somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনন্দভ্রম

০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"এই চলো না আত্মহত্যা করে ফেলি!
এমন করে তাকিও না আমার কথা শুনে। তুমি ভালো করেই জানো আমি কোন দুঃখবিলাসী সুপার সেনসেটিভ টিন নই। জীবন সম্পর্কে বরাবরই ইতিবাচক ভাবনা করে এসেছি। তুমি তো ভালো করেই জানো, দীর্ঘস্থায়ী ডিপ্রেশন অথবা সাময়িক তীব্র জীবন অনীহা কোনটাই আমার মধ্যে নেই। আমি বরাবরই ছটফটে, চঞ্চল, উদ্যমী, ভালোবাসায় পূর্ণ মানবী। আমি সাজতে ভালোবাসি, নাচতে ভালোবাসি, গাইতে ভালোবাসি, আর ভালোবাসি ভালোবাসতে। শীতের সকালগুলোয় লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে না থেকে বারান্দায় গিয়ে কুয়াশা দেখেতে ভালোবাসি। গ্রীষ্মের দুপুরগুলোতে ঘুঘুর ডাক শুনে উন্মনা হতে ভালোবাসি। ভালোবাসি জীবন। আমার কথা কি তোমার কাছে পরস্পরবিরোধী মনে হচ্ছে? হতেই পারে, তোমাকে দোষ দেবো না। এলোমেলো কথা আর অগোছালো অনুভূতিগুলো সত্যিই বড় বিভ্রান্তিকর; জীবনের মত। মৃত্যুতে কোন বিভ্রান্তি নেই। বিশেষ করে আত্মহত্যায়। আর তা যদি হয় দুজনে মিলে একসাথে হাতে হাত, অধরে অধর মিলিয়ে তাহলে তো রীতিমত শৈল্পিক সুষমায় মণ্ডিত এক মহাকাব্য রচিত হবে প্রকৃতির বায়োস্কোপঘরে। আমার হাতটা ধরে দেখো, খুব গরম না? আমার শরীরের ভেতরে রক্তকণিকারা ছুটোছুটি করছে প্রবল বেগে, জলপাই বন থেকে পাতার পাল্কি নিয়ে আসছে ফিঙে পাখির দল। তুমি কখনও পাতার পাল্কিতে চড়েছো? জানি তো চড়ো নি। চড়ার কথা ভাবোও নি। এমন কী কখনও এর নামই শোনো নি। এসব সবসময় শোনা যায় না। এসব সবাই শুনতে পায় না। খুব ভাগ্যবান যারা, আর যাদের কল্পনাশক্তিতে মিশে থাকে মৃত্যুর আহলাদে আপ্লুত জীবনবোধ, শুধু তারাই এসব খুব গোপন কথা জানতে পারে।

