যিনি লেখেন তিনি নিজের কাছে অমর। নিজের স্বত্বার কাছে অমর।
একজন গল্প লেখকের কাছে তার লেখাগুলো নিজের সন্তানের মতো। প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা বাক্য এমনকি প্রতিটা দাড়ি-কমাও। একটা লেখা যখন মাথায় আসে, সেটা বের হবার জন্য হাঁসফাঁস করে। যারা লেখেন কেবলমাত্র তারাই বুঝবেন এই লেখাগুলোকে প্রবন্ধ,গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাসে রূপ দিতে কতটা কষ্ট হয়, নিউরনের উপর কতটা চাপ পড়ে। তবুওনিজের আত্মার সন্তুষ্টির জন্য লেখক লেখার সময়কার প্রতিটা কষ্টকে আপন করে নেন। প্রতিটা মানসিক বাঁধাকে অতিক্রম করেন। এমনকি প্রতিটা কটূক্তি কিংবা অবহেলা হাসিমুখে সহ্য করে যান।
লেখক খুব কষ্ট পান কিংবা ভেঙ্গে পড়েন তখনই, যখন তার সন্তানতুল্য প্রিয় লেখাগুলো,গল্পগুলো,উপন্যাসগুলো কিংবা কবিতাগুলো চুরি যায়।লেখার সময়কার দুঃখগুলো হয়তো নিজের সৃষ্টিশীলতার দিকে তাকিয়ে ভুলে থাকা যায়। কিন্তু সেই সৃষ্টিশীলতার যখন চুরি গিয়ে আপন রঙে রঙিন হতে পারেনা তখন লেখকের বেদনার শেষ থাকেনা। লেখার প্রতি এক ধরনের অনীহা কাজ করে। অনেক সময় অনেকে হতাশ হয়ে লেখাই ছেড়ে দেন। হয়তো এভাবেই অনেক লেখক ও লেখার মৃত্যু হয়। মৃত্যু হয় সৃজনশীলতার ও সৃষ্টিশীলতার।
শুধুমাত্র এখন থেকেই না, সুদূর অতীত থেকে এই লেখা চুরির মহড়া চলে আসছে। গল্পচোররা খুব সততার সাথে নিজের নামে লেখাগুলো চালিয়ে দেন। আমাদের এই "ফেসবুকিও" জীবনযাত্রায় এর প্রভাব আনুপাতিক হারে বেশি। এর কবিতা, ওর গল্প নিজের নামে চালিয়ে দিতে খুব একটা কুণ্ঠা বোধ হয়তো চোরেরা করেনা।এমনকি "সংগৃহীত" কথাটি পর্যন্ত লিখেনা। সম্প্রতি এর সাথে নতুন করে নতুন বিষয় চোরেরা নিজেরদের খাতায় সংযোজিত করেছে। "স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও মঞ্চ নাটকের লিপি"।
হুবুহু বিদেশী স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নকল করে দেশী বানিয়ে পুরস্কার জিতার মধ্যে কোন সার্থকতা নেই। কিংবা অন্য একজন জলজ্যান্ত সাধারন মানুষের "স্ক্রিপ্ট" শুনে নিয়ে নিজের নামে লিখে দিলাম এর মধ্যেও কোন সার্থকতা নেই। শুধুমাত্র মানুষের নাকের ডগায় যারা তেল দিয়ে পুরস্কার জিতেন, মানুষের সামনে নিজেকে বড় করেন আবার চুরির জিনিস নিয়ে ২/৩ পৃষ্ঠার বড় বড় বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান, এরা নিজের বিবেকের কাছে কি জবাব দেন সেটা জানার ইচ্ছা বহুদিনের।
শুধুমাত্র নিজেকে বড় করবার জন্য এতটা কষ্ট? সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সমান প্রতিভা দেন না। আপনার যেটা নেই সেটা নিয়ে লম্ফঝম্ফ দেবারও কিছু নেই।মানুষের চেষ্টাই শ্রেয়।চেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কোনকিছু অর্জনেই গর্ব ও প্রশান্তি। প্রকৃতপক্ষে, অন্যের লেখা চুরি না করে, অন্যের প্রতিভাকে সম্মান ও মর্যাদা দেয়াই উত্তম।
"চোরে শুনেনা ধর্মের কাহিনী" এরকম একটা কথা আছে। হয়তো নীতি কথাগুলোও শুনবেনা। তাই লেখকদের সতর্ক হওয়া উচিত। নিজেদের লেখাগুলোকে, নিজের আপন শব্দগুলোকে, নিজের হাসি-কান্নার উৎসগুলোকে যেখানে সেখানে না বলে যথাস্থানে ব্যবহার করা উচিত। নচেৎ, অচিরেই "সাহিত্য চোরেরা" গিলে খাবে আমাদের মস্তিস্ক।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:২২