ঘটনার রাত-দিন ছিল ১৬-১৭ আগষ্ট ২০২১। রাত প্রায় ১১টার সময় মাওয়া ঘাটে এসে পৌছালাম, এসে শুনি পদ্মায় তীব্র শ্রোত আর সেতুতে ধাক্কা লাগার আশঙ্কায় ফেরী বন্ধ। ফেরী ছাড়বে সকাল ৫:২০ এ। শত শত মানুষ হতাশ হয়ে কেউ বসে আছে, কেউ শুয়ে আছে, আবার কেউ হাটাহাটি করছে। কি আর করার সকাল পর্যন্ত সময় কাটাতে হবে। আমরাও হাটাহাটি, শুয়ে, বসে কাটালাম। সকাল ৪ টার সময় ফেরীর ডালা নামিয়ে দেয়া হলো গাড়ী উঠানোর জন্য। গাড়ীগুলো উঠানোও হলো। কিন্তু পরক্ষণেই ফেরীর ইনচার্জ হ্যান্ড মাইকে ঘোষনা দিলো ফেরী ছাড়তে দেরী হবে। কারন হিসেবে জানালো কোন এক মন্ত্রী আসবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এদিকে আগেরদিন সন্ধা থেকে অপেক্ষা করা শতশত মানুষ ইনচার্জের ঘোষনা শুনে হতাশ।
ফেরীর এক কোনে হেলমেট পরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হাঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলো। একটু সজাগ হতে এই ঘটনা শুনলাম। ফেরীর ৩ তলায় গিয়ে ইনচার্জের কাছে জানতে চাইলাম ঘটনা কি? তিনি বলতে লাগলেন, ভাই আমাদের কি করার, উপরের নির্দেশ আমরা কি করবো। আমরা তো চাকরী করি।
ফেরী না ছাড়ার আসল কারন জানতে চাইলাম। বললেন মন্ত্রী মশাই আসবে তাই সে না আসা পর্যন্ত ফেরী না ছাড়ার নির্দেশ আছে। কোন মন্ত্রী আসবে তাও ঠিকমত বলতে পারলেন না।
বললাম তাহলে আপনারা বলেননি এখানে শতশত মানুষ সেই সন্ধা থেকে অপেক্ষা করছে।
ইনচার্জ সাহেব জানালেন তা তো অবশ্যই জানিয়েছি। তাতেও নির্দেশ বহাল রয়েছে। যোগাযোগ করলাম বিআইডব্লিউটি এর হেল্প লাইন নম্বর ১৬১১৩ নম্বরে, চলমান অবস্থার কথা জানানোর পরে সেখান থেকে ঘাটে অবস্থানরত দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুটি নম্বর দিয়ে বলা হলো একটায় না পেলে অপরটায় চেষ্ট। করতে। দুটি নম্বরে প্রায় ২০-৩০ বার চেষ্টা করলাম ফোন বেজেই গেলো রিসিভ আর হলোনা। বাধ্য হয়ে শিমুলিয়া ঘাটে অবস্থানরত বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে গেলাম। দায়িত্বপ্রাপ্ত একজনকে পেলাম ঠিকই কিন্তু সে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ, শুধু জানালেন উপরের নির্দেশ আছে তাই ফেরী ছাড়তে দেরী হবে। কি আর করার অপেক্ষা এখন মন্ত্রী মশাইয়ের।
শেষ পর্যন্ত সকাল সারে ০৭ টায় ফেরী ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু হলো। কিন্তু মন্ত্রী মশাইয়ের কোন পাত্তা পেলাম না। তবে একজন তথাকথিত কেন্দ্রীয় নেতাকে ফেরী ছাড়ার মূহুর্তে দেখা গেলো। বুঝতে বাকী রইলোনা মহান মন্ত্রী মশাইদের পূর্বের স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের ফায়দা তুলেছে এই পাতিনেতা।
এখন কথা হচ্ছে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমপি-মন্ত্রী হয় জনগণের ভোটে। জনগণ তাদের ভোট দিয়ে দায়িত্ব দেয় এই হায়রানি উপহার পেতে? নিশ্চই না। এই দায়িত্বপ্রাপ্ত এমপি-মন্ত্রী'রা দায়িত্ব নেয়ার সময় নিশ্চই শপথ করেছিলো নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকবে এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায় ও কষ্ট লাঘবে কাজ করবে। অথচ তারা কি করছে, তা তো দৃশ্যমান!
তাহলে কেন এদের বেইমান বলবো না আপনারাই বলেন...?
ধিক্কার জানাই ওদের মত বেইমানদের। নিপাত যাক ওরা।
#এমপিকে
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৫:২৭