তুমি বলছো জীবনবোধে ভাস্বর থাকে যারা তারা কেন আত্মহত্যা করতে যাবে? মৃত্যুকে সবকিছুর বিনাশ ভাবছো কেন বোকা? মৃত্যু হল লাল জর্জেট শাড়ী পরা, কানে জূঁইদুল, পায়ে ঘাসের নুপূর পরিহিত এক লাজুক বোকা মেয়ে। অবশ্য বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই সে ভয়ংকর হিংস্র বিশালদেহী, কালো আলখেল্লা পরা, সবুজ চোখের ভয়ানক হন্তারক। তোমার কাছেও কি সে এমন? এত কিসের ভয় বলো তো? মৃত্যুকে তারাই ভয় পায়, যারা জীবনের দেয়া উপচে পড়া উপহারগুলো দেখেও দেখে নি, শুনেও শোনে নি, বুঝেও বোঝে নি। যারা হাঁটে নি শ্রাবণের বৃষ্টিভেজা দূর্বাঘাসের পথে, যারা শোনে নি বসন্তের গান; কোকিলের সুরকাব্য, যারা বোঝে নি শেষরাতের স্বপ্নে টুনটুনি পাখির কিচিরমিচিরে বুনে দেয়া জীবনালেখ্য। কী হলো, কিছু বলছো না কেন? এত চুপচাপ স্বভাব তোমার! অবশ্য একদিক দিয়ে এটা ভালোই, আমার বকবক করতে খুব ভালো লাগে, তাই চাই একজন মনোযোগী শ্রোতা। তুমি ঠিক তাই। তুমি একজন ধ্যাণমগ্ন ঋষি, নির্বিকার নীরবতায় বুনে যাও হিরন্ময় মুহূর্তের নকশীকাঁথা। তোমার সাথে হীরকমুহূর্তগুলো স্মৃতিস্মারক হিসেবে সংগ্রহ করি আমি। আর তাই জীবন-মৃত্যু-আত্মহত্যাচিন্তা-জীবনের আনন্দভ্রম, সবকিছুর দোলাচলে ঘুরতে ঘুরতে, লাফাতে লাফাতে, আমি খুঁজে নেই বেঁচে থাকা অথবা মরে যাওয়ার আশ্চর্য সাদৃশ্য, তাদের সঙ্গমস্থল; এক নীল মোহনায় লীন হয়ে যাই। কত কী পড়ে মনে! প্রথম স্কুলে যাবার দিন, প্রথম ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলা, প্রথম ছক্কা মারা, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া, প্রথম দেশের বাইরে যাওয়া, শেষবারের মত বাবা-মার সাথে সাগরদর্শন, তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া... দেখেছো, কী বিটকেলে বুদ্ধিঅলা দুষ্টু আমার মনটা! আমার মুড অফ করে দিতে চায়! উহু বাবা, অত সোজা না! আমার মন খারাপ হয়ে গেলেই আমি তোমার কথা ভাবি...

আমাদের প্রথম দেখা হওয়াটা নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে? সেই যে, তোমরা কলোনির ছেলেপিলেরা ক্রিকেট খেলছিলে, মাঝখানে উটকো আপদের মত উদয় হলাম আমি। গোঁ ধরলাম, আমাকেও খেলায় নিতে হবে। তোমাদের মধ্যে দুটো ভাগ হয়ে গেলো। কেউ নিতে চায়, কেউ চায় না। আর তুমি! বড্ড বিরক্ত হচ্ছিলে, চোখ কুঁচকে তাকাচ্ছিলে, খেলায় বিঘ্ন হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছিলে। তোমার হুড়োহুড়িতেই সবাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল আমায় খেলায় নিতে। আমাকে দাঁড় করিয়েছিলো লং অনে। তুমি বোলিং করছিলে। বেশ ভালো পেস ছিলো তোমার বলে। একটা ফুলটস বল ব্যাটসম্যান সপাটে চালিয়ে দেয়ার পর সেটি আমার কাছে এলে আমি মিসফিল্ড করে বসি। কিছুটা নার্ভাস ছিলাম কী না! তুমি চোখ গরম করে তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে। তোমার সেই রাগরক্তিম চোখ আর ঋজু ভঙ্গি দেখেই প্রেমে পড়ে যাই আমি। এরপর যে কটা দিন কলোনিতে ছিলাম, প্রতিদিনই ক্রিকেট খেলেছি তোমাদের সাথে। তারপর হুট করেই চলে যাওয়া। তোমার সাথে একান্তে কত কথা বলার ছিলো, তার কিছুই হলো না। যাকগে, অবশেষে এই জীবনসায়াহ্নে এসে যে তুমি আমার কাছে এলে, এর জন্যে আমি ভুলে যেতে পারি গত সহস্র দিনের অপরাগতা, অবহেলা, আর অনাদর।

