সামুর প্রতি ভাল লাগা তৈরি হওয়ার পেছনে আমার অন্যতম বড় একটা কারণ এর ইমোগুলা।
নেটের আর কোন জায়গার, এমনকি ম্যাসেঞ্জারের ইমোগুলাও আমার সামুর মত এতটা ভাল লাগে না।
সামুর ইমোগুলাকে আমার কাছে খুবই এক্সপ্রেসিভ মনে হয়! মাঝে-মধ্যে মনে হয় আমি বাস্তবেও সামুর ইমোগুলার মত এক্সপ্রেশন দিতে পারলে খারাপ হত না!
যাই হোক, সামুর প্রতি ভাল লাগা থেকেই ভাবলাম এর ইমোগুলার ভাবার্থ নিয়ে একটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ফেলি।
চুলচেরা বিশ্লেষণ তো করতে পারলাম না, শেষ পর্যন্ত মনে হয় আবুল হায়াতের টাকমাথা বিশ্লেষণ টাইপের কিছু একটা করে ফেলেছি!
যাই হোক, আমার এই টাকমাথা বিশ্লেষণ থেকেই সামুর ইমোগুলার কী ভাবার্থ বের হয়েছে একটু দেখে ফেলুনঃ
- এইটা হল ভালমানুষী মার্কা হাসি। আন্তরিকতা দেখানোর ব্যাপারে এই ইমোর কোন জুড়ি নেই। যদিও অনেক সময় ব্লগে অনেক জ্বালাময়ী কমেন্ট করেও ব্লগারদের এই ইমোটা ব্যবহার করতে দেখা যায়!
- এইটা হল বিরাট খুশির/বিটলামি/টিটকারি মার্কা হাসির ইমো।
ইমোটার নিচের পাটিতে ছোট-ছোট অনেকগুলা দাঁত থাকলেও উপরের পাটিতে মাত্র দুইটা দাঁত কেন, আর সেই দুইটা দাঁতের মাঝখানে এত বড় ফাঁকই বা কেন, এই চিন্তা আমাকে মাঝে-মধ্যেই উদাস করে ফেলে!
- বিরাট ভাব নেয়ার ইমো এইটা। কিন্তু ভাবটা ঠিকমত জমে নাই। সানগ্লাস পড়ে ভাব নেয়ার একটা চেষ্টা করসে, ঠিক আছে, কিন্তু সাথে বিখাউজ মার্কা একটা হাসি দেয়ার কী দরকার ছিল, বুঝতে পারছি না!
- মাশাল্লাহ্! চোখ টিবি দিবেন তো এইরকম শাহীভাবে দিবেন!
ব্লগের অনেক ভাইয়াদেরই আপুদের পোস্টে যেয়ে এই ইমোটা ব্যবহার করতে দেখা যায়। আপুরাও সেটাকে সহজভাবেই নেন, এবং মাঝে-মধ্যে উনাদেরকেও এই ইমোটা ব্যবহার করে ভাইয়াদের মনে ঝড়ে তুলতে দেখা যায়!
কিন্তু বাস্তব জীবনে কোন ভাইয়া যদি আপুকে এইরকম শাহীভাবে চোখ টিবি মারেন, তাহলে ইভ টিজিংয়ের দায়ে মামলা খাবেন নিশ্চিত!
- মনটা খারাপ, এইটা বুঝানোর জন্য এই ইমো ব্যবহার করা হয়। তবে একটা সমস্যা আছে, এই ইমো ব্যবহার করে অনেক ভন্ড মন খারাপ করার অভিনয়ও করতে পারেন!
- ফেসবুকের মানুষের দুঃখ কম, তাই তাদের এক চোখ দিয়ে পানি পড়ে। কিন্তু ব্লগের মানুষদের দুঃখের কোন সীমা-রীমা নাই! কষ্টে তাদের দুই চোখ দিয়ে সমানে গড়গড়ায়া পানি পড়ে!
ইমোগুলার ক্রিয়েটর কেন নাক দিয়ে পানি বের করারও একটা ব্যবস্থা করলেন না, এই আক্ষেপ আমাকে এখনও পোড়ায়!
- এইটা রাগ কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাওয়ার আগের স্টেপের ইমো। এই ইমো দেখলেই সাবধান হয়ে যান, আগ্নেয়গিরি যে কোন সময়ই বিস্ফোরিত হইতে পারে!
- এইটা স্ট্রেইট ফেসের ইমো। কিন্তু ফেস স্ট্রেইট করতে যেয়ে চোখটা কেন ট্যারা হয়ে গেল আমার মাথায় ঢুকে না!
- এই ইমো দেখছেন, তো আপনি গেছেন!
এই ইমোর ভাবার্থ, পাগলরে কইছো সাঁকো নাড়াইতে! এইবার বুঝবা বাছাধন কত ধানে কত চাইল!
- এইটা চরম টাস্কি খাওয়ার ইমো। এমন টাস্কিই খাইসে যে মুখের ভেতরের আল জিহবা পর্যন্ত দেখা যাইতেসে!
- এইটা ভেংচি কাটার ইমো। এমন ভেংচি কাটসে যে আরেকটু হইলে মুখের ভেতর থেকে জিবটাই খুলে বের হয়ে আসত!
ব্লগে যখন অনেক সময় চরম অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে কাউকে এই ইমোটা ব্যবহার করতে দেখি, আমি তখন বেশ মজাই পাই!
- এইটা মেকি অবাক হওয়ার ইমো। মানে মোটেও অবাক হয় নাই, কিন্তু অবাক হওয়ার ঢঙ করতেসে!
- এইটা টুথপেস্টের মডেলদের ইমো। কথা নাই, বার্তা নাই ফাও এর উপর ৩২টা চকচকা দাঁত বের কইরা বইসা আছে!
- এইটা মুখচোরাদের ইমো। মানে কিছু মানুষ আছে যারা আপনাকে ত্যাঁড়া-ত্যাঁড়া কথা বলবে ঠিকই, কিন্তু আপনার চোখের দিকে তাকানোর সাহস করতে পারবে না। তারা এই ইমোটা ব্যবহার করবে।
-এইটা উদাসী/নস্টালজিক/স্বপ্নবিলাসী হওয়ার ইমো।
আমি নিজেও এখন এই বিশ্লেষণধর্মী পোস্টটা লেখতে লেখতে এই ভাবটা নিয়ে বসে আছি!
- এইটা কুৎসিত হাসির ইমো। বাংলা সিনেমার গুণ্ডা-পাণ্ডা, ভিলেনদের এইভাবে হাসতে দেখা যেত। বর্তমানে ব্লগের অনেককেও এইরকম ভিলেন মার্কা হাসি দিতে দেখা যায়!
:!> - এইটা লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়ার ইমো।
এখন যাদের গাত্রবর্ণ কালো তারা তো লজায় লাল হবে না। সেই হিসেবে তাদের জন্যও আলাদা কোন ইমোর ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। সেটা না করে শুধু ধবলদের জন্য আলাদা ইমোর ব্যবস্থা করে এরকম রেসিয়াল আচরণ করার জন্য সামুর প্রতি আমার তীব্র ধেক্কার!
:#> - বিয়ের আসনে বসে বর-কনেও মনে হয় না এতটা লজ্জা পায়, এই ইমোটা যতটা লজ্জা পাইতেসে!
- এই ইমোর ভাবার্থ বুঝানোর জন্য একটা শব্দই যথেষ্ট।
অ্যাঁ!
:> - এইটা কিসের ইমো আমি নিজেও বুঝি না!
ব্লগের আপুরা মনে হয় এই ইমোটার ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন!
:-< - এইটা বোর হওয়ার ইমো।
আপনার কোন পোস্টে এই ইমোসহ কমেন্ট পাইলে ভুলেও আর সেই পোস্ট রিপোস্ট করবেন না!
এই ইমোর ভাবার্থ, তোমার এই অখাদ্য মার্কা পোস্ট একবার হজম করসি। কিন্তু নেক্সট টাইম এইরাম পোস্ট করলে তোমারে পচায়া ধুয়া ফেলব! ( আমার পোস্টের এই পর্যন্ত যারা আসতে পেরেছেন, আমি নিশ্চিত এই ইমোটা ব্যবহার করার জন্য তাদের হাত এখন নিশপিশ করছে!)
- এইটা বিরক্তির চোটে ঘুমায়া পড়ার ইমো।
(পোস্ট লেখতে লেখতে আমার নিজেরই এখন এই ইমোটা ব্যবহার করতে ইচ্ছে করতেসে!)
- পাগলা কুকুর আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে কিছুক্ষণ গড়গড় করবে, এটা হল সেইরকমই একটা ইমো!
কাজেই এই ইমো দেখলেই সাবধান! আক্রমণ যে কোন সময় যে কোন দিক থেকে চলে আসতে পারে!
- যাদের সামনের দাঁত দুইটা খরগোশের দাঁতের মত বড়, তারা হাসি দেয়ার জন্য এই ইমোটা ব্যবহার করবেন!
গা জ্বালানোর জন্যও এই হাসির কোন জুড়ি নাই!
- এই ইমোর ভাবার্থ বুঝানোর জন্য একটা লাইনই যথেষ্ট।
'কস কিরে মফিজ?!'
- ঘৃণা/অবজ্ঞা, বা অরুচি প্রকাশের জন্য এই ইমোটা ব্যবহার করা হয়। এই ইমোটাকে কিন্তু আবার ভেংচির ইমোর সাথে মিলায় ফেলবেন না! তাইলে বিপদ আছে!
- এইটা লোভী লোভী ভাব দেখানোর ইমো। ব্লগের খানাদানা মূলক পোস্টে ব্লগাররা ইমো ব্যবহার করেন, আর লুলরা কোন নারী ব্লগারকে দেখলেই এই এক্সপ্রেশন দেন!
:-& - এইটা কনফিউজড হওয়ার ইমো।
কিন্তু ইমোটার মুখ সবুজ কেন, এইটা চিন্তা করে আমি নিজেও কনফিউজড!
- এইটা মাতবর মার্কা একটা ভাব দেখানোর ইমো। ব্লগে এই ইমোটার ব্যবহারই আমি সবচেয়ে কম দেখেছি।
- এইটা অভিনন্দন জানানোর ইমো।
কিন্তু অভিনন্দন জানাইতে কেন জন্মদিনের তিনকোণা টুপি পড়ে নিতে হবে, বুঝতেসি না! টুপির পাশের সাইনগুলাও জুম করে দেখেও আমি বুঝতে পারলাম না।
- এইটা হাসতে হাসতে গড়ায়া পড়ার ইমো।
কিন্তু ইমোর লাল অংশটা কী জিনিস, ঠোঁট না মাড়ি, এই ব্যাপারটা আমার কাছে ক্লিয়ার না!
অনেক দিন পর ব্লগে কিছু লেখলাম।
কিন্তু লেখার সাইজ দেখে আমার নিজেরই এখন আক্কেল গুড়ুম হওয়ার যোগাড়!
এইরকম আজাইরা একটা টপিক নিয়া এত বড় লেখা আমি কিভাবে লেখলাম?!!