_ "ডাক্তার, ডাক্তার, দেখুন না কি হয়েছে উনার । সকালে তো ভালোই ছিলেন । হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো বোঝতে পারলাম না । আপনি দেখুন না কি হয়েছে ।"
-
উপরোক্ত কথাটি সুস্মি বলছে আর কাঁদছে । কখনো সে হাসপাতালে আসেনি । ছোটবেলা থেকেই সে আরোগ্য ছিলো । যদিওবা জ্বর হতো তাহলে বাবা-মায়ের বলা ডাক্তারের ঔষধ খেয়েই সেরে যেত তার জ্বর । সে কেন জানি ভয় পেত হাসপাতাল । ছোটবেলা সে তার বাবার সাথে আসছিলো অমল কাকুর অপারেশনের সময় । তখন সে দেখেছিলো যে, হাসপাতালে কত ধরণের রোগীই না আসে । কেউবা শুয়ে থাকছে বেডে আবার কেউ শুয়ে থাকছে ফ্লোরে বিছানো ফোমের উপর আবার কেউ কেউ তো জায়গার অভাবে ঘুটিসুটি মেরে বসে আছে রোগী নিয়ে । আর রোগী তার যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছে । সে থেকেই সুস্মি আসতে চায়না হাসপাতালে । কেনোনা হাসপাতালে আসলেই কত রকমের কত কী সে দেখতে পায় । হাসপাতালে সুস্থ্য কোনো লোক আসলে সে অসুস্থ্য হতে বেশি একটা সময় লাগেনা । হাসপাতাল রোগ নিবারণের স্থান হলেও অনেকসময় এখান থেকে রোগ নিয়েও কেউ ফিরে ।
-
সুস্মি ছোটবেলা থেকেই অনেক সুন্দর । সে দেখতে চিকন হলেও কাপড়চোপড়ে তাকে একটুও হালকা দেখায় না । গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেছে । প্রাইমারী গ্রাম্য স্কুলে পাশ করে এসএসসিটা সম্পন্ন করে শহরেই । এরপর সুস্মির নতুন জীবনের সূচনা হয় এখান থেকেই ।
-
সুস্মি প্রতিদিনই কলেজ যেত কিন্তু কারোর সাথে তেমন একটা মিশতো না কেনোনা তার স্কুলের কোনো ফ্রেন্ডই এই কলেজে চান্স পায়নি তাই সে একাকীত্ব অনুভব করে । কিন্তু ওর ইচ্ছেও করেনা নতুন কাউকে বন্ধু-বান্ধবী বানাতে ।
-
ছেলেটির নাম শুভ, দেখতে অনেকটা হ্যান্ডাসামই । কিন্তু অনেক সহজ-সরল । গ্রামের কলেজ থেকেই এসএসসিটা পাশ করেছে । সে শহরের কলেজে ভর্তি হতে অনিচ্ছুক পোষণ করলে তার বাবার স্বপ্ন তাকে শুনালে সে বাধ্য হয় শহরের কলেজে ভর্তি হতে । তার বাবার ইচ্ছে "উনার ছেলে একদিন বড় হয়ে ডাক্তার হবে আর আমার একটা কিডনী সে অপারেশন করাবে এবং আমার গ্রাম ও দেশের গরীব লোকেদের বিনামূল্যে সেবা প্রদান করবে ।" বাবার স্বপ্ন আর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে গিয়েই শুভর এই শহরে আসা । গাড়ির পিছে ছুটছে গাড়ি, মানুষের পিছু মানুশ । এই ব্যস্ত শহরে শুভকে কেইবা চিনে, আর সেই বা কাকে চিনবে ।
-
শুভ একজন দরিদ্র ঠাকুরের ছেলে । শুভর বাবা হরিপ্রসাধ গ্রামে-গঞ্জে কোথাও বিয়ে, অনুষ্ঠান, অন্নপ্রাশন, পূজা-পার্বণ হলে সেখানে যান । শুভ বাবার সাথে মাঝেমধ্যে যেত । হরিপ্রসাধ বাবু ঠাকুর হলেও তাঁর চোখে অনেক বড় স্বপ্ন তাঁর ছেলে শুভকে নিয়ে । ছেলেকে ঠাকুর শিক্ষার পাশাপাশি ডাক্তারও বানাবেন । তখন তাঁর ছেলেকে "ডাক্তারবাবু" ডাকবে আর তাঁকে "ডাক্তারবাবুর বাবা" বলে ডাকবে এই খুশিতেই তাঁর একেকটা প্রহর শুরু হয় ।
-
কলেজ জীবন অনেক সুন্দরভাবেই কাটছিলো গ্রামীণ ক্যালডোনিয়ান কলেজ অফ নার্সিং এ । মন দিয়ে সে পড়াশোনা করতো আর প্রত্যেকটা সেমিস্টারে ফার্স্ট হতো আর তার পরীক্ষার ফলাফল বাবাকে শুনিয়ে তাদেরকেও খুশি করতো । ক্লাসের সবাই তার ফলাফলে খুশি হলেও সুস্মির হিংসে হতো । সে আশানুরূপ ফলাফল করতে না পারায় শুভর উপর একটা আলাদা হিংসে হতো তার ।
-
শুভর সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করে সুস্মি কিন্তু শুভ কথা বলেনি । এতে ওর মনে আরো রাগ বাড়তে থাকে শুভর প্রতি । সে একদিন জিজ্ঞেস করলো শুভকে,-
_ "এ্যাই শুনো,
তোমার সমস্যাটা কি?"
_ "আবার কীসের সমস্যা! ঠিক বুঝলাম না আমি?"
_ "অ্যা!!
ন্যাকামি হচ্ছে? আমি যে প্রতিদিম তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করি তাতে তুমি সারা না দিয়ে আমাকে এড়িয়ে চলো কেন? কীসের এতো দেমাগ তোমার? তুমি প্রতি সেমিস্টারে ভালো মার্কস পাও বলে কি তার গরমে চলো?"
-
সুস্মি একনাগাড়ে এসব বলতে লাগলো কিন্তু শুভর এতে কিছুই যায় আসেনা কেনোনা সে বাবাকে প্রতিজ্ঞা করে আসছে যে কোনো মেয়েলোকের ঝামেলায় সে জড়াবে না । যে ছেলে বাবাকে কথা দিয়েছে, বাবাকে দেওয়া কথা রক্ষার্থে সে একটি মেয়ের জন্য সেই প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গতে পারে না । শুভ আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গিয়ে সোজা ক্লাসরুমে ডুকলো । সুস্মির খুব রাগ হলো শুভর উপর । সে রাগ করে সোজা বাসায় চলে গেলো । সেদিন আর সে ক্লাস করলো না ।
-
এভাবে কেটে গেলো একটি বছর । শুভ কখনো ক্লাসের কোনো মেয়ের সাথে কথা বলেনি । যদিওবা কোনো মেয়ে তার সাথে কথা বলতে আসতো তাহলে সে কথা বলতো সেই ব্যক্তির প্রয়োজনের ভিতরে । এর বাহিরে কোনো বাড়তি কথাবার্তা বলতো না । কলেজের স্যার ম্যাডামরাও শুভকে ভালোবাসতো । তার আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তার জন্যে কিছু ফি মওকুফও করা হলো ।
-
একদিন সুস্মি কলেজে আসলো সাধারণ একজন মেয়ের বেশে সাজগুজ করে । শুভর চোখে সেদিন সুস্মি আটকা পড়লো । বেশ কিছুক্ষণ সুস্মির দিকে তাঁকিয়ে রইলো । যদিওবা সে লুকিয়ে তাকাচ্ছিলো কিন্তু সুস্মি ঠিকই ঠের পেয়েছে যে শুভ তার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে । সে কেনোইবা বোঝবে না, কেনোনা তার চোখে পড়ার জন্যেই তো সে আজ সাধারণ মেয়ের বেশে এসছে । শুভর কেনো জানি ভালো লেগে গেলো সুস্মিকে । সে ওর নাম শুনেছে ক্লাসে যখন তাকে ডাকাডাকি করতো তখনি নামটা শুনেছে । শুভর মনের মধ্যে একটা অনুভূতি জাগলো । সে ঠিক করলো বাবাকে তার এই অনুভূতির কথা জানাবে । যেই ভাবা সেই কাজ । শুভ হরিপ্রসাধ বাবুকে জানালো এই বিষয়ে । হরিপ্রসাধবাবু সব শুনে প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে ছেলেকে অনুমতি দিলেন তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে ।
-
পরেরদিন শুভ নিজ থেকে সুস্মির সাথে কথা বলবে ভেবে ওর সাথে যেইনা কথা বলতে যাবে তখনি সুস্মি এসে তার সাথে কথা বললো । সেদিন আর শুভ কোনোরকম বাঁধা দেখালো না । কলেজে সেই চিরচেনা বকুল গাছটার নিছে দাঁড়িয়ে তারা দুজনে একে-অপরের সাথে কথা বলছে । বকুল গাছের ছায়া পড়ছে নিচে ও তাদের উপর । বকুল গাছের পাতার ফাঁকেফাঁকে সূর্যের কিরণ এসে পড়ছে সুস্মির মুখে । তাতে সুস্মির সৌন্দর্য আরোও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো । বাতাসের জন্যে মাঝেমধ্যে বকুলফুল পড়তে লাগলো নিচে । বেশ কয়েকখানা ফুল সুস্মির চুলের খোঁপাতেও পড়লো । শুভ সেগুলো হাতে নিয়ে রেখে দিলো নিজের কাছে ।
-
ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে প্রেম-ভালোবাসায় রুপ নেয় । সুস্মিই প্রথম প্রেমের প্রস্তাব দেয় শুভকে । কোনোরকম সংকোচবোধ না করে প্রস্তাব গ্রহণ করে নেয় শুভ ।
-
কিছুদিন পরেই ঘটে ঘটনাটি । যে ঘটনাটির জন্য মোটেও প্রস্তুর ছিলো না শুভ । সুস্মি সেই বকুল গাছের নিচেই দেখা করতে বললো শুভকে যেখানে তাদের প্রথম আলাপ হয় ।
_ "আসতে এতো দেরী করলে যে? আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?" (শুভ খুবই নরম স্বরে বললো সুস্মিকে)
_ "না কোনো সমস্যা হয়নি আসতে ।"
-
শুভ লক্ষ্য করলো সুস্মির অন্যদিনের ব্যবহারের চেয়ে আজকের ব্যবহারটা একটু অন্যরকম । তবুও সে ব্যাপারটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলো ।
-
_ "আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম যে..." (সুস্মি)
-
সুস্মির এভাবে কথা আটকে যাওয়ার ব্যাপারটায় শুভ চমকে উঠে । তার ভিতরে কিছু একটা বাড়ি দিলো তখনি । তবুও নিজেকে সামলে,-
_ "কী হয়েছে বলবে তো?"
_ "আসলে কথাটি হলো এই যে, আমাদের সম্পর্ক সম্ভব না । কেনোনা আমি তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি না ।"
_ "কিন্তু কেন?" (কোনোরকমভাবে নিজেকে সামলে)
_ "তোমাকে আমার হিংসে হতো । তোমার ব্যবহারে আমি অতিষ্ঠ ছিলাম এবং তোমার ভালো ফলাফলের কারণে আমার হিংসে হতো । তাই তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্যেই আমি এই ভালোবাসার অভিনয় করেছি ।"
-
শুভ শুধু শুনে যাচ্ছে, কি বলবে না বলবে ভেবে পাচ্ছে না । চুপ করে থেকে শুধু শুনেই যাচ্ছিলো ।
-
_ "আর এমনিতেও আমার পরিবার তোমার পরিবারের কাছে বিয়ে দিবেনা । তোমরা ঠাকুর সম্প্রদায় আর এবং আমরা চৌধুরী বংশ । তোমরা কোথায় আর আমরা কোথায় । স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসেও তো একটা মিল থাকা প্রয়োজন যা আমাদের দুজনের মধ্যে তার মিল নেই । তোমার বাবার পেশা হলো কাঠ ও ধূপ জ্বেলে কিছু মন্ত্র পাঠ করে পূজা সম্পন্ন করে জীবিকা নির্বাহ করেন আর কোথায় আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী যার কি না পুরো গ্রাম ও শহরে একটা নাম আছে । সে অবশ্যই চাইবে তাঁর মেয়েকে তারই স্ট্যাটাসের কোনো ছেলের সাথে বিয়ে দিতে । আর আমিও সেটাই চাই ।"
-
এবার আর শুভ চুপ থাকতে পারলো না । সে বলে উঠলো,-
_ "ব্যাস!
অনেক হয়েছে । বলতে বলতে সীমা পার করে ফেলো না । আমার বাবা কি করেন না করেন সেটা আমার ঈশ্বর জানেন । দশগ্রামে আমার বাবার সম্মান আছে কি নেই সেটা একমাত্র আমি, আমার বাবা আর আমার পরিবার জানি । যা বলার তুমি আমাকে বলবে । এরমধ্যে আমার বাবা আর আমার বাবার পেশাকে টেনে নিয়ে আসছো কেন? তুমি হয়তোবা তোমার জেদ ও হিংসের রেশে ভালোবাসার অভিনয় করে আমার সাথে প্রতারণা করেছো কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা । তোমার কথা মনে করে হয়তো আমি কষ্ট পাবো কিন্তু পড়াশোনার চাপে ঠিকই একদিন তোমায় ভুলে যাবো । তখন আমার পড়াশোনা এবং আমার কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকবো । সেদিন হয়তো তোমার কথা ভাবারও সময় পাবো না । তুমি ভালো থাকো এই প্রত্যাশাই করছি ।"
-
এই বলে চোখের কোণে জল সাথে নিয়েই শুভ সেখান থেকে চলে গেলো এবং তার বাবাকে সব খোলে বললো । হরিপ্রসাধ বাবু ছেলের এইসব কথা শুনে আঘাত পেলেন এবং ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,-
_ "বাবা শুভ,
যা হবার তা হয়ে গেছে এখন তুই তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে বর্তমানের এই ঘটনাকে এড়িয়ে যা বাবা । এতে তোরই লাভ । তুই অনেক বড় হবি, একদিন অনেক বড় হবি আর সেদিন তোর জন্যেই অনেকের উপকার হবে বাবা । নিজের মনমে শক্ত রেখে পরবর্তী দিনের কথা চিন্তা করে এগিয়ে যা বাবা । আমাদের আশির্বাদ তোর সাথে সবসময় আছে বাবা ।"
-
বাবার কথা অনুপ্রেরণা পেয়ে শুভ সব ভুলার চেষ্টা করলো । পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো । কয়েকবছর পর সে নার্সিং এ পুরো কোর্স সম্পন্ন করে একজন সুযোগ্য ডাক্তার হলো । সে তার বাবার স্বপ্ন এবং ইচ্ছে পূরণ করেছে । সেদিন সুস্মির সাথে সম্পর্কের ইতির পর যদি বাবা হরিপ্রসাধ বাবুর অনুপ্রেরণা না পেত তাহলে হয়তো এটা কিছুটা অসম্ভবের দরজার কড়া নাড়তো কিন্তু সে এবং তার বাবা তা হতে দেয়নি ।
-
আজ সকাল হতেই বছর ২৭ বয়সী একজন বিবাহীতা মহিলা আসছেন সাথে তার স্বামী । এসেই কান্নাকন্ঠে বলতে লাগলেন,-
_ "ডাক্তার, ডাক্তার, দেখুন না কি হয়েছে উনার । সকালে তো ভালোই ছিলেন । হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো বোঝতে পারলাম না । আপনি দেখুন না কি হয়েছে ।"
-
ড. শুভঙ্কর চক্রবর্তী শুভ ছিলেন সেখানেই । তিনি অন্য একজন রোগীকে চেক করার উদ্দেশ্যে নিজের চেম্বার থেকে বেড়িয়েছিলেন কিন্তু তখুনি উনার চোখে পড়লো সেই বিবাহীতা মহিলার দিকে । তিনি তৎক্ষণাৎ মুখে মাস্ক পড়ে নিলেন । মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন,- "উনার পূর্বের কোনো অসুখ আছে কি না?" উত্তরে মহিলা বলেন "এপেন্ডিক্সের ব্যথায় আক্রান্ত আছেন ।" ড. শুভঙ্কর চক্রবর্তী শুভ নার্সকে বললেন এখুনি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে ।
-
মহিলাটির স্বামীর এপেন্ডিক্স ছিলো । কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটি অপারেশনের মাধ্যমে কেটে না ফেলার কারণে সেটি ফেটে গিয়েছে । যখন কোনো ব্যক্তি এপেন্ডিকা ইনফেকশনে আক্রান্ত হয় বা ফুলে যায় তখন তাকে এপেন্ডিসাইটিস বলে । এপেন্ডিক্স নামক উপাঙ্গটি যদি মিউকাস, পরজীবী অথবা মল দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন খুব যন্ত্রণা হয় । উদ্দীপ্ত এপেন্ডিক্সের ভেতরে ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করে । যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা না হয় তাহলে এটি বিস্ফোরিত হতে পারে । এর ফলে পুঁজ বের হয়ে এর আশেপাশের সব স্থানে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে যা হতে পারে জীবন সংশয়কারী । জন্স হপকিন্স মেডিসিন এর মতে, এপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণের সূত্রপাত হওয়ার ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে ব্রাস্ট হতে পারে । কিন্তু মহিলাটির স্বামী অনেক দেরী করে ফেলেছেন বিধায় তার এপেন্ডিক্স ফেটে যায় ।
-
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে নিয়ে আসার ফলে মহিলার স্বামী সঠিক অপারেশনের ফলে সুস্থ্য হয়ে উঠে । অপারেশন সম্পন্ন করা হয়ে গেলে ড. শুভঙ্কর চক্রবর্তী শুভ নার্সকে তার চেম্বার দেখা করতে বললেন ।
-
_ "নার্স,
একটু আগে যে লোকটির অপারেশন করলাম সেই রোগীর সম্পূর্ণ খরচ আমার থেকে যাবে আর আলাদাভাবে উনার যত্নাদি নিবে । উনার চিকিৎসা ও যত্নতে যেন কোনো ঘাটতি না থাকে । আমি ড. অমল দে কে রিকোয়েস্ট করবো উনার প্রত্যেকটা প্রয়োজনে যেন দেখা করে আসেন । যা যা চিকিৎসার প্রয়োজন আছে সব যেন উনিই করেন আর সব খরচাদি আমার দিকেই যাবে । আর হ্যাঁ, ভুলেই গেছিলাম, এই যে খামটি তুমি সেই রোগীর স্ত্রীর হাতে দিবে । 'কে দিয়েছেন?' প্রশ্ন করলে তুমি কিছু বলবে না । আর উনার স্বামীর কাছ থেকে সরবে না । উনি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠেন সেদিকে খেয়াল রাখবে । এই দায়িত্ব আমি আপনার উপর দিলাম । নির্দিষ্ট সময়ে তুমি উনাকে ঔষধ সেবন করাবে ।"
-
ড. শুভঙ্কর চক্রবর্তী অপারেশনের আগে চেক করতে যাওয়ার সেই রোগীকে চেক করে সেদিনকার মতো ছুটি নিয়ে চলে গেলেন বাসায় ।
-
নার্স সেই খামখানা মহিলাটির হাতে দিলেন । তিনি সেটা খোলে পড়তে লাগলেন,-
"খামটির শুরুতেই লিখতে চেয়েছিলাম 'কেমন আছো? আশা করি তুমি ভালো আছো ।' কিন্তু এর পরিবর্তে আমাকে এটা লিখেই শুরু করতে হচ্ছে 'আমি জানি তুমি ভালো নেই আজকের এই দুর্ঘটনার জন্যে' ।
তুমি যখন কান্নাকাটি করছিলে তখন আমি একজন রোগীকে চেক করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তোমার কান্না শুনে আমি তোমার দিকে তাকাই । তাকিয়ে তোমাকে দেখেই আমি চিনে ফেলি, আর কেউ নও, সেই তুমি সুস্মি । তুমি তোমার স্বামীর জন্য কাঁদছিলে । আমি সেই রোগীকে চেক করতে না গিয়ে অন্য একজন ডাক্তারকে পাঠিয়ে তোমার স্বামীর অপারেশন করতে চলে আসলাম । ওর এপেন্ডিক্স ফেটে গেছিলো । কিন্তু অপারেশন করার পর তিনি এখন পুরোপুরিভাবে সুরক্ষিত । যতদিন না উনি সুস্থ হচ্ছে ততদিন তাকে এই কেবিনেই থাকতে হবে । আমি শুধু তোমাদের জন্য এই কেবিনটি দিলাম । কেবিন এবং অপারেশন ও চিকিৎার সম্পূর্ণ খরচ বিনামূল্যে । কোনপ্রকার ফি লাগবে না ।
সুখে থাকো এই শুভকামনা করি ।"
ইতি
শুভঙ্কর চক্রবর্তী শুভ"
-
ডাক্তার শুভ উনার বাবাকে ফোন করে সব খুলে বললেন, তিনি সব শুনে বললেন,-
_ "বাবা,
তুমি অনেক ভালো কাজ করেছো । তোমার মধ্যে কোনো হিংসে, ক্রোধ, অহংকার ছিলো না বলেই তুমি আজ মেয়েটির সাহায্য করতে পেরেছো । অনেক বড় হও বাবা এই আশির্বাদই করি ।"
-
Monday, 06 May 2019
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৬