somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নো সারপ্রাইজেস

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাঝে মাঝে আমার খুব বুক ব্যথা করে। ইদানিং ব্যস্ততা বেড়ে গেছে অনেক। প্রচুর খাটতে হচ্ছে। সকাল আটটার সময় বের হয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। ব্যথাটা কি এই কারণেই হচ্ছে? অধিক পরিশ্রমের ভার সইতে অপারগ হয়ে গেছে আমার হৃদয়? প্রথম প্রথম ব্যাপারটা তেমন একটা পাত্তা দিতাম না। কিন্তু ব্যথাটা ক্রমশ বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবার কথা চিন্তা করি আমি। বড় ডাক্তার। তার এ্যাপয়নমেন্ট পাওয়াটাও মুশকিল। গতকাল ফোনে সিরিয়াল নিয়েছি। আজ থেকে সপ্তাহখানেক পরে দেখানো যাবে। কে জানে অতদিন বাঁচবো কি না! হঠাৎ যদি বুকের ব্যথা বেড়ে যায়? যদি ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাক হয়? ঘরে আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। বড় মেয়েটা আমেরিকায় গিয়েছে পিএইচডি করতে। ছোট ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে দূরের এক শহরে। অনেকদিন ধরে সে ঘরে ফেরে না। ছুটিতেও না। ওর নাকি পড়াশোনার অনেক চাপ। আমার আকস্মিক শরীর পতনের সময় বেচারা স্ত্রী আমার জীবন বাঁচানোর জন্যে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবে তো? বড্ড গাঢ় ঘুম তার। হয়তো বা সে শুনতেই পারবে না আমার আর্ত আওয়াজ। হয়তো আমি আঁকড়ে ধরবো বিছানার চাদর, বুক খাঁমচে ধরে ক্ষীণস্বরে ডাকবো, "রিনা, ও রিনা। শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে। পানি দাও এক গ্লাস"। কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করার পর হয়তো সে ঘুম থেকে উঠবে, ততক্ষণ কি আমি বেঁচে থাকবো? বড্ড পিপাসা লাগে ইদানিং। বেঁচে থাকার পিপাসা। আমার গলা, বুক, পেট অসহ্য যন্ত্রণায় কোঁকাতে থাকে। জানান দেয়, আর বেশি দিন ওরা আমার এই নশ্বর দেহের সাথে সংযুক্ত থাকতে আগ্রহী না। আমার ভয় করে।

জীবনটা বড় একঘেয়ে। সবকিছু চলছে ঘড়ির কাঁটার নির্দেশিকায়। ঘুম, এ্যালার্ম ঘড়ি, জগিং, নাস্তা, অফিস বাস, লাঞ্চব্রেক, ঘরে ফেরা, সবকিছু যেন এক সুতোয় বাঁধা পুতুল। কম্পাঙ্কের সামান্য হেরফেরে একটি পুতুল ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে বাকিগুলোও টালমাটাল হয়ে যাবে। শুরু হবে এক মর্মন্তুদ এবং অভাবনীয় নৃত্যানুষ্ঠান। ইচ্ছে করে, খুব ইচ্ছে করে কখনও এই সূতোর বাঁধন কেটে দিয়ে, সবকিছু তছনছ করে চলে যাই দক্ষিণ দিকে। সেখানে রাত্রি বেলা সাগরতীরে বসে শঙ্খের হাহাকার ধ্বনি শুনবো। অলীক জোছনার নরম আলোয় অবগাহন করে ডুবে যাবো শাদা অন্ধকারে। কিন্তু আমার কোথাও যাওয়া হয় না। এই শহর তার কিলবিলে হাত-পা-শুড় দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আমাকে। কোথাও যেতে চাইলেই ঊর্ধতন কর্মকর্তার ফোন। কোথাও যেতে চাইলেই শরীরের গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা। কোথাও যেতে চাইলেই সিনায় সিনায় আলস্যবোমার বিস্ফোরণে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় বুক। বিদীর্ণ হয় ইচ্ছেশরীর। ছুটি পেলেই হৈ-হুল্লোড় আর ভ্রমণ যেন গতজনমের ফেলে আসা স্মৃতি। আমাদের কোথাও যাওয়া হয় না। কর্পোরেট প্রভুরা আমার ক্লান্তি ক্ষমা করে না। আমরা শুধু ঘরের মধ্যে বসে থেকে অপেক্ষা করি সারপ্রাইজের।

