somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যানজট নিয়ে একজন অর্বাচীন নগর পরিকল্পনাবিদের ভাবনাঃ পর্ব-৩

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবার সমাধানযাত্রা?

আমি আগেই বলেছি- যানজট সমাধানযোগ্য একটা সমস্যা। সমাধানের লক্ষ্যে আগে এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাইতে হবে। যোগ্য সেট-আপ তৈরি করতে হবে। এক্সপার্ট দিয়ে প্ল্যান করাতে হবে। তারপরে গুরুত্ব (সবচেয়ে) দিয়ে সেটাকে এক্সিকিউট করতে হবে। এক্সিকিউট না করলে সেই পরিকল্পনা করে কোন লাভ নাই।

ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের উপসংহারে-ও একই কথা বলা হয়েছেঃ
It is also to be taken into account that without the application of the plan it remains as a piece of paper only. There are many useful Acts and Rules framed to deal with many issues, but in absence of their application they have become fruitless. As such due importance has to be given to the application of the plan and any deviation from this will bring disaster. To save Dhaka from further deterioration there is no alternative of the application of the plan in letter and spirit.

সারা দুনিয়াতে ট্রাফিক ভলিউম কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে; আমাদের নতুন করে কিছু আবিষ্কার করতে হবে না- শুধু ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে (পৃথিবীতে বিভিন্ন জায়গায় এযাবতকালের নেয়া বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে চতুর্থ পর্ব লিখবো)। ঢাকায় কোনটা ভালো কাজ করবে, কীভাবে কাজ করাতে হবে সেগুলো সম্পর্কে বলার জন্য অনেক বিশেষজ্ঞ আছে। শুধু তাদের ডেকে এক জায়গায় আনতে হবে। আমাদের নেতাদের আর তাদের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর সব আছে, শুধু ডেকে আনার এই ইচ্ছাটা-ই নাই। আর, আমাদের শুধু ইচ্ছাটাই আছে আর কিছুই নাই। তাই আমি সবকিছু ছেড়েছুড়ে বসে আছি “সর্বনাশের আশায়”- কবে যে আমার নেতা আমার মত হবেন!

শেষ কথাঃ
প্রচলিত ২ টা ভূল ধারনা সম্পর্কে আমার বক্তব্য লিখে আমার লেখা শেষ করবো।
১. আমাদের অনেকের ভেতর অযান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে এক ধরনের অ্যালার্জি আছে (এই অ্যালার্জি বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি-র ও আছে)। এরা গতির ধুয়া তুলে মূল সড়কে (শহরের আর্টারীগুলোতে) অযান্ত্রিক যানবাহন নিষিদ্ধ করতে চায় । বেশিরভাগ জায়গায় তারা সফলও হয়েছে; এখন প্রগতি স্মরনীতে এটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারলেই ষোল কলা পূর্ন হয়। এতে কার কতটুকু লাভ হয়েছে সেটা বোঝার চেষ্টা করা জরুরী। শহরের ভিতরে ৬০/৮০ কি.মি. বেগে গড়ি চলার কথা না। এখানে অল্প গতিতে-ই গাড়ী চলার কথা। একটা রিক্সার গড় গতি কত? বোঝানোর জন্য বলছি- একটা মানুষ গড়ে ৪-৬ কিমি. বেগে হাঁটে (ঘন্টায়)। সে হিসাবে রিক্সার গড় গতি ১২-১৫ এর মাঝে হওয়ার কথা।

লন্ডন শহরে গাড়ীর গড় গতি ১৯ কিমি/ঘন্টা, বার্লিনে ২৪ কিমি/ঘন্টা। সারা দুনিয়ার পাবলিক ট্রান্সপোর্টের গতির একটা গড় হিসাব দেখিঃ
আমেরিকা- ২৭.৪ কিমি/ঘন্টা,
অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড- ৩২.৭ কিমি/ঘন্টা,
কানাডা- ২৫.১ কিমি/ঘন্টা,
পশ্চিম ইউরোপ- ২৫.৭ কিমি/ঘন্টা,
উচ্চ আয়ের এশিয়া- ৩৩.২ কিমি/ঘন্টা,
মধ্য আয়ের এশিয়া- ১৬.৪ কিমি/ঘন্টা, (তাইপে, সিউল, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর)
নিন্ম আয়ের এশিয়া- ১৬.৬ কিমি/ঘন্টা, (গুয়াংজু, সাংহাই, ম্যানিলা, জাকার্তা, বেইজিং, মুম্বাই, চেন্নাই, হোচিমিন সিটি)
অন্যান্য মধ্য আয়ের শহর- ২৪.৮ কিমি/ঘন্টা,
অন্যান্য নিন্ম আয়ের শহর- ২১.১ কিমি/ঘন্টা।
তথ্যসূত্রঃ Click This Link

