মোটামুটি রাত হয়েছে। ওমর হেঁটে বাড়ি ফিরছে। লাম্প পোস্টের আলো ছাড়া তেমন কোন আলো নেই। ঢাকা শহরের একদিকটায় মানুষজন হয়তো একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফেরে।জোছনার আলোয় ভেসে যাচ্ছে সব।ওমর হেঁটে হেঁটে জোছনা দেখছে। চাঁদটা ওর সাথে সাথেই যাচ্ছে। মেঘের ভেতর ঢুকে আবার বের হচ্ছে কিন্তু ওকে ছাড়ছে না। চাঁদটা দেখতে দেখতে ওমরের অনেক অনেক ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল।
ছোট বেলায় দাদার হাত ধরে সন্ধ্যায় মসজিদে যেত। আসার সময় প্রায় দেখত বিশাল একটা চাঁদ। তাঁদের সাথে সাথেই যাচ্ছে। দাদা ওমরকে কোলে নিয়ে হাঁটতেন আর জিকির করতেন।
ওমরের দাদা জনাব আব্দুল লতিফ আল্লাহ্ ওয়ালা মানুষ ছিলেন।একমাত্র নাতিকে তিনি নিজের চাইতেও বেশি ভালবাসতেন। যেখানেই যেতেন নাতিকে নিয়ে যেতেন।নাতিকে ছাড়া কিছুই মুখে দিতেন না।এক মুহূর্তের জন্য নাতিকে চোখের আড়াল করতেন না।
ওমর সচরাচর জোছনা দেখেনা।জোছনা দেখেলেই দাদাকে স্বপ্নে দেখে।দাদা ওমরকে কোলে নিয়ে হাঁটছেন,জিকির করছেন আর একটু পরপর বলছেন "তোকে কতদিন দেখিনা দাদুভাই"। এতোটুকু দেখেই ওমরের ঘুম ভেঙ্গে যায়।মনে হয় পাশের ঘরেই অন্য কেউ হাঁটছে।আর খুব করুণ স্বরে ওকে ডাকছে। সারারাত আর ঘুম হয় না।অনেক চেষ্টা করেও না।
ওমর যখন ক্লাস থ্রিতে তখনি বাবা-মা'র সাথে বিদেশে চলে যায়।চলে যাওয়ার সময় দাদার সে কি কান্না। নাতিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছেন।নাতি চলে যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।বৃদ্ধ বয়সে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। নাতিকে খুব দেখতে চাইতেন।নাতির তখন দেশে আসার কথা।কিন্তু জনাব আব্দুল লতিফ আর বেশিদিন বাঁচলেন না। খুব কষ্ট পেয়ে মারা গেলেন। নাতিকে দেখতে পারলেন না।
ভাবতে ভাবতে ওমরের চোখ ছলছল করে ওঠে। তারপর সে কাঁদে না। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই।ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে তাঁর। আজ সে জোছনা দেখেছে। আজো হয়তো দাদাকে স্বপ্ন দেখবে। দাদা হয়তো কাঁদো কাঁদো স্বরে হয়তো বার বার বলবেন "তোঁকে কতদিন দেখিনা দাদুভাই...।কতদিন দেখিনা......।।"
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৬