somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"লোভ-লালসা" (পর্ব-০৫)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুনয়না এতদিন শুধু পড়া ফাঁকি দিয়েই গেছে । আগে সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফোনে কথা বলার পর বই হাতে নিয়ে পড়তো কিন্তু এখন ঠিক উল্টোটাই করছে । বাড়িতে ফোন দিবে তা তো দূরের কথা, বই-ই হাতে নেয়না । সেই যে মোবাইল লাগাবে কানে, লাগানোই থাকে । কথা বলার জন্য ছাদে চলে যায় । কলেজ হোস্টেলে তো আর স্বাধীনভাবে রুমমেটটদের সামনে ওভাবে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে পারবে না । এতে করে তাদের সমস্যা হবে ।
-
সুনয়নার পরীক্ষা চলে আসলো । পরীক্ষার ফি'র জন্য টাকা প্রয়োজন । বাবার থেকে কীভাবে সে টাকা চাইবে বুঝে উঠতে পারছিলো না । কেনোনা সে কয়েকদিন আগেই বাবাকে পরীক্ষার ফি'র কথা মিথ্যে বলে বাবার কাছ থেকে টাকা এনেছিলো । টাকা এনে উড়িয়েছে নিজের চাহিদের পিছনেই । একবারও বাবার কষ্টের কথা ভাবেনি, ভাবেনি কীভাবে বাবা টাকাটা জোগাড় করে দিয়েছেন, একবারও তা জানতে চায়নি সুনয়না । সুনয়না বাবাকে টাকার কথা বলতে পারেনি ।
হঠাৎ সুনয়নার মনে পড়লো ওর ফেসবুকেরই একজন বন্ধুর কথা । ওর নাম সৌহার্দ্য । খুবই ভালো ছেলে । একদিন ছেলেটা বলেছিলো সুনয়নাকে "কখনো টাকা-পয়সার সমস্যায় পড়লে তাকে যেন বলে" । যেই মনে হওয়া সেই বলা । সুনয়না ম্যাসেজ করলো সৌহার্দ্যকে । সৌহার্দ্য সুনয়নার সব কথা শুনে সে সুনয়নার পরীক্ষার ফি দিয়ে দেয় । ভালোভাবেই পরীক্ষা দেয় । পরীক্ষা শেষে সৌহার্দ্যের সাথে সুনয়নার খুব ভালো একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে । ম্যাসেজে কথা বলা থেকে ফোনালাপ পর্যন্ত গড়ায় সম্পর্কটা । দিনে কম হলেও ৪/৫ বার কথা হয়ই তাদের মধ্যে । সৌহার্দ্য ছেলেটা অনেকটা শৌখিন । বাবার আদরের একমাত্র ছেলে । তাই যা চায় তাই-ই পায় ।
-
একদিন সুনয়না ও সৌহার্দ্য ঠিক করলো তারা দুজনে দেখা করবে । দেখা করার জায়গাও ঠিক হলো । সৌহার্দ্য কখনো দেখেনি সুনয়নাকে । কখনো ছবি চায়নি । কিন্তু সুনয়না ঠিকই সৌহার্দ্যের প্রোফাইলে ওর ছবি দেখেছে । ছেলেটা দেখতে এককথায় অনেক সুন্দর ।
নির্দিষ্ট সময়ে সৌহার্দ্য আসলো । সুনয়না যেভাবে যা করতে বলেছিলো ঠিক সেভাবেই সব করলো সৌহার্দ্য । সৌহার্দ্য গোলাপফুল হাতে বসে রইলো একটা চেয়ারে । কিছুক্ষণ পর সুনয়না এসে পিছন থেকে সৌহার্দ্যের দুচোখ মুঝে ধরল । সৌহার্দ্য তার দুই হাত দিয়ে সুনয়নার দুইহাত ধরেই বললো 'সুনয়না!' ।
সুনয়না মিষ্টি একটা হাসি দিলো, গালে টোল পড়লো । সৌহার্দ্য পিছনে তাঁকিয়ে হতবাক হয়ে গেলো । একজন মানুষ এত্ত সুন্দর হতে পারে!! ঈশ্বর সুনয়নাকে নিজ হাতে যত্ন করে গড়েছেন নিখুঁতভাবে । ওর কি হাসি, সুদীর্ঘ পল্লব বিশিষ্ট কাজল কালো মায়াবী দুটি চোখ আর ঘন কালো চুল তার রুপ কে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, সেই চোখে আজ সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে সৌহার্দ্য ।
সৌহার্দ্যের পাশে এসে বসলো সুনয়না । সুনয়নার পরনে নীল শাড়ী, কপালে নীল টিপ, হাতে কাচের নীল চুড়ি দেখে বলতে লাগলো "অপরুপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী" । সুনয়না-
_ "কীই শুধু তাঁকিয়েই থাকবা নাকি?"
_ "ওহ! না হ্যা, আসলে তোমাকে দেখছিলাম । তুমি কত্ত সুন্দর । সৃষ্টিকর্তা তোমায় অনেক যত্ন করে বানিয়েছেন । কোনো খুঁত রাখেননি ।"
_ "হয়েছে!
আর বলতে হবেনা । এখন বলো কি অবস্থা? আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?"
_ "না,
আসতে তো কোনো সমস্যা হয়নি কিন্তু আসার পর যা সমস্যা হবার তা তো এখনই হচ্ছে ।"
... সুন্দর এক চিলতে হাসি দিয়ে-
_ "বসেই থাকবে নাকি.. হাত ধরবে না?"
_ "হাত ধরতে বলছো?"
_ "নয়তো কি! হাদারাম.."
... হাত ধরে নিজের উরুতে এনে রাখলো সৌহার্দ্য । ইচ্ছে করছে ওর হাত ধরে ওর পাশে দাঁড়িয়ে হাঁটতে কিন্তু ভয় হচ্ছে কীভাবে বলবে ওকে । সুনয়না ওর হাবভাব বুঝে-
_ "অভয় দিলাম.."
... সৌহার্দ্য অভয় পেয়ে সুনয়নার হাতের চারটা আঙুলের ফাঁকে নিজের আঙুল ডুকিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো । আর চারদিকে তাঁকাতে লাগলো । ও ভাবতে লাগলো হয়তো ভুল করে প্রেমিক-প্রেমিকাদের পার্কে চলে আসছে । ডানদিকে তাঁকালো,
'একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে ।'
বামে তাঁকালো,
'প্রেমিক তার প্রেমিকার হাতে চুমু খাচ্ছে ।'
পিছনে ফিরে আরেকটা জায়গায় দেখলো,
'একজন আরেকজনকে চুমু খাচ্ছে ।'
-
সৌহার্দ্যের সবই লক্ষ্য করছে সুনয়না কিন্তু কিছু বলতে পারছে না । সুনয়না ফুচকা খেতে পছন্দ করে । ফুচকাওয়ালার কাছে গিয়ে ফুচকা কিনে খেলো দুজনেই । সৌহার্দ্যের চোখ-মুখ ও কান লাল হয়ে গেলো । সুনয়না বললো-
_ "ঝাল খেতে পারো না?"
_ "উম, না মানে, আসলে খেতে পারি আবার পারিও না ।"
_ "হুঁ,
হয়েছে! দেখেছি তো কি ঝাল খেতে পারো । দেখতো আমিও তো খাচ্ছি । তোমার মতো চোখ-মুখ ও কান লাল হয়ে যায়নি ।"
... এমনিতেই সৌহার্দ্যের কান আর মুখ জ্বলছে আর ওদিকে সুনয়না মজা নিচ্ছে । তক্ষুনি একটা দুষ্টুবুদ্ধি আটলো সৌহার্দ্য । চুপিসারে ফুচকাওয়ালার মরিচের কৌটো থেকে অনেকটা মরিচের গুড়া নিয়ে সুনয়নাকে পিছনে কিছু একটা আছে বলে পিছনে ঘুরিয়ে প্রতিটা ফুচকার ভেতর ঢেলে দিলো । সুনয়না ঠেরও পেলো না ।
সুনয়না খাচ্ছে আর মুখে ফুচকা নিয়ে গাল ফুলাচ্ছে । দেখা যাচ্ছে মুখের মরিচ চোখের ভিতরে গিয়ে লালচে আকার ধারণ করেছে । সুনয়না এটা সইতেও পারছে না, কিছু বলতেও পারছে না । একসময় সইতে না পেরে ফুচকার প্লেট ফেলে দিয়ে লাফিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো আর 'জল, জল, জল দাও, জল' বলে চেঁচাতে লাগলো । সৌহার্দ্য পানি নিয়ে প্রস্তুত ছিলো । ওকে পানি দিয়ে হাসতে লাগলো । আর এতে সুনয়না অনেক রাগ হলো এবং শেষে পুরো পানি ওর উপর ঢেলে দিলো ।
সুনয়না আর সৌহার্দ্যের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা নেই কিন্তু সৌহার্দ্য চায় সুনয়নার সাথে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ হতে কিন্তু সাহস পাচ্ছেনা বলতে । সুনয়না খুবই চালাকচতুর মেয়ে তাই সৌহার্দ্যের মনের কথা বুঝতে পারে ।
-
দিনদিন তারা একে অপরকে গভীরভাবে চিনতে ও জানতে থাকলো । একদিন কথা না হলে কেউ একটা মুহুর্ত কাটাতে পারেনা । দিনে অন্তত একবার হলেও কথা বলতে হয় । সুনয়নার সাথে এর আগে কখনো এমনটি হয়নি । কিন্তু সুনয়না প্রেম-ভালোবাসায় জড়াতে চায়না । 'যে মেয়ে সবই বুঝতে পারে সেই মেয়ে কেনোই বা সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চাচ্ছেনা?' সৌহার্দ্য শুধু তাই-ই ভাবে ।
-
একদিন সুনয়নার রুমমেটরা হোস্টেল ম্যানেজারের কাছে নালিশ করলো সুনয়নার ব্যাপারে । সুনয়না নাকি আগের চেয়ে আরোও বেশি ফোনে কথা বলে আর এতে করে ওদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে । হোস্টেল ম্যানেজার সুনয়নাকে ওয়ার্নিং দিলো পরবর্তীতে যেন ওদেরকে আর বিরক্ত না করে, ওদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত না ঘটায় । কিন্তু সুনয়না সৌহার্দ্যের সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে না । সবসময় কি আর ছাদে গিয়ে কথা বলা যায়, রাত্রিবেলা তো অসম্ভবই । এসব ব্যাপারে জানালো সৌহার্দ্যকে । সৌহার্দ্য সুনয়নার সমস্যার কথা শুনে একটা উপায় বললো সুনয়নাকে ।
_ "সুনয়না এক কাজ করতে পারো । তুমি না হয় একটা ছোট রুম নিয়ে একাই থাকো । আমি রুমভাড়া দিবো আর তুমি শুধু খাওয়া-দাওয়ার খরচটা চালিয়ে নিও ।"
_ "আচ্ছা ঠিক আছে ।"
... সুনয়না খুব খুশিই হলো সৌহার্দ্যের এই উপায় শুনে । যেই ভাবা সেই কাজ । মাসের ১ তারিখেই সে হোস্টেল পরিবর্তন করে একটা বাসা নেয় এবং সেখানে থেকেই সে পড়াশোনা চালিয়ে যায় ।
-
চলবে...
17 January, 2019
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×