আমাদের রিকশা মধ্য আয়ের যে চারটা এশিয়ান শহরের গাড়ীর গড় গতি দেখছি, সেগুলোর একেবারেই কাছাকাছি। তাহলে মূল সড়কে রিক্সা বন্ধ করা কেন? আলাদা লেন করে দিলেই তো হয়। আর, আমাদের ট্রিপগুলো বেশিরভাগ-ই ছোট ছোট। এই দূরত্ব রিকশায় সহজেই যাওয়া যায়। আমরা যে গিট্টুটা দেখি, সেটা কী অযান্ত্রিক যানের জন্য লাগছে? আমাদের রাস্তা পটহোলে ভর্তি থাকবে, রাস্তায় মানুষ হাটবে, লেফট লেন গাড়ী পার্ক করে বন্ধ করে রাখবো, আর দোষ অযান্ত্রিক যান বাহনের? একটু ভাবার অবকাশ আছে (আমি এখানে আরো বলতে চেয়েছি- আপনি গাড়ীর মালিক, ভালো কথা। কিন্তু জনগনের টাকায় তৈরি রাস্তায় বেশিরভাগ জনগনের বাহনকে চলতে দিবেন না- এটা কেমন কথা? নিজের টাকায় শহরের ভেতর রেসিং ট্র্যাক তৈরি করে ৬০ কিমি বেগে গাড়ী চালালে ভালো হয়)। পরিবেশ, স্যাস্থ্য, পেট্রল কেনার বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদির কথা তো ছেড়েই দিলাম।

২. জন গ্লেন ওয়্যারড্রপ নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন বিখ্যাত ট্রান্সপোর্ট এনালিষ্ট ছিলেন। গেম থিওরীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ন তাঁর দুইটা অনুসিদ্ধান্ত (সুত্র) আছে। এগুলো হচ্ছেঃ
- The journey times in all routes actually used are equal and less than those which would be experienced by a single vehicle on any unused route
- At equilibrium the average journey time is minimum

আমাদের অনেক বিশেষ-অজ্ঞ আমাদের মাঝে মাঝে বলতে চান, শহরের ভেতর রেল ক্রসিং থাকা ঠিক না। এরা পরিকল্পনা কোন পর্যায়ে বোঝেন, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ফুলবাড়ীয়া থেকে রেল স্টেশন কমলাপুরে স্থানান্তর একটা ঐতিহাসিক ভুল। এই ভুলের মাশুল আমরা এখন দিচ্ছি। এখন ক্রসিং এর ধুয়া তুলে কমলাপুর থেকে স্টেশন তারা আরো বাইরে নিতে চান। এরা এই স্টেশন কমলাপুর থেকে ঠেলতে ঠেলতে টঙ্গী-গাজীপুর-টাঙ্গাইল পার করে একসময় ময়মনসিংহে নিয়ে যেতে চাইতে পারেন। এদের জন্য প্রথম সুত্র। এই সুত্র বলছে সিস্টেমের ভেতরে কোনদিন আমি লাভবান হচ্ছি (রাস্তায় কম সময় লাগছে), সেদিন আমার কোন ভাই-বেরাদর/বন্ধু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে (রাস্তায় বেশী সময় লাগছে)। আর যেদিন আমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি, সেদিন আমার কোন ভাই-বেরাদর/বন্ধু লাভবান হচ্ছে।

আমরা ট্রেনে করে যাদের কমলাপুর থকে বিভিন্ন ডিরেকশনে যেতে দেখছি, স্টেশন ঢাকার বাইরে সরিয়ে নিলে তারা কী খুলনা-চট্টগ্রাম-রাজশাহী-রংপুরে যাওয়া বন্ধ করে দেবে? না। তারা তখন বর্তমানে এভেইলেবল রাস্তা দিয়ে ঢাকার বাইরের স্টেশনে যাবে। তাতে কতটুকু লাভ, কতটুকু ক্ষতি- সেটা বুঝতে হবে (ট্রেনযাত্রীর ইনকনভ্যানিয়েন্সের কথা বাদ-ই দিলাম; একটা/একাধিক পোটলা-পুটলি নিয়ে ট্রাভেল করার হ্যাপা ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন- আমি ধরে নিচ্ছি বেশীরভাগ লোকের গাড়ী নেই বা এফোর্ড করতে পারবে না)।

আজকে এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আর গেলাম না, অন্য কোনদিন এগুলো নিয়ে লিখবো।

সকলকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×