সোনাদিয়া দ্বীপ আমার মন কেড়েছে ৷ আমি চাই মানুষ এক নোংরা সৈকত কক্সবাজারের মৌহ কাটিয়ে উঠে তার থেকে হাজার গুনে বেশী সুন্দর একটি সমুদ্র সৈকত দেখুক ৷ তাই যতটুকু পারি আজ সোনাদিয়া যাওয়ার সম্ভাব্য রুট ও খরচ+থাকা খাওয়া+নিরাপত্তার ব্যাপারে যতটুকু আমার বোধগম্য হয়েছে তা লিখবো ৷
রুট ১ঃ আপনি যদি সৌখিনতার সাথে ঘুরে আসতে চান তাহলে আপনার জন্যে সবচেয়ে ভালো রুট হবে,
ঢাকা>চট্টগ্রাম>কক্সবাজার>স্পিড বোটে সোনাদিয়া দ্বীপ
কক্সবাজার ৬ নং ঘাট থেকে আপনি সবসময়ই স্পিডবোট পাবেন ৷ কক্সবাজার থেকে সোনাদিয়া দ্বীপ এ যেতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট ৷ চোখে পড়বে অসম্ভব সুন্দর সবুজ পানি,পাখি আর দূরের ঝাউবনের দৃশ্য ৷
টাকা নিবে ২০০০-২২০০ টাকা প্রতিবার রিজার্ভ এ ৷ একটি স্পিড বোটে চালক সহ ৮-১০ জন বসতে পারবেন ৷
রুট ২ ও ৩ঃ আপনি যদি খুব বেশী ঘুরতে পছন্দ করেন আর বৈচিত্র চান ৷
ঢাকা>চট্টগ্রাম>চকরিয়া/বাশখালি>বদরখালি>ঘটিভাঙ্গা>সোনাদিয়া দ্বীপ
চট্টগ্রাম নতুন ব্রীজ থেকে কক্সবাজার গামী যেকোনো বাসে করে চলে যাবেন চকরিয়া, ভাড়া নিবে কমবেশী ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা ৷ চকরিয়া থেকে অটো/সিএনজি তে করে চলে যেতে হবে ১৯ কিমি দূরের বদরখালী(মহেশখালি) ৷ ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৪০ টাকা ৷ বদরখালী থেকে এইবার কোনো লোকাল গাড়ী পাওয়া যাবেনা ৷ ঘটিভাঙ্গার জন্যে ঠিক করে নিন একটি সিএনজি/লেগুনা ৷ সিএনজি নিবে ৬০০-৮০০ টাকা ৷ লেগুনা নিবে ১২০০-১৬০০ টাকা ৷ ঘটিভাঙ্গা পৌছানোর পর,আপনার হাতে দুটো রাস্তা ৷ প্রথম রাস্তা হলো ট্রলার,জনপ্রতি ৩০ টাকা করে নিবে ৷ সোনাদিয়ার স্থানীয় জেটিঘাট এ নামিয়ে দিবে ৷ যেখান থেকে সৈকতে যেতে সময় লাগবে আরও কমবেশী ২০-৩০ মিনিট ৷
দ্বিতীয় রাস্তা হলো ! ঘটিভাঙ্গা ব্রীজ পেরিয়ে ২ ঘন্টার হাটা ,তবে এই রাস্তায় আপনাকে হাটু পানির খাল পেরুতে হতে পারে ২ বারের মতো ৷
রুট ৩ নাম্বার টা শুধুমাত্র তাদের জন্যে যারা চকরিয়া হয়ে যেতে চান না,মানে আরো একটু শর্টকাট ৷ নতুন ব্রীজ থেকে সিএনজি/অথবা বাসে করে চলে আসবেন বাশখালী ৷ ভাড়া নিবে ৮০ টাকা জনপ্রতি ৷ বাশখালী থেকে বদরখালী আর ২০ কিমি এর মতো ৷ ভাড়া লাগবে সিএনজি তে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ৷
প্রথম রুট টা একদম ই সহজ! তাহলে কেনো আপনি দ্বিতীয়/তৃতীয় রুটে আসবেন?
এই রুটে আপনি মহেশখালি দ্বীপ,যা বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ে দ্বীপ তা ঘুরে আসতে পারবেন ৷ কীভাবে? বদরখালি মহেশখালি দ্বীপের শুরু আর ঘটিভাঙ্গা মহেশখালি দ্বীপের শেষ ৷ মহেশখালি থেকে ঘটিভাঙ্গার দূরত্ব ৩৭ কিমি ৷ মহেশখালি তে আপনি ঘুরতে পারবেন আদিনাথ মন্দির এবং ঘোরকঘাটা জেটি ঘাট ৷ তবে মহেশখালির মানুষ নাকি যমের চেয়েও খারাপ ,তাই সাবধান ৷ ঘটিভাঙ্গা থেকে হেটে / ট্রলার এ করে যাওয়ার সময় আরও পাবেন বিস্তর ছোট্ট গাছের ম্যানগ্রোভ, সবুজাভ পানির সরু খাল,মহিষের বিশাল বিশাল পাল,ও লবনের ঘের ৷
যাক অনেক তো হলো রাস্তার কথা ৷
সোনাদিয়া ৯ বর্গ কিলোমিটার এর দ্বীপ ৷ লোকালয় নেই বললেই চলে,মানুষ বাস করে আনুমানিক ২০০০(জাতীয় তথ্য নথি) ৷ যার থেকে দৈনিক ১৫ জন সৈকতে আসে কী না তার উপর আমার সন্দেহ আছে ৷ বুঝতেই পারছেন নিস্তব্ধতার আরেক নাম হচ্ছে সোনাদিয়া ৷ সোনাদিয়া সৈকতের থেকে ঠিক অর্ধ কিলোমিটার সামনে সমুদ্রের মাঝখানে ছোট্ট আরো একটি দ্বীপ আছে ৷ যাকে স্থানীয়রা নতুন সোনাদিয়া বলে ৷ আমরা যেতে পারিনি,তবে বালুকাভেলা আর সাদা পাখি ছাড়া সেই দ্বীপ এ আর কিছুই দেখা যায়নি ৷
আপনি নিরাপত্তার কথা জানতে চাচ্ছেন?
১০০% আশ্বাস দিচ্ছি আপনাকে, সেখানে আপনাকে মারবার জন্যে যেমন কেউ নেই ঠিক আপনাকে বাঁচানোর জন্যেও কেউ নেই ৷ কী বললাম এইটা?
মানে আপনাকে কেউ কিছুই বলবেনা,আপনার কোনো জিনিসের কোনো ক্ষতি করবেনা ৷ আমরাই তাবু তে সবকিছু রেখে সারাদিন এদিক সেদিক টৈ টৈ করেছি,ফিরে এসে সবকিছু অক্ষত পেয়েছি ৷ সারারাত আমরা তাবুতে সৈকতে কাটিয়েছি! ডাকাত তো বহুদূরের কথা স্থানীয় মানুষেরাও জিগ্গেস করেনি ৷
তাহলে বাঁচানোর কথা কোথা থেকে এলো? এটা আপনাকে সাবধান কপার জন্যে ৷ মানে সমুদ্রের পানিতে ঝাপাঝাপির ব্যাপারে মাত্রারিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করবেন ৷ কারন কক্সবাজারের মতো কোনো জেট্সকী টিম আপনাকে বাঁচাতে আসবেনা ৷
এবার আসি থাকা এবং খাওয়ার ব্যাপারে ৷ থাকার জন্যে সবচেয়ে ভালো হবে নিজস্ব তাবু নিয়ে যাওয়া অথবা স্থানীয় মানুষ এতটাই ভালো আপনি চাইলে তাদের বাসায় থাকতে পারবেন ৷ তাছাড়া একটি মাদ্রাসা আছে ,যেখানে চাইলে স্থানীয় একজন ব্যাবস্থা করে দিবেন ৷
খাবার এর বাজার টা আপনার করে নিতে হবে সবকিছু ৷ সোনাদিয়া তে আপনি কিছুই পাবেন না ৷ রান্না বান্না ও করে দিবে যার কথা আমি বলেছি উনার বাসায় ৷ আপনি ফ্রেশ হওয়া+নিজের মূল্যবান জিনিস রাখতে পারবেন তার বাসায় ৷
সোনাদিয়া তে রবি 3জি ৷ তাই আপনাকে নেটওয়ার্ক এর বাইরে যেতে হবেনা ৷ আপনি আপনার ডিভাইস ও চার্জ করে নিতে পারবেন আনছার ভাই কে দিয়ে ৷ রবি টাওয়ার উনার বাসার পিছনেই,টাওয়ার এর দায়িত্বে ও উনিই আছেন ৷ শুধু আসার সময় উনাকে খুশি করার জন্যে সম্মানী টা দিয়ে আসবেন ৷
সোনাদিয়া তে আপনি পাবেন বিশাল নির্জন সমুদ্র সৈকত,বালিয়াড়ী, ঝাউবন ,পাখি ,লাল কাকড়া !
আর যদি আপনি কিছুটা ভুতেও বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই! পূর্ববর্তী ব্লগে আমাদের সাথে ঘটা কিছু ঘটনা পড়ে নিবেন ৷
অবশেষে সোনাদিয়া দ্বীপ হচ্ছে সৈকতে আদর্শ সময় কাটানোর আদর্শ যায়গা ৷ বিন্দু পরিমান হতাশ আপনাকে করলেও কক্সবাজার করবে তবে সোনাদিয়া নয় ৷
সোনাদিয়ায় সম্পূর্ন নিরাপত্তা+ আতিথেয়তার জন্যেঃ
আনছারুল করীম সোহেলঃ
০১৭৯০৫০৫২০৬, ০১৮১১৩৬৪৪৬৬
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