বাসু মিয়া গ্রাম এলাকায় ছোট একটা মোবাইল-ফ্লেক্সিলোডের দোকান দিয়েছে। ভালোই চলে, আয় যা হয় তা দিয়ে অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে পেরেছে।
ছলিম মিয়া, গ্রামের গণ্যমাণ্য ব্যক্তি, কিন্তু পেচগোছ কম বোঝে, বড় ছেলেটা প্রবাসী, টাকা-পয়সা ভালোই পাঠায়। পাঠানো সব অর্থ সংসারে খরচ হয়না। কিন্তু ছলিম মিয়া ব্যাংকিংও বোঝেনা। বিশ্বাসী হিসেবে পেলো বাসু মিয়াকে। সংসারে খরচ করে যা টাকা বেঁচে যায় তা বাসু মিয়ার কাছে জমা রেখে দেয়। ছলিম মিয়া যখন যত পরিমাণ টাকা বাসু মিয়ার কাছে জমা দেয় তা একটি খাতায় টুকে রাখে বাসু মিয়া। ভালোই চলছিল বাসু মিয়া আর ছলিম মিয়ার দিনকাল।
কয়েক বছর পর ছলিম মিয়ার ছেলে দেশে আসলেন। বিদেশ থেকে দেশে এসে কোন কাজে যোগ দেননি ছলিম মিয়ার ছেলে। কারন তিনি আবারও বিদেশ পাড়ি জমাবেন। যতদিন দেশে থাকবে বিদেশ থেকে পাঠানো জমা টাকা হতেই খরচ করে চলতে হবে।
এখন বাসু মিয়ার থেকে বাবা-ছেলে দুজনেই প্রয়োজনমত জমানো টাকা থেকে নিয়ে নিয়ে খরচ করা শুরু করলো। বাসু মিয়াও আগের মত যখন যা টাকা দেয় তা হিসেব ঠিকঠাক রেখে চলেছে।
কয়েকদিন যেতেই হয়তো ছলিম মিয়া খেয়াল করেছে তার ছেলে টাকা-পয়সা উল্টাপাল্টা খরচ করছে। তখন তিনি বাসু মিয়াকে বলে দিলেন 'আমি ছাড়া কেউ টাকা চাইলে দিবিনা'
বাসু মিয়া ছলিম মিয়ার নির্দেশ মনে রেখে পরবর্তিতে যখন ছলিম মিয়ার ছেলে বাসু মিয়ার কাছে টাকা চাইতে আসলেন তখন বাসু মিয়া সরাসরি ছলিম মিয়ার নির্দেশনার কথা না জানিয়ে জানালো তার কাছে আপাতত টাকা নেই। হয়তো ছলিম মিয়ার ছেলে বুঝতে পেরেছে বা জানতে পেরেছে তার বাবা তাকে টাকা দিতে মানা করেছেন।
তাই কিছুক্ষণ পরে চতুরতার সাথে তার বাবার(ছলিম মিয়ার) কথা বলে টাকা চেয়ে একজন লোক পাঠালো। বাসু মিয়াও ছলিম মিয়ার কথা শুনে সাথে সাথে টাকা দিয়ে দিলেন। এই বাঁধলো বিপত্তি!
ছলিম মিয়ার ছেলে বাসু মিয়াকে বিভিন্নভাবে তিরস্কার করা শুরু করলো। যদিও বাসু মিয়ার কোন অপরাধ নেই, কারন তাকে যে বিশ্বাস করে টাকা জমা রেখেছে সে অবশ্যই তার কথারই প্রাধান্য দিবে। এই বিষয়ে ছলিম মিয়া নিজেও তার ছেলেকে বোঝালেন কিন্তু তাতেও ছলিম মিয়ার ছেলে মানলেন না। বন্ধ করে দিলেন বাসু মিয়ার দোকানের সাঁটার। আর বলে দিলেন যতদিন পর্যন্ত আমি না চাইবো তোর ব্যবসা বন্ধ। এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় মাস দুয়েক। বাসু মিয়ার পরিবার সহ এলাকার অনেকেই অনুনয়বিনয় করেও ছলিম মিয়ার ছেলেকে বোঝাতো সক্ষম হয়নি। এমনকি ছলিম মিয়াও তার ছেলেকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।
বাস্তব ঘটনা থেকে ছদ্মনামে গল্পটি লেখা পর্যন্ত ঘটনাটির প্রায় দুইমাস পেরুলেও বাসু মিয়া তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেনি কারন ছলিম মিয়া এলাকা গণ্যমাণ্য প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হওয়ার সুবাদে তার ছেলেরাও প্রভাব খাটিয়ে চলায় অভ্যস্ত! বাসু মিয়াও কোথাও অভিযোগ করার সাহস যোগাতে পারছে না। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংসারের টানাপোড়ন শুরু হয়েছে, বড়ই বেহাল দশায় বেচারী।
এই ঘটনা থেকে আমরা যা বুঝতে পারি; উপকারী মানুষদের সাথে যদি এমনটা ঘটতে থাকে তবে মানুষ মানুষকে উপকার করতে ভয় পাবে, কেউ কারো উপকারে আসতে চাইবে না। সমাজে বিপর্যয় নেমে আসবে।
(বি:দ্র: বাশার মিয়ার ছদ্মনাম বাসু মিয়া এবং নেছার মাদবরের ছদ্মনাম ছলিম মিয়া ব্যবহার করা হয়েছে।)
#এমপিকে
১৭ জুন ২০২১।
ছবি: গুগল হতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২১ রাত ৯:৫১