শাওন একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে দিশার ঠোঁটের দিকে৷ দিশা সাধারণত ঠোঁটে লিপস্টিক লাগায় না, সে ব্যবহার করে লিপগ্লস৷ শাওনের বিশ্বাস— এই লিপগ্লস নামক বস্তুটা এ পৃথিবীতে একমাত্র দিশাকেই মানায়; কী শৈল্পিকভাবে ঠোঁটের ওপর আলতো করে ছুঁয়ে নেয়া, এত সুন্দর করেও ঠোঁট সাজানো যায়?
খোলা আকাশের নিচে বিস্তৃত মাঠ সমতল, চারপাশটা একেবারে জনমানবশূন্য; আকাশে শরতের নীল, সাদা মেঘে রোমান্টিক আবছায়া৷ বিশাল শূন্যতার মধ্যে সৌন্দর্যের ঐশ্বর্য— একটা মানুষ এতটা সুন্দর কীভাবে হয়?
নীরবতা ভেঙে দিশা বললো, "কী হলো, চুপ যে?"
দিশার ঠোঁটের ওপর থেকে দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিল শাওন; সে কিছুটা অপ্রস্তুত— সে যে দিশার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ছিল, সেটা সে বুঝে ফেলেনি তো?
বললো, "না, এমনিতেই! একটা কথা বলি?"
"বলুন!"
"তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে!"
কথাটি বলার পর সে নিজেই এমন লজ্জা পেয়ে গেল যে দিশার দিকে আর চোখ তুলে তাকাতে পারছে না! পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পেরে পৃথিবীর সকল গাম্ভীর্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দ্যুলোক-ভূলোক কাঁপিয়ে দিশার কণ্ঠে হেসে উঠলো পৃথিবী৷ সাথে সাথে চোখ তুলে শাওন পুনরায় দিশার ঠোঁটের দিকে তাকালো৷ কী দারুণ নাতিদীর্ঘ ঠোঁট বাঁকা চাঁদের মতো জ্যোৎস্না দিয়ে যাচ্ছে বিকেলের হৃদয়-অন্ধকারে; মনে হলো— একবার সে ছুঁয়ে দেয় সে ঠোঁট তার নিরীহ আঙুলে৷ এই ঠোঁট, আহ্!
হৃদয় শুকিয়ে কাঠ হয়ে ওঠার উপক্রম; শাওনের ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে ওঠে, হাত দুটো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেপরোয়া হতে চায়— একবার যদি ওই মখমল গালে রাখা যেত হাত, যদি বৃদ্ধাঙ্গুলির স্পর্শে মাতিয়ে তোলা যেত ও ঠোঁট, যদি আরো কাছে খুব কাছে এগিয়ে অনুভবে ধরা যেত তার নিঃশ্বাস, যদি ঠোঁট দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়া যেত, মেখে নেয়া যেত লিপগ্লসে তার ঠোঁটের সুবাস! উফ্, জীবন এত সুন্দর কেন? এত সুন্দর কেন?
হঠাৎ করে মোবাইল ফোনে এলার্ম বেজে উঠলো! এক অদ্ভুত বিভ্রান্ত অনুভব নিয়ে ঘুম ভাঙলো শাওনের; ইশ্, মাত্র পনেরো মিনিট হাতে আছে আর, দিশার আগেই তাকে পৌঁছতে হবে নদীর ধারে বিস্তৃত বালুর চরে৷
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