সকাল ৭ টায় আমরা পৌছাই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত,আমাদের গন্ত্যব্যে ৷ এবার হোটেল এ উঠার পালা ৷ তার আগেই শাওন আর জুবায়ের ব্যাগ আমাদের হাতে দিয়ে দৌড় মেরেছে সমুদ্রে ৷ ওয়েস্টার্ন মোটেল আগে থেকেই বুকিং করে গেছিলাম ৷ একটু খোজাখুজির পর পেয়ে গেলাম হোটেল ৷হোটেল রুম দেখে মোটামুটি সন্তুষ্ট ৷ সবায় গোসল করে বিশ্রাম নিয়ে নিলাম ৷ কুয়াকাটা তথ্য কেন্দ্র,সমুদ্র সংলগ্ন দোকানটিতে গিয়ে ঠিক করলাম ট্রলার ফাতরার চর আর লাল কাঁকড়ার চর ঘুরার জন্যে ৷ সকাল ৯ টায় মহিপুর খাল থেকে আমাদের ট্রলার ছাড়লো ৷ খালটি কুয়াকাটা থেকে ৫ কিমি দূরে ৷ খাল পর্যন্ত আমরা গেছি ভ্যানে করে ৷ পুরো কুয়াকাটায় রিকশা চোখে পরেনি একবারো ৷ অসাধারন প্রকৃতির মধ্য দিয়ে শুরু হলো আমাদের যাত্রা ৷ দুইপাশে অনেক মাছধরার ট্রলার ৷ প্রায় ৩০ মিনিট চলার পর আমরা পৌছালাম লাল কাঁকড়ার চরে ৷ পথে পার করে এসেছি শুটকীপল্লী ৷ লাল কাঁকড়ার চরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হাজার হাজার লাল কাঁকড়া হলেও আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো তিন নদীর মোহনা ৷ আন্ধারমানিক- নীলগন্জ- সোনাতলা নদী তিনটা একত্রিত হয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়েছে এইখানে ৷ চরে নেমেই আনন্দে মন প্রফুল্ল ৷ হাজার হাজার লাল কাঁকড়া যেগুলো আমাদের দেখেই পালাচ্ছে ৷ আমরা সরে গেলে আবার উঠে দৌড়াচ্ছে ৷ বিনয় ছিলো রং বেরঙের ঝিনুক সংগ্রহে ব্যাস্ত ৷ আর আমি ছাড়া বাকি সবায় ব্যাস্ত কাঁকড়ার সাথে দৌড়াদৌড়ি, কাঁকড়া ধরা নিয়ে ৷ আমি ভাই এগুলো ভয় পাই তাই একটু দূরে দূরেই ছিলাম ৷ লাল কাঁকড়ার চর থেকেই দেখা যাচ্ছিলো ফাতরার চর ৷ প্রায় ১ ঘন্টা কাঁকড়ার চরে লাফালাফি করে আবার উঠে বসলাম ট্রলার এ ৷ কিছুক্ষন যেতেই শুরু হলো সাগরের স্রোত ৷ জোয়ার চলছিলো তখন,মনে হচ্ছিলো এই বুঝি গেলো ট্রলার টা ৷ সাঁতার জানা নেই তো তাই মনে ভয়টা একটু বেশীই!
৩০ ঘন্টা চলার পর পৌছালাম ফাতরার চর এ ৷ফাতরার চর এর মূল অবস্থান বরগুনা জেলার টেংরাগিরি তে ৷তবে আমাদের মত সবায় ই কুয়াকাটা হয়ে যায় এবং এই রাস্তাটাই সহজ ৷ ফাতরার চর/বন কে দ্বিতীয় সুন্দরবন বলা হয় ৷ নির্দিষ্ট একটা পথ ধরে ১০-১৫ হাটলে অপরপ্রান্তে পাওয়া যায় আবারও সমুদ্র ৷ আবারও সমুদ্র দেখে ডুব দিতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু হতাশ! সৈকত বটে তবে বালুর নয় পিচ্ছিল মাটির ৷ ডুব দিতে নামাটা খুবই রিস্কি ৷
তবে শত শত গাছের শিকড় হয়ে যায়গাটা সুন্দর ই লাগছিলো ৷ সবচেয়ে আকর্ষনীয় মনে হচ্ছিলো সমুদ্রের গর্জন ৷ ১ ঘন্টা নিবিড় ছায়ায় কাটিয়ে ফের উঠলাম ট্রলারে ৷ ফিরবো কুয়াকাটা ৷ দুপুর ১ টা নাগাদ ফিরে আসলাম কুয়াকাটায় ৷ ফিরে এসেই নেমে গেলাম সমুদ্রে ৷ প্রায় আড়াই ঘন্টা লাফালাফি করছি সমুদ্রে ৷ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলো বিনয় এর সাথে সমুদ্রের স্রোতে ওর ডান হাতটা ডিলোকেট হয়ে গেলো ৷ দুপুরের খাবার খেতে আসলাম খাবার-দাবার হোটেল এ ৷ হোটেলের পরিবেশ দেখে ঢুকেছিলাম তবে ব্যাবহার আর স্বাধ এ সম্পুর্ন হতাশ!
বিকাল টা কাটিয়ে দিলাম ঘুমে, শরীর ছিলো খুব ই ক্লান্ত ৷ সন্ধ্যায় শুরু হলো মারাত্নক ঝড় ৷ সাথে আছে বজ্রপাত আর বিদ্যুৎ চমকানো ৷ হোটেলের বারান্দায় বসে বসে ঝড় দেখছিলাম আমরা ৷ রাতে খাবার খেতে গেলাম,এবার ঢুকলাম মোটামুটি পরিবেশের জমুনা হোটেল এ ৷ তিন প্লেট ভাত খেয়েছি,বুঝতেই পারছেন কতটুকু তৃপ্তি মিটেছে আমার! তারপর হোটেল ফিরে কলব্রীজ খেলা আর ঘুম!
এভাবেই কেটেছে কুয়াকাটায় আমাদের প্রথম দিন ৷
কিছু ছবিঃ
১) আমরা কিছুজন
২)পথের প্রকৃতি
৩)শিকড় আর আমি
৪)শত শত শিকড়
৫)মাটির পিচ্ছিল সৈকত এ শাওন আর জুবায়ের
৬)ঝিনুকের সমাহার
৭)সমুদ্রে লাফালাফি
৮)প্রকৃতিতে মুগ্ধ আমি
৯) তানভীর ভাই জ্যান্ত কাঁকড়া খায়
১০) জুবায়ের সেই ভয় পাইছিলো
১১)ফাতরার বনে আমরা সবায়
১২) ফাতরার বনের প্রবেশ পথ ও ফুল
১৩) সেল্ফি স্টিক এ কাঁকড়া
১৪)কাঁকড়া দিয়ে শেষ করলাম
চলবে........
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:০২