দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । শুধু দাঁড়িয়ে নেই, আমি দেখছি রুদ্রশীকে । ও শুয়ে আছে, মনে আঘাত নিয়ে শুয়ে আছে । ওর চুল উসকোখুসকো হয়ে আছে । সারারাত জেগে কাটানোর কারণে চোখের নিচে কালচে দাগ পড়ে গেছে । সারাদিন কাঁদার কারণে ওর চোখ ফুলে গেছে ও সারাক্ষণই চোখদুটো লাল হয়ে থাকে । ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেনা । খাওয়ার সময় চলে যায়, কিন্তু ওর খিধা লাগে না । আমার মা-বাবা কাউকেই ও চিনে না । আমাকেও চিনে না । কিন্তু যদি প্রশ্ন করি- "আমাকে চিনো?", উত্তরে সে বলবে- "হ্যাঁ ।
..
আমার অফিস টাইম হলো সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত । কিন্তু রুদ্রশীর দেখাশোনার জন্য আমাকে সন্ধ্যে ০৬ টায় বাড়ি ফিরতে হয় । সেজন্যে মাস শেষে পর্যাপ্ত মাইনেও কেটে নেওয়া হয় । তাতে আমি কিছু মনে করিনা । আমি সর্বদাই চেষ্টায় থাকি রুদ্রশীর মন ভালো করার । কিন্তু কীভাবে, কী করলে যে আমি ওর স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারবো তা জানিনা । অনেক ভালো ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি কিন্তু কেউই এর ঠিক চিকিৎসা করতে পারলেন না ।
..
মা-বাবা গ্রামে থাকেন । আমি আর রুদ্রশী বাসা নিয়ে থাকি শহরে আমার চাকরীর জন্য । অফিস থেকে বাসায় ফিরে প্রত্যেকদিন আমাকে রান্না করতে হয় । অনেক ক্লান্ত থাকা স্বত্বেও আমাকে বাসার কাজগুলো করতে হয় । কিন্তু আমি প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে প্রথমেই রুদ্রশীর কাছে যাই; ওকে বিছানায় শুয়া থেকে তুলে দাত ব্রাশ করাই; তারপর ওর চুল বেঁধে দেই । তারপর রান্নাঘরে গিয়ে রান্না শেষ করে ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দিই । এরপর এসে আমি স্নান করি । স্নান করার পর রুদ্রশীর রুমে যাই । গিয়ে সেই প্রত্যেকদিনকার মতোই দেখি যে, সে হাতে একটা কোলবালিশ নিয়ে সারাক্ষণ ওই কোলবালিশটার দিকে তাকিয়ে থাকে ।
..
একটু পিছনে ফিরি...
_ "এ্যাই শুনছো?"
_ "হ্যাঁ সোনা বলো ।"
_ "আমার আজ দু'দিন থেকে বমি বমি ভাব হচ্ছে । এই আজ সকালে বমিও করেছি । তুমি আজ একটু তাড়াতাড়ি আসবে অফিস থেকে । ডাক্তারের কাছে যাবো । "
_ "আচ্ছা সোনা আমি অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি আসবো ।"
.. এই বলে আমি অফিসে চলে গেলাম এবং অন্যদিনের থেকে আজ একটু তাড়াতাড়িই আসলাম । বাড়িতে ডুকার পর দেখলাম আমার জন্য রুদ্রশী খাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়ে রেখেছে । ও বললো-
_ "এ্যাই ওয়াশরুমে যাও আর জলদি হাতমুখ ধুয়ে এসো । সারাদিন কিচ্ছুটি খাওনি, তোমার জন্য আমিও বসে আছি ।"
.. আমি হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে হাতমুখ ধুতে গেলাম । হাতমুখ ধুয়েই টেবিলে চলে আসলাম । এর পর ও প্লেটে খিচুড়ি দিয়ে বললো-
_ "খেয়ে নাও । আজ তোমার প্রিয় খাবার খিচুড়ি রান্না করেছি ।"
_ "তুমি খাবে না?"
