ঠিক যে মুহূর্তে নিলয় সিদ্ধান্ত নিলো তিশার হাতটি ধরবে, সে মুহূর্তেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি৷ অগত্যা হাতের কথা ভুলে গিয়ে তাকে ধরতে হলো ছাতা৷ প্রথম প্রথম এই বৃষ্টিটার ওপর প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হলেও ধীরে ধীরে ভালো লাগতে আরম্ভ করলো৷ ছাতার পরিধি অতিক্রম করে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো এমনভাবে পড়ছে যেন চাইলেই একটা একটা করে বৃষ্টিফোঁটাগুলো গুণে ফেলা যায়৷ তিশা হাত বাড়িয়ে দিলো ছাতার ওপাশে, আঁজলা ভরে জল নিয়ে নিলয়ের মুখে ছুড়ে দিল; নিলয়ের তৃষ্ণার্ত হাত কেঁপে উঠলো খানিকটা, তিশার হাত যেন ফোঁটায় ফোঁটায় ছুঁয়ে গেল তার মুখ-চোখ-ঠোঁট! এ মুহূর্তে বৃষ্টিটাকে মনে হচ্ছে যেন দেবদূত; কোটি কোটি বছর ধরে যে স্পর্শের জন্য সে তিলে তিলে মরেছে, এই আকাশবৃষ্টি সে স্পর্শের সাথে তার সাক্ষাৎসাক্ষী!
বৃষ্টি কমেছে! ছাতাটি গুটিয়ে নিলয় সেটা নিজের ডান পাশে রেখে দিল; তার বাম পাশে তিশা, তাদের মধ্যে কোনো দেয়াল রাখতে চায় না সে, তা সে ছাতারই হোক না কেন৷ চোখ নামিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়েছে তিশার আঙুলগুলোর দিকে; হায়, এভাবে নির্দ্বিধায় যদি হাতটাকে রাখা যেত তিশার হাতের উপর— জীবনটা পূর্ণ হয়ে যেত! নিলয়ের আঙুলে মৃদু কম্পন— ছোঁবে, না কি ছোঁবে না?
তিশা হেসে উঠলো, বিদ্যুৎতরঙ্গ খেলে গেল নিলয়ের বুকের ভেতর— এ হাসি অমৃত!
নিলয় বললো, "তিশা, তুমি কি জানো, তোমার আঙুলগুলো স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি?"
তিশা তাকিয়ে আছে আকাশে, শুভ্রনীল আকাশে মিশে গেল তার আলোড়িত চোখ৷
তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে নিলয় বললো, "আমি কি তোমার হাতটি একবার স্পর্শ করতে পারি তিশা?"
তিশা নির্বিকার!
কিছু সময়ের জন্য নিলয়ের নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হলো! যে কথাগুলো সে মনে মনে এতবার করে বলছে, সে কথাগুলো একবার যদি মুখ ফুটে বলে ফেলতে পারতো, কে জানে, হয়তো আঙুলগুলো ছোঁয়া হয়ে যেত এতদিনে! আজকের কথা তো না; গত তিন মাস ধরে নিলয়ের হৃদয়কম্পনগুলো আঙুলের ডগায় এসে অস্থির সময়যাপন করছে, অথচ মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে থাকা আঙুলগুলো স্পর্শ করা যাচ্ছে না! কখনো কখনো এত কাছে থেকেও কত দূরে থাকা হয়; কখনো কখনো কাছে এসেও যেন কাছে আসা নয়!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪৭