কি ভয়ানক ঘটনাটাই ঘটে গেলো সেদিন। পুরা বাড়িতেই চাপা উত্তেজনা। চুপ চুপ করেও বেশ জানাজানি হয়ে গেলো ব্যপারটা মা চাচীদের মধ্যে। সাথে বাড়ির মেয়েরাও প্রায় সবাই জেনে গেলো। কারণ ঐ ঘটনা তখন বাড়ির অন্য সব মেয়েদের জন্য এক বাস্তব শিক্ষার উদাহরন। কয়েকদিন ধরেই মীরা আপা আমার সেজো চাচার মেয়েটার শরীর ভালো যাচ্ছিলো না। কিচ্ছু খেতে পারছিলো না। সারাদিন শুয়ে থাকছিলো। উঠলে মাথা ঘুরে পড়ে। এর মধ্যে শুরু হলো বমি। এত কিছু দেখে ছোটচাচী তাকে নিয়ে গেলো ডক্টরের কাছে। প্রথমত ভাবা হচ্ছিলো গ্যাসের বা বদ হজমের সমস্যা। দাদীমা তাকে নিজে হাতে বানানো হজমীগুলি খাইয়ে চলেছিলেন। কিন্তু ডক্টরের রিপোর্ট হাতে পাবার পর তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো বাড়ির সবার।
সবার প্রথমে সেই ঘটনা এসে আমাকে খবর দিলো ছোট চাচার মেয়ে রুমা। সবে ক্লাস ফাইভে পড়ে এর মধ্যেই তার মাথায় গিজগিজে বুদ্ধি। আমার জীবনে দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমতী মেয়ে সে। যাইহোক সেটা ছিলো শীত আসি আসি কোনো এক গড়িয়ে পড়া বিকেল বেলা। আমাদের শহরে আগে ভাগেই শীত এসে যেত। লেপ কম্বল নামিয়ে রোদে দেওয়া হয়ে গেছে। আমি দুপুরের খাবারের পর বিছানার লেপের মধ্যে শরৎচন্দ্রের জ্ঞানদার কথা পড়ে চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছিলাম। অনেকক্ষন হতেই উঠি উঠি করছিলাম। কিন্তু জ্ঞানদার দুঃখে আটকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় রুমা এসে জানালো কানে কানে ফিস ফিস। জাানিস নীরু আপু কি হয়েছে? আমি বললাম, কি? মীরা আপার পেটে নাকি বাচ্চা। আমি চমকালাম! রুমা বলেই চললো, সেজো চাচী অনেক কান্না কাটি করছে। মীরা আপার এখন কি হবে? আমি বোকার মত চোখ গোল গোল করে বললাম কি হবে মানে? ছেলে বা মেয়ে কিছু তো একটা হবেই। অবাক হয়ে দুখী দুখী মুখ বদলে ফেলে রাগ করে বললো, কিসের ছেলে আর মেয়ে ! মীরা আপার কি বিয়ে হয়েছে ! কে নেবে এই বাচ্চার দায়িত্ব! কে করবে বিয়ে! এই সব নিয়ে তুলকালাম হচ্ছে আর তুমি আছো ছেলে আর মেয়ে নিয়ে।
আমি আরও বেশি অবাক হলাম! কৌতুহলে জানতে চাইলাম তুই এত কিছু জানলি কি করে? সে বলে দরজা বন্ধ করে দাদীমা আর চাচীরা মীরা আপাকে জেরা করছিলো। তখনই এসব শুনেছি। সেজোচাচী মীরা আপাকে অনেক মেরেছে জানিস? মা না বাঁচালে খুনই করে ফেলতো বোধ হয়। রান্নাঘর থেকে দা নিয়ে গিয়েছিলো! আমি ভয়ে পাথর হয়ে গেলাম। বলে কি! সেজোচাচীর রুদ্রমূর্তী কল্পনা করলাম। যদিও জানি সেজোচাচী দারুন নাটকবাজ মানুষ। জন্মেও দা দিয়ে কাউকেই কাটতেন না। যত বড় বিপদই হোক না কেনো এটাও তার এক নাটক। সে যাইহোক মীরা আপার দুঃখে কাতর হয়ে পড়লাম আমি।
এরপর মীরা আপাকে দাদীমার ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হলো না। পরদিন খুব ভোরে শিবুর মাকে ডাকা হলো। সে কি সব জড়িবুটি দিয়ে মীরা আপাকে রক্ষা করলেন। এতকিছু সেই ছোট বয়সে আমাদেরকে কেউ বলে দেয়নি। আমরা নিজ গরজেই জেনে গিয়েছিলাম।
শিবুর মাকে দাদীমা সোনার হার হাতে দিয়ে বললেন, শিবুর মা কখনও নেমক হারামী করো না। তোমার দাদা পরদাদা এ বাড়ির নেমক খেয়ে বড় হয়েছিলো। শিবুর মা পান দোক্তা খাওয়া লাল জীব বের করে রাম রাাম করে মাথায় দু হাত ঠেকিয়ে বেরিয়ে গেলো। এসব ঘটনা আমাদের শুনানো হবে না হবে না করেও দেখানো যাবে না যাবে না করেও কিন্তু ঠিকই শুনানো ও দেখানো হত। অনেকটা ঐ ঝি কে মেরে বৌকে শিক্ষার মত।
তারপর থেকে মায়ের শাসন বেড়ে গেলো। খবরদার হুশীয়ার শুনে শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেলো। এই দিকে চলতে লাগলো বিয়ের তোড়জোড়। মীরা আপাকে বিয়ে দিতে হবে। তার আর পড়ালেখা করা হবে না। কলেজ যাওয়াও বন্ধ। কেউ জিগাসা করলে বলা হয় ওর মাথার প্রবলেম মানে মাথায় কিছু ঢুকেনা এবং ঠিকই তার তিন বা চার সপ্তাহের মাঝে মীরা আপার বিয়ে হয়ে গেলো লম্বা দাঁড়িওালা এক হুজুরের সাথে। ঐ দাঁড়িওয়াকা হুজুর নাকি খুবই উচ্চবংশীয় মৌলানা কিন্তু পাত্রী পছন্দ না হওয়াতে বিয়ের বয়স গড়িয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু পাত্র দেখার পর আসল ঘটনা আমার বা আমাদের ধারনা হলো পাত্রী পছন্দ না আসলে পাত্রকেই বোধ হয় কোনো পাত্রীর পছন্দ হয়নি। সাদা ধপধপে চেহারার নুরানী ভাবের মাঝে থেকেও বোকা বোকা চেহারার ভালোমানুষ সেই হুজুরের সাথে আমাদের অপরূপা মীরা আপার বিয়ে হয়ে গেলো।
মীরা আপা একটুও কাঁদলো না। একটাবারও অসন্মতি জানালো না বিয়েতে। এই বিয়ে কিন্তু খুবই ধুমধাম করেই হলো। এবং বিয়েতে লোকজন দাওয়াৎ থেকে শুরু করে কোনো আয়োজনেরই কমতি হলো না। হলুদ মেহেদী সবই চললো। আমরা একটু ছোটরা যারা ছিলাম বাংলা সিনেমার মত সেই চিন্তায় কে মীরা আপার এই সর্বনাশ করলো ভাবনাটা নিয়ে তারা সবাই ভুলে গেলাম ঐ অনর্থক ভাবনা বিয়ের আনন্দের ডামাডোলে আরও অর্থপূর্ণ সাজগোজ আর নানা রকম উৎসব নিয়ে। বিয়েতে সেজোচাচা সবাইকে একই রকম শাড়ি পাঞ্জাবী দিলেন।
সেই শাড়ি পরে কপালে টিপ আর লিপস্টিক, হাতে চুড়ি, খোঁপায় মালা সব সাজুগুজুর অবাধ পারমিশন পেলাম আমরা। আমাদের বাড়িতে মেয়েদেরকে কাজল লাগাবার পারমিশন দেওয়া হত কিন্তু কোনোভাবেই লিপিস্টিক লাগাবার পারমিশন ছিলো না আমাদের। বিয়ের আগে নাকি লিপস্টিক দেওয়া যাবে না। আর লাল লিপস্টিক লাগানো নাকি বড়ই বাজে মানুষের কাজ। এমনই বলতেন দাদীমা। তাই আমাদের জন্য ন্যাচারাল অরেঞ্জ কালার আনা হলো। আহা এই কথা লিখতে গিয়ে আমার সেই লিপস্টিকের গন্ধটাও আজ মনে পড়ছে বড়। ঐ লিপস্টিকের গন্ধটাও ছিলো অরেঞ্জ মানে কমলা লেবুর মতই। বিকেল হবার আগেই সেজেগুজে রেডি হলাম আমরা।
আমি লুকিয়ে ছাদের ঘরে এলাম খোকাভাই এই বিয়ে উপলক্ষে পাওয়া তার পাঞ্জাবীটা পরেছেন কিনা। আসল উদ্দেশ্য নিজের সাজটাই দেখানো তাকে। হা হা ভাবলে আমার এখনও হাসি পায়। জানিনা আমার মতই ঐ ১৫/১৬ বছর বয়সে সব মেয়েরাই নিজেদেরকে সাজুগুজুর পর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী মনে করে কিনা। যাইহোক সারাবাড়ি আনন্দ আয়োজন আর ছাদের ঘরে খোকাভাই চুপচাপ শুয়ে আছে কপালের উপরে হাত ভাঁজ করে। আমি তো অবাক! একটু রাগও লাগলো আমার ঢঙ্গ দেখে। একটু পরে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। বাড়ির সব ছেলেমেয়েরাই তোড়জোড়ে সামিল হয়েছে। আর উনি কিনা সেই একই ঢঙ্গে বসে আছেন উপরের এই বদ্ধ রুমে?
আমি গিয়ে বললাম, এ্যই খোকাভাই। কি করো শুনি? সবাই রেডি আর তুমি এখনও শুয়ে?
খোকাভাই আমার দিকে না তাকিয়েই চোখ বুজেই নির্লিপ্ত গলায় বললো,
-আমি যাবো না
- যাবে না মানে!
আমার খুব রাগ হলো। মনে হয় যাবে না সেটা কারন না এত কষ্ট করে সেজেগুজে আসলাম আর সে আমার দিকে তাকাচ্ছেই না তাই।
আমি তার দুই হাত ধরে টেনে উঠালাম।
- উঠো এখুনি। তোমাকে যেতেই হবে।
- খোকাভাই আমার দিকে তাকালো। তাকিয়েই রইলো। হা হা পুরাই সিনেমার মত তাই না? আসলেই যে বলে সিনেমাগুলো জীবন থেকেই নেওয়া তাহা খানিক সত্য বটে। আমিও খোকাভায়ের হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে একটু লজ্জা পেলাম। তাড়াতাড়ি টেবিলের উপরে রাখা পাঞ্জাবী নিয়ে ধমক দিয়ে বললাম, এখুনি পরো। পরো বলছি। তারপর টেনে টুনে তার জামা খুলতে গেলাম। হা হা জানি মিররমনি অনেক হাসবে এখানে আমার লেখা পড়ে।খোকাভাইও আমার কান্ড দেখে হাসছিলো। কিন্তু এই টানাটুনিতে ভয় পেয়ে বললো,
- দাঁড়া দাঁড়া পাগলী হয়ে গেলি নাকি!
তারপর হাত থেকে পাঞ্জাবীটা নিয়ে বললো,
- ঐ তুই আমাকে ধমকাস কেনো রে পিচ্চি? সাহস তো কম না! বলে হো হো হাসতে লাগলো।
একে সেই ছয় ছেলে তিন মেয়ের একান্নবর্তী পরিবার এবং তার ডাল পালা শাখা প্রশাখায় এক হাঁট মানুষের আনাগোনা ছিলো ও বাড়িতে যে কোনো অনুষ্ঠানেই। তারমাঝে খোকাভাইকে নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথাই ছিলো না এই এক আমার ছাড়া। খোকাভাইকে জোর করে টেনে নামিয়েছিলাম সেদিন ঐ এক বাড়ি মানুষের মাঝে। যদিও আমি নেমে আসার খানিক পরে খোকাভাইকে একা একাই নামতে হয়েছিলো। নইলে এক সাথে নামলে আর সেটা মায়ের কানে গেলে আর রক্ষা ছিলো না আমার। তবুও খোকাভাইকে সেই অনুষ্ঠানে সকলের মাঝে দেখে আমার খুব ভালো লাগছিলো। সারাক্ষন সকলের অজান্তে ঘিরে ছিলাম তাকেই। খোকাভায়ের সাথে কারো সখ্যতা ছিলো না ও বাড়ির। তবে বিশেষ দিন বলে মা চাচীরাও তাকে ডেকে খাওয়াতে কার্পন্য করেনি। আমার মুখচোরা খুব স্বল্পভাষী খোকাভাই সকলের মাঝে থেকেও যেন ভীষন উদাসী ছিলো। ও বাড়ির কারো চোখেই কোনো বিশেষত্ব ছিলো না তার শুধু আমার কাছেই খোকাভাই ছিলো এক অপার বিস্ময়!
