somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাসড়কে নির্দিষ্ট ধরনের যানবাহন নিষিদ্ধকরনঃ একজন অর্বাচীন নগর পরিকল্পনাবিদের ভাবনা

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নগর পরিকল্পনায় সম্ভবতঃ যোগাযোগের পরিকল্পনা করা সবচেয়ে দুঃসাধ্য এবং একইসাথে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন কেননা এটা মানুষের প্রাত্যহিক কাজের সাথে সরাসরি এবং অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই, উক্ত বিষয়ে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন কথা হচ্ছে। একজন অর্বাচীন নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাবে তাই আমি দু-একটি কথা লেখার লোভ সামলাতে পারছি না।

শিকারী বেড়াল যেমন গোফে চেনা যায়, তেমনি একটা রাস্তার প্রকৃতি চেনা যায় তার গতিতে। সরকার যে ২২ টি মহাসড়কে যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে, সেগুলো আদতে ‘প্রকৃতিতে’ মহাসড়ক কিনা (সরকার আমার মহল্লার গলিগুলোকে পর্যন্ত মহাসড়ক বলে ডিক্লেয়ার করতে পারে; এ ক্ষমতা তাঁর আছে) সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। কোন এলাকার রাস্তাগুলোর ধরন মূলতঃ প্রবেশ্যতার উপরে নির্ভর করে। আমাদের দেশে যে কেউ মহাসড়কের পাশে যে কোন জায়গায় বাড়ী বানিয়ে পাশের মহাসড়কের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ফেলতে পারেন। ঘরের সাথে যে রাস্তার সম্পর্ক, তাকে আর যাই হোক মহাসড়ক বলা যায় না।

বিভিন্ন পাড়া বা মহল্লায় যে সকল রাস্তা, যেগুলো বিভিন্ন সেবার সাথে প্রতিটি বাড়ী কে সংযুক্ত রাখে সেগুলো মূলতঃ এক্সেস রোড। এমন বিভিন্ন রাস্তা একটা উপরের স্তরের রাস্তার সাথে মেশে যেটা ঐ মহল্লার মূল রাস্তা। বিভিন্ন মহল্লার মূল রাস্তাগুলো তাদের উপরের স্তরের রাস্তার সাথে মেশে এবং এমনভাবে উপরের স্তরের রাস্তার সাথে মিশতে মিশতে সেগুলো মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। অর্থাৎ, মহাসড়ক হচ্ছে রাস্তার শ্রেনীবিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায়। নিচের ছবিতে ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করা হলো




এই ছবিতে একটা বিষয় পরিষ্কার- মহল্লার রাস্তাতে সব বাসার/বাড়ীর প্রবেশ্যতা থাকতে হবে। এই কারনে মহল্লার রাস্তাতে গতি থাকে কম। এই প্রবেশ্যতার সাথে গতির একটা ঋণাত্মক সম্পর্ক বিদ্যমান। যে রাস্তার প্রবেশ্যতা যত বেশী, তার গতি তত কম। এর মূল কারন হচ্ছে, দুটো রাস্তার মোড় (ইন্টারসেকশন) গুলোতে চালক ইচ্ছামত বা অনুমোদিত সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ী চালাতে পারে না। যে কোন সময় অন্য রাস্তাটি থেকে কোন গাড়ী এই রাস্তায় উঠে আসতে চাইতে পারে। সেই গাড়ীর টার্নিং রেডিয়াস কত হবে সেটা এই চালকের জানার কথা না আর তাই স্বাভাবিকভাবেই, চালককে সর্বোচ্চ টার্নিং রেডিয়াসের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। যে কোন মুহুর্তে তাকে থেমে যেতে হতে পারে। নীচের ছবিতে প্রবেশ্যতা এবং গতির যে ঋণাত্মক সম্পর্ক, সেটা দেখানো হলোঃ



এবার আমাদের আইনের কথায় আসা যাক। দি হাইওয়ে অ্যাক্ট, ১৯২৫ এর সেকশন ৪ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রনীত 'মহাসড়কে নিরাপত্তা, সংরক্ষণ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা'র বিধি সেকশন ২ ক- তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার গেজেটে আদেশ দ্বারা যে কোন সরকারী রাস্তাকে 'প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক' হিসাবে ঘোষনা করতে পারে। সেখানে করা যাবে না এমন কাজের লিষ্ট-টা অসাধারনঃ

