somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনফার্নো: দান্তে অলিঘিয়েরির মহাকাব্যিক নরক ভ্রমন

১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দান্তে ঘুমিয়ে পড়েন এবং হারিয়ে ফেলেন জীবন যাত্রার পথ।
পথপরিক্রমায় তিনি কবি ভার্জিলের দেখা পান এবং দু’জন মিলে একটি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
তাঁরা নরক পানে পাড়ি জমান এবং প্রত্যক্ষ করেন সেসব পাপীদের শাস্তিভোগ, যারা জীবদ্দশায় অমান্য করেছিল ঈশ্বরের আদেশ।




১৪শতকের বিখ্যাত কবি দান্তে অলিঘিয়েরি’র মহাকাব্য “দ্যা ডিভাইন কমেডি” এর প্রথম পর্ব: ইনফার্নো (নরক)
[দ্বিতীয় পর্ব: পারগেটোরিও (প্রায়শ্চিত্ত), তৃতীয়/শেষ পর্ব: প্যারাডিসো (স্বর্গ)]
এই রুপকে কবি দান্তে তাঁর কল্পিত নরক অতিক্রমের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।জীবনে পথচলার মধ্যপথে এসে কবি উপলব্ধি করেন তিনি ভুল পথ বেছে নিয়েছেন, তাই তিনি নরক ভ্রমনের সিদ্ধান্ত নেন।
বিয়েট্রিস এর অনুরোধে রোমান কবি ভার্জিল এই ভ্রমণে সঙ্গ দিতে রাজি হন।১৩০০সনের এক সুন্দর শুক্রবারে তিনি ঘুমন্ত দান্তেকে খুঁজে পান এক গাছের ছায়ায়।তাঁরা দু’জন মিলে পাড়ি জমান ঈশ্বর সন্ধানের পবিত্র এ তীর্থযাত্রায়।



পাতাল পরিভ্রমণে তাঁরা নয়টি কক্ষপথ অতিক্রম করেন।

"সকল আশা পরিত্যাগ করো, যে প্রবেশ করছো এখানে"

কক্ষ ১- অবরুদ্ধ কারাগার:



নরকের প্রথম কক্ষের বাসিন্দারা হলেন খ্রীষ্টধর্মে অদীক্ষিত পূণ্যবান প্যাগানেরা, যাদের শাস্তিস্বরুপ চিরকাল বন্দী করে রাখা হয়েছে নিকৃষ্টরুপী একটি স্বর্গে। তারা বাস করেন এমন এক প্রাসাদের অভ্যন্তরে যাতে রয়েছে সাতটি দরজা, যেগুলো সাতটি পূণ্যের প্রতীকি বহন করে।
এখানে দান্তে প্রাচীন সভ্যতার বেশ কজন প্রথম শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের দেখা পান, যাদের মধ্যে হোমার, সক্রেটিস, জুলিয়াস সিজার, এরিস্টটল, প্লেটো, লুক্রেশিয়া, সিসেরো উল্লেখযোগ্য।



দান্তের প্রশ্ন,”কেউ কি কখনো এখান থেকে বেরোতে পেরেছে?” এর প্রত্যুত্তরে ভার্জিল জানান, স্বয়ং যীশুখ্রীষ্ট একদা এই কারাগারে এসেছেন এবং নোয়াহ, মোজেস, আব্রাহাম, ডেভিড এবং রেচেলকে ক্ষমাপূর্বক মুক্তি দেন আর তাঁদের স্থানান্তর করা হয় স্বর্গে।



কক্ষ ২- কামলিপ্সা:
নরকের দ্বিতীয় এ স্তরে দান্তে এবং ভার্জিল দেখতে পান যৌনাচার যাদের গ্রাস করেছিল।নরকে বসবাসকারীদের মধ্যে এরাই মূলত প্রথম শাস্তিপ্রাপ্ত।শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ এদের ক্রমাগত উড়িয়ে নিয়ে চলছে বিরামহীনভাবে।এর দ্বারা বোঝানো হয়, কামাকাঙ্খা মানুষকে অপ্রয়োজনীয় এবং অনর্থক জৈব আনন্দে প্রলুব্ধ করে।
এখানে কবি দেখতে পান ক্লিওপেট্রা, ট্রিস্টান, হেলেন অফ ট্রয়, অ্যাকিলিস প্রমুখকে।



ফ্রাঞ্চেস্কা ডা রিমিনি দান্তেকে জানান কিভাবে তিনি তাঁর দেবরের সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হন এবং এতে ক্ষিপ্র হয়ে কি বীভৎসভাবেই না তাঁর স্বামী জিওভানি তাঁদের হত্যা করে।



কক্ষ ৩- পেটুকবৃত্তি:



বিশাল কীট সেরেবেরাস পাহারা দিয়ে রেখেছে অতিভোজনকারীদের। যারা বাধ্য হয়েছে বিরতিহীন, অপবিত্র, অতিঠান্ডা বর্ষণে জঘন্য জলকাদায় শুয়ে থাকতে।নোংরা কাদামাটির প্রতীকি অর্থ দাড়ায় মানুষের ব্যক্তিগত অধঃপতন যারা নিজেদের নিমজ্জ্বিত করেছিল অত্যাধিক খাদ্যাহার, পানাহার ও অন্যান্য বৈশ্বিক অভিলাষে; কিন্তু তারা প্রত্যাখাত করেছিল পাশেই পড়ে থাকা অভাবীদের।



কক্ষ ৪- লোলুপতা:
নরকের চতুর্থ স্তরে দান্তে এবং ভার্জিল দেখতে পান সেসব আত্মাদের যারা শাস্তিপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন লোভ করার জন্য।তাঁদের বিভক্ত করা হয়েছে দুটি শ্রেণীতে-
* যারা আঁকড়ে ধরে রেখেছিল তাদের সম্পদ
* যারা তাঁদের সম্পদ ব্যয় করেছিলেন সীমাহীনভাবে।
বিশাল ওজনের একটি পাথর মাঝখানে রেখে একজন আরেকজনের দিকে বুক দিয়ে ধাক্কা দিতে থাকে, যা দিয়ে তাঁদের আজীবন সম্পদের প্রতি লিপ্সা প্রকাশ করা হয়।



এঁদের পাহারা দিচ্ছেন গ্রীক শাসক প্লুটো।লোভীরা অর্পিত শাস্তিতে এতোই সমোহিত হয়ে ছিল যা দেখে কবি দুজন তাঁদের সাথে কোন প্রকার কথা বলার চেষ্টা করেননি।
দান্তে এখানে বেশ ক’জন পাদ্রী: কার্ডিনাল এবং পোপদের দেখতে পান।

কক্ষ ৫- ক্রোধ:
নরকের পঞ্চম এ স্তরে ক্রুব্ধ এবং গোমড়ামুখো পাপীরা সাজাপ্রাপ্ত হন।ফ্লেগায়্যাস নৌকায় চড়ে স্টিংক্স নদী পার হওয়ার সময় দান্তে এবং ভার্জিল দেখতে পান ক্রুব্দ পাপীরা একে অপরের সাথে হাতাহাতিতে লিপ্ত আর গোমড়ামুখোরা নদীর তলদেশে হাবুডুবু খাচ্ছে।এ শাস্তির ফলে কি ধরনের পাপ তারা জীবদ্দশায় করেছিলো তা প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে।



দান্তে এখানে বিশিষ্ট ফ্লোরেন্টাইন রাজনীতিবিদ ফিলিপ্পো আর্জেন্টির সাক্ষাৎ পান, যিনি ফ্লোরেন্স থেকে দান্তে বিতাড়িত হওয়ার পর তাঁর সহায়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন।