হয়তো কোন এক শুভ্র সকালে রুহি চিঠি পাঠাবে আমেরিকায় যাবার রিটার্ন টিকিট সমেত। হয়তো বা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি না ফেরা সুজয় ওর ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়ালেখার ফাঁক গলিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরে জড়িয়ে ধরবে ওর মাকে আর আমাকে। কিন্তু দিন যত কাটে দুঃখ তত বাড়ে। কোনো সারপ্রাইজ আসে না এই অসুখী, একাকী, নিরানন্দ, নিরামিষ জীবনে। সম্ভাব্য সারপ্রাইজগুলোর মধ্যে যেটা সবচেয়ে কম কষ্টকল্পিত, সে দুটোই আসে না। কিন্তু তাই বলে কি স্বপ্ন দেখা থেমে যাবে? আরো নানারকম চমকপ্রসবা সুসময়ের কথা চিন্তা করি আমি অবসরে। সময়টা ভালোই কেটে যায়। কত রকম উদ্ভট চিন্তা যে মাথায় খেলা করে তখন! হয়তো বা কোন মোবাইল কোম্পানির র্যা ন্ডম সিলেকশন পদ্ধতির লটারিতে জিতে আমি এক লক্ষ টাকা পেয়েছি। কিংবা সাবান কেনার পর স্টিকার জমা দিয়ে পেয়ে গেছি ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকার টিকেট। এই তিতকুটে শহরে, ধূলো আর আলোর বৈপরীত্য আমার চোখের সামনে এলে একজোট হয়ে যায়। চোখ মেলতে পারি না তীব্র আলোয়। ধূলোয় ধূসরিত পোষাকে একাকীত্ব আর একঘেয়েমির যোগসাজশে লিপিবদ্ধ হয় ক্রীতদাসের রোজনামচা।

আরো একটি বিষণ্ণ, কর্মক্লান্ত এবং একঘেয়ে সপ্তাহের শেষ। আগামীকাল ছুটি। সারা সপ্তাহ কাজ করে মাত্র একদিনের এই ছুটিটা যেন আমাকে আরো বেশি ক্লান্ত করে ফেলে। এই ক্লান্তি শারিরীক নয়, মানসিক। ছুটির দিনে ইচ্ছে করে কোথাও ঘুরে আসতে। দূরে কোথাও। তবে খুব দূরে নয়। কক্সবাজার নয়, আশুলিয়া। রাঙামাটি নয়, শফিপুর। সাজেক নয়,মধুপুর। বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবো আমরা দুজন। পিকনিক স্পটের ভীড় আর উচ্চশব্দের গান থেকে দূরে চলে যাবো। বাড়ি ফেরার পথ ধরবো না সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত। এসব ভাবতে ভাবতেই বেলা গড়িয়ে যায়। আলসে দুপুরে ভাতঘুম দেয়ার পর শরীরটা ভার ভার লাগে। তারপর আর কোথাও যাওয়া হয় না। আর একা একা কোথাও গেলেই কি মুক্তি পেতাম? রিনা কোথাও যেতে চায় না। সারাদিন ধরে মেগাসিরিয়াল দেখে তার বেশ কেটে যায় সময়। এই একাকীত্ব সময় সময় এমন ভাবে চেপে বসে, আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বুক ব্যথা করে। ডাক্তার দেখানো দরকার। ভালো, পসারঅলা ডাক্তার। আর মাত্র পাঁচদিন পরে শুরু হবে আমার চিকিৎসা পর্ব। কে জানে ভাগ্যে কী লেখা আছে!

