ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আধুনিক বিশ্বের প্রথম কর্পোরেশন। রোমান সভ্যতায় কর্পোরেশনের ধারনা থাকলেও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে-ই প্রথম কর্পোরেশন হিসেবে ধরা হয়। ১৬০০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর এক রাজকীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে রানী প্রথম এলিজাবেথ এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব ভারত অর্থাৎ বর্তমান ভারতীয় উপমহাদেশ আর মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ ব্যাবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করাই ছিলো এর মূল উদ্দেশ্য।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
কিন্তু ফ্রান্স বা পর্তুগালের কোম্পানি গুলোর মতো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজ শুধু ব্যাবসা বানিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো না বরং ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ মদদে বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানো-ও ছিলো এর অলিখিত দায়িত্ব।
রানী প্রথম এলিজাবেথের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় ইতিহাসের কুখ্যাত এই কোম্পানিটি
অধ্যাদেশের মাধ্যমে রাণী এই কোম্পানিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেয়ারে বিভক্ত করেছিলেন, এইসব শেয়ারের উপর ভিত্তি করে লাভের অংশ বন্টন করা হতো, অনেকটা আজকের জয়েন্ট স্টক কোম্পানিগুলোর মতো। এছাড়া শেয়ারহোল্ডারদের দায়ও সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়, একজন যতটুকু ইনভেস্ট করবে তার দায় ঠিক ততটুকুই হবে, এর বেশি না। কোম্পানীর অতিরিক্ত ঋণ আর ক্ষতির একটা অংশ রানী রাজ কোষাগার থেকে প্রদান করতেন।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামাংকিত মুদ্রা
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সাম্রাজ্যবাদের একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে আসছিলো। একপর্যায়ে তারা বিভিন্নভাবে দেশের উচ্চ পদস্থ কর্তাব্যাক্তিদের হাত করে ব্যাবসায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। এছাড়া নিজস্ব সেনাবাহিনীর দ্বারা স্থানীয় কৃষকদের নিকট হতে খাজনা আদায় করতে গিয়ে অধীন এলাকায় অত্যাচার নির্যাতন চালানোর অভিযোগও ছিলো তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে ব্যাবসায়িক উদ্দ্যেশ্যের আড়ালে অন্য দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা ছিলো এর প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলা আর বিহারের কতৃত্ব হাতে নেয়ার পর ভারতের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিনত হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেসময় আর সব পণ্যের সাথে আফিমও বাইরের দেশগুলোতে রপ্তানী করতে শুরু করে তারা। এই মাদক কেনা বেচা নিয়ে একপর্যায়ে চীনের সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ে ব্রিটেন। আর এভাবেই মাদক চোরাচালান প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক রূপ নেয়। প্রায় একশো বছর তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো এই উপমহাদেশে।
অনেক অত্যাচার শোষন আর নিপিড়নের পর ১৮৫৭ সালে সিপাহীরা রক্তাক্ত বিদ্রোহের মাধ্যমে ভারত থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় করে এই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে, অবসান হয় পরাধীনতার প্রথম শতকের। ছলনার মুখোশ খুলে ভারত শাসনের ভার সরাসরি গ্রহন করে ব্রিটেন, যেটি শেষ হয়েছিলো আরও প্রায় একশো বছর পর, ১৯৪৭ সালের অগাস্টে, ভারত আর পাকিস্তান নামের দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে।