রান্না —- বান্না
রান্না একটা শিল্প সন্দেহ নাই। সব শিল্প সাধনা করতে সবার ভাল লাগবে তাও না। রান্না করতে আমার মোটেও ভালো লাগে না । তাছাড়া মোগলের সাথে থাকলে খানা মোগলাই ! এতদিন বিদেশে থেকে আমিও খাওয়া দাওয়ার ব্যপারে খানিকটা বিদেশী হয়ে গেছি মনে হয় ! এখানে যেসব সবজি পাওয়া যায় (আমরা বেশি খাই) যেমন পাতাকপি, ফুলকপি, মিষ্টি কুমরা, লাউ, স্কোয়াশ (আমাদের জিঙে /চিচিঙ্গা ধরণের),পাপরিকা, এমন কি তিতো করলা পর্যন্ত রান্না না করেই (হালকা সেদ্ধ করেই খেতে পারি)! তাই বলেনতো সেদ্ধ করেই খাওয়া গেলে কে আবার এত কষ্ট করে লবন, তেল আর মূল্যবান সময়ের অপচয় করব (বলাই বাহুল্য আমি কিন্তু মোটেই আলসে কোনো মেয়ে নই ! )! সবাই সব কিছু পারে না | না, আরো পজিটিভলি বলি কথাটা সবাই- ইকিছু না কিছু পারে। আমার আপু ভাল রান্না পারে, আমি ভাল ঘর গোছাতে পারি। মানুষ চেষ্টা করলে সবই পারে এর জন্য শুধু প্রয়োজন, Courage, Patience, Creativity. এই তিনটা গুন যার মাঝে থাকবে সে, যেকোন কাজেই সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আমরা যখন প্রথম সুইডেনে এলাম তখন অবাক হয়ে দেখি এদেশে মিষ্টির কোন দোকান নেই ! তেমন ভালবিস্কুটও নেই ! আছে শুধু হাজার রকমের চকলেট | বেকারি আইটেমগুলোর মধ্যে আটা আর ময়দার তৈরী বিভিন্ন রকম মধ্যে মোফিন্স, বিভিন্ন ধরণের কেক ।যদিও মিষ্টি না থাকায় আমার তেমন সমস্যা হয় না কারণআমি মিষ্টি টিষ্টির খুব বড় ভক্ত কখনোই নই, খাই না খুবএকটা।কিন্তু তবুও সেই মিষ্টির অভাবেই ফ্যামিলির কারো কারো মুখ তেতো হয়ে উঠলো কিছুদিনের মধ্যে | মিষ্টির অভাব কিছুটা পূরণ হতো বাংলাদেশী কারো বাসায় দাওয়াতে গেলে | সেই দাওয়াত গুলোতে বাসায় বানানো দইসহ দুই তিন ধরণের মিষ্টির আইটেমও থাকতো। মিষ্টিখাবার আগে সব সময়ই একটা প্রশ্ন পর্বও থাকতো । একেক জন খাওয়ার আগেই প্রশ্ন কর শুরু করে,কি ভাবে বানিয়েছেল, খুব সুন্দর হয়েছে, টেষ্টি হয়েছে । সব সময়ইপ্রশ্ন জিজ্ঞাসাকারীদের অন্যতম থাকত আমার ভাবি ।আমি তখন ছোট । শুধু নিষ্চুপ শুনে যাওয়াই ছিল আমার প্রধান কাজ।
ভাবী খুবই করিৎকর্মা মানুষ | দাওয়াতের প্রশ্নপর্বে অর্জিত নবলব্ধ জ্ঞান বাসায় এসে হাতেনাতে ট্রাই করে | একবার না পারিলে দেখো শতবার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ভাবীর মিষ্টি বানানোর অভিযানে চার বছরে কত যে দুধ, ময়দা আর চিনি নষ্ট হয়েছে তার কোনো হিসেব বের করাও দুঃসাধ্য আমার জন্য ! যাহোক, ঘুব সম্ভবত ক্লাস নাইনে পড়ি |ভাবী অনেক আগ্রহ করে চমচম বানালেন ! সেটা চমচমতো হয়নি, হয়েছে পাথরের ঢিল ! কারো মথায় পরলে চমচমের বেমক্কা আঘাতে মাথাতো ফাটবেই