অফিসে সেদিন এক কলিগের সাথে ভীষণ লেগে গেলো। রাতে ভালোমত ঘুম না হওয়ায় কাজ করতে গিয়ে মনোযোগের অভাব লক্ষ্য করছিলাম। অনিচ্ছা স্বত্তেও কিছু ভুল করে ফেললাম। এমডি সাহেব তার রুমে ডেকে পাঠিয়ে শীতল কণ্ঠে চাকরীচ্যূত করার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন। ডেস্কে ফেরার পর কৌতুহলী চোখে সবাই আমার দিকে চেয়ে থাকলো। তবে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলো না রহমান সাহেব ব্যতীত। মনে মনে সে আমার সাথে স্যারের কী কথা হয়েছে জানার জন্যে ফেটে গেলেও মূল ব্যাপারে আসার আগে সে একটু সৌজন্যতা বজায় রাখার অসাধ্য কাজটি সাধন করলো!
-খবর কী ভাই? ভালো আছেন?
-আছি আর কী একরকম।
সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে আবার কাজে ডুব দেয়ার ভান করলাম। তবে অভিনয়টি ছিলো খুব কাঁচা। যে কেউ একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবে। আর এখানে তো রহমান সাহেবর মত ধুরন্ধর লোক!
-খামোখা ফাইলপত্রের মধ্যে গুঁজে থেকে আমাকে এ্যাভয়েড করার চেষ্টা করছেন, এটা কি ঠিক হচ্ছে?
-আমি একটু ব্যস্ত। আপনি পরে আসুন।
-পরে কখন আসবো?
-লাঞ্চটাইমে আসেন।
-লাঞ্চটাইমে তো আমার একটু বাইরে যেতে হবে। এখনই বলেন না।
-কী বলবো?
-বলছিলাম কী, স্যারের কাছ থেকে ধমক খেয়ে এসে কাজ করার চেষ্টা করলে তা বৃথা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
-আপনাকে কে বললো আমি ধমক খেয়েছি? এসব ফালতু কথা কোথা থেকে পান?
আমার ক্ষেপে যাওয়াটা উপভোগ করে একটা গা জ্বালানো হাসি হাসলো সে।
-আরে রাগেন কেন? আচ্ছা বাদ দেন। ইদানিং আপনাকে প্রায়ই খুব মনমরা দেখা যায়। কারণ কী? ভাবী খাইতে দেয় না ঠিকমত? নাকি শারিরীক সমস্যা? আমাশা, কোষ্টকাঠিন্য, ধ্বজভঙ্গ, সিফিলিস, গনোরিয়া কোনটা হয়েছে? আমার কাছে ভালো হোমিও ডাক্তারের খোঁজ আছে।
লোকটা খুব মজা পাচ্ছে। তাকে আর এত আমোদ করার সুযোগ দেয়া যাবে না। এনাফ ইজ এনাফ। আমি তাকে সম্পূর্ণ ভাবে অগ্রাহ্য করে মুখ বন্ধ রাখি। তার কোন কথার জবাব দেবো না আর। নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে বলতে থাকি "নো এ্যালার্মস এ্যান্ড নো সারপ্রাইজেস... সাইলেন্ট"
পরে অফিসের পিয়ন মারফত শুনেছি, সেদিন নাকি রহমান সাহেব আমার অতি প্রতিক্রিয়া এবং বিড়বিড় করে কথা বলার অভিনয় অত্যন্ত সুচারূ এবং মন কাড়া অভিনয়ের মাধ্যমে অন্য কলিগদের সামনে প্রদর্শন করে ব্যাপক বাহবা কুড়িয়েছিলো।

আজ সকালে এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে। দরজার ফাঁক দিয়ে কে যেন একটি ইনভেলপ গলিয়ে দিয়েছে। অনাদরে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি খাম। আমার বড় মায়া লাগলো দেখে। যেন সে আমার কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, বন্ধু, বা শুভানুধ্যায়ী। এমন কেন বোধ হচ্ছে আমার? এই বেদনাতুর অনুভূতির উৎস কোথায়? একঘেয়ে জীবন? স্থূল রূচির সহকর্মী? দূরে চলে যাওয়া সন্তানেরা? চিররুগ্না স্ত্রী? আমার মনটা চনমনিয়ে ওঠে। নিঃসন্দেহে এটা কোন ইউটিলিটিজ বিলের কাগজ নয়, ব্যাংকের নথি নয়, অথবা নিমন্ত্রণের কার্ডও নয়। তবে কী হতে পারে? সেই ত্রিশ বছর আগের সময়টা রঙিন করে তুলেছিলো যে, রোখসানা; তার চিঠি? অবশেষে সে কি আমার প্রতি তার অন্যায় আচরণের কথা ভেবে অনুতপ্ত হয়েছে? ইন্টারহল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ম্যান অফ দ্যা সিরিজের পুরষ্কার পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে? যেটা আমার প্রাপ্য ছিলো, কিন্তু সিনিয়রদের ষড়যন্ত্রে হাতছাড়া হয়ে যায়, সেটি? এমন হাস্যকর চিন্তার উশকানিতে আমার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে। শেষ পর্যন্ত আশাহত হতেই হবে এমনটা ভেবে মিনিট খানিকের জন্যে প্রশ্রয় দেয়া ভাবনাগুলোকে খাঁচা থেকে বের করে দেই। কিন্তু ওরা কোথাও যায় না। আমাকে ঘিরে ধরে উড়তে থাকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খামটা হাতে নিয়ে খুলে ফেলি। ছোট্ট একটা কাগজে এলোমেলো, বাজে হাতের লেখায় একটা চিরকূট। পাঠোদ্ধার করতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হল আমাকে। প্রায় মিনিট খানেকের চেষ্টায় পুরোটা পড়তে পারলাম।