কক্ষ ৬- বৈধর্ম্য:
ষষ্ঠ বৃত্তে দান্তে এবং ভার্জিল দেখতে পান ধর্মদ্রোহীদের, যাদের শাস্তিস্বরুপ অনলগোরে পুড়তে হবে অনন্তকালের জন্য।এখানে দান্তে ফ্লোরেন্স এর এক দম্পতি- ফারিনাতা ডেগলি উবার্টি এবং ক্যাভালকান্তে ডে ক্যাভালকান্টির সাথে কথা বলেন।দৈববাণী সম্পর্কিত দান্তের এক প্রশ্নের জবাবে ফারিনাতা জানান, “নরকের আত্মারা পৃথিবীর জীবন সম্পর্কে ধারণা পায় ভবিষ্যৎ দেখে, বর্তমান পর্যবেক্ষন করেনা।কাজেই ভবিষ্যৎ দেখার দরজা যদি কখনো বন্ধ করে দেয়া হয় তবে আর কখনোই কোন কিছুর ব্যাপারে জানা সম্ভব হবেনা ।”



দান্তে এখানে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ব্যাক্তির দেখা পান: গ্রীক দার্শনিক এপিকারাস, রোমান শাসক দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক, পোপ দ্বিতীয় অ্যানাস্টাসিয়াস।অনেকের মতে, শেষের জনের ব্যাপারে দান্তে ভুল করেছেন।তিনি ছিলেন প্রথম বাইজ্যান্টাইন শাসক অ্যানাস্টাসিয়াস।

কক্ষ ৭- জুলুম:
এ স্তরে জুলুমকারী পাপীদের শাস্তি দেয়া হয়।এটির প্রবেশদ্বার মিনোটর নামক একটি প্রাণী পাহারা দেয়।দান্তে এবং ভার্জিলকে দেখে এটি নিজেকে কামড়ানো শুরু করে।ভার্জিল এটির উদ্দেশ্যে বলে দান্তে না, থিসিয়াস হচ্ছে তার অপছন্দনীয় শত্রু।এ কথা শুনে প্রাণীটি তাঁদের দিকে তেড়ে আসে আর এটির পাশ কাঁটিয়ে তাঁরা দুজন সপ্তম অক্ষে ঢুকে পড়েন।



ভার্জিল বলেন এর মধ্যে দিয়েই যীশুখ্রীষ্ট ভাল মানুষদেরকে নরক থেকে বের করে এনে স্বর্গে নিয়ে যান।নরকের সপ্তম স্তরটি তিনটি বলয়ে বিভক্ত।
বাহ্যিক বলয়: জনগন এবং সম্পদের বিরুদ্ধে জুলুমকারীরা এখানে সাজাপ্রাপ্ত হয়।খুনী ও ডাকাতেরা ফ্লেগেথন এ নিমজ্জ্বিত হতে থাকে, যেটি হলো ফুটন্ত রক্ত এবং আগুনের নদী।এখানে কবি দান্তে আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট, গায় ডে মন্টফোর্ট, রোমানোর তৃতীয় এজ্জ্বেলিনো প্রমূখকে।


মধ্য বলয়: এ বলয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত হয় আত্মহত্যাকারী এবং অমিতব্যয়ীরা।আত্মহত্যাকারীদের এক ধরণের গ্রন্থিযুক্ত ঝোপে পরিণত করা হয় এবং হার্পিদের খাওয়ানো হয়।


দৌড়াতে থাকা অমিতব্যায়ীদের পিছনে লেলিয়ে দেয়া হয় ভয়ানক কুকুর, যারা তাদের টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে।
আভ্যন্তরীন বলয়: ধর্মনিন্দাকারী এবং পায়ুকামীদের এ বলয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হয়।সাজাপ্রাপ্তদের জ্বলন্ত বালির উপরে শোয়ানো হয়, তাদের উপর বর্ষিত হয় জ্বলন্ত বৃষ্টি।দান্তে এখানে দেখা পান সর্বোত্তম যোদ্ধা ক্যাপানিয়াস এর, যিনি যীশুখ্রীষ্টের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলেন।এছাড়াও তিনি তাঁর গুরু ব্রুনেট্টো লাটিনিকে এখানে দেখেন এবং খুব অবাক হন।তিনি গুরুর প্রতি সম্মান জানান তাঁকে দীক্ষিত করার জন্য।এছাড়াও ছিলেন ক্যাটেলিয়ে ডি রোস্সো গিয়ানফিগলিয়াজ্জ্বি, গুইডো গেরা, জিয়োভানি ডি বুইয়ামন্টে।



