দেশের যুবকরা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় জড়াচ্ছে। প্রতিদিন একটা না একটা মারামারি করছে। স্কুল, কলেজে ছোটকাটো কারণ নিয়েই লেগে যায় তুমুল ঝগড়া। সেই ছোটকাটো ঝগড়া একসময় বড় মাপের ঝগড়া হিসেবে চিহ্নিত হয়।
বলবানরা সবসময় দূর্বলদের সাথে ঝগড়া লাগাতে চায়। কোনো কারণ থাকুক বা না থাকুক যেকোনো একটা দোষ চাপাবেই দূর্বলদের উপর। আর সেই দোষারোপ নিয়ে অযথাই মার খায় দূর্বলরা। দূর্বলদের কিছুই করার থাকে না মার খাওয়া ছাড়া। কারণ, তাঁদের শরীরে না আছে শক্তি আর আর না আছে তাঁদের বিরুদ্ধে লড়ার মতো ক্ষমতা। একজন দূর্বল মানুষ যখন রেগে যায়, তখন ১০০ টা খারাপ মানুষের সমান হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিশোধ সবার মনেই আছে। একজন মানুষকে যতই তাঁর শরীরে মারধর করুক না কেন তাঁর গায়ে ওতটা লাগবে না। কিন্তু তাঁর মা বাবাকে নিয়ে যখন দেয় এবং তাঁর সামনে তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে অপমান করছে সবার সামনে, তাহলে তাঁর অবশ্যই তাঁর গায়ে না লেগে সেটা তাঁর মনের ভিতরে লাগে। আর সেই আঘাতটাই একদিন মনের ভিতর প্রতিশোধের জন্ম দেয়। আর সেই দূর্বল মানুষটার মনে জন্ম নেওয়া সেই প্রতিশোধ একদিন কতটা ভয়ংকর রপ নেয় সেটা কেউ হয়তো ভাবতে পারেনা। তাই বলবান এবং সবারই জেনে রাখা উচিত যে কেউ কারো চেয়ে দূর্বল না। হয়তো সময় ও পরিস্থিতি মানুষকে দূর্বল এবং বলবান তৈরী করে।
স্কুল লাইফে আমরা অনেকেই মারামারি করে থাকি। ক্লাসের মধ্যে ডন হয়ে থাকার চেষ্টা করি। দূর্বলদের সাথে অযথাই তর্কাতর্কি করি। প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে র্যাগিং করি এবং একসময় বেয়াদবিটা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, আমরা আমাদের মা-বাবাদের মতো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করার আগে একবিন্দু ভাবি না। আমরা স্কুলে যাই পড়াশোনা করার জন্য। কারো সাথে মারামারি করার জন্য আমরা স্কুলে যাইনা। আমরা একেকজন একেক পরিবারের সন্তান। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়ে থাকে। একেকজনের ব্যবহার একেকরকম। আমাদের বাবা মা আমাদের অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করান, তাহলে আমরা কেন স্কুলে গিয়ে আমাদের সমবয়সী ভাইদের সাথে ঝগড়া করব? কেন একজন মানুষকে অযথা কষ্ট দিব।
.
ঝগড়া করতে করতে অনেকরই অভ্যাস হয়ে গেছে। ঝগড়া করার যখন এতই ইচ্ছে তাহলে কেন নিজের এলাকায় ঝগড়া করো? কেন নিজের এলাকার মানুষের কাছে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে খারাপ বানাচ্ছো। বুকে যদি এতই সাহস থাকে তাহলে অন্য জায়গায় দেখাতে যাও, তাহলে ল্যাটা চুকে যাবে।
বাহিরের ছেলেরা যদি তোমার স্কুলের ভিতর ডুকে তোমার বন্ধু, ছোটভাই অথবা শত্রুকে মেরে যায় তখন তোমার ও তোমার স্কুলের স্যার’দের কেমন লাগবে একবার ভাবো। এখানে তোমার স্কুলের সম্মান নষ্ট হচ্ছে এবং নানা লোকে স্কুলের মন্দ গেয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত হলেই মানুষ হওয়া যায় না, যদি তোমার মধ্যে মনুষ্যত্ব বলতে কিছু না থাকে।
তুমি যেমনই হও না কেন নিজের পরিবার ও নিজের এলাকার মানুষের সাথে কখনো খারাপ আচরণ করো না। ধরো, তুমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রবাসে গেলে কাজ করতে। হঠাৎ কোনো অসুখ বা দূর্ঘটনায় তোমার কিছু একটা হয়ে গেল তখন তোমার মৃত দেহ কোথায় যাবে? তোমার দেহখানা চলে আসবে তোমার দেশের বাড়ি। আর তোমার সব সাহায্যে এগিয়ে আসবে তোমার প্রতিবেশী। আর তুমি সেই প্রতিবেশীর চোখেই খারাপ হয়ে যাও তাহলে কি তুমি নিজেকে অনেক বড় মনে করবে? না তো! তাহলে কেন মানুষের কাছে খারাপ হবে।
একটা গ্রামে যখন অন্য গ্রামের মানুষেরা এসে আক্রমণ করে তখন কিন্তু সবাই মিলে শত্রু ধমনের পথে নামে। তাই বলা যায়, আমরা মানুষ মানুষের জন্য। অন্য প্রাণীদের চেয়ে আমরা অনেকটা আলাদা। কেন জানো? আমাদের বিবেব-বুদ্ধি অন্য একটা প্রাণীদের চেয়ে আলাদা।
এই পৃথিবীতে আসছো একা, একাই যাবে। কেউ তোমার সঙ্গী হবে না। পৃথিবীতে যে কয়দিন বেঁচে আছো মানুষের ভালো কর। ভালো না করতে পারলে অন্তত কারো খারাপ করো না। তুমি যদি একটা ভালো কাজ করো তাহলে সেই ভালো কাজের নাম সবার মুখে মুখে থাকে এবং তোমার নিজের কাছে তোমার পরিবারের কাছে গর্বের বলে মনে করবে। আর তুমি যদি ভালো কাজ না করে খারাপ পথে ধাবিত হও তাহলে সমাজ কি, তোমার পরিবার কি, স্বয়ং দেবতাই তোমার সাথে থাকবে না।
.