"আপনার জীবনে সারপ্রাইজের খুব অভাব তাই না? আমরা আমাদের ভোক্তাগণের চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত মানের সারপ্রাইজ সরবরাহ করে থাকি। আপনার মনচক্রকে আমরা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি গত কয়েক মাস যাবৎ। আপনার কী ধরনের সারপ্রাইজ প্রয়োজন লিখে জানান। আমাদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা,
বেস্ট সারপ্রাইজেস
জিপিও পোস্ট বক্স নং ২৫৫৩
কুশলে থাকুন। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।"

লেখাটা পড়ে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। বোঝাই যাচ্ছে কেউ একজন রসিকতা করছে আমার সাথে। ব্যাড জোক। খুবই বাজে রসিকতা। তবে একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না ঠিক। আমি যে মনে মনে হরেকরকম সারপ্রাইজের কথা চিন্তা করি, তা ওরা জানলো কীভাবে? ব্যাপারটা কি ভৌতিক? ছিহ! কী ভাবছি আমি! সারাজীবন এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার থেকে যদি এই আধবুড়ো বয়সে কোন সিদ্ধান্তের যৌক্তিক সমাপন উদ্ধার করতে গিয়ে ভূতের দ্বারস্থ হই তাহলে কী করে হবে! নিশ্চয়ই এটা কোন কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু মনের খচখচানি যায় না। কাকতালীয়তারও একটা সীমা থাকে। আমি তো কাউকে বলি নি এসব। তাহলে তারা কীভাবে জানবে?

-তুমি তো আমাকে কোন কথাই বলো না! আমি বুঝবো কী করে? কতক্ষণ ধরে ব্যথা হচ্ছে? ব্যথা কি খুব বেশি?
আজ দুপুরে গরুর মাংস দিয়ে পোলাও খাবার পর থেকেই কেমন যেন খুব অস্বস্তি লাগছিলো। দুপুরে ঘুমুতে যাওয়ার সময় ব্যথাটা বেড়ে যায়। আমি শঙ্কিত মনে অপেক্ষা করতে লাগলাম, গা কি ঘামে ভিজে যাচ্ছে? ব্যথাটা কি ছড়িয়ে যাচ্ছে চারপাশে? ঘাড় ব্যথা করছে? হৃৎপিণ্ড প্রবলভাবে স্পন্দিত হচ্ছে? শ্বাসকষ্ট? নাহ, এই যাত্রায় বোধ হয় বেঁচে গেলাম। তবে রিনার উদ্বিগ্নাকুল জেরার সম্মুখীন হতেই হলো। তার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তুড়ি মেরে ব্যথা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করলাম।
-আরে তেমন কিছু না। গুরুপাক হাওয়া খেলাম। তাই গ্যাস ফর্ম করেছে বোধ হয়। এখন বেশ ভালো লাগছে। তুমি আমাকে এ্যান্টাসিডের বোতলটা দাও। ঔষধটা ভালো। কুইক রিলিজ দেয় পেইনের। আমার কথাবার্তা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে দেখে রিনাও স্বস্তি পায়। দুশ্চিন্তার অবসান ঘটে। তবে আশঙ্কা পুরোপুরি কাটে না তার।
-কাল তোমার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা না? দেখো, ভুলে যেও না আবার।
এ্যান্টাসিডের বোতলটা এগিয়ে দিলে আমি সফট ড্রিংক পান করার মত এক চুমুকে প্রায় অর্ধেকটা শেষ করে ফেলি। রিনা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটায় বোঝাই হয়ে আছে এসিড, চর্বি, আর কোলেস্টরেল। ভালো ঝামেলা পাকিয়েছি। কাল ডাক্তারের কাছে না গেলেই নয়।

শুয়ে শুয়ে আজকে দুপুরে উত্থাপিত রিনার সেই অনুযোগটার কথা ভাবছি। "তুমি তো আমাকে কোন কথাই বলো না"। চিঠির ব্যাপারটা কি বলবো? হাস্যকর হয়ে যাবে না সেটা? বোঝাই যাচ্ছে এটা কেউ বদমায়েশি করে পাঠিয়েছে। আমার উৎসাহ দেখে রিনা যদি ফিক করে হেসে ফেলে! কিন্তু তারপরেও আমার মনের ভেতর কেমন যেন একটা চাঞ্চল্য কাজ করে। তবে মনকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করি, চিঠিটাকে আর পাত্তা না দেয়ার জন্যে। কিছুক্ষণ লড়াই করার পর মনের যৌক্তিক অংশটা বিজয় অর্জন করলে চিঠিটা দলা পাকিয়ে মুচড়ে জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিই।