মীরা আপার বিয়ে নিয়ে সকল তোড়জোড় আচার অনুষ্ঠান শেষ হবার পর ও সকল আত্মীয় স্বজন ফিরে যাবার পর এবং অতো বড় বাড়িতে এক বাড়ি মানুষ থাকবার পরও হঠাৎ কিছু নিস্তব্ধতা নেমে এলো। অবশ্য প্রতিবারই যে কোনো অনুষ্ঠানের পরেই ওমনটা হত। তবে এবারে তার সাথে যোগ হলো বাড়ির অন্যান্য মেয়েদের সে বলতে গেলে শিশুগুলো থেকে শুরু করে ২০/২২ যারা অবিবাহিত ছিলো সকলকে নিয়ে মা চাচীদের বিশেষ শিক্ষা দীক্ষা যাতে ভয় আর ভীতি আর রক্তচক্ষু শাসনই মেশানো থাকতো বেশি। আর প্রতিবার ছিলো সাথে মীরা আপার উদাহরণ তার নাম কৌশলে উহ্য রেখে।
এত কিছুর পরও। এত শাসন বারণ বিধি নিষেধ, রক্তচক্ষু শাসন! তবুও সবার চোখ ফাকি দিয়ে একদিন স্কুল পালিয়ে চলে গেলাম আমরা শহরের প্রান্তে সেই ভাঙা রাজবাড়িটাতে। আমাদের ঐ ছোট্ট শহরে লুকিয়ে কোথাও বেড়াতে যাবার উপায়ই ছিলো না। শুধু বাড়িতেই না সারা শহর জুড়েই চেনা মানুষের চোখ। তবুও আমরা তখন অদম্য সাহসী। এত কিছুর পরেও সকলের চোখ ফাঁকি দিয়েছিলাম আমরা। চলে গিয়েছিলাম ঐ জীর্ণ পুরাতন রাজবাড়িতে। কোনো সংস্কার হয়নি তখনও ঐ বাড়িটার। বিশাল সেই অট্টালিকা প্রাসাদ তখন শুধুই গরু ছাগলের অবাধ বিচরণভুমি । প্রশ্বস্ত বাঁধানো সিড়িটার ভাঙাচোরা কোন, এখানে ওখানে ছালওঠা চেহারা। সেই সিড়ি বেয়ে উঠে গিয়েছিলাম আমরা। ভাঙ্গাচোরা দিনহীন চেহারার সিড়িগুলি। তবুও যেন সে ছিলো আমাদের স্বপ্নে দেখা রুপকথার রুপোলী সোপান।
ইট বেরিয়ে থাকা লাল লাল চওড়া সেই বারান্দাটা দিয়ে হেঁটে গিয়েছিলাম আমরা। উপরে উঠে একদম শেষপ্রান্তের বড় নাচঘরটায়। একদিন যেখানে নুপুরের ঝুম ঝুম আর হাজারও করতালীর আনন্দ মুখর আসর ছিলো, বসন্ত বাহার বা রাগ তোড়ি কিংবা ইমনকল্যানের সূরের মূর্ছনায় ভরে থাকতো চারিধার, সেই নীরব নিথর নাচঘর দাঁড়িয়ে ছিলো নিশ্চুপ। বোধ হয় আমাদেরই অপেক্ষায়। সেই নাচঘরের চারিদিক জুড়ে এককালের বিশাল সব অখন্ড বেলজিয়াম আরশীর অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিলো তারই একটু আধটু শত খন্ডিত অংশগুলি। সেই বিকেলের সোনাঝরা রোদে তারা ঝিকমিক হেসে উঠছিলো। গোল গোল মাথার অদ্ভুৎ অতিকায় জানালাগুলি দাঁড়িয়ে ছিলো