একদিন পথে যেতে যেতে-
হঠাৎ দয়ারামের চোখ গেলো রাস্তার ধারে,
জীর্ণ শরীরে দাঁড়িয়ে এক গাছের চারা যেন
ক্ষীন কণ্ঠে দয়ারামকে বলছে-
“আমায় তোমার সাথে নিয়ে নাও না,
অযত্ন, অবহেলা আর অনাদরে আমার এমন শীর্ণ দশা আজ। ”
দয়ারাম দেখলো-
সত্যিই তো!
আলো বাতাসের অধিকার অপেক্ষাকৃত বড় গাছের কুক্ষিগত,
দুর্বলতার সুযোগে কতিপয় পরগাছাও লতিয়ে বসেছে ওর গায়ে;
যেন তারা বলছে, বন্ধু বড় যদি হতে চাও আমাদের নিয়ে বাড়ো।
ওর এই দুর্দশা দেখে দয়ারামের ভারী মায়া হল,
পরম যত্নে ওকে তুলে নিলো,
বাড়ির আঙিনায় পর্যাপ্ত আলো বাতাসে রোপণ করলো,
গবাদির গলাধকরন না হয় তার জন্য সুন্দর করে বেড়াও দিলো,
সার দিলো, জল দিলো সাথে অনেক মমতাও।
এতো যত্নে চারা যখন বেড়ে গাছে রূপ নিলো-
পাড়া পড়শি, গ্রামবাসী, দূর থেকেও দেখতে এলো,
কেউ জানেনা, কেউ চেনেনা, সবার মুখে একই প্রশ্ন-
এতো সুন্দর! কি গাছ এটা ভাই?
দয়ারাম নিরব থেকে মুখে একটু মুচকি হাসে,
মনে মনে বলে, এই বুঝি সোম গাছ।
আরও যত্নে গাছে যখন হরেক রঙিন ফুল ফুটল
পাড়া পড়শি, গ্রামবাসী, দূর থেকেও দেখতে এলো,
কেউ জানেনা, কেউ চেনেনা, সবার মুখে একই প্রশ্ন-
এতো সুন্দর! কি ফুল এটা ভাই?
দয়ারাম নিরব থেকে মুখে একটু মুচকি হাসে,
মনে মনে বলে, এই বুঝি সোম ফুল।
অতি যত্নে ফুল যখন ঝড়ে সেথায় ফল ধরল-
পাড়া পড়শি, গ্রামবাসী, দূর থেকেও দেখতে এলো,
কেউ জানেনা, কেউ চেনেনা, সবার মুখে একই প্রশ্ন-
এতো সুন্দর! কি ফল এটা ভাই?
দয়ারাম নিরব থেকে মুখে একটু মুচকি হাসে,
মনে মনে বলে, এই বুঝি সোম ফল।
পিতৃহারা দয়ারামের যেমন দয়ার শরীর
তেমনি তার মাতৃভক্তি যারপরনাই নিবিড়,
দয়ারাম তাই মনে ভাবে-
পাকলে তবে, এ ফল মা প্রথম খাবে।
পাহারাদার সে বিশ্রামের ফুরসত যে নাই
দয়ারামের চৌপর নির্ঘুম কাটে তাই ।
পাকলে সে ফল খেয়ে যখন দয়ারামের মা মরে গেলো-
পাড়া পড়শি, গ্রামবাসী, দূর থেকেও দেখতে এলো,
কেউ জানেনা , কেউ চেনেনা, সবার মুখে একই প্রশ্ন-
এমন মরন! কি গাছ এটা ভাই?
দয়ারাম সব হারিয়ে এতিম আজ আর্তনাদে,
কেঁদে কেঁদে বলে, এই বুঝি বিষবৃক্ষ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৫