_ "মধু তুই যে ছেলেটার সাথে প্রেম করছিস সে ছেলেটার ক্যারেক্টার ভালো না । সময় থাকতে তুই সরে যা ওর জীবন থেকে ।"
-
উক্ত কথাটি অরু বলেছে মধুকে । মধু হলো অরুর আপন মামাতো বোন । ছোটবেলা থেকে একসাথেই বড় হয়েছে । কিন্তু মধুর থেকে অরু ২ বছরের বড় । মধু কিছুটা উগ্র স্বভাবের কিন্তু অরু অনেক শান্তশিষ্ট স্বভাবের এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে । মধু যদি কখনো কোনো ভুল কিছু করতো অথবা ভুল সিদ্ধান্ত নিতো তাহলে অরু এসে থাকে সেই ভুল পথে যাওয়া থেকে আটকাতো । মধু ছিলো ওর মামাতো বোন কিন্তু অরুর কাছে মনে হতো মধু ওর আপন বোন । অনেক স্নেহ করে । নিজের ছোট বোনের মতো দেখে । অরুর বাবা ওর জন্মের আগেই মারা গেছেন এবং মা মারা গেছেন ওর জন্মের কয়েকমাস পরেই । মামা-মামীদের কাছে সে বড় হয়েছে । তাঁদের সাথেই থাকে ।
-
অরু সেদিন কলেজে দেখলো যে মধু এক ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে । একে অপরের হাত ধরে বসে আছে । একসময় ছেলেটা মধুকে জড়িয়ে ধরলো । মধুও জড়িয়ে ধরলো । কিন্তু অরু এটা দেখে সে মেনে নিতে পারেনি । কেনোনা ছেলেটা খারাপ ছেলে, বখাটে । রাস্তাঘাটে মেয়েদেরকে বিরক্ত করে । এমনকি ওর ওক বান্ধবীর সাথে প্রেমের অভিনয় করে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলো । পরে তার বান্ধবী সরে আসে । এরপর এখন যখন দেখলো এই খারাপ ছেলের ফাঁদে নিজেরই আপন মামাতো বোন পড়লো তখন সে চুপ থাকতে পারলো না ।
সরাসরি গেলো ওদের কাছে, -
_ "মধু!!"
মধু অরুকে দেখে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো । বললো,-
_ "দিদি তুই?"
_ "হ্যাঁ আমি । তুই কলেজে এসে এসব করছিস? চল বাড়িতে ।"
এটা বলেই অরু মধুর হাত ধরে নিয়ে গেলো বাসায় । বাসায় গিয়ে বলতে লাগলো, -
_"ছেলেটাকে কতদিন ধরে চিনিস?"
_ "বেশিদিন নয় । এই হবে ১ মাসের মতো ।"
_ "কীভাবে তোদের পরিচয় আর প্রেম হয়েছে?"
-
বড় বোনের সামনে উত্তর দিতে একটু সংকোচবোধ করছে মধু, তা চুপ করে রইলো ।
-
_ "কী হলো! উত্তর দিচ্ছিস না কেন?"
_ "আমার এক বান্ধবীর বন্ধু । অনেক ভালো ছেলেটা । খুব সুন্দর আর ভদ্র ভাষায় কথা বলে ।
_ "১ মাসের পরিচয়ে তুই ছেলেটাকে ভালো বলছিস? তুই ছেলেটার পিছনের বিষয় না জেনে কীভাবে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে পারিস?"
_ "দিদি কী বলছিস! ও অনেক ভালো রে ।"
_ "ভালো খারাপের তুই কী বুঝিস? ছেলেটাকে আই চিনি । আর খুব ভালো করেই । ছেলেটা বখাটে । রাস্তাঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করে । কলেজ ছাত্রীদেরকে হাঁটতে বসতে বিরক্ত করে । মদ-গাঁজা খায় । এমনকি আমার এক বান্ধবীকে ছেলেটা কুপ্রস্তাব দেয় । আমার বান্ধবী না বললে ছেলেটা সম্পর্কে ইতি টানে । আর তুই কি না বলছিস ছেলেটা ভালো?"
-
ততক্ষণে মধুর চোখে পানি চলে আসছে । অরু সব লক্ষ্য করছে । এরপর ওর কাঁধে হাত রেখে,-
_ "দেখ বোন, ছোটবেলা থেকেই আমি তোর ভালোমন্দ সব দেখে আসছি । তোকে কখনো খারাপ পথে যেতে দেইনি । দেখছিস না আমি এতদিন থেকে একটাও প্রেম করিনি । কারণ আমি ছেলেদেরকে বিশ্বাস করিনা, তবে সব ছেলেরাও এ নয় । কিন্তু বোন দেখ, তুই যে দিকে পা বাড়িয়েছিস সেটা তোর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে ।"
_ "দিদি, আমি বরুণকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি রে । ১ মাস হলে কী হলো, আমি যে বরুণকে মন থেকে খুবই ভালোবেসে ফেলেছি । আমার প্রতি ওর কেমন মনোভাবনা বা ভালোবাসা আছে সেটা জানিনা কিন্তু বরুণের প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক পবিত্র । আমি তোকেও বিশ্বাস করি আর বরুণকেও । তুই যা যা বলেছিস তা যদি সত্যিই সত্য হয় তাহলে দিদি আমি তোকে কথা দিচ্ছি, আমি বরুণকে ভালো পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো ।"
_ "শোন মধু, চাইলেই কারো স্বভাবে সহজে পরিবর্তন আনা যায় না । এমনো হতে পারে তোর সাথে সে ভালো আচরণ দেখালো ঠিকই কিন্তু অন্যদিকে সে ঠিকই তার বদস্বভাব প্রয়োগ করে চললো । তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে আমি বলছি তোকে তুই ছেলেটার পিছু ছেড়ে দে । তুই একজন শিক্ষিত মেয়ে আর অনেক সুন্দর । তোর জন্য আরো ভালো ছেলে পাবো আমরা । তুই একটু বোঝার চেষ্টা কর বোন আমার । আমি তোর একজন বড় বোন হিসেবে উপদেশ দিচ্ছি ।"
-
মধু আর কিছু না বলে সেখান থেকে সরে গিয়ে ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো । মধুর মন ভেঙ্গে গেছে । সে কাঁদছে, প্রচুর কাঁদছে । অরু কী করবে ভেবে পাচ্ছে না । সে তো মধুর ভালো চায় । মধুকে কীভাবে বোঝাবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না । জেনেশুনে নিজের বোনকে এভাবে অন্ধকারের মুখে ঠেলে দিতে পারিনা আমি । নিজেকে বলতে লাগলো অরু ।
-
পরেরদিন মধু কলেজে মন খারাপ নিয়ে গেলো । মধুর মন খারাপ দেখে বরুণ মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করাতে মধু বরুণকে সব খোলে বললো । বরুণ তার নিজের বদনাম অন্যের মুখে শুনে সহ্য করতে পারলো না । মনে মনে কুবুদ্ধি আঁটতে লাগলো । মধুকে "কিচ্ছু হবেনা । সব ঠিক হয়ে যাবে ।" বলে সান্ত্বনা দিলো ।
-
অরু কয়েকদিন আগেই একটা নতুন টিউশনি পেয়েছে । এক ঘরের দুইজন বাচ্চাকে সে পড়ায় এবং নিজের প্রাইভেট শেষ করে আসতে আসতে পায় ৬ টা বেজে যায় । এরপর নেমে আসে ঘোর অন্ধকার সন্ধ্যা । সেদিনও সে বাচ্চাদের পড়িয়ে নিজের প্রাইভেট শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো । কিছু পথ যাবার পর সে লক্ষ্য কতে পারে যে, তাকে কেউ অনুসরণ করছে । সে পা ফেললে, অন্য কেউও পা ফেলছে । সে থামলে, অন্য কেউও থামছে । অরু একা থাকায় অনেক ভয় কাজ করলো তার মনে । মানুষজন নেই এই পথে । সে আর হাঁটতে পারলো না । যেই না সে দৌড় দিবে তখনি ৩ জন লোক তার সামনে চলে আসে । সবার মুখ বাঁধা । ৩ জন ছেলে তাকে ধরে নিয়ে একটি গাড়িতে তুলে । অন্ধকার থাকায় সে কাউকেই চিনতে পারলো না । গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট করলো । কোথায় তাকে নিয়ে যাচ্ছে সে জানেনা । সে যে চিৎকার করবে সেটাও পারছে না । কেনোনা একজন তার মুখে রুমাল চেপে রেখেছে অপরজন তার হাত-পা বাঁধায় ব্যস্ত আর অন্যজন গাড়ি চালাচ্ছে । অরু অসহায়ের মতোন কেঁদে যাচ্ছে । একজন মেয়ে কীভাবে ৩ জন জোয়ান পুরুষের সাথে পারবে ।
-
সকাল হলো । একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে সে নিজেকে আবিষ্কার করলো এবং সাথে তলপেটে বেশি ব্যথা অনুভব করলো । সে পড়ে আছে, উঠতে পারছে না । উঠার শক্তিটা পর্যন্ত ওর শরীরে নেই । ওর জামার কাপড় আগের অবস্থায় পড়ানো এই । কেমন জানি অগোছালো হয়ে আছে । অরুর আর বুঝতে দেরি হলো না যে সে নিজের সতীত্ব হারিয়েছে ।
কিছুক্ষণ পর সে দেখলো ওর পাশেই একটা ঘড়ি রাখা । সে ঘড়িটা চিনতে এক চুল পরিমাণও ভুল করেনি । কেনোনা এই ঘড়িটি সে সেদিন কলেজে মধুকে জড়িয়ে ধরা ব্যক্তির হাতেই দেখেছিলো, আর সেটা আজ ওর পাশে ।
-
কোনোমতে অরু বাড়িতে পৌঁছালো । কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সে ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গলায় ওড়না পেছিয়ে নিজেকে এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে বিদায় দিলো । বাড়ির লোকজন ঠের পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ডুকে অরুর ফাঁস দেওয়া লাশ পেলো । মধুর মুখে হাত চলে গেলো এবং চোখ পড়লো টেবিলে রাখা ঘড়িটার দিকে এবং ঘড়িটার পাশে একটা চিঠি ।
তাতে লেখা ছিলো, - "মধু বোন আমার, তোকে আমি অনেক ভালোবাসি । তোকে সবসময়েই সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করতাম । তুই ছেলেটার থেকে অন্তত এখন দূরে সরে আয় । ভালো থাকিস বোন আমার ।"
-
লাশ ময়নাতদন্তের পর মধু, মধুর বাবা-মা (অরুর মামা-মামী) জানতে পারলেন যে, অরু ধর্ষিত হয়েছে ।
-
মধু এখন বুঝতে পারলো যে, দিদি বরুণকে এতোটাই ঘৃণা করতো যে কখনো বরুণের নাম মুখে নেয়নি । আর ঘড়িটার আসল রহস্য এখন আমি বুঝতে পারলাম, কেনোনা এটা আর কারোর নয়, বরুণেরই ঘড়ি । আর কেউ জানুক আর না জানুক মধু ঠিকই জানে তার ভালোবাসার অরু দিদির মৃত্যুর পিছনে আসলে কে দায়ী ।
-
Saturday, 04 May 2019
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৯ রাত ৯:৩০