ঝর্নার উদ্দেশে আমাদের আর যাওয়া হয়নি। সেখান থেকেই আমরা আবারো উঠতে শুরু করি সেই ৩৭৩৩ টি সিড়ি। তবে সকাল বেলা সেই ব্রিজ পার করতে আর একদম ই ভয় পাইনি।
প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পরেই আমরা তীর্ণা গ্রামে পৌছাই। সেখানে অপেক্ষা করছিলো আমাদের টাটা সুমো।
আগামী পর্বে থাকবে আমাদের সিন্তুং যাওয়ার গল্প।
চলবে......
প্রথম পর্বঃ Click This Link
দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:০৩