ওহ! জীবনসয়াহ্ন কথাটা শুনে তুমি রাগ করছো? হ্যাঁ সত্যিই, এই শব্দবন্ধটা বড়ই বুড়োটে, নিষ্প্রাণ আর বিষাদী শোনায়। তাহলে কী বলা যায়? জীবনের ট্রানজিট পয়েন্ট? এটা হয়তো খুব একটু কাব্যিক শোনায় না, তবে আমার বর্তমান অবস্থানকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এটাকেই উপযুক্ততম মনে হয়। আবারো রাগ করলে? উপস! ভুল করে ফেলেছি। স্যরি স্যরি! 'আমার' নয়, কথাটি হবে 'আমাদের'। আমরা দুজনে হাতে হাত ধরে মিশে যাব অমানিশার মন্দ্রসপ্তকে। আকাশে ছুড়ে দেবো উড়ালফানুস। তারাদের কাছ থেকে নিয়ে আসবো উজ্জ্বলতার অভিধান। তারপর সব শিখে নিয়ে আমরাও মহান আকাশে, মহাবিশ্বের বর্ননাতীত বিশালতায় নিজেদের বিলীন করে দেবো। আর ভুলে যাবো চেপে বসতে থাকা শয়তান অতীতের কূটচালসমূহ"

-রিনা, একটু দুধ খাবে মা?
-উফ! তুমি যাও তো বাবা এখান থেকে! দেখছো না আমি এখন মীরুর সাথে কথা বলছি!
-দুধটুকু খেয়ে নিয়ে তারপর কথা বলো। তুমি তো প্রায় কিছুই খাচ্ছো না গত কয়েকদিন যাবৎ। শরীর খারাপ করবে তো!
-আমার শরীর খুব ভালোই আছে। তোমরা খামোখাই এত দুশ্চিন্তা করছো।
-ডাক্তারের কথা শুনতে হয় মা। এত জেদ ধরলে চলে? তুমি না লক্ষ্ণী মেয়ে? খেয়ে নাও মা।
-আচ্ছা দাও... এহ কী ভীষণ বাজে গন্ধ! এ কী খাওয়া যায়!

মাত্র দুই চুমুক কোনমতে গিলেই পেটের যাবতীয় খাদ্যদ্রব্যাদী বমি করে উগড়ে দিলো রিনা। তার বাবা আর মা ভেজা চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন মেয়ের এই ভীষণ দুর্দশা। কী সুন্দর, কী প্রাণচঞ্চল ছিলো তাদের মেয়েটা! হঠাৎ করে...

"সেই অতীত... সেই বিচ্ছিরি অতীত...

