somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে দায়ী?

০৪ ঠা মে, ২০১৯ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

_ "মধু তুই যে ছেলেটার সাথে প্রেম করছিস সে ছেলেটার ক্যারেক্টার ভালো না । সময় থাকতে তুই সরে যা ওর জীবন থেকে ।"
-
উক্ত কথাটি অরু বলেছে মধুকে । মধু হলো অরুর আপন মামাতো বোন । ছোটবেলা থেকে একসাথেই বড় হয়েছে । কিন্তু মধুর থেকে অরু ২ বছরের বড় । মধু কিছুটা উগ্র স্বভাবের কিন্তু অরু অনেক শান্তশিষ্ট স্বভাবের এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে । মধু যদি কখনো কোনো ভুল কিছু করতো অথবা ভুল সিদ্ধান্ত নিতো তাহলে অরু এসে থাকে সেই ভুল পথে যাওয়া থেকে আটকাতো । মধু ছিলো ওর মামাতো বোন কিন্তু অরুর কাছে মনে হতো মধু ওর আপন বোন । অনেক স্নেহ করে । নিজের ছোট বোনের মতো দেখে । অরুর বাবা ওর জন্মের আগেই মারা গেছেন এবং মা মারা গেছেন ওর জন্মের কয়েকমাস পরেই । মামা-মামীদের কাছে সে বড় হয়েছে । তাঁদের সাথেই থাকে ।
-
অরু সেদিন কলেজে দেখলো যে মধু এক ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে । একে অপরের হাত ধরে বসে আছে । একসময় ছেলেটা মধুকে জড়িয়ে ধরলো । মধুও জড়িয়ে ধরলো । কিন্তু অরু এটা দেখে সে মেনে নিতে পারেনি । কেনোনা ছেলেটা খারাপ ছেলে, বখাটে । রাস্তাঘাটে মেয়েদেরকে বিরক্ত করে । এমনকি ওর ওক বান্ধবীর সাথে প্রেমের অভিনয় করে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলো । পরে তার বান্ধবী সরে আসে । এরপর এখন যখন দেখলো এই খারাপ ছেলের ফাঁদে নিজেরই আপন মামাতো বোন পড়লো তখন সে চুপ থাকতে পারলো না ।
সরাসরি গেলো ওদের কাছে, -
_ "মধু!!"
মধু অরুকে দেখে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো । বললো,-
_ "দিদি তুই?"
_ "হ্যাঁ আমি । তুই কলেজে এসে এসব করছিস? চল বাড়িতে ।"
এটা বলেই অরু মধুর হাত ধরে নিয়ে গেলো বাসায় । বাসায় গিয়ে বলতে লাগলো, -
_"ছেলেটাকে কতদিন ধরে চিনিস?"
_ "বেশিদিন নয় । এই হবে ১ মাসের মতো ।"
_ "কীভাবে তোদের পরিচয় আর প্রেম হয়েছে?"
-
বড় বোনের সামনে উত্তর দিতে একটু সংকোচবোধ করছে মধু, তা চুপ করে রইলো ।
-
_ "কী হলো! উত্তর দিচ্ছিস না কেন?"
_ "আমার এক বান্ধবীর বন্ধু । অনেক ভালো ছেলেটা । খুব সুন্দর আর ভদ্র ভাষায় কথা বলে ।
_ "১ মাসের পরিচয়ে তুই ছেলেটাকে ভালো বলছিস? তুই ছেলেটার পিছনের বিষয় না জেনে কীভাবে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে পারিস?"
_ "দিদি কী বলছিস! ও অনেক ভালো রে ।"
_ "ভালো খারাপের তুই কী বুঝিস? ছেলেটাকে আই চিনি । আর খুব ভালো করেই । ছেলেটা বখাটে । রাস্তাঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করে । কলেজ ছাত্রীদেরকে হাঁটতে বসতে বিরক্ত করে । মদ-গাঁজা খায় । এমনকি আমার এক বান্ধবীকে ছেলেটা কুপ্রস্তাব দেয় । আমার বান্ধবী না বললে ছেলেটা সম্পর্কে ইতি টানে । আর তুই কি না বলছিস ছেলেটা ভালো?"