নরকের শেষ দুটি অক্ষে শাস্তি দেয়া হয় প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতকদের।এখানে যেতে অতিক্রম করতে হয় একটি বিশাল খাড়া বাঁধ, যা দান্তে এবং ভার্জিল পাড়ি দিয়েছিলেন তিন মাথা বিশিষ্ট একটি বিশাল গেরিয়ন এর পিঠে চেপে।দান্তের মতে গেরিয়ন হল: মনুষ্য, দানো এবং সরীসৃপ এর সমন্বয়।যা প্রতিফল ঘটায় সুন্দর দেহদারী একজন সৎ মানুষের অবয়ব যে কিনা আসলে একটি ঠগ।



কক্ষ ৮- জোচ্চুরি:
এ স্তরটিতে রয়েছে দশটি খন্দ বা গর্ত বা পাগলা গারদ।
গারদ ১: এখানে রাখা হয়েছে যারা পতিতাবৃত্তি ও প্রলোভন করতো।এখানে কবিরা দেখতে পান ভেনেডিকো কেচ্চিয়ান্যামিকো কে যে তার বোনকে বিক্রি করে দিয়েছিলো।এছাড়াও এ স্তরে দেখা যায় জেসন কে।
গারদ ২: এখানে রাখা হয়েছে চাটুকার, তোষামোদকারীদের।লুক্কা এবং থাইসকে এখানে দেখেন কবিদ্বয়।
গারদ ৩: ঘুষ গ্রহনের দোষীদের এই গারদে পুরে রাখা হয়।এদের মাথা একটি পাথরে চেপে রেখে পায়ের নীচে আগুন জ্বালানো হয়।পোপ তৃতীয় নিকোলাস, পোপ ষষ্ঠ বোনিফেস, পোপ পঞ্চম ক্লিমেন্ট কে এখানে দেখতে পান দান্তে অবং ভার্জিল।
গারদ ৪: জাদুকর আর ভন্ড ধর্মপ্রবক্তাদের স্থান হয় এই গর্তে।শাস্তিস্বরুপ তাদের মাথা শরীরের পিছনের দিকে ঘুরিয়ে রাখা হয় যাতে তারা সামনে কি আছে তা দেখতে না পেরে পেছনের দিকেই চলতে থাকে।দান্তে এখানে সম্রাট অ্যাম্ফিয়ারাস, টাইরেসিয়াস ও তাঁর কন্যা ম্যান্টো, ক্যালচাস ও আরুন্স কে দেখেন।
গারদ ৫: দূর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ এর ঠাঁই হয়েছে এ ঘরে, যেটি হচ্ছে গলন্ত আলকাত্রায় তৈরী।এদের পাহাড়া দেয়ার জন্য রাখা হয়েছে মালেব্রাঙ্কে।