হঠাৎ একদিন সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যেতে লাগলো। অল্প একটু পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যেতাম। ক্রিকেট খেলতে গেলে দৌড়ে একটা রান নেয়ার পর আর দ্বিতীয় রান নিতে পারতাম না। এভাবে বেশ কয়েকবার রানআউট হবার পর খেলাটাই ছেড়ে দিলাম। বুঝলাম, শরীরটা বিশ্রাম চাইছে। আমার মন ভীষণ রেগে গেলো এতে। শরীরটাকে আচ্ছা করে বকে দিলো। কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়া শরীরটা কোন প্রত্যুত্তর করলো না। শেষতক শরীর আর মনের পতাকা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তে আমার কিছুদিন বিশ্রাম নেয়া সাব্যস্ত হলো। আর তখন থেকে নানারকম উটকো লোক এসে বিরক্ত করতে থাকলো। উৎসাহী আত্মীয়স্বজন, উপযাচক চিকিৎসক, সহানুভূতিশীল বন্ধু বান্ধবেরা। বন্ধু এবং আত্মীয়স্বজনদের সাথে গল্প করতে আমার ভালোই লাগতো। তবে তাদের আচরণের মধ্যে এক ধরণের করুণা প্রকাশিত হতো, যা আমার অসহ্য লাগতো। কী এমন হয়েছে যে দলবেঁধে এসে দেখে যেতে হবে! তাদের সঙ্গ ধীরে ধীরে আমার কাছে অসহনীয় ঠেকতে লাগলো। আর সেইসময় যেন রূপকথার জগৎ থেকে হাজার ক্রোশ পাড়ি দিয়ে পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় করে তুমি চলে এলে। আর চারপাশের সবকিছুই রঙ ফিরে পেতে শুরু করলো। আমি সেরে উঠতে লাগলাম। কিন্তু উজবুক ডাক্তার আর অবুঝ বাবা-মা তা বুঝলে তো! ওরা আমাকে আবদ্ধ করে ফেললো বাড়ির ভেতরে, ক্রিকেট খেলা বন্ধ, সাইক্লিং বন্ধ। ওরা আমাকে খেতে দিতো রোগীর পথ্য। পাতলা চিকেন স্যুপ আর কাঁচকলা ভর্তা দিয়ে জাউভাত। ইয়াক! এসব খেলে কি কেউ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে? এসব খেলে আমি শক্তি পাবো কোথায়? তানজিলের তুমুল গতির বলে ডাউন দ্যা উইকেট এসে ছক্কা মারবো কীভাবে? রোজি, ইষিতা আর অপুদের সাইকেল রেসে টেক্কা দিবো কীভাবে? এই স্তব্ধ আবদ্ধতায় আটকে পড়ে হয়তো বা আমি নিঃশেষ হয়ে যেতাম যদি তুমি না থাকতে। তোমার স্পর্শে আমার গায়ের র্যা শগুলো মিলিয়ে গিয়ে উপহার দিতো যন্ত্রণাহীন এক অপূর্ব সমদর্শিতা। গলার কাছে ফাঁস হয়ে থাকা খাবারগুলো স্লিপারে চড়ে স্লাইড করে নিচে নেমে যেতো। এভাবেই আমি এক নতুন ধরণের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আবিষ্কার করি, আর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে থাকি। আর তখনই আমার মাথায় জীবন থেকে মরণের মাঝখানের ট্রানজিটে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার বদলে নতুন জীবনে (বোকারা যাকে মৃত্যু বলে), স্থানান্তরিত হবার চমৎকার পরিকল্পনাটি মাথায় আসে। আর তুমিও এতে সায় দিলে। কথা দিলে একসাথে এই পথ পাড়ি দেবার। আমি সাহস পেলাম, শক্তি পেলাম। তারপর থেকেই আমি আর এইসব বিস্বাদ ঔষধ, জঘন্য খাবার, করুণামিশ্রিত চোখ, কৃত্রিম সহানুভূতি, ক্রিকেট অথবা সাইক্লিং না করতে পারার আফসোস, সবকিছুকে নির্বিকারভাবে অগ্রাহ্য করে এই আনন্দভ্রমণের জন্যে কাউন্টডাউন করতে লাগলাম।"

-রিনার অবস্থাটা বেশ ক্রিটিকাল পর্যায়ে চলে গেছে। অবস্থার অবনতি যদি এই হারে হতে থাকে, তাহলে অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে ওর আয়ু আর বেশিদিন নেই। মাসখানেক বড়জোর। আমরা অবশ্য একটা লাস্ট ট্রাই করতে পারি। খুব এক্সপেনসিভ এবং জটিল একটা অপারেশন করতে হবে। সেখানে অবশ্য সাফল্যের সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু এ ছাড়া আর কোন গতি দেখছি না। আপনারা কি এটা করাতে ইচ্ছুক?
-জ্বী। শেষ চেষ্টাটা করে দেখা যাক।
-আচ্ছা। আপনাদের একটা কনসেন্ট ফর্মে সাইন করতে হবে।

"এই যে রাজপুত্তুর, কিছু বুঝতে পারছো? নাহ, তোমার এই সরল ঔদাসীন্যে তুমি অনেক কিছুই ওভারলুক করো। চারিপাশের খোঁজ-খবর তো রাখো না কিছুই। ওদের ষড়যন্ত্রটা টের পাচ্ছো? ওরা আমাকে কাঁচঘেরা, শব্দরোধী এক বিষাক্ত ঘরে নিয়ে যাবে। যেখানে একবার গেলে আর কেউ ফিরে আসে না। মৃত্যু। আমি খুব ভয় পাই মরে যেতে। নিঃশব্দ একটা ঘরে মুখোশে ঢাকা একদল মানুষের ছুরি কাঁচির নিচে আমার রক্তাক্ত দেহকে ওরা ঢেকে দেবে সাদা চাদর দিয়ে। আমার খুব শীত করবে হয়তো। হয়তো তখন আমি এতদিনের উপেক্ষা করা যন্ত্রণাকে শতগুণ বিবর্ধিত অবস্থায় সহ্য করব। আমি পারবো না, পারবো না! আমার খুব কান্না পাচ্ছে। তুমি কবে একটু গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে বলো তো? সময় কিন্তু বেশি নেই। ওরা ওৎ পেতে আছে আমাকে ধরার জন্যে। তবে আমি খুব সজাগ থাকি সবসময়। রাতে ঘুমোই না। আসলে সত্যি কথা বলতে কী, প্রচণ্ড বেদনা হয় সারা শরীরে। ঘুমোতে পারি না। আমি এতদিন সব সহ্য করতে পেরেছিলাম তোমায় ভেবে, আমাদের আত্মহত্যা পরবর্তী নতুন জীবন শুরু করার আশ্বাসে। কিন্তু এখন আর পারছি না। তোমাকে বলতে ভয় লাগে। কারণ তুমি এতদিন আমাকে জেনে এসেছো প্রচণ্ড প্রাণশক্তিতে ভরপুর, ভয়ডরব্যথাবেদনাহীন উচ্ছল এক তরুণী হিসেবে। সেই মেয়ে যদি সংসারের হাল টানতে টানতে ক্লান্ত, বৃদ্ধাবয়সী অসুখে জর্জর, সারাক্ষণ ব্যথায় কোঁ কোঁ করতে থাকা মহিলার মত কাতরাতে থাকে তাহলে তুমি আমাকে অগ্রাহ্য করবে না তো? মনে করবে না তো, পরের জনমে দুজনে একসাথে মিলে বসতি গড়ার আনন্দভ্রমণের যে বৈপ্লবিক পরিকল্পনা করেছিলাম, তা ছিলো শুধুই আমার আনন্দভ্রম? তুমি ভাববে না তো আমি এই ভ্রমণের জন্যে মোটেও উপযোগী নই, আমি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হবো? এই যে, শুনতে পাচ্ছো না আমার কথা? আমার বেডের পাশের দেরাজটাতে এক কৌটো ফেনোবারবিটন আছে। খুব সাবধানে ওটা বের করে নিয়ে এসো। কেউ যেন টের না পায়। হ্যাঁ, এটাই প্রকৃত সময়। নাউ অর নেভার! পালাতে হবে, পালাতে হবে আমাদের এই ভয়াবহ বন্দীদশা থেকে। আমি এখন খুব উত্তেজিত বোধ করছি। শারীরিক ব্যথা বেদনা কিছুই অনুভব করছি না। আমি তৈরি, হ্যাঁ আমি তৈরি। তুমি কোথায়? কোথায় হারিয়ে গেলে? আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছো না? "

-এই, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা? খবরদার, খবরদার বলছি থামুন! বাবা! মা! তোমরা ওদের ভয়াবহ চক্রান্ত বুঝতে পারছো না? ওরা কেউ মানুষ নয়। ওরা দানব। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচাও তোমরা। আমি এত সহজে মরতে চাই না! নাহ তোমাদের কিছু বলে লাভ হবে না। মীরু কোথায়, মীরু! তোমরা মীরুকে মেরে ফেলেছো। আমাকেও মেরে ফেলবে, তাই না?
-চুপ কর মা! কিচ্ছু হবে না তোমার। তুমি আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। তখন তুমি যত খুশী ক্রিকেট খেলবে, সাইকেল চালাবে, সালসা ড্যান্স শিখবে, আমাদের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে যাবে...

অপারেশন টেবিলে শায়িত রিনা আতঙ্ক ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, মুখোশ পরা মুখগুলোর দিকে। অতঃপর এ্যানাসথেটিস্ট তার চেতনা নাশ করে।

শহরের অপরপ্রান্তে মীরু তখন এলভিস প্রেসলির গানের সাথে নাচছে,

"It's now or never,
come hold me tight
Kiss me my darling,
be mine tonight"

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১২:০৬
৪২টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×