সে অনেক দিন আগের কথা একদিন হঠাৎ আমি এই ব্লগে একটা কবিতা পড়লাম। সেটা অবশ্য যদিও আমার ভাষায় ছড়িতা টাইপ তবুও
সে ছড়িতা বা কবিতা পড়ে আমি মহা মুগ্ধ! সবাই তো কবিতায় প্রেমিকার বন্দনা করে, নানা রকম রুপ, গুন বা বিভিন্ন ইতিবাচক মোহময় মুগ্ধতা প্রকাশ করে কিন্তু কি লিখেছে হাবীব কাইউম, এই ভাইয়াটা তার কবিতায়! প্রথমে অবাক এবং বিস্মিত হলাম তারপর হাসতে হাসতে মরলাম। ভাইয়ার লেখনীর প্রতি সেই আমার প্রথম অবাক করা মুগ্ধতা।
সে কবিতা আমি বার বার পড়ি এবং ভাইয়াকে বললামও যদি কোনোদিন কবিতার বই প্রকাশ করো আমাকে জানাতে ভুলোনা ভাইয়া। আমি হতে চাই তার প্রথম ক্রেতা। ভাইয়া যে সে কথাটা ভোলেনি এবং আমাকে এইভাবে মনে রেখেছে তা যেদিন জানতে পারলাম কৃতজ্ঞতায় আর ভালোবাসায় চোখে পানি এসে গেলো আমার।
সেদিন একখানে যাচ্ছিলাম। সেটা ছিলো বৃহস্পতিবারের বিকেল। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। এই জ্যামে শুধু শুধু বসে থাকলে যেমনই আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তেমনি দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করে। আবার নিজের রুম ছাড়া কোথায় ফেসবুক গুঁতাগুঁতিও অপছন্দ আমার তাই সাথে নিয়ে নেই বই। এবারেও ব্যাগে পুরে নিলাম হাবিব ভাইয়ার ছোট্ট বইটা।
মলাটে বর্নীল রঙ। পর পর দুই পাতা উল্টে পেলাম বই এর নাম, লেখক ও প্রকাশনীর নাম। তবে তার পরের পাতা উল্টেই আমার চক্ষু চড়ক গাছ!!!!!!! ভাইয়া উৎসর্গ পত্রে এ কার নাম লিখেছে!
মুখখানা যেমনই হাসি হাসি হলো তেমনই আনন্দে ভরে উঠলো মন। ভাইয়ার বই উপপাদ্য-১ এ ছোট ছোট পদ্য ঠিক ১১৯টি আছে এবং অবশ্যই মজার এবং মজার তবে ভাইয়া ১২০টা না দিয়ে ১১৯টা দিলো কেনো সেটাই ভেবে ভেবে বের করতে পারলাম না। সে যাইহোক ভাইয়ার বই এর কয়েকটি ভালো লাগার পংক্তি......
১.খুন ঝরালে হয় যদি কেউ খুনি
খুনীর খাতায় মশার তবে
নাম কেনো নেই শুনি!!!
২.আগুনের দাহে পোড়ে
গার্মেন্টস যেভাবে,
শ্রমিকেরা অশ্রুতে
কি করে তা নেভাবে?
৩.ভাতের দু মুঠ চাল যে দেশের
বহুৎ ঘরেই নাহেংগা
মাত্র সাড়ে তিন লাখে যায়
সে দেশেরই লাহেংগা!!
৪. কেউ দেয় পায়ে পাড়া
কেউ হাতে খামচি
এভাবেই পাবলিক
বাসে উঠে নামছি।
৫.নেতা সে তো নেতা হ্যায়
দেতা নেহি কুছ
নিজের আখের শুধু
করে যায় গুছ!!
৬. নামাজে যে কি উপায়ে
মন দি,
জুতো চোর করে যদি
ফন্দি!( এটা পড়ে আমার অবশ্য খায়রুলভাইয়াকেই মনে পড়েছিলো )
এমনি মজার মজার সব পদ্য নিয়ে হাবীবভাইয়ার বই খানি সাজানো রয়েছে। আমার মতন ট্রাফিক জ্যামে বা বিকালের চায়ের সাথে এই বইখানি জমবে খুব খুবই এমনই আমার বিশ্বাস! তবে ভাইয়ার বই বন্দনা শেষ করবার আগে আমি এখানে ভাইয়ার যে কবিতাটি পড়ে তার লেখার প্রতি আমার ভালোবাসা সেই কবিতাটি এইখানে শেয়ার করছি.....
তোর জন্য
২১ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দোয়া
তুই হয়ে যা জিব্বাবিহীন
তোর কথাতে কেউ না ভুলুক কেউ না মজুক আর কোনোদিন
তোর ছলনা মিথ্যেগুলো কেউ যেন আর শুনতে না পায়
মুখ থেকে তোর জিভটা খসুক, যেমন করে টিকটিকি তার লেজটা হারায়
ঘুণের ফলে অসার লাঠি হয় যেরকম
আঙুল অসাড় হোক সেরকম
সবগুলো তোর
কেউ যেন আর জীবনজুড়ে দেখতে না পায় সর্বনাশা দুর্দশা ঘোর
তোর কারণে জীবন কারো হয় না যেন দুর্বিষহ কিংবা জটিল
তুই যেন আর ফাঁদ না পাতিস চাল না চালিস ঘৃণ্য কুটিল
প্রাচীন ছাদের ঢালাইর মতো তোর চেহারা পড়ুক খুলে
তোর কারণে আর যেন কেউ আঘাত না পায় মর্মমূলে
ক্যাকটাসে রূপ নেয় যেন তোর মুখ
তোর কারণে বৃদ্ধি না পাক আর কারো দুখ
ওয়াইজঘাটে যে হোটেলগুলোয় নিচ্ছে পানি কলসি ভরে
কলসিগুলো ঢোক খাওয়া সব...অমন করে
তোর চেহারায় যাক পড়ে ঢোক
কেউ কোনোদিন আর দেবে না তোর দিকে চোখ
তোর কারণে আর কখনো বিরক্তিতে কেউ না পড়ুক
দাঁত না খিঁচাক কেউ কখনো এবং কারো ক্ষোভ না ঝরুক.......
যদিও এ কবিতা আমার উদ্দেশ্যে লেখা না তবুও সে সময় অনেকেই যেমন সন্দেহ করেছিলো আমাকেই ঠিক তেমনি আমিও সন্দেহ করেছিলাম যে আমিই বুঝি এই কবিতার পিছে নিশ্চিৎভাবেই বসৎ করি। হা হা হা কারণ লাইফে কোটি কোটি প্রশংসার সাথে সাথে এমন গালমন্দ অভিশাপও কম পাইনিতো!!!!!! তাই এ কবিতাটা ছিলো আমার মহা মজার এক ভালো লাগা!!!!!
যাইহোক ভাইয়া আমার অনেক অনেক অনেক প্রিয় এক কবি। আগামী বইমেলায় তার আরও আরও বই চাই.........আর ভাইয়ার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা আর শুভকামনা।
এবার আসি এ.টি.এম. মোস্তাফা কামালভাইয়ার বরযাত্রা বইটি প্রসঙ্গে। ভাইয়ার এ বইটিও ছড়ার বই। মনোমুগ্ধকর প্রচ্ছদে এবং মজার সব কবিতায় আমি বার বার ফিরে গেছি আমার ছেলেবেলায়। আবার যেন ছেলেখেলার ছলে এসব কবিতায় লুকানো রয়েছে অনেক ভারী কথা। ভাইয়ার বইটি হতে ৩টি ভালো লাগার কবিতা-
১. এক্কা চলে হেলেদুলে
টিয়ের ছানা বর
এতদিনের পুরান সখী
ময়না হলো পর।
মোরগ চলে আগে আগে
সঙ্গে নিয়ে দই,
তমাল তলায় এসেই বলে
ফানুস ওড়ে ওই।
কাক বেচারা বেলের লোভে
মারলো গাছে ঢিল
লগ্ন গেলো জলদি চলো বললো ভুবন চিল।
২.আজ সকালে খবর পেলাম বই লিখেছেন নানা
সেই কাহিনীর নায়ক নাকি হলদে পাখির ছানা
নানা কেমন গল্প লেখেন সে তো সবার জানা
হয়তো পাখির ঠ্যাংটা ভাঙ্গা নয়ত চক্ষু কানা
ফুর্তি করে খায় পাখিটা লিখে দেবেন তা- না
লিখে দিলেন পেটটা খালি পায় না খানা দানা.....
৩. আমার কিছু চাই টাকা
পকেটটা তো ফকফকা
সবাই বলে ভাবেন ক্যান?
দেবে টাকা গৌরী সেন।
হয়ে গেলো ভাবনা দূর
বাজলো প্রানে মধুর সুর
এবার কোনো চিন্তা নাই
গৌরী সেনের বাসায় যাই।
বিপদ হলো এইখানে
পাবো তাকে কোন খানে?
সবাই সেনের নাম জানে
বাড়ি কোথায়? রাম জানে.......
হা হা হা এরপরে ভাইয়া কি গৌরী সেনের দেখা পেয়েছিলো? বাকী কবিতায় সে খবর লেখা আছে। ভাইয়ার বইটাও অনেক ভালো লেগেছে। ভাইয়ার জন্য কোটি কোটি শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো......
সবাইকে আগাম স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ......
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:১৩