এবার গিয়েছিলাম জাজিরা হতে এক্সপ্রেস অয়ে দিয়ে শিবচর-ভাঙ্গা-নড়াইল-গোপালগঞ্জ হয়ে যশোর হয়ে ঝিনাইদহ।
যাওয়ার সময় কত ধরণের মানুষ দেখলাম, বোকা-চালাক, বেশী চালাক, ধোঁকাবাজ, জুলুমবাজ, অসহায়, বদরাগী, ইত্যাদি ইত্যাদি আবার জনগণ ঠকানো কয়েকজনের নামে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও ঠুকে দিয়ে এসেছি।
রাত ০১ টা নাগাদ যশোর শহরে পৌঁছে দেখি শহরের কোথাও থাকার জায়গা নাই! ২টা নাগাদ গেলাম সার্কিট হাউজে তারা জানালো এভাবে হাঠাৎ সার্কিট হাউজে থাকা যায়না। কি বিপদ তারপর অনেক সাধনার পরে একটা মোটামুটি হাইপাই হোটেলে রাত্রি যাপন করার সৌভাগ্য হলো। কিন্তু তাও ভাড়াটা বেশীই নিলো!
সকালে যশোর হতে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর যাওয়ার পথে রেলক্রসিং পাড় হয়ে বাইক পার্কিং করে একটু দাড়াতেই রেলক্রসিং মাস্টার বলে না রক্ষক বলে জানিনা। একটা হবে আরকি। সজল ভাই এসে বলতে লাগলেন আপনি পলাশ ভাই না? আমি বললাম হ্যা।
খুব উৎফুল্ল হয়ে বললেন আপনার মাস্ক পড়া তারপরও চিনে ফেলেছি। মনে মনে ভাবতে লাগলাম জীবনে যশোরে এলাম এই প্রথম, তাহলে এখানকার মানুষ আমাকে চিনে কিভাবে!
তারপর তিনিই বললেন 'ভাই আপনাদের জাজিরায় অনেকদিন থাকছিলাম'। আপনাকে দেখে খুব ভালোই লাগছে। চলেন ভাই ঠান্ডা খাই। আর না করতে পারলাম না। অনেক আপ্যায়ন করে তারপরই বিদায় দিলো।
পৌছালাম মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর ইউনিয়নে। ছোটভাই হিমেল বিজিবি'র সৈনিক হিসেবে যোগ দিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। বাইরে বসে ছিলো ছোটভাই বরকত। আসলে সকালে ওদের আগে পাঠিয়ে দিয়ে আমি ঠান্ডা মাথা পরে আসছি।
ওখানে পৌঁছে ছোটভাই বরকতকে নিয়ে স্থানীয় বিজিবি ক্যানটিনে দুপুরের খাবার শেষ করলাম। এখন যাবো কোথায় দুজনে ভাবতে লাগলাম। একজন তো পরীক্ষার হলে। তারমানে আশেপাশেই থাকতে হবে।
স্থির করলাম একটা আম বাগানে গিয়ে ছায়ায় বসে থাকবো। যেই ভাবনা সেই কাজ। দুজনে দুটি বাইক নিয়ে কাছাকাচি একটি অনেক পুরাতন আম বাগানে হুরমুর করে ঢুকে পড়লাম। ভিতরে গিয়ে দেখলাম এক ভাই ছোট আর একটা ভাইকে নিয়ে টংয়ে বসে আছে। আমরাও যথারীতি বাইক রেখে টংয়ে গিয়ে বসে পড়লাম। এমনভাবে গিয়ে বসলাম মনে হয় নিজের এলাকায় নিজেদের বাগানে এসে হৈহুল্লোর করছি।
যাইহোক, বসে থাকা ভাইকে সমাচার জিজ্ঞেস করলাম, তিনিও হাসিমুখে ও যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে যা জানতে চাইলাম সব জানালেন। অবাক করা বেপার হচ্ছে আমরা পরিচিত হতে হতেই মেহেদী ভাই (ঐ ভাইয়ের নাম) তার মা'কে দিয়ে ইয়া এক গামলা মিস্টি মিস্টি সুস্বাদু আম কেটে নিয়ে আসলো। কি আর করার বসে বসে খেলাম দুইভাই। এরমধ্যে আবার মেহেদী ভাই পাশের শতবর্ষী আমগাছ থেকে তাজা কয়েকটি আম পেরে আমাদের সামনে এনে রাখলেন। তাও খেলাম। আহা কি মজা...
মেহেদী ভাইয়ের হয়তো আমাদের একটু বেশীই মনে ধরেছে। সে বলতে লাগলো ভাই আমাদের এখানে খাঁটি দই টা অনেক মজার। আমরাও শুনলাম মাত্র। আহা একটু পরে তিনি(মেহেদী ভাই) আমাদের বললেন.. ভাই আপনাদের একটু সময় হবে? আমি আপনাদের নিয়ে একটু ঘুরতে যেতাম। হাতে যথেষ্ট সময় ছিলো। তাই মানা করলাম না।
আহা প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা পাড় হওয়ার পরে বুঝতে পারলাম মেহেদী ভাই আমাদের সেই সুস্বাদু দই খাওয়াতে নিয়ে আসছে। দামটাও দিতে দিলোনা।
তারপর আসার সময় দেখালো শত শত বছরের পূরোনো জোড়া বটগাছ আরো কত কি। ফিরে আসার সময় দেখা হলো একজন জীবন যোদ্ধা, জীবন সংসারে একজন প্রকৃত নায়কের সাথে। তার কথা নাহয় আবার অন্য একদিন লিখবো। আজ এই পর্যন্তই ইতি টানলাম। যদিও আজকের লেখাটি গুছিয়ে লেখার চেষ্টাই করিনি, অনেক ঘটনাও বাদ পড়েছে।
কোন একদিন হয়তো অন্য বাদ পড়া ঘটনাগুলো অন্য অগোছালো লেখার মধ্যেই প্রকাশ হবে।
সবশেষ বলবো
আসুন ভ্রমণ করি, জীবনকে উজ্জীবিত রাখি আর উপভোগ করি
#এমপিকে
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৫২