গারদ ৬: এ স্তরে তাঁরা দেখতে পান ভারী, চকচকে পারদের তৈরী জোব্বা পরিহিত ভন্ডদের হেঁটে বেড়াতে।মিথ্যা এমনভাবে তাদের গ্রাস করেছে যার ফলে তারা আর আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করতে পারছেনা, ক্রমান্বয়ে পতিত হচ্ছে নীচের দিকে।দান্তে কথা বলেন ক্যাটালানো ও লোডেরিঙ্গোর সাথে, যাদের কথা দিয়ে কথা না রাখার খ্যাতি ছিল।যীশুখ্রীষ্টকে ক্রুসিফাই করার পেছনে দায়ী উচ্চ যাজক পোপ সিক্সটাস ভি. ক্যাইয়াফাসকেও এ স্তরে দেখতে পান দান্তে, তিনি মাটিতে ক্রুশবিদ্ধ, পদদলিত অবস্থায় ছিলেন।
গারদ ৭: এ গর্তে রাখা হয়েছে সমস্ত চোরদের যাদের পাহাড়া দিচ্ছে সেন্টর ক্যাকাস।নানা ধরনের সাঁপ ও টিকটিকি তাদের বিরামহীনভাবে কামড়ে দিচ্ছে।প্রতি কামড়ে চোরদের নানান পরিবর্তন হয়।ভ্যান্নি ফুচ্চি কামড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ছাঁই এ পরিণত হয় এবং পুনরায় জন্মগ্রহণ করে।অ্যাগনেলো ছয় পা বিশিষ্ট সরীসৃপ এ পরিণত হয়।
গারদ ৮: কুমন্ত্রনাদাতা আর কুপরামর্শদাতাদের রাখা হয় ৮ম গর্তে।এরা এমন মানুষ না যারা মিথ্যা পরামর্শ দিতো, এরা হলো এমন যাদের পরামর্শ শুনে অন্যরা ঠগামি করতো।ট্রোজান হর্স নিয়ে প্রতারণা করার অপরাধে ইউলিস্যাস ও ডায়োমেডেস কে এখানে শাস্তিভোগ করতে স্থান দেয়া হয়।
গারদ ৯: এখানে দেখা যায় বিবাদ সৃষ্টিকারীদের।এদের গর্দানের উপর ঝুলতে থাকে বিশাল আকারের খাঁড়া একটি তলোয়ার, যা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকে ভয়াল দর্শন এক দৈত্য।হঠাৎ আঘাত করে ঘড় থেকে মাথা আলগা করে দেয়া হয়।যখনি তাদের ক্ষতস্থানে জোড়া লেগে যায় তখনি আরেকবার আঘাত হানা হয়।কবি দান্তে এখানে গায়াস স্ক্রিবোনিয়াস কুরিওকে দেখতে পান যে জুলিয়াস সিজারকে পম্পে নগরীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে বাধ্য করে।এছাড়াও ছিল বের্ট্রান ডি বর্ণ।
গারদ ১০: এই শেষ গর্তে স্থান দেয়া হয়েছে আলকেমিস্ট, মিথ্যা শপথকারী এবং জালিয়াতদের- যাদের বলা হয়েছে সমাজের রোগ।আলকেমিস্ট গ্রিফোলিনো ডিঅ্যামেঞ্জো এবং ক্যাপোচ্চিও কে একটি খুঁটিতে পিঠেপিঠি করে গেড়ে রাখা হয়।জোসেফের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়ার ফলে পটিফার এর স্ত্রীকে কঠিন রোগে ভুগতে হয়।ছদ্মবেশে পিতা রাজা থিয়াস এর সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার ফলে মাঈরা কে পাগল বানিয়ে দেয়া হয়।

কক্ষ ৯- বিশ্বাসঘাতকতা:
নরকের শেষ এবং এ স্তরটি বরফের তৈরী একটি জলাধার যার চারিদিক ঘিরে আছে দৈত্যাকার বাইবেলিয় দানো।এটিতে চারটি গোলাকার খন্ড রয়েছে। যার পাপ যতো নিকৃষ্ট তাকে রাখা জলাধারের বরফের ঘবীরতা তত বেশী।প্রতিটি স্তরের নামকরণ করা হয়েছে সে ন্যক্তির নামে যে সবার প্রথমে পাপটি করেছিল।


