somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুর্ঘটনা

০৬ ই মে, ২০১৯ সকাল ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

_ "বাবা, সাইড নিয়ে হাঁটো । এই জায়গাটায় এসে তিনদিক দেখেশুনে রোড পার হবে । বলা যায় না কখন কোনদিক থেকে আজরাইল এসে পড়ে । "
-
এই একটি বাক্য আমি প্রতিদিনই শুনি । আমার মায়ের মুখে থেকে নয় তবে একজন ছেলেহারা মা'র মুখ থেকে শুনছিলাম ।
-
প্রতিদিনকার মতো আমি আজও হাঁটার জন্যে বের হলাম মেস থেকে । মন যখন খারাপ থাকে তখন আমি প্রায় সময়ই এই দিকে হাঁটতে বের হই একা একা । আমি প্রতিদিন দেখি একজন মহিলা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন, বসে নেই কিন্তু । তিনি পায়চারি করেন । একজায়গায় বসে থাকেন না । এই রাস্তা দিয়ে কেউ গেলে বা আসলে তাঁকেই নিজের ছেলে মনে করে উক্ত কথাটি বলেন যা আমাকে প্রতিদিনই বলতেন । আমি খুবই আশ্চর্য হতাম উনার এমন উপদেশ দেখে । কেনোনা রাস্তাঘাটে কতধরণের লোক নানাকাজে এই রাস্তা দিয়ে যায় । সবাইকেই কেন তিনি উক্ত কথাটি বলে হুশিয়ার করে দেন । এর পিছনে আসলে কী কারণ থাকতে পারে? আমার মনে এই কৌতূহল নিয়ে আজ জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, -
_ "আচ্ছা আপনি প্রতিদিন আমাকে কেন হুশিয়ার করে দেন এই মোড়ে আসলেই?"
উনার উত্তর ছিলো, তখনি উনার চোখে পানির টলমল দেখা গেলো-
_ "আমার ছেলের বয়স ২৪ বছর । সবে মাত্র পা দিয়েছে ২৪ বছরে । ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো । একদিন সে বড় হবে এবং ইঞ্জিনিয়ার হবে । আমার ছেলেকে আমি অন্যের বাড়ি রান্নাবান্নার কাজ করে পড়াশোনা করিয়েছি । ছেলেটি আমাদের পরিবারের অবস্থা বুঝতো । সেও পড়াশোনার পাশাপাশি রিক্সা চালাতো এই সিলেট শহরে । রিক্সা চালিয়ে যে দুপয়সা পেত সেগুলো দিয়ে সে তার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিতে পারতো আর আমি মানুষের বাড়ি কাজ করে যা পেতাম তা দিয়ে কোনোরকমে খেয়েপড়ে থাকতাম আমার গ্রামে । ছেলেকে সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি করিয়েছি টাকা ধার করে এনে । সেগুলোর সুদও আমার ছেলে রিক্সা চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলো । ছেলের চোখেও খুব বড় স্বপ্ন ছিলো, সে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে এবং তার মায়ের স্বপ্ন ও ইচ্ছা পূরণ করবে ।
কিন্তু আমার ছেলে স্বপ্ন পূরণের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়নি । এর আগেই উপরওয়ালা তাকে নিয়ে গেছেন ।
প্রতিদিনকার মতো সেদিন সকালেও আমার ছেলে রিক্সা চালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে বের হয়েছিলো কিন্তু এই জায়গায় এসে সে আর যেতে পারেনি । তিন রাস্তার মোড় থাকায় ডান দিকের রোড থেকে একটা গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা মেরে চলে যায় । আমার ছেলেটা রিক্সা থেকে পড়ে যায় । রক্তমাখা দেহ নিয়ে সে ছটফট করছিলো আমার ছেলেটা । কতই না কষ্ট পেয়ে ওর জান চলে গেছে । গরমের দিন ছিলো । হয়তোবা আমার ছেলেটা একটু পানি খেতে চেয়েছিলো । ধীরে ধীরে আমার ছেলের চোখ বন্ধ হয়ে যায় । আশেপাশের লোকেরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন । মারা যাওয়ার সাথে সাথেই আমার ছেলের স্বপ্ন এবং আমার স্বপ্ন থেমে যায় ।
আমার একটা মাত্রই ছেলে । আমি ওকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো ভেবে কোলকিনারা পাচ্ছি না ।
-
তিনি যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন কাঁদছিলেন আর শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছিলেন । আমার মন ভারী হলো ছেলে হারানো এই মায়ের কান্নার শব্দে । আমি অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম । এরপর আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেন, "রাস্তাঘাট দেখে চলবে বাবা । আমার ছেলে মারা গিয়েছে কিন্তু আর যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয় ।"
-
Friday, 03 May 2019
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৯ সকাল ৮:১১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×