হা করে। একটারও কপাট বা পাল্লা ছিলো না। পুরোই ফাকা গবাক্ষগুলি। হু হু বাতাস বইছিলো। সেই কপাট বিহীন গবাক্ষের ধারে গিয়ে দাড়িয়েছিলাম আমরা। খোকাভাই আর আমি। একই জানালার ফ্রেমে দুই দুইটি সদ্য কৈশোর পেরুনো মানব মানবী। বাইরে ছিলো অসীম মায়াবী ঝকঝকে নীলাকাশ। আকাশের সেই ছবিটা হৃদয়ের ক্যানভাসে আজও বাঁধা পড়ে আছে আর সাথে চোরকাঁটার মত বিঁধে আছে
সেই পড়ন্ত দুপুর ।
একটি ভগ্ন পুরাতন রাজবাড়ি। একটি স্কুল ড্রেস পরা, বেনী দুলানো কিশোরী মেয়ে আর একটু এলোমেলো, বড়বড় চুল দাড়ি আর গভীর চোখের মায়াময় মুখের রূঢ় কঠিন দুঃখী ছেলেটা; খোকাভাই -আমার গোপন ভালোবাসা। সাক্ষী সেই জীর্ণ পুরাতন রাজবাড়িটি। এখনও সে কি মনে রেখেছে সেই বিকেলের কথা?
বিশাল গবাক্ষপথে হুহু হাওয়ার মাতম বইছিলো। আমরা পা ঝুলিয়ে বসেছিলাম গরাদবিহীন সেই জানালায়। কিছু মূহুর্তের জন্য আমরা ভুলেছিলাম একটি কঠিন পৃথিবীর সকল ক্লেদাক্ততা। শত কথা আর হাসি তামাশায় আমি তখন গিরিবাজ পায়রা। আর খোকাভাই ছিলো আজীবন স্বল্পভাষী গুরু গম্ভীর এক সন্যাসীঠাকুর।
সন্ধ্যা নামার আগ দিয়ে আমরা ভয়ংকর রেলিং বিহীন সেই ভাঙ্গা সিড়িটা বেয়ে ছাদে উঠে গিয়েছিলাম। পুরোনো বাড়িটার রুক্ষ কঠিন ইটের পাঁজর ভেদ করে এখানে সেখানে উঁকি দিচ্ছিলো লতা গুল্ম আর শিশু বটগাছ। এরই মাঝে এক কোনায় জ্বলজ্বল করছিলো ফুলবতী লজ্জাবতী গাছটার বেগুনী গোলাপী অপূর্ব কারুকাজ। লজ্জাবতীর গাছ আমি অনেক দেখেছি। ছুঁয়ে দিলেই লজ্জায় বুজে যায় সেই আশ্চর্য্য অবাক করা তার স্বভাবের কথা যেদিন জেনেছিলাম সেদিন থেকেই লজ্জাবতীও আমার এক অবাক বিস্ময়। তবে ওমন লজ্জাবতীর অত বড় গাছ আর ওমন অদ্ভূত সুন্দর বেগুনী গোলাপী ফুল তো দেখিনি আগে! আমি মুগ্ধ হলাম! চেঁচিয়ে বললাম, দেখো কি সুন্দর! আর তারপর- খোকাভাই
তোমার স্বভাবসিদ্ধ নিশব্দ ভাষায়
অর্পণ করেছিলে একথোকা বেগুনী গোলাপী অর্ঘ্য।
একটি রুপকথা বিকেলে
একটি কিশোরী ভালোবাসার বেদীমূলে।
সেই পেলব কোমল
লজ্জাবতীর ফুলের ছোঁয়া
বিকেলটাকেই বদলে দিলো আমার।
জানো খোকাভাই, এ জীবনে যত উপহার
আর কিছু সাথে, তুলনা হয়না তার।
চলবে......
ছবি - নেট থেকে...
১ম পর্ব
২য় পর্ব