কেইনা(১ম পর্ব): কেইন এর নামানুসারে এ নামকরণ হয় যে তার নিজের ভাইকে হত্যা করে।এ স্তরের পাপীদের থুতনী পর্যন্ত বরফের নীচে চুবানো থাকে এমন জায়গা, যেখানে লজ্জ্বা নিজেকে প্রদর্শন করতে পারবে।দুই ভাই অলেসান্দ্রো এবং নেপোলিয়ান ডেগলি অ্যালবার্টি একে অপরকে খুন করে।মর্ড্রেড বিশ্বাসঘাতকতা করে তার চাচা (মতভেদে পিতা)কে খুন করে।
অ্যান্টেনোরা(২য় পর্ব): ট্রয় এর অ্যান্টেনোর এর নামানুসারে এ নাম দেয়া হয়, যে মধ্যাযুগীয় রীতি অনুসরন করে নিজের শহরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেকে গ্রীকের কাছে সমর্পণ করে।মূলত রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকদের এখানে শাস্তি দেয়া হয় কেইনার মতো করে।এখানে কাউন্ট উগোনিনো, আর্চবিশপ রুগীয়েরি ডেগলি উবালডিনী কে দেখতে পান দান্তে।
টোলোমেইয়া (৩য় পর্ব): আবুবুস এর পুত্র টোলেমির নামানুসারে এই নামকরণ হয়।সে সিমন ম্যাকাবিয়াস এবং তাঁর পুত্রকে একরাতে নিজ গৃহে ভোজে আমন্ত্রণে ডেকে এনে হত্যা করে।অতিথিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে যারা তাদের এখানে সাজা দেয়া হয়। তাদের উপুর করে শোয়ানো হয়, মুখমন্ডল ব্যাতিত আর সমস্ত শরীর বরফে আচ্ছাদিত করা হয়।এদের শাস্তির পরিমাণ আগের দুই পর্বের তুলনায় আরো বেশী ভয়ানক হয়ে থাকে কারণ অতিথির সাথে সম্পর্ক সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক।নিজ আবাসে ভাইকে নিমন্ত্রনে এনে তাকে একদল ভাড়াটে খুনে দিয়ে হত্যা করায় ।
এদের শরীরে ভর করে শয়তানের আত্মা, মানবরুপে এরা চলাচল করলেও এদের ভেতর থেকে হারিয়ে যায় অনুশোচনা করার শক্তি।
জ্যুডেক্কা(৪র্থ পর্ব): যীশুখ্রীষ্টের বিশ্বাস ভঙ্গকারী জুডাস ইসক্যারিয়োট।এখানে নিজেদের ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারীদের শাস্তি দেয়া হয়।সব পাপীদেরকে বরফের ভিতরে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে রাখা হয়, তাদের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকৃত করে ডেয়া হয়।দান্তে এবং ভার্জিল খুব তাড়াতাড়ি নরকের কেন্দ্রে চলে যান।
সেখানে তারা দেখেন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সবথেকে বড় প্রতারণাকারী তিন মাথা বিশিষ্ট লুসিফারকে: যার ১টি লাল, ১টি কালো এবং অপরটি হালকা হলুদাভ।


লুসিফার শীতল পানির ভেতরে বন্দী, তার ছয় চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।পালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত ঝাপটাচ্ছে তার ছয়টি ডানা।প্রতিটি মুখ দিয়ে সে কামড়ে খাচ্ছে বিশ্বাসঘাতকদের।

দান্তে এবং ভার্জিল শয়তানের জীর্ণ পশম বেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে নরক থেকে।তাঁরা পেরোচ্ছেন বিশ্বের কেন্দ্র এক, সেদিন ইস্টার সানডে- আকাশে শত শত তারা।


(অজানা শিল্পীর আঁকা ইনফার্নো)


বলা হয়ে থাকে দান্তের ইনফার্নো সবথেকে ভালভাবে ফুটে উঠে সান্দ্রো বত্তিচেলির হাতে।


ভালভাবে দেখার জন্য

… By that hidden way
My guide and I did enter, to return
To the fair world: and heedless of repose
We climb’d, he first, I following his steps,
Till on our view the beautiful lights of Heaven
Dawn’d through a circular opening in the cave:
Thence issuing we again beheld the stars.





রেফারেন্স:
HistoryLists,Enotes,Wikipedia
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩৪
৪৩টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×