বীভৎসরক্তারক্তিও হবে | ভাবী তার চমচমের এই কম কম প্রসংশায় খুবই কষ্ট পেলো মনে । কষ্টে বলেই ফেল্ল আমি আর মিষ্টিই বানাব না। তখন ভাবীকে কে সান্তনা দিতে আমিই বল্লাম, এবার তাহলে আমি চেষ্টা শুরু করব । সেই থেকে, মানে ২০০৮ সাল থেকে আমার মিষ্টি বানানোর অভিযান শুরু ! প্রথম প্রথম নষ্ট যে করি নাই তা নয় তবে সেটা তুলনা মূলক কম আর প্রাকটিস মেকস পারফেক্ট ।এক সময় দ্ই, মিষ্টি বানানোর “ভালো কারিগর “ তকমাপেয়ে গেলাম ! এখন প্রায় ১০ /১২ আইটেমের মিষ্টি বানাতে পারি ।একের পর এক রেসিপি পোষ্ট আসবে।
আমার আজকের এই রেসিপি পোষ্টটা উৎসর্গ করছি নীলদর্পন আপুকে । নীলদর্পণ আপুর একটা রিকোয়েস্ট থেকেই এই রেসিপি পোস্টটার কথা প্রথম ভেবেছিলাম কয়েক মাস আগে | আপুকে যদিও অনেক দিন ধরে ব্লগেদেখছি না তবে আমি আশা করব উনি আবার ব্লগেনিয়মিত আসবেন ।
আচ্ছা, শুধু শুধু কথা না বলে এবার আসল কথা বলি।আজকে রসগোল্লা দিয়ে শুরু করছি আমার রেসিপি পোষ্ট
রসগোল্লা বানাতে আমার যা লাগবে ।
দুই লিটার দুধ ,চার কাপ চিনি ,দুই গ্লাস টকদই দুই চা চামচ সূজি ।
রসগোল্লা বানাতে আমার যা লাগবে ।
১ : দুই লিটার দুধ
২ : চার কাপ চিনি
৩ : ২ গ্লাস টকদই
৪ : দুই চা চামচ সূজি
এবার রসগোল্লা বানানো শুরু করা যাক | স্টেপ বাই স্টেপ | প্রথম স্টেপ থেকে দশ স্টেপ দিলেই রসরাজ রসগোল্লা রেডি খাবার জন্য ! আসুন তাহলে আর দেরি না করে বানাতে শুরু করি রসগোল্লা
প্রথমে দুধ একটা পাতিলে দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিতে হবে ।
দুধ ফুটে উঠলে দুই গ্লাস টকদই দিতে হবে।
এবার আরো একটু জাল দিতে হবে ছানা গুলো উপরে ভেষে উঠবে , দেখতে ঠিক এরকম হবে ।
তখন প্লাষ্টিকের বা ষ্টিলের ছাকনির উপর পাতলা কাপড়ের ঠেলে দিতে হবে ও ঠান্ডা পানির কল ছেড়ে দিতে দিন এভাবে।
ছানা ভাল ভাল ভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে , ভাল করে চিপে ,চিপে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে ।
ছানা যেন এরকম ঝরঝরে হয়।
ছানার সাথে এবার ২ চামচ সূজি দিয়ে ভাল করে মেখে নিতে হবে।
এখন এখান থেকে একটু একটু ছানা নিয়ে দুই হাত দিয়ে গোল করে ছোট ছোট বল তৈরী করুন।
এবার একটা বড় পাতিলে চার কাপ চিনিতে ১৪ কাপ ঠান্ডা পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দেন। চিনি পানির সাথে মিশে গেলেই বলগুলো দিয়ে দিয়ে ডাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে ।
২৫– ৩০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখুন বল গুলো রসে ভিজে রসগোল্লা ।
এবার একটা টেষ্ট করে দেখুন তো কেমন হয়েছে?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২৫