ছাত্র জীবনে যতোটা অগোছালো ছিলাম কর্মজীবনে প্রবেশের পরে ঢের বেশি অগোছালো হয়ে গেছি কি করে মাঝে মাঝে নিজেই বুঝে পাইনা। ধরেই নিয়েছেন বিয়ে করে বউয়ের উপর সব দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছি বলে নিজে উদাসীন হয়ে গেছি? সে সৌভাগ্য এখনো হয়নি! যদিও বিবাহিত ব্যাচেলরদের সাথে এক মেসে আছি, নিজের নামের আগে এখনো বিবাহিত তকমাটা লাগাতে পারিনি। আর সেই ব্যর্থতার দায়ভার কাধে নিয়েই এখনো মেসের জীবন উপভোগ করতে হচ্ছে। একটু ভিন্ন স্বাদের ছোঁয়া পেতে কোন এক বিশেষ উপলক্ষ্যে রাজধানীতে বসবাসকারী বেশ কিছু কাছের মানুষদের মধ্যাহ্নভোজের নিমন্ত্রন করে বসলাম এই মেসেই। আমন্ত্রিতদের মাঝে কতিপয় ভদ্র মহিলা এবং স্মার্ট সুন্দরী তরুনীদের আগমনের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা শুনে মেসটাকে পারিবারিক ফ্লাটে পরিনত করার প্রয়াসে সবাই কাজে লেগে গেল। মেসের সবচেয়ে অলস ব্যাক্তির অক্লান্ত পরিশ্রম দেখে নিজে আর বসে থাকতে পারলাম না, সব্যসাচী হয়ে আলনার উপরে বছর তিনেক ধরে জমে থাকা জামা কাপড়ের স্তুপ সরাতে গিয়ে পুরনো একটা বেল্ট দেখে তিন বছর পূর্বের একটা কষ্ট বুকে খচ করে উঠলো। দাদা, এইটা সেই চোরের বেল্ট না? মানসদা বলল হ্যা, আর বাথরুমের সামনে যে প্যান্টটা পাপোষের কাজ করছে ওটাও ওই শালা চোরের।
চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ, হাতে প্রচুর সময় তাই ভাল মন্দ বিচার না করেই টিউশনির প্রস্তাব গ্রহন করে সারাদিন ব্যাস্ত থাকার একটা ব্যাবস্থা করে নিলাম। এমনই এক সময়ে রাত এগারোটার দিকে সবে মাত্র খাওয়া শেষ করেছি, হাত ধুতে বেসিনের কাছে যেতে না যেতে করা নাড়ার শব্দ। দরজা খুলে হাস্যোজ্জল একটা মুখ দেখে বললাম আরে, রুহুল যে ? এসো ভেতরে এসো, আমার বাসা চিনলে কি করে? ভেতরে আসতে আসতে উত্তর দিলো মালিবাগ মোড়ে যেদিন দেখা হল সেদিন বলেছিলেন । ওর স্মৃতিশক্তি আমায় মুগ্ধ করল। প্রায় দের বছর পূর্বে যেদিন ওর সাথে দেখা হয়েছিলো সেদিন ওকে নৌবাহিনীর সাদা ধবধবে পোশাকে দেখে খুব ভালো লেগেছিল। মনে মনে ভেবএছিলাম এতদিনে তবু ছেলেটার পরিবারের দুঃখ ঘুচল। কবে চাকরি পেলে? উত্তরে বলল এইতো ছয় মাস হল। ও বলল ভাইয়া, আপনার বাসা কি এখানে ? আমি বললাম না একটু ভেতরে চল বেড়াবে। ও বলল না , অফিসে যাচ্ছি তাই একটু ব্যাস্ত, পরে একদিন বেড়াবো। সেদিন মুখে মুখে আমার বাসার ঠিকানা বলেছিলাম ওকে। আজ দেড় বছর পরে সেই ঠিকানা খুঁজে আমার সাথে দেখা করায় বেশ খুশিই হলাম। এত রাতে কোত্থেকে এলে জানতে চাইলে বলল শ্যামল ভাইয়ার কাছে এসেছিলাম। তাঁর কাছে কিছু টাকা পাই অনেকদিন ধরে দেবো দেবো করে ঘোরাচ্ছে। আজ দেবার কথা ছিল তাই এসেছিলাম, কিন্তু তিনি বাসায় নেই। ওই বাসা নাকি ছেড়ে দিয়েছেন। কোথায় যে গেছেন তাও বাসার কেউ বলতে পারছেনা। আমার কাছে তাঁর সেলফোন নম্বরও নেই, এখন কি যে করি। ওর কথা শুনে মনটা বেশ খারাপ হল। এমন একটা ছেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোন বিবেকবান লোক মেরে দিতে পারে ভাবতেই শ্যামল ভাইয়ার উপর একটু ঘৃণাই জন্মাল। শ্যামল ভাইয়া হল বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই, আমার এক বছরের বড়। নিজে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে বেশ কিছু বড় লোকের ছেলে মেয়েদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। শ্যামল ভাইয়া তাদেরই একজন। আর রুহুল ছিল আমাদের ক্যাম্পাসেরই চতুর্থ শ্রেনীর একজন কর্মচারী। আমি যখন সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন রুহুল আমাদের ক্যাম্পাসের চতুর্থ শ্রেনীর এক কর্মচারী সুমনের মাধ্যমে কর্মে যোগদান করে। সুমনের এক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি হলে পড়ে ওর পরিবর্তে ও রুহুলকে কর্মে বহাল করে যায়। সংসারের হাল ধরতে অকালে পিতৃহারা রুহুলকে এস এস সি পরীক্ষা শেষ করেই এই কাজে যোগদান করতে হয়েছে । ওর মায়া ভরা নিষ্পাপ মুখে ওর পরিবারের করুন অবস্থার কথা শুনে প্রথম দিনই ওকে আপন করে ফেলেছিলাম। আচার আচরনে খুব শীঘ্রই ও সকলের মন জয় করে নিলো। তাই সকলের কাছ থেকে ওর সহানুভূতির অভাব হতনা । ওর আদর যত্ন বেড়ে গেলো এস এস সি’র ফল প্রকাশের পর। গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে আমাদের সবাইকে ও তাক লাগিয়ে দিলো। ও যে মেধাবী ছাত্র তার পরিচয় আগেই পেয়েছি, কিন্তু এতোটা ভালো বুঝতে পারিনি। আমরা কয়েকজন ওকে যথাসম্ভব সাহায্য করতে লাগলাম (জামা, কাপড়, টকা পয়সা সবই যে যা পারে) যাতে করে ওর পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে পারে। কলেজে ভর্তির জন্য চাঁদা তুলে বেশ ভালো অঙ্কের টাকাও ওর হাতে দিলাম। কর্তৃপক্ষকে বলে বুঝিয়ে রাজি করলাম ওকে মাঝে মাঝে ক্লাশ করার সুযোগ দিতে। আমাদের ক্যাম্পাসে ও এক প্রকার ছোট খাট এক তারকা। ওর খোঁজ খবর নেবার এবং পরামর্শ দেবার লোকের অভাব নেই বটে তবে সত্তিকারের নিঃস্বার্থ পরোপকারী কয়েকজনকে চিনে নিতে ও ভুল করেনি। তাই সবার সাথে তাল মিলিয়ে চললেও কয়েকজনের কাছে ওর অধিকার বোধটা একটু বেশি ছিল। শ্যামল ভাইয়া তাদের একজন ছিল যে কিনা রুহুলের জন্য অনেক করেছে। সত্তিকারের নিঃস্বার্থ পরোপকারী একজন ভালো মানুষ ছিল সে, অন্তত আমার দৃষ্টিতে।
কিন্তু সেই লোকটার সম্পর্কে এমন একটা কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বুঝতে পারছিলাম না রুহুলের কথা ভুল নাকি শ্যামল ভাইয়া সম্পর্কে পোষণ করা আমার এতদিনের ধারনাটা ভুল। যাই হোক, খাওয়াদাওয়ার কি খবর জানতে চাইলে ও বলল নৌবাহিনীর কোয়ার্টারে ফিরে খাবে। আমি বললাম এখন পৌছতে অনেক রাত হবে, তারচেয়ে বরং তুমি খেয়ে রাতে এখানে থেকেই যাও। কাল শুক্রবার ছুটির দিন দু’জনে মিলে শ্যামল ভাইয়ার খোঁজ করব।আমার কথায় খুব অল্পেই রাজি হয়ে গেলো। ওকে একটা লুঙ্গি আর তোয়ালে দিয়ে জামা কাপড় ছাড়তে বলে রান্নাঘরের দিকে গেলাম। ততোক্ষণে বাসার সবার খাওয়া শেষ, হাড়ির নীচে একজনের খাওয়ার মত শুধু একটু ডাল আছে। ভাত , তরকারি কিছুই নেই।
রুহুলকে একটু বসতে বলে নিজেই রান্না শুরু করলাম। ভাত রাঁধলাম , ডিম ভুনা করলাম আর ডাল যা ছিল তা দিয়ে খেতে দিলাম। এমন একটা ভালো ছেলের খেদমত করতে পেরে বেশ আত্মতৃপ্তি হচ্ছিলো। রাতে ওকে আমার খাটে ঘুমাতে দিয়ে নিজে ফ্লোরিং করলাম। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দেখি ও শার্ট গায়ে দিচ্ছে। বললাম, সকালে না খেয়ে যেওনা। ও বলল, একটু নীচে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি চলে আসবো। লুঙ্গি পরে বের হতে দেখে মনে করলাম, হয়তো সিগারেট টানার অভ্যেস আছে তাই বলতে চাচ্ছেনা। আমি আর ওকে বিব্রত না করে বললাম , আমিতো ছাত্র পড়াতে যাচ্ছি এসে তোমাকে নিয়ে শ্যামল ভাইয়ার খোঁজে বের হব। ও আচ্ছা বলে বেরিয়ে গেলো। আমিও প্রাতঃক্রিয়া সেরে ছাত্রের বাসার উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে গেলাম। ছাত্রের বাসায় গিয়েছি মিনিট দশেক হল, সবে মাত্র টেবিলে নাস্তা এসেছে অমনি পকেটের সেলফোনটা বেজে উঠলো। মেস থেকে পার্থ’র কল। রিসিভ করতেই দোস্ত, গণেশের ফোন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা কলও যাচ্ছেনা আর রুহুলেরও কোন খোঁজ নেই। আমি বললাম, রুহুল এমনটা করার মতো ছেলে নয় , খুঁজে দেখ কোথাও হয়তো আছে। তাছাড়া রুহুল তো লুঙ্গি পরে বাইরে গেছে, দেখত ওর প্যান্ট কই। পার্থ বলল, হ্যা ওর প্যান্ট তো এই আলনার উপরেই আছে সাথে একটা বেল্ট ও আছে। আমি বললাম, তা হলে ও অবশ্যই আসবে। আর ও এলে বোঝা যাবে আদৌ ও এ কাজ করেছে কি না। যাচাই না করে অযথা ওকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। নাস্তা আর পেটে ঢুকল না। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলাম। এসেই দেখি হুলস্থুল কাণ্ড, গনেশ রেগে আগুন। আপনাদের প্রিয় অতিথি আমার ফোন চুরি করে পালিয়েছে, যেভাবে পারেন আমার ফোন এনে দেন। কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না যে রুহুল এই কাজ করতে পারে। গনেশকে যতোটা না বঝাচ্ছিলাম তার থেকে নিজের মনকে বেশি বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে ও আসবে। কিন্তু ও বেরিয়েছে সারে সাতটার দিকে, তাই যখন বেলা সারে এগারোটা বাজলো তখন ওর না ফেরার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেলাম। সবার মতো আমিও মেনে নিতে বাধ্য হলাম রুহুল ফোন হাতিয়ে ভেগেছে। বুঝলাম, বের হবার মুহূর্তে যাতে করে কেউ সন্দেহ করতে না পারে তাই নিজের প্যান্টের মায়া ত্যাগ করে লুঙ্গি পড়েই সটকে পরেছে। কোনমতেই ওর এই কৃতঘ্নতা মেনে নিতে পারছিলাম না। যে ছেলেটাকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম , এত ভালো জানতাম তাকে চোর বলে ভাবতে খুব বেশি কষ্ট হচ্ছিলো। রাতে যাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ালাম সে কিনা সকালে উঠেই এমন কাজটা করল! পার্থকে বললাম, দোস্ত চল আমরা একটু নেভি’র হেডকোয়ার্টারে খোঁজ নিয়ে আসি। দু’জনে মিলে নেভি’র হেডকোয়ার্টারে গিয়ে তথ্যকেন্দ্রে খোঁজ নিলাম। কিন্তু আমরা ওর পদবী কি না জানায় সঠিক কোন তথ্য পেলাম না। ওখানকার দায়িত্বরতরা আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁরা মাইকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন। এক সময় আমরাও ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। ওর এই অপকর্ম আর সারাদিনের হয়রানি এতক্ষনে মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আর রাত্রি বেলায় সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে গনেশের যুক্তিহীন দাবী। তার খোয়া যাওয়া সেলফোন সিমসহ কিনে দিতে হবে আমাকে । তখনও সেলফোন এতোটা সস্তা হয়নি। হ্যালো বললেই তখনও পাঁচ টাকা নেই হয়ে যায়। দশ হাজার টাকার কমে সেটের কথা ভাবাই যায়না, আর সিম (গনেশের টেলিটক সিম ছিল যা সারা রাত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পরদিন বেলা দেড়টায় হাতে পেয়েছিলো) তুলতে তখনও সারে চার হাজার টাকা লাগতো। সত্যি বলতে কি তখন গনেশের কথাগুলো যুক্তিহীন মনে হয়েছে নিজের অসামর্থ্যতার জন্য। টিউশনির টাকায় বাসা ভাড়া, খাওয়া হাত খরচের পরে দশ/বারো হাজার টাকা গরচার কথা মেনে নেওয়াটা ওই সময় এক প্রকার অবিচার বলেই মনে হয়েছে। তাই এই ঘটনা নিয়ে গনেশের সাথে প্রায় সম্পর্ক ছিন্ন হবার উপক্রম। মনে মনে তখন ভাবছিলাম ওর ফোন না নিয়ে আমার ফোন নিলে এতোটা খারাপ লাগতো না। অবশেষে পার্থ’র সহমর্মিতা, সহানুভূতি এবং সহযোগিতায় গনেশের হাতে সেলফোনের বাবদ হাজার দশেক টাকা (আমার পাঁচ ,পার্থ’র পাঁচ) তুলে দিয়ে বিশ্বাসের মুল্য পরিশোধ করলাম। সব মিলিয়ে ঐ পাঁচ হাজার টাকার কষ্টটা পাঁচ কোটিতে উন্নীত।
অভাবে স্বভাব নষ্ট, এই ভেবে বিশ্বাসঘাতকতায় প্রাপ্ত কষ্টটা প্রায় ভুলতে বসেছি এমন সময় একদিন সেই সুমনের সাথে দেখা। মনের সব দুঃখ, খেদ সুমনের কাছে ঝাড়লাম। সব শুনে ও আমাকে উল্টো ওর মনের দুঃখ শোনাতে লাগলো। ওদের দু’জনের বাড়ি একই থানায় (বরিশালের বাকেরগঞ্জ) কিন্তু বেশ কিছুটা দূরে। রুহুলের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ি সুমনের বাড়ির কাছে হওায়ার সুবাদে ওদের পরিচয়। কিন্তু রুহুলের বাড়ির সম্পর্কে বিস্তারিত ওর জানা ছিল না। স্বল্প পরিচয়ের সূত্রে ওকে চাকরি দিয়ে যে ভুল সুমন করেছে তারই বর্ণনা আমাকে দিলো।
এক স্যারের কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ এবং এক ম্যাডামের ড্রয়ার ভেঙ্গে বেশ কিছু টাকা নিয়ে রুহুল যখন ক্যাম্পাস থেকে উধাও তখন কর্তৃপক্ষ সুমনকে তলব করল। বাধ্য হয়ে সুমন রুহুলের গ্রামের বাড়িতে গেলো ওর খোঁজ নিতে। রুহুলের বাড়িতে গিয়ে সুমনের চোখ চড়কগাছ! রুহুল ওর বাড়ি সম্পর্কে এতদিন যা কিছু বলেছে তার সব মিথ্যে। ওর বাড়ির অবস্থা বেশ ভালো। ওর বাবা তখন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, স্বচ্ছল পরিবার তবে মা মারা গেছেন ২ বছর হল। ২ বোন ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট রুহুল। এই বয়েসে পড়াশোনা ছেড়ে চাকরি করার মতো কোন পরিস্থিতিই হবার মতো নয়। তবে ছোটবেলা থেকেই ওর হাত সাফাইয়ের স্বভাব টুকটাক ছিল (প্রতিবেশীদের কাছে শোনা)। মাঝেমধ্যে এ নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে ওর পরিবারের কখনো তিক্ততা বেড়েছে আবার তা কমেও গেছে। তবে একটা কথা ও সত্য বলেছে, ছাত্র হিসেবে সে তুখোড়। আর এই মেধার কারনে ওর ঐ বদ স্বভাবটা অনেকেই মনে রাখত না। আর না ভুললেও কেউ ওকে বড় কোন শাস্তি দিতে পারতনা ওর বড় ভাবীর কারনে। বড় ভাবী ছিল ওর সবচেয়ে বড় আশ্রয়। কিন্তু এস এস সি পরীক্ষার পরপরই যখন সেই বড় ভাবীর গলার হার চুরি করে নিয়ে পালালো তখন আশ্রয় বলতে ওর আর কিছুই রইলনা। ভাবীর মনে আঘাত দিয়ে নিজেই নিজের সর্বনাশ করে ঘরছাড়া হল। এরপর থেকে ওর সাথে বাড়ির কারো কোন যোগাযোগ নেই। এমনকি সার্টিফিকেট/নম্বরপত্র তুলতেও ও বাড়িতে যায়নি। ও যে কলেজে ভর্তির কথা বলেছিল তা ছিল সাজানো গল্প। নৌবাহিনীর যে পোশাক পরা অবস্থায় ওকে দেখেছিলাম তাও নাকি ছিল চুরি করা। পরিচিত এক বড় ভাইয়ের (নৌবাহিনীতে চাকরি করেন তিনি) বাসায় গিয়ে ঐ পোশাক এবং একটি সেলফোন চুরি করে নিয়ে পালিয়েছিলো। শ্যামল ভাইয়ার বাসা থেকেও নাকি দুইটি সেলফোন এবং একটি ল্যাপটপ এভাবেই চুরি করে পালিয়েছে। সকলে ওর বাড়িতে খোঁজ নিয়ে কোন হদিস পায়নি। কারন ও নিজেই বাড়ির সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখেনি। সব শুনে এক স্বান্তনা নিয়ে বাসায় ফিরলাম, আমি তাহলে অল্পে রেহাই পেয়েছি!
রাতে পার্থকে সব বললাম। ও বলল, তার মানে পুরোটাই ওর সাজানো গল্প! “মাদার ইন ম্যানভিল” গল্পের সেই এতিম জেরি’র কথা মনে পড়ে গেলো। জেরি না হয় মায়ের আদর,স্নেহ ,ভালবাসা পাওয়ার জন্য মিথ্যে গল্প সাজিয়েছিল। কিন্তু রুহুল কিসের মোহে নিজের সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে মিথ্যে গল্পের খলনায়ক বনে গেলো? স্বেচ্ছা অভাব কেন স্বভাবে টেনে নিলো?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৮