কোন ব্যক্তি মহাসড়কে-
(ক) অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থান দিয়া পদযাত্রা করিবেন না বা এই বিধিমালার অধীনে অনুমোদিত কার্যকলাপের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে উহার কোন স্থানে অবস্থান করিবেন না।
(খ) মোটরযান ব্যতীত অন্য কোন যান চালনা করিবেন না বা রাখিবেন না।
(গ) ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার গতি নাই এমন কোন মটরযান চালনা করিবেন না।
(ঘ) পার্কিং স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে মোটরযান পার্কিং করিবেন না এবং পার্কিং এর ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের নির্দেশনাবলী মানিয়া চলিবেন।
(ঙ) ট্রাক বা অনুরূপ মোটরযান ব্যতীত অন্য কোন যানবাহনে কোন পশুপাখি বহন করিতে কিংবা সংগে নিতে পারিবেন না বা তাহার নিয়ন্ত্রণাধীন গবাদিপশু অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থান দিয়া মহাসড়কে প্রবেশ করিতে বা চলিতে দিবেন না বা মহসড়কে অবস্থান করিতে দিবেন না।
(চ) একমূখী পথে মোটরযানকে ঘুরাইয়া বিপরীত দিকে চালাইতে পারিবেন না বা অনুমোদিত দিক ব্যতীত অন্য কোন দিকে মোটরযান চালাইতে পারিবেন না।
এছাড়াও সেখানে মহাসড়ক সংলগ্ন বা প্রান্তস্থ ভূমির মালিক বা দখলকার মহাসড়কে প্রবেশের জন্য অধিদপ্তর কর্তৃক লিখিত অনুমতি গ্রহণ ব্যতিরেকে কোন পথ তৈরী করিতে পরবেনা মর্মেও নির্দেশ দেয়া আছে।

আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী মহাসড়ক হচ্ছে মূল শহরগুলোকে সংযুক্ত রাখার রাস্তা যেখানে দ্রুত গতিতে যানবাহন চলাচল করবে। এই জন্যই উন্নত বিশ্বে স্বাভাবিকভাবেই প্রবেশ্যতা কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে যেমন কিছু কিছু জায়গার সর্বনিন্ম গতিসীমা নির্ধারন করে দেয়া ইত্যাদি।


চিত্রঃ মিশিগানের মহাসড়কে (এম-১৮৫) সাইকেল চালকরা।


চিত্রঃ মহাসড়কে ডিভাইডার থাকতেও পারে, না-ও থাকতে পারে।

এবার সমস্যার মূলে আসা যাক। আমাদের দেশে এ যাবতকালে মহাসড়ক নিয়ে কারো কোন মাথাব্যাথা ছিলো বলে প্রমান পাওয়া যায় না। ফলশ্রুতিতে মহাসড়কগুলোকে কেন্দ্র করে সকল ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু এবং বিকশিত হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের উচিত এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়া।

তবে একটা বাস্তব সমস্যা থেকে যায়। আমাদের দেশে রাস্তার পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় এমনিতেই কম। যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় 'মহাসড়ক নেটওয়ার্ক' অবস্থিত যেটার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ লক্ষ মাইল (প্রায় পয়ষট্টি লক্ষ কিলোমিটার)। আর, আমাদের মোট সড়ক নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য মাত্র ৩৫ হাজার কিলোমিটারের কাছাকাছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি দেড় বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের জন্য এক কিলোমিটার রাস্তা বিদ্যমান। আর বাংলাদেশে ১ কিলোমিটার রাস্তা সার্ভ করে প্রায় সোয়া চার বর্গ কিলোমিটার এলাকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পঞ্চাশ জনের জন্য যেখানে এক কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে সমপরিমান রাস্তা রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার লোকের জন্য।এ অবস্থায় মহাসড়কগুলোর প্রবেশ্যতা কমিয়ে দিলে সাধারন মানুষের জন্য অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
বাংলাদেশে শহরগুলো খুব-ই কাছাকাছি অবস্থিত। আর গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসাবে জনঘনত্ব তো আছেই। শহরের উপকন্ঠে মানুষের প্রচন্ড চাপ। এই মানুষগুলো আবার তথাকথিত মহাসড়ক দিয়েই শহরের সাথে যুক্ত। তাই মহাসড়কে একটু পরপর-ই স্থানীয় (লোকাল) রাস্তার সংযোগ। ঢকা-আরিচা, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট বা ঢাকা-ময়মনসিংহ যেই মহাসড়ক ধরেই যাই, অবস্থা একই। এই সংযোগগুলো বন্ধ করে দিলে লোকজন শহরে যাতায়াত করতে বিরাট বিড়ম্বনার ভেতর পরবে। যদি সরকার মহাসড়কগুলোকে সত্যিকার অর্থেই মহাসড়ক বানাতে চায়, তাহলে এখন উচিত হবে বিকল্প হিসাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহাসড়কগুলোর পাশে 'প্রয়োজনানুযায়ী' সার্ভিস লেন ডেভলপ করা যেন ঐ লোকগুলো এই সার্ভিস লেনের সাহায্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর মহাসড়কে উঠতে পারে। এতে করে মহাসড়কের উপর চাপ কমবে, মহাসড়কের দক্ষতা বাড়বে, পাশাপাশি প্রচুর দূর্ঘটনা এড়ানো যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×