আমি যে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম, তিনি বেশ হাসি-খুশি ধরণের। এত বড় ডাক্তার, এত রোগী দেখেন প্রতিদিন, তারপরেও এমন প্রাণবন্ত এবং সতেজ তার মুখ! হয়তো বা আমি সিরিয়ালের একদম প্রথম দিকের বলেই তার এমন সুন্দর আচরণ। রোগী দেখতে দেখতে যখন রাত ১১টা বেজে যাবে, অন্তত ৫০ জন রোগীকে দেখতে হবে, ততক্ষণে তার মেজাজ-মর্জির কী অবস্থা হয় কে জানে! কিংবা কে বলতে পারে, তিনি হয়তো সবসময়ই এরকম! আমার মনের কথা বুঝতে পেরে তিনি যেন তার হাস্যদর্শন খুলে বললেন,
-বুঝলেন আসগর সাহেব, লাফটার ইজ দ্যা বেস্ট মেডিসিন। বিশেষ করে যারা হার্টের রোগী তাদের জন্যে তো এটা খুবই উপকারী! আপনি কি নিয়মিত হাসেন? নাকি এখনকার মতো গোমড়া মুখেই থাকেন সবসময়?
-না, মানে... হাসি তো! উপলক্ষ্য পেলেই হাসি।
-এখন থেকে উপলক্ষ্য ছাড়াই হাসতে চেষ্টা করবেন।
তিনি আমাকে অল্প কিছু ঔষধ, আর কিছু টেস্ট করতে দিলেন। সাথে অভয় বাণী। "আপনার অবস্থা তেমন গুরুতর মনে হচ্ছে না। তারপরেও টেস্টের রেজাল্ট না আসা তক কিছু বলতে চাই না। খাবার দাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করবেন। সকালে উঠে হাঁটবেন। আর কোনো কিছু নিয়ে খামোখা টেনশন করবেন না। ভালো রেজাল্টই আসবে আশা করি"
মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। বাসায় ফেরার সময় কাবাব আর পরোটা কিনি। একদিন একটু নিয়ম ভাঙলে কিছু হবে না। দুজনে মিলে বেশ মজা করে খাওয়া যাবে।

অনেকদিন পর আমরা দুজনে একসাথে খেতে বসি। খেতে খেতে টুকটাক গল্প করি। গল্প করতে করতে কীভাবে যে প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে চলে যাই, সে খেয়ালই থাকে না! বকবক করতে করতে আচমকা আমি আমার বয়সের সাথে বেমানান এক ছেলেমানুষী বালখিল্য আদিখ্যেতা করে বসি।
-জানো রিনা, আমার না মনে হয় আমি বেশি দিন বাঁচবো না।
-কেন তোমার এমন মনে হয়?
-বুকের ব্যথা, এটা কোন পর্যায়ে আছে কে জানে! আর হার্টের রোগীরা তো আচমকাই মারা যায়। এমন অনেক ঘটনার কথা শুনেছি, যেখানে রোগী বাজার-সদাই করে এসে সবার সাথে কথা বলতে বলতেই হুট করে বুক চেপে ধরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু। কিংবা ধরো স্ট্রোক করলাম। কাজের যেমন প্রেসার, বিশ্রাম তেমন হচ্ছে কই সেই অনুপাতে? হঠাৎ করে দেখবে একদিন পাস্ট টেন্স হয়ে গেছি।
রিনা খরচোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝতে পারছি ওর অনেক রাগ হচ্ছে। আর এও জানি যে রাগ হলে ও গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। সম্ভবত কথা সাজাচ্ছে আমাকে আক্রমণ করার জন্যে। আমি তৎক্ষনাৎ ওকে স্যরি এবং আরো অনুষঙ্গিক কথাবার্তা বলে কোনরকমে পরিস্থিতি সামাল দিলাম। তবে উদ্ভুত পরিস্থিতির এমন সহজ সমাধান আমার মোটেও পছন্দ হলো না। আমার আরো অনেক কিছু বলার ছিলো। আমি বলতে চেয়েছিলাম, এই নিরানন্দ, নিরাবেগ, যন্ত্রচালিত সময়ে আমরা নিজেদেরকে অনেকটা খেলো বানিয়ে ফেলছি না? সবকিছুই কি ভীষণ একঘেয়ে না? আমার যদি টেস্টগুলোতে খারাপ কিছু ধরা পড়ে, ভেবে দেখো, নতুন একটা ডাইমেনশন তৈরি হবে না আমাদের জীবনে? ছেলে-মেয়েদের একটা চিঠি বা ফোনকলের জন্যে চাতক প্রতীক্ষা ঢাকতে টিভির সামনে সারাক্ষণ বসে থাকতে হবে না। ওরা ফোন করবে, খোঁজ খবর নিবে। হয়তো বা সুদূর আমেরিকা থেকে রুহী চলে আসবে কোন এক সুপ্রভাতে। দারুণ একটা সারপ্রাইজ হবে না? আর সুজয়ও কি না এসে থাকতে পারবে? জানি, ওর খুব রাগ আমাদের ওপর। ওর খুব শখ ছিলো চারুকলায় ভর্তি হবে। কিন্তু আমরা ওকে বাধ্য করিয়েছি ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্যে প্রিপারেশন নিতে। বড় জেদ ওর। গত এক বছরে রোজার সময়টা ছাড়া আর কখনো বাড়ি ফেরে নি। আমরা দুইবার গিয়েছিলাম। ওর ব্যবহারে চরম ভাবে অপমানিত হয়ে ফিরে গেছি। নিরলস নির্লিপ্ততায় বুঝিয়ে দিয়েছিলো, এই সুজয় আর সেই সুজয় নেই। মনে কর, এই সুজয় আবার সেই সুজয় হয়ে গেলো আমার অসুস্থতার অছিলায়! ছোটবেলার সেই দুষ্টু দুষ্টু চেহারার মিষ্টি বালকের মতো। ও এলে কি দারুণ একটা সারপ্রাইজ হবে না?