-
ততক্ষণে মধুর চোখে পানি চলে আসছে । অরু সব লক্ষ্য করছে । এরপর ওর কাঁধে হাত রেখে,-
_ "দেখ বোন, ছোটবেলা থেকেই আমি তোর ভালোমন্দ সব দেখে আসছি । তোকে কখনো খারাপ পথে যেতে দেইনি । দেখছিস না আমি এতদিন থেকে একটাও প্রেম করিনি । কারণ আমি ছেলেদেরকে বিশ্বাস করিনা, তবে সব ছেলেরাও এ নয় । কিন্তু বোন দেখ, তুই যে দিকে পা বাড়িয়েছিস সেটা তোর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে ।"
_ "দিদি, আমি বরুণকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি রে । ১ মাস হলে কী হলো, আমি যে বরুণকে মন থেকে খুবই ভালোবেসে ফেলেছি । আমার প্রতি ওর কেমন মনোভাবনা বা ভালোবাসা আছে সেটা জানিনা কিন্তু বরুণের প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক পবিত্র । আমি তোকেও বিশ্বাস করি আর বরুণকেও । তুই যা যা বলেছিস তা যদি সত্যিই সত্য হয় তাহলে দিদি আমি তোকে কথা দিচ্ছি, আমি বরুণকে ভালো পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো ।"
_ "শোন মধু, চাইলেই কারো স্বভাবে সহজে পরিবর্তন আনা যায় না । এমনো হতে পারে তোর সাথে সে ভালো আচরণ দেখালো ঠিকই কিন্তু অন্যদিকে সে ঠিকই তার বদস্বভাব প্রয়োগ করে চললো । তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে আমি বলছি তোকে তুই ছেলেটার পিছু ছেড়ে দে । তুই একজন শিক্ষিত মেয়ে আর অনেক সুন্দর । তোর জন্য আরো ভালো ছেলে পাবো আমরা । তুই একটু বোঝার চেষ্টা কর বোন আমার । আমি তোর একজন বড় বোন হিসেবে উপদেশ দিচ্ছি ।"
-
মধু আর কিছু না বলে সেখান থেকে সরে গিয়ে ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো । মধুর মন ভেঙ্গে গেছে । সে কাঁদছে, প্রচুর কাঁদছে । অরু কী করবে ভেবে পাচ্ছে না । সে তো মধুর ভালো চায় । মধুকে কীভাবে বোঝাবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না । জেনেশুনে নিজের বোনকে এভাবে অন্ধকারের মুখে ঠেলে দিতে পারিনা আমি । নিজেকে বলতে লাগলো অরু ।
-
পরেরদিন মধু কলেজে মন খারাপ নিয়ে গেলো । মধুর মন খারাপ দেখে বরুণ মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করাতে মধু বরুণকে সব খোলে বললো । বরুণ তার নিজের বদনাম অন্যের মুখে শুনে সহ্য করতে পারলো না । মনে মনে কুবুদ্ধি আঁটতে লাগলো । মধুকে "কিচ্ছু হবেনা । সব ঠিক হয়ে যাবে ।" বলে সান্ত্বনা দিলো ।
-
অরু কয়েকদিন আগেই একটা নতুন টিউশনি পেয়েছে । এক ঘরের দুইজন বাচ্চাকে সে পড়ায় এবং নিজের প্রাইভেট শেষ করে আসতে আসতে পায় ৬ টা বেজে যায় । এরপর নেমে আসে ঘোর অন্ধকার সন্ধ্যা । সেদিনও সে বাচ্চাদের পড়িয়ে নিজের প্রাইভেট শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো । কিছু পথ যাবার পর সে লক্ষ্য কতে পারে যে, তাকে কেউ অনুসরণ করছে । সে পা ফেললে, অন্য কেউও পা ফেলছে । সে থামলে, অন্য কেউও থামছে । অরু একা থাকায় অনেক ভয় কাজ করলো তার মনে । মানুষজন নেই এই পথে । সে আর হাঁটতে পারলো না । যেই না সে দৌড় দিবে তখনি ৩ জন লোক তার সামনে চলে আসে । সবার মুখ বাঁধা । ৩ জন ছেলে তাকে ধরে নিয়ে একটি গাড়িতে তুলে । অন্ধকার থাকায় সে কাউকেই চিনতে পারলো না । গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট করলো । কোথায় তাকে নিয়ে যাচ্ছে সে জানেনা । সে যে চিৎকার করবে সেটাও পারছে না । কেনোনা একজন তার মুখে রুমাল চেপে রেখেছে অপরজন তার হাত-পা বাঁধায় ব্যস্ত আর অন্যজন গাড়ি চালাচ্ছে । অরু অসহায়ের মতোন কেঁদে যাচ্ছে । একজন মেয়ে কীভাবে ৩ জন জোয়ান পুরুষের সাথে পারবে ।
-
সকাল হলো । একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে সে নিজেকে আবিষ্কার করলো এবং সাথে তলপেটে বেশি ব্যথা অনুভব করলো । সে পড়ে আছে, উঠতে পারছে না । উঠার শক্তিটা পর্যন্ত ওর শরীরে নেই । ওর জামার কাপড় আগের অবস্থায় পড়ানো এই । কেমন জানি অগোছালো হয়ে আছে । অরুর আর বুঝতে দেরি হলো না যে সে নিজের সতীত্ব হারিয়েছে ।
কিছুক্ষণ পর সে দেখলো ওর পাশেই একটা ঘড়ি রাখা । সে ঘড়িটা চিনতে এক চুল পরিমাণও ভুল করেনি । কেনোনা এই ঘড়িটি সে সেদিন কলেজে মধুকে জড়িয়ে ধরা ব্যক্তির হাতেই দেখেছিলো, আর সেটা আজ ওর পাশে ।
-
কোনোমতে অরু বাড়িতে পৌঁছালো । কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সে ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গলায় ওড়না পেছিয়ে নিজেকে এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে বিদায় দিলো । বাড়ির লোকজন ঠের পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ডুকে অরুর ফাঁস দেওয়া লাশ পেলো । মধুর মুখে হাত চলে গেলো এবং চোখ পড়লো টেবিলে রাখা ঘড়িটার দিকে এবং ঘড়িটার পাশে একটা চিঠি ।
তাতে লেখা ছিলো, - "মধু বোন আমার, তোকে আমি অনেক ভালোবাসি । তোকে সবসময়েই সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করতাম । তুই ছেলেটার থেকে অন্তত এখন দূরে সরে আয় । ভালো থাকিস বোন আমার ।"
-
লাশ ময়নাতদন্তের পর মধু, মধুর বাবা-মা (অরুর মামা-মামী) জানতে পারলেন যে, অরু ধর্ষিত হয়েছে ।
-
মধু এখন বুঝতে পারলো যে, দিদি বরুণকে এতোটাই ঘৃণা করতো যে কখনো বরুণের নাম মুখে নেয়নি । আর ঘড়িটার আসল রহস্য এখন আমি বুঝতে পারলাম, কেনোনা এটা আর কারোর নয়, বরুণেরই ঘড়ি । আর কেউ জানুক আর না জানুক মধু ঠিকই জানে তার ভালোবাসার অরু দিদির মৃত্যুর পিছনে আসলে কে দায়ী ।
-
Saturday, 04 May 2019
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৯ রাত ৯:৩০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×