আমাদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু ট্যাবু আছে; এর মধ্যে একটি হচ্ছে 'চুম্বন', চলিত বাংলায় 'চুমু'!
যদিও কিছু মানুষ এটাকে ট্যাবু বানিয়ে ফেলেছে; এটা তো অস্বীকার করার কোনোই উপায় নেই যে চুম্বন হচ্ছে ভালোবাসা প্রকাশের মৌলিক ও প্রাথমিক মাধ্যম!
গবেষকদের মতে, চুম্বন শরীর ও মনের জন্য বেশ উপকারী। উদাহারণস্বরূপ- ধরুন, আপনি কোনো কিছু নিয়ে খুব মানসিক চাপে আছেন। এই সময়ে ভালোবাসার মানুষটির একটি চুম্বনেই আপনার মানসিক চাপ অনেকখানি কমে যাবে। নিয়মিত চুম্বনে মানুষের যৌবনও বৃদ্ধি পায়। শারীরিক অনুশীলন করার মতোই চুমু শরীরে হ্যাপি হরমোন নিঃসরণ করে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার ব্যাপারে আপনাকে নিরুৎসাহিত করে এবং আপনার শারীরিক গঠন ঠিক রাখে। এছাড়াও চুমু আপনার হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো এবং এটা আপনার দাঁতের ক্ষয়রোধ করে
যা-হোক, আজ আমরা চুম্বনের শারীরিক ও মানসিক নানা উপকারী দিক সম্পর্কে জানবো; চলুন।
মানসিক চাপ কমায়: চুমু খাওয়ার ফলে তা আপনার মন থেকে ডজনখানেক সমস্যার চিন্তা দূর করে দেয়। বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে গেলে, চুমু খাওয়ার ফলে শরীরের অক্সিটসিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এটি শরীরকে শান্ত করার রাসায়নিক। এছাড়াও চুমুর ফলে আপনি গভীরভাবে শ্বাস নিতে পারবেন, যা শরীরকে রিল্যাক্সড হতে সহায়তা করবে।
তারুণ্য ধরে রাখবে: চুমুর ফলে মুখের প্রায় ৩০টি পেশির উদ্দীপনা হয়। এছাড়াও এর উপকারিতার ক্ষেত্র আপনার কপালের ত্বক থেকে শুরু করে চোয়ালের মসৃণতা তৈরি পর্যন্ত বিস্তৃত। এর ফলে একদিকে যেমন নিজের মধ্যে তারুণ্য অনুভব করতে পারবেন, একই সাথে এটি আপনাকে তরুণ দেখাতেও সাহায্য করবে। চুম্বনের সময় মুখের রক্তচলাচল বেড়ে যাওয়ায় এর মাধ্যমে আপনার মুখের দ্যুতি বেড়ে যায় এবং বয়সের কারণে সৃষ্ট মুখের বলিরেখা কমিয়ে আনে।
ক্যালোরি ক্ষয়: আপনি যদি মনে করেন, শরীরের ক্যালোরি দ্রুত ক্ষয় করতে গেলে জিম করা বা দৌড়ানোই প্রধান উপায়, তাহলে আপনি ভুল করছেন। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২ মিনিট ধরে চুম্বন করলে শরীরে অন্তত ৬ ক্যালোরি ক্ষয় হয়। চুম্বনে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চুম্বনের জুড়ি নেই। এ কারণে আপনি যদি দৈনন্দিন ফিটনেসের অংশ হিসেবে ‘চুমু’কে অন্তর্ভুক্ত রাখেন, তাহলে তা খুবই কার্যকর হবে।
দাঁতের ক্ষয়রোধ: চুমু দাঁত ও মুখের সুস্থতার জন্যও ভালো। চুমু খাওয়া দাঁতের জন্য উপকারী। চুম্বনের সময় মুখের সালাইভা ফ্লো বাড়ে; ফলে ফলে দাঁত পরিষ্কার হয় এবং ভালো থাকে। এটি অ্যাসিডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, খাবারের কণাগুলো সরিয়ে দেয় এবং দাঁতের ক্ষয়রোধ করে।
হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে: চুমু খাওয়ার সময় কখনো আপনার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে, আবার কখনো-বা বেড়ে যেতে পারে হৃৎস্পন্দন। এতে হৃৎপিণ্ডের ব্যায়াম হয়। এছাড়াও এর মাধ্যমে আরও কয়েকটি উপকার হয়; যেমন- এটি আপনার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন নিয়মিত হতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। চুমু এভাবে হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
ইনসোমনিয়া সারায়: যারা চুমু খেতে ভালোবাসেন এবং নিয়মিত চুমু খান, তাদের ইনসোমনিয়ার সমস্যা হয় না। অন্যদের তুলনায় তারা মানসিকভাবে স্থির প্রকৃতির হন।
জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা: গবেষকদের মতে- যারা নিয়মিত চুম্বন করে, জীবন সম্পর্কে তাদের ধারণা বেশ ইতিবাচক হয়ে থাকে। এসব যুগল অন্যদের তুলনায় বেশি দীর্ঘ ও সুস্থ্ জীবন যাপন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: নিয়মিত চুম্বনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। নিয়মিত চুম্বনকারী দম্পতিরা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও সুখী হয়। চুম্বনের সময় শরীর সুখানুভূতির হরমোন তৈরি করে। এর ফলে তারা অন্যদের থেকে বেশি প্রশান্তিতে থাকে এবং যে কোনো লক্ষ্য অর্জন তাদের জন্য সহজ হয়।
মেজাজ ফুরফুরে থাকে: চুম্বন করলে মেজাজ ফুরফুরে থাকে। প্রতিদিন সকালে মাত্র ২ মিনিট চুম্বন করলে সারা দিন আপনার মন-মেজাজ উৎফুল্ল থাকবে।
দুটি মানুষের ভালোবাসা প্রকাশের এই মাধ্যমে শরীরের নানান উপকারিতা লুকিয়ে আছে। চুম্বনকে মনের খোরাকের পাশাপাশি শরীরের খোরাকও বলা যেতে পারে। তাই ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়মিত চুম্বন করুন এবং সুস্থ, দীর্ঘ ও সুখী জীবন লাভ করুন।
চলুন, কবিগুরুর চুম্বন বিষয়ক একটি কবিতা দিয়ে শেষ করা যাক:
অধরের কানে যেন অধরের ভাষা
দোঁহার হৃদয় যেন দোঁহে পান করে-
গৃহ ছেড়ে নিরুদ্দেশ দুটি ভালোবাসা
তীর্থযাত্রা করিয়াছে অধরসংগমে।
দুটি তরঙ্গ উঠি প্রেমের নিয়মে
ভাঙিয়া মিলিয়া যায় দুইটি অধরে।।
ব্যাকুল বাসনা দুটি চাহে পরস্পরে-
দেহের সীমায় আসি দুজনের দেখা।।
প্রেম লিখিতেছে গান কোমল আখরে-
অধরেতে থরে থরে চুম্বনের লেখা।।
দুখানি অধর হতে কুসুম চয়ন-
মালিকা গাঁথিবে বুঝি ফিরে গিয়ে ঘরে
দুটি অধরের এই মধুর মিলন
দুইটি হাসির রাঙা বাসরশয়ন।
[কবিতা: চুম্বন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]
[তথ্য সংগৃহীত]
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৭