somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"লোভ-লালসা" (পর্ব-০১)

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন থেকে শুধু পুলিশকনস্টেবল ফোন দিচ্ছে । একেকদিন একেক থানা থেকে ফোনকল আসছেই । বিরক্ত হয়ে গেছেন অমল বাবু ফোনকলে । অফিসে যাবেন, ঠিক তখনই আবার কল আসলো । কল রিসিভ করে লাউডস্পিকার দিলেন-
_ "হ্যালো, সুনয়নার বাবা অমল বাবু বলছেন?"
_ "আজ্ঞে না ভুল নাম্বার ।"
-
বাধ্য হয়ে নিজের পরিচয় লুকাচ্ছেন । সুনয়না যে তাঁদের একমাত্র মেয়ে ছিলো তা স্বীকার করতে তাঁদের লজ্জা লাগে । সন্তান জন্মের সংবাদ সর্বদাই সবার জন্য ও সকলের জীবনের জন্য শুভ মহরৎ । তার আগাম ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন চিন্তা করেন তখন প্রথমেই যে বিষয়টি আসে তা হলো তার একটা সুন্দর নাম নির্বাচন করা । অমল বাবু এবং অরিত্রী দেবী তাঁদের মেয়েসন্তানের কি নাম রাখবেন । তাঁদের মেয়ের চোখ অনেক মায়াবী হওয়ায় তাঁরা ঠিক করলেন তাঁদের মেয়ের নাম রাখবেন 'সুনয়না' । সুনয়না নামের অর্থ হচ্ছে সুন্দর চোখ । তাঁরা তাঁদের মেয়ের নাম রাখলেন সুনয়না ।
-
অমল বাবুর নিজের একটা ছোট্ট দোকান আছে যেখানে তিনি নিজেই বসেন । পুঁজি কম থাকায় নিজের দোকানটাকে বড় করতে পারলেন না । সেই ছোট্ট টিনসেটের দোকানটাই রয়ে গেলো । তাঁদের দুজনের শুধু একটাই স্বপ্ন মেয়ে বড় হবে, লেখাপড়া করে মানুষ হবে, ভালো চাকরী করবে, তাঁদের নাম উজ্জ্বল করবে ।
-
সময়ের সাথে সাথে সুনয়না বড় হতে লাগলো । সেই ছোট্ট সুনয়না আজ অনেক বড় হয়ে গেছে । আজ সুনয়না এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুনোর কথা । তাই সকাল থেকেই তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ । রেজাল্টের টেনশনে এর ভালো লাগছে না । অমল বাবুও আজকে আর দোকানে গেলেন না । অরিত্রী দেবীও কোনো কাজে মন দিতে পারছেন না । সুনয়না বসে আছে মোবাইল হাতে । কখন ২ টা বাজবে আর ফলাফল প্রকাশিত হবে । যথাসময়ে ফলাফল প্রকাশ হলো এবং সুনয়না এ+ পেয়েছে । ওর খুশি যেন ধরেনা । সাথে সাথে পিছন ফিরে বাবা-মা দুজনকে একসাথে ঝড়িয়ে ধরে চুমু খেলো । খুবই খুশি সে । সুনয়না ওর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খোঁজে পায় এমন ফলাফলের কারণে ।
-
সুনয়না ছোটবেলা থেকে দেখতে বেশ সুন্দর ও অনেক শান্তস্বভাবের । কখনো কিছুর জন্য বায়না ধরেনা কিন্তু ওর জেদ বেশি । একবার যা করতে চায় সেটা না করা পর্যন্ত নিস্তার নেই ।
বাবার কাছে জেদ ধরে বসে সে ঢাকা গিয়ে পড়াশোনা করবে । এখানকার কলেজে সে ভর্তি হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না । বাবা-মা দুজনে অনেক করে বুঝালেন কিন্তু সুনয়না বুঝলো না । সে তার লক্ষ্যে অটুট ।
-
দুইদিন ধরে মেয়ে খাচ্ছে না । ওদিকে কলেজ এ ভর্তি আবেদনের তারিখ ও ঘনিয়ে আসছে আর এদিকে মেয়ে বায়না ধরে আছে । অমল বাবু এতটুকু একটা দোকান কিইবা আর আয় হয় । কোনোমতে মেয়েকে নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছেন । সংসারে কতই না খরচ আছে সব কি ঠিকঠাক মতো চালিয়ে উঠা যায় এই এতটুকু একটা দোকান চালিয়ে? মেয়ে তো কোনোভাবেই তাঁদের কথা শুনছে না । মেয়েকে অনেক করে বুঝলেন যে,- "মা, তুমি ঢাকা গিয়ে পড়াশোনা করবে ভালো কথা কিন্তু মা তার জন্যে তো প্রচুর অর্থ প্রয়োজন, তুমি বাহিরে থেকে পড়াশোনা করবে তার জন্যে একটা বাড়তি খরচাপাতি আছে না? তোমার খাওয়া-দাওয়ার টাকা, তোমার থাকার জন্য হোস্টেল খরচ, হাত খরচ, সেটা আমরা কীভাবে দিবো মা বলো? দেখোই তো আমাদের সংসারটা কোনোভাবে অভাব অনটনে চলছে । ধারদেনাও করছি না যদি শোধ করতে না পারি এই ভয়ে । তোমাকে নিয়ে আমাদেরও অনেক বড় স্বপ্ন মা তুমি অনেক বড় হবে । কিন্তু সবই তো করতে হবে আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে । তুমি এখানে আমাদের জেলার একটা সরকারী কলেজেই ভর্তি হও মা ।"
-
মেয়েকে কত করে বুঝালেন মেয়ে বুঝ মানতে চাইছে না । সুনয়না বলে,- "বাবা, মা, তোমাদেরকে আমার খরচ চালাতে হবেনা । আমার সব বন্ধুবান্ধব ঢাকা গিয়ে পড়াশোনা করবে আর আমি এখানে একা পড়ে থাকবো । তোমরা শুধু আমার যাওয়ার এবং থাকার ব্যবস্থা এবং ভর্তির ব্যবস্থা করে দাও । পরে আমি কয়েকটা টিউশনি খোঁজে নিবো ।"
অমল বাবু এবং অরিত্রী দেবী অনেক ভাবলেন এবং অবশেষে মেয়ের জেদের কাছে হেরে গিয়ে ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে যা সঞ্চয় ছিলো সব দিয়ে মেয়েকে ঢাকার কলেজে ভর্তি করালেন এবং একটা মেয়ে হোস্টেলে ভর্তি করিয়ে দিলেন ।
-
১ বছর পার হয়ে গেলো । সবকিছুই ভালোমতো চলছে । সুনয়নার পড়াশোনাও ভালো চলছে । ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা দিয়ে সেকেন্ড ইয়ারে উঠলো । প্রতিদিন বাসায় বাবা-মার সাথে তার যোগাযোগ হয় । সুনয়না কলেজে গিয়ে অনেক ভালো ভালো বন্ধুবান্ধব পায়, কিন্তু তার স্কুলজীবনের কোনো বন্ধুবান্ধবই ছিলো না সেই কলেজে । খুব ভালোভাবে যাচ্ছিলো দিনকাল ।
ভালো ভালো কয়েকটা টিউশনি সে নেয় এবং তাদেরকে পড়ায় ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালায় । ওদিকে অমল বাবু এবং অরিত্রী দেবীও যা টাকা তাদের জমা হচ্ছে সেগুলো মেয়েকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন যেন মেয়ের থাকা খাওয়ায় কোনোরকম সমস্যা না হয় ।
-
স্কুল জীবনে সুনয়না কখনো প্রেম ভালোবাসার ধারেকাছেও যায়নি কিন্তু কলেজে এসে সে অনেকটা পরিবর্তন আনে নিজের মধ্যে । ওর সাথের বান্ধবীরা কত ভালো ভালো ছেলের সাথে প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে আছে । কিন্তু ওর এখনো ছেলে কোনো বন্ধু নেই । ওর আফসোসও হয়না ওর বয়ফ্রেন্ড নেই বলে । বান্ধবীরা প্রায়সময়ই বলে যে,- "তুই কারো সাথে রিলেশম করিস না কেন?" উত্তর সুনয়না "প্রয়োজন নেই" বলে দেয় ।
-
সুনয়না ফেসবুক চালায় না । ওর স্মার্টফোন নেই, কখনো বাবার কাছে চেয়ে চাইতে পারেনি । অভাব অনটনের মধ্যে কীভাবে সে বলবে বাবাকে "বাবা, আমাকে একটা স্মার্টফোন কিনে দাও ।"
আর্থিক সমস্যার জন্য সুনয়না কখনো বাবা-মার কাছে কোনোকিছু আবদার করতে পারেনা । কিন্যু সুনয়না বাবা-মা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন মেয়ের প্রত্যেকটা চাহিদা মেটানোর ।
-
সুনয়না এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী । দেখতে দেখতে অনেকটা বড় হয়ে গেছে । এই কদিন আগেই সে বাবা-মার সাথে দেখা করে আসলো, থাকলো পুরো ১ মাস । পরীক্ষা দিয়ে বন্ধের ছুটিটা সে বাবা-মার সাথেই কাটালো । গ্রামের অনেকেই চিনে না সুনয়নাকে । চিনবেই বা কীভাবে, ও তো সারাদিন ঘরে বসেই থাকতো । শুধু স্কুলে ও কোচিং-এ যাওয়ার সময়ই সে বাহিরে বের হতো, অন্যথায় বাসায়ই ওর পুরো সময়টা কাটতো । সুনয়না স্কুলে পড়ার সময় ওর যে কয়জন বান্ধবী ছিলো তারা প্রত্যেকেই প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে সুনয়নার বাসাতেই আসতো । তারা সবাই একসাথে বসে অনেক মজা করতো । সবাই সুনয়নাকে অনেক পছন্দ করতো । কেনোনা সুনয়না দেখতে ছিলো অপরুপা । সবার সাথে মিশতো না, ওর কাছে যাদেরকে অনেক ভালো মনে হতো শুধু তাদের সাথেই ও মিশতো । ওর সবচেয়ে প্রিয় এবং কাছের বান্ধবী ছিলো অরুন্ধতী । ওর কাছে সবকিছুই শেয়ার করতো সুনয়না । সুনয়নার এমন কোনো অজানা কথা নেই যা অরুন্ধতী জানতো না । দুজনের বন্ধুত্ব ছিলো কাঁঠালেরআঠার মতোন ।
-
চলবে...
2 January, 2019
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×