_ "বাবু,
আমার না খেতে ইচ্ছে করছে না । তুমি খাও, আমি তোমার খাওয়া দেখি ।"
.. খেতে চাইলো না, কিন্তু আমি জোর করে ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দিলাম ।
.. আমি বাধ্য ছেলের মতো তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম । বাকি খাবারগুলো রইলো । খেতে খেতে রুদ্রশীকে বললাম-
_ "বাবু,
তুমি রেডি হয়ে নাও । আমি পোষাকটা পরিবর্তন করেই বেরিয়ে পড়ব ।
_ "মাথা নাড়িয়ে 'হ্যাঁ' সম্মতি দিয়ে রুমে চলে গেলো কাপড় পড়তে ।"
.. আমরা ঠিক সন্ধ্যে ৭ টায় বেরিয়ে পড়লাম । ঠিক ৭:৩০ তে স্বাক্ষীর চেম্বারে প্রবেশ করলাম । স্বাক্ষী হলো আমার ছোটবেলার বান্ধবী । ও সবসময়ই চাইতো মানুষের উপরকার করতে, আর ছোটবেলা থেকেই তার একটা লক্ষ্য ছিলো সে ডাক্তার হবে এবং তার সেই লক্ষ্য আর স্বপ্নটি পূরণ হলো । চেম্বারে প্রবেশ করার সাথে সাথে সে আমাদের বসতে বললো । আজকের আগে ও কোনোদিন রুদ্রশীকে দেখেনি । শুধু ফোনে বলেছিলাম যে "আমি বিয়ে করেছি ।"
..
রুদ্রশীর বমি বমি ভাব হওয়ার কথা ওকে বলেছিলাম এখানে নিয়ে আসার আগেই তাই ও পরীক্ষা করতে নিয়ে গেলো আরেকটা কক্ষে ।
প্রায় ১৫-২০ মিনিটস পর আসলো দুজনেই । দুজনের মুখেই সুন্দর একটা হাসির প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে । স্বাক্ষীকে জিজ্ঞেস করলাম-
_ "কি হয়েছে? তোমাদের মুখে হাসি যে? আমি কি এই হাসির একজন দর্শক হতে পারিনা?"
_ "অবশ্যই, কেন নয়? তুমি বাবা হতে চলেছো রুদ্র, আর তোমার আদরের স্ত্রী রুদ্রশী মা হতে চলেছে ।"
.. সেদিন আমি আর রুদ্রশী যে কী পরিমান খুশি হয়েছিলাম সেটা বুঝানোর শব্দ আমার কাছে নেই । সেদিন স্বাক্ষীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাসায় ফিরলাম ।
.. চলো রুদ্রশী কালকেই পার্টি হোক, আমার বাবা-মাকে এবং তোমার বাবা-মা'কেও আসতে বলছি ।"
..
যেই বলা সেই কাজ । সবাই একসাথে মিলে অনেক মজা করলাম সেদিন । রুদ্রশীর দিকে তাঁকিয়ে বুঝতে পারছিলাম যে, ও আজকের আগে কোনোদিনো এত খুশি হয়নি । ওর খুশি, আনন্দ দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছিলো । ওর অনেকদিনের ইচ্ছেটা পূরণ হতে চলেছে ভেবে আমার অনেক খুশি লাগছে । আসলেই সন্তানাদি ছাড়া দম্পতিদের মানায় না । কোলে একটা সন্তান যে একজন মানুষকে কী পরিমাণ আনন্দ দিতে পারে তা বলার বাহিরে আর আমি তা বুজতে পেরেছি ।
..
অফিসে কাজ করছি । আমাদের অফিসে আবার মোবাইল চালানো নিষেধ । কিন্তু আমি বসের কাছ থেকে এই বছরটায় ফোন চালানোর অনুমতি নিয়েছি এই বলে যে, আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, তাই বাড়ি থেকে যেকোনো সময় ইমার্জেন্সী ফোন আসতে পারে ।
হঠাৎ রুদ্রশীর নাম্বার থেকে কল আসলো । সাথে সাথেই কল রিসিভ করলাম-
_ "হ্যালো রুদ্র সাহেব আমি আপনার প্রতিবেশী মাসী বলছি, আপনার স্ত্রী সিড়ি থেকে পড়ে গিয়েছেন এবং উনার এখনি ডেলিভারি করতে হবে, প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে । আপনি অফিস থেকে দ্রুতই আসুন । বাসায় কেউ না থাকার কারণে আমি একা সামলাতে পারবো না ।"
.. আমি উনার কথা শুনার সাথে সাথেই বেড়িয়ে পড়লাম বাসার উদ্দেশ্যে, পাশাপাশি আমার মা-বাবা ও আমার শশুর-শাশুড়িকে ফোন দিয়ে বললাম- "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনারা যেন যথাসময়ে ওসমানী মেডিকেলে পৌঁছে যান এবং ডেলিভারি কক্ষে যেন আসেন ।"
..
আমি তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে মাথায় খুব বড় একটা আঘাত পাই কিন্তু আমি সেটার দিকে খেয়াল না করে বাসার পথে দৌড় দিলাম ।
বাসায় এসে দেখি ফ্লোরে রুদ্রশী পড়ে আছে আর গড়াগড়ি করে চিৎকার করছে । ওর কষ্ট দেখে আমার আর সহ্য হয়নি । সাথে সাথে কোলে তুলে নিয়ে বাসার গেইটে আসলাম কিন্তু একটা গাড়িও পাচ্ছি না । আমি প্রতিবেশী মাসী কে সাথে নিয়ে উনার স্বামীর ভ্যানগাড়ি নিয়ে গেলাম । জীবনে কখনো ভ্যানগাড়ি চালাইনি তাই অভিজ্ঞতাও ছিলো না, তবুও কীভাবে জানি আমি সঠিকসময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারলাম ।
..
ডাক্তার সাহেবা- "আপনারা এখানেই থাকুন ভিতরে আমরা ডেলিভারির ব্যবস্থা করবো আর হ্যা, আপনার নাম কী?"
আমি- "জ্বী? হ্যা, আমার নাম 'রুদ্র' ।
_ "ওহ হ্যা রুদ্র সাহেব এখানে একটা স্বাক্ষর দেন ।"
.. রুদ্রশীর চিন্তায় আমি আমার স্বাক্ষর দেওয়াটাই ভুলে গেলাম । কোনোরকমে কাঁপা কাঁপা হাতে স্বাক্ষরটা দিলাম তারপর ডাক্তার সাহেবা ডেলিভারি কক্ষে গেলেন ।
..
আমি এবং আমার প্রতিবেশী মাসী বসে আছেন আমার পাশের চেয়ারটাতে। আমি ঘেমে আছি, চিন্তায় আরো বেশি বেশি ঘামতেছি ।
কিছুক্ষণ পরেই আমার শশুর এবং শাশুড়ি আসলেন, এসেই বললেন-
_ "রুদ্র বাবা,
আমার মেয়ে কোথায়? কীভাবে পড়লো সিড়ি থেকে? ওর অবস্থা এখন কেমন?"
_ "মা,
ডাক্তাররা দেখছেন । হয়তো পা পিছলে পড়ে গেছে । আমি কত করে বলেছি যে, 'তুমি উপরের রুমে যেও না; উপরের রুমে যেও না ।' উপরের রুমে না যাওয়ার জন্য আমি আমাদের রুমটা নিচের একটা ছোট্ট রুমটাকে নিজের রুম হিসেবে ভেবে থাকতাম ।"
.. আমার শশুর দাঁড়িয়ে আছেন থোতায় হাত দিয়ে আর আমার শাশুড়ি ইতিমধ্যে হাসপাতালের একটা ছোট্ট মন্দিরে গিয়ে আশির্বাদ করতে লাগলেন । তার কিছুক্ষণ পরেই আমার মা-বাবা আসলেন আর এসেই মা গেলেন আমার শাশুড়িকে স্বান্তনা দিতে আর বাবা গেলেন আমার শশুরকে চিন্তামুক্ত করতে ।
আমি বসে রইলাম । ঠিক ৪০-৪৫ মিনিটস পর ডাক্তার সাহেব ডাকলেন মেয়ের বাবা-মা ও স্বামীকে । আমি দাঁড়ালাম ওর স্বামী হিসেবে, বললেন-
_ "সুসংবাদ রুদ্র সাহেব,
আপনি বাবা হয়েছেন । আপনার স্ত্রী একটা মেয়েসন্তান প্রসব করেছেন ।"
সাথে আমার বাবা-মাও ডুকলেন । আমি প্রথমে গিয়েই দেখলাম আমার রুদ্রশী ঠিক আছে কী না..
রুদ্রশী ওর ডান পাশে বাচ্চাটিকে শুইয়ে রেখে ও তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে । ওকে সুস্থ্য আর ওর মুখে ওর সেদিনের হাসি দেখে আমার চোখে জল চলে আসছে । জীবনে কোনোদিনো এই অভিজ্ঞতা আমার হয়নি কিন্তু আজ