ভরপেট খাওয়া দাওয়া করে ঘুমোনোর সময় ট্রাউজারের পকেটে খসখসে কিছু একটার অস্তিত্ব অনুভব করলাম। পকেট থেকে কাগজটা বের করে পড়তে গিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ! সেদিনের সেই হাতের লেখা! কী লেখা আছে পড়ার জন্যে তর সইছে না মোটেও। এত এলোমেলো কেন তার হাতের লেখা!

"জনাব আসগর সাহেব,

প্রীতি ও শুভেচ্ছা নেবেন। আপনার তরফ থেকে আমরা কোন প্রত্যুত্তর পাই নি। তাই আমাদের কোম্পানি বাধ্য হয়ে বিশেষ কনসেশনে আপনার কেসটা দেখবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা আমরা জানি যে, আপনি সারপ্রাইজের জন্যে ব্যাকুল হয়ে আছেন। তাহলে কেন খামোখা আমাদের অসহোযোগীতা করছেন? আপনার জবাবের অপেক্ষায় থাকলাম। জবাব পেলে তো ভালোই, না পেলে অগত্যা আমাদেরই কাজ শুরু করতে হবে।

শুভেচ্ছা সহ
বেস্ট সারপ্রাইজেস
জিপিও পোস্ট বক্স নং ২৫৫৩"

নাহ! ব্যাপারটা যা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও বেশ, বেশ অনেকটা গুরুতর। আমি আর পারছি না এই দুর্বহ ভার সহ্য করতে। রিনাকে ডেকে কাগজটা দেখাই।
-কী এমন বিশেষত্ব এই সাদা কাগজের? অদৃশ্য কালি দিয়ে লেখা নাকি?
-সাদা কাগজ! এর মধ্যে কিছু নেই বলছো?
-হ্যাঁ বলছি। ঘটনাটা খুলে বলো তো! কোথা থেকে এলো সেই কাগজ, আর কোথায়ই বা এর লেখা গুলো উড়ে গেলো?
-ওহ! আসলে পুরোনো, অনেক পুরোনো একটা কাগজ পেয়েছিলাম। যেখানে চোর-ডাকাত-পুলিস খেলতাম আমরা চারজনা। সেটা মনে হয় হাওয়ায় উড়ে গেছে। আর এটা কোথা থেকে যেন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। হেহ হেহ হেহ!
জানি, খুব সিলি হয়ে গেলো কথাগুলি,হাসিটাও বোকাটে। কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে এর চেয়ে ভালো কিছু আর মাথায় ঢুকলো না।
-বুড়ো বয়সে ভীমরতি! যত্তসব।
রিনা গজগজ করতে করতে বিছানায় এলো। হয়তো সে ভাবছে আমাকে শুধুমাত্র একজন কার্ডিওলোজিস্ট না দেখিয়ে একজন সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়াও অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।

আজ আমি যথেষ্ট এক্সাইটেড। টেস্টগুলোর রিপোর্ট নিতে এসেছি। এই যে উত্তেজিত হওয়া, দুর্ভাবনায় ভোগা, মৃত্যুভয়; এসব আমার নিস্তরঙ্গ জীবনে প্রাণের সঞ্চার করে। সারপ্রাইজড হতে কে না ভালোবাসে? আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তবে আমি যেভাবে সারপ্রাইজড হতে চাই, তা সম্ভবত অন্য কারো সাথে মিলবে না। অথচ জীবনের বাঘবন্দি খেলায় দুই-তিনটে চাল ঠিকমত দিলেই সবকিছু অন্যরকম হতে পারতো। রুহি আর সুজয় থাকতো বুকের দুইপাশে আমাকে জড়িয়ে ধরে। রিনাও সবকিছু ভুলে যাবার অভিপ্রায়ে বোকাবাক্সের প্রতি এমনভাবে সম্মোহিত হয়ে থাকতো না। আমার ভুল চালের কারনেই জীবনটা এখন বাঘবন্দী হয়ে আছে। সীমিত পরিসরে অল্প কিছু জায়গায় সঞ্চারণ করাই হয়তো আমাদের অমোঘ নিয়তি।

-দেখলেন তো? আমি বলেছিলাম না, কিছু হয় নি! কী ব্যাপার? মুখ শুকনো কেন? এই কদিন খুব টেনশনে ছিলেন, না?
ডাক্তারকে বেশ উৎফুল্ল দেখায়। কিন্তু তাকে আমি কী করে বোঝাবো, আমার শরীরে রোগ বাসা বাঁধুক এটাই ছিলো আমার চাওয়া। জীর্ণ শরীরের একাকী প্রৌঢ়েরও আছে কিছু স্নেহাস্পদ মুখ, তার রক্ত বহন করা অনুজেরা। তাদের চোখে সূর্য্যের উদ্দামতা, আলোর ঝিলিক। আমার পুত্র, কন্যা, দৌহিত্রেরা। ভালোবাসা নামক ঘাতক শয়তানের তৈরি কূপের যত নীচে নামি, ততই পতনোন্মুখ আমাকে দেখে শিশুদের দল হাততালি দিয়ে ওঠে। তারা কেউ আসবে না। এ কেমন ভালো থাকা আমার! এ কেমন স্বাস্থ্য সৌন্দর্য? ডাক্তারের সাথে করমর্দন করে বিদায় নিয়ে রিনাকে ফোন করলাম,
-হ্যালো রিনা।
-হ্যাঁ বলো। রিপোর্টগুলো সব দিয়েছে? ডাক্তার দেখিয়েছো? কী বললো?
-ডাক্তার তো বললো সব ঠিকই আছে।
-যাক! আলহামদুলিল্লাহ।
-কিছু আনবো বাসার জন্যে? কেক,মিষ্টি, চানাচুর বা ফল?
-কিচ্ছু আনতে হবে না। এখন থেকে খুব সাবধান। দুজনেরই বয়স হয়েছে। হিসেব করে খাওয়া দরকার। বাহিরের খাবার তো একদমই নিষিদ্ধ।
মেজাজ খিঁচড়ে গেলো ওর কথা শুনে। অবশ্য ও খুব ভুল কিছুও বলে নি। কাকে দোষ দেবো? সারপ্রাইজ চাই সারপ্রাইজ! ইচ্ছে করে চিৎকার করে পৃথিবীকে আমার চাহিদার কথা জানিয়ে দেই।

রিকশা থেকে নামার পর মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে যেই ভাড়াটা দিতে যাবো, তখন খেয়াল করলাম সেখানে সেই মহামান্য ইনভেলপটি সগর্বে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে। চিঠিটা হাতে নিয়ে ঋষিসুলভ ঔদাসীন্যে তা খুলে পড়া শুরু করলাম।

"জনাব আসগর সাহেব,

আপনি সারপ্রাইজ খুঁজছিলেন, তাই না? আমরা আপনাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আপনার তরফ থেকে কোন সাড়া পাই নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কিছু স্যাম্পল তৈরি করে আপনাকে পাঠাচ্ছি। এক দিনের মধ্যে রিপ্লাই দিবেন, নইলে নিম্নোক্ত কাজগুলো বাস্তবে পরিণত হতে খুব একটু সময় লাগবে না।

১/ রুহি স্কেটিং করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে কোমায় চলে যাবে।
২/তার পুত্রকে ক্লাশরুমে অবস্থানকালীন সময়ে গুলি করে মারবে এক উন্মাদ সাইকো।
৩/সুজয়কে ওর ভার্সিটির রুম থেকে গাঁজাসহ আটক করা হবে।
৪/রিনাকে তার ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যাবে।

আপাতত এটুকুই জেনে রাখুন। বিস্তারিত আসছে পরে।

বেস্ট সারপ্রাইজেস
জিপিও পোস্ট বক্স নং ২৫৫৩"

হু। একদম আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে তারা। আমার দুর্বল জায়গা গুলোতে আঘাত করে তাদের ব্যবসা সচল রাখতে চায়। আমি জোর পায়ে হাঁটতে থাকি। ঘরে ঢুকে রিনাকে দড়িবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়াটা নিঃসন্দেহে এক দারুন সারপ্রাইজ হবে। কিন্তু এমন সারপ্রাইজ কেই বা চায়? আমিও চাই না। সত্যি বলছি চাই না! অত্যন্ত অস্বস্তির সাথে খেয়াল করলাম যে, রিনাকে ঐ অবস্থায় দেখার এক উদগ্র বাসনা আমাকে পেয়ে বসেছে। দ্রুত, আরো দ্রুত চলো! নিজেকে তাগাদা দিই আমি। একটা সারপ্রাইজ, একটা ভালো সারপ্রাইজ আমার জীবন পাল্টে দিতে পারে। রিনা কেন আমার জীবন থেকে সরে যায় না? শরীরের চাহিদা মেটানোর কথা না হয় বাদই দিলাম। সারা বছর রোগে ভোগা শরীরটার পেছনে আমার কত টাকা খরচ হচ্ছে! এতদিন ধরে আমি ওকে দেখে শুনে রাখি নি? আর কত? আর কত? ওকে খুন করা আমার পক্ষে সম্ভব না। "বেস্ট সারপ্রাইজ"এর কাছ থেকে প্রাপ্ত চিঠিতে ওর আত্মহত্যার সম্ভাবনা দেখে আমার মনের ভেতর যে এমন আকুলি-বিকুলি করবে কে জানতো? শেম! শেম! এসব আমি কী ভাবছি? দীর্ঘ ত্রিশ বছরের সংসার আমাদের। যৌবন তো কারো চিরস্থায়ী হয় না! একসময় রিনাও ছিলো স্বাস্থ্যজ্জ্বল, কর্মঠ এক রমণী। আমি বাসায় ফিরলে, সে যত রাতই হোক না কেন, ভাত-তরকারি গরম করে দেয়ার জন্যে জেগে থাকতো। আমাদের বিলম্বিত মধুচন্দ্রিমার সময়টায় ঝাউবনে বসে জোছনা রাতের সমুদ্র দেখার সময় সেই যে বিলীন হয়ে যাওয়া সাগরের ঢেউয়ে, অনেক দূরের এক বাতিঘরের দিকে চেয়ে সেখানকার অধিবাসীদের নিঃসঙ্গতার কথা ভেবে বুক হু হু করে ওঠা, এই মুহূর্তগুলো জীবনের অমূল্য সম্পদ। এমন কত সুখমুহূর্তের সঙ্গী ছিলো সে! তার মৃত্যু কীভাবে আমার প্রত্যাশিত হতে পারে? কোনভাবেই না। বাসায় দরজায় পৌঁছুনোর পর আমি হাঁপাতে লাগলাম। প্রায় ছুটে এসেছি এতখানি পথ। নিজেকে কোনমতে সামলে নিয়ে কলিংবেল টিপি। কেউ আসছে না। কেউ আসছে না। তবে কী...
বুড়ি মাগীটা প্যাঁচার মত মুখ করে দরোজা খুলে দিলো। যেন নিতান্তই অনিচ্ছায়, দয়াপরবশ হয়ে আমাকে ঘরে ঢুকতে দিয়েছে! সাহস কত! এর তেল আমি বের করবো আজকে।

তার হাতে ধরা একটা ছুরিসদৃশ বস্তু, আর এক টুকরো কাগজ। বেস্ট সারপ্রাইজেস তাহলে এখন তার ওপরেও হানা দিয়েছে?
-কী লেখা আছে কাগজটায়? আমি তো স্রেফ একটা সাদা কাগজ দেখছি কেবল।
-তোমারটা যেমন আমি কাল রাতে দেখতে পারি নি, আমারটাও তুমি পারবে না। সবার কাছেই এরকম কিছু কাগজপত্তর থাকে। যেগুলো ক্রাইসিস মোমেন্টে বের হয়ে আসে। কেউ এটার খোঁজ পায়, কেউ পায় না। বাই দ্যা ওয়ে, আর ইউ এন্টারটেইনড মিস্টার? হ্যাভ ইু গট এনাফ সারপ্রাইজেস?

আমি রিনার কাছে গিয়ে আলিঙ্গন করতে চাইলে ও ছুরির এক পোঁচ মারে আমার গলায়। হ্যাঁ, আমি এখন সারপ্রাইজড। খোলা জানলা দিয়ে প্রবল হাওয়ার তোড়ে উড়ে আসে অনেকগুলো খাম। ওগুলোর মধ্যে কী লেখা আছে আমি জানি। কাগজের সিংহাসনে মহারানীর ভঙ্গিমায় বসে প্লাস্টিকের ছুরিটা হাতে নিয়ে রিনা আমার দিকে চেয়ে হাসে। হাসুক! আজ ওর দিন। কতদিন এমন আমোদ পায় নি বেচারা!

কতদিন এমন সারপ্রাইজ উপহার দেইনি আমরা একে অপরকে!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৮
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×