.
আমি দুইটা ভালো ও খারাপ মানুষের সত্য গল্পের মধ্যে আমার লেখাটি শেষ করতে চাই।
গল্প ০১ঃ-
সোর্স – প্রথম আলো পত্রিকা
.
ছেলেটি ক্লাস ৬ – এ পড়ে। বয়সের তুলনায় সে কিছুটা ছোটই। একবার তাঁর প্রতিবেশী এক দাদু তাঁকে থাপ্পড় মেরেছিল। সে কিছু মনে করেনি, কিন্তু একদিন তাঁর মা বাবা কে নিয়ে গালি দিলেন সেই প্রতিবেশী। এটা তাঁর মনের ভিতর খুব গভীর একটা ছাপ ফেলে। সে এটা মেনে নিতে পারেনি। তাঁর মনের ভিতর আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে দাদুর কথাটি। তাই মনে মনে ঠিক করে নিল, মা বাবা কে এই অপমানের প্রতিশোধ সে নিবেই। সেই ব্যক্তির বয়স হবে আনুমানিক ৩৫-৪০। সে ছোট হওয়া সত্বেও দাদুর সাথে আগের চেয়ে অনেক বেশি মিশতে শুরু করে। এমন ভাব জমাতে থাকলো যে তাঁকে দেখলে বুঝা যায় সে ভাজা মাছ উলটে খেতে জানেনা। আস্তে আস্তে তাঁদের সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ট হয়ে গেল। প্রতিদিন সে দাদুর সাথে ঘুরতে যায়। প্রতিদিনের মতো আজকেও তাঁরা ঘুড়তে গেল। ঘুরতে ঘুরতে একসময় তাঁরা অনেক দূরে চলে যায়। আর সেই দাদুটা কিছু বয়স্ক থাকায় ওতটা ঠাহর করতে পারলেন না উনি কোথায় আছেন। আর ছেলেটা ছোট হলেও খুব চালাক ছিল। সে জনতো যে উনাকে শায়েস্তা করার মতো তাঁর আর কোন পথ নেই। এখনি মোক্ষম সময় প্রতিশোধ নেওয়ার। সে তাঁর লুকিয়ে রাখা চাকুটি বের করে সেই প্রতিবেশী দাদুর পেটে ডুকিয়ে দিল। আর ওখানেই উনার মৃত্যু হয়
.
[আমরা কখনো কাউকে দূর্বল ভাববো না। সবার মনেই ক্রোধ, প্রতিশোধ আছে। কিন্তু তাঁরা তা প্রকাশ করতে পারেনা। আমি বলি, কখনো কারো সাথে ঝগড়া করে জীবনে এমন কোনো সমস্যা ডেকে না আনি, যে সমস্যার কারণে আমাদের খুব খারাপ ভাবে মাশুল দিতে হয়।]
.
গল্প ০২ঃ-
.
আমাদের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর গ্রামে অমুক নামে একজন নেতা আছেন। উনি সিলেট বিভাগে এতটাই ভয়ংকর যে উনার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে উচু স্বরে কথা বলতে পারেনা। ১০০ টা মানুষকে ধাওয়া করার ক্ষমতা আছে এই ভয়ংকর ব্যক্তির। কিন্ত এই মানুষটি যখন তাঁর নিজের গ্রাম তাহিরপুরে আসেন তখন তাঁর গ্রামের মানুষেরা তাঁকে ভগবান ভাবে। এতটাই শ্রদ্ধা করেন যে কেউ তাঁকে হারাতে চান না, এবং খারাপ মন্তব্য করেন না।
.
পরিশেষে আমি আরো কিছু বলতে চাই, মানুষ মানুষের জন্য। আমরা এই পৃথিবীতে আজ আছি কাল নেই। আমরা বেঁচে থাকার জন্য নির্দিষ্ট একটা সময় নিয়ে এসেছি। আর এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি আমরা খারাপ কাজ না করে অন্তত একটা ভালো কাজ করেও যাই তাহলে মানুষ হলেও আপনার গুণগান গাইবে।
.
আমার এই লেখাটি হয়তো অনেকের খারাপ লাগতে পারে। আসলে নিজের চোখের সামনে প্রতিনিয়ত অনেক খারাপ কাজ হতে দেখি। কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
-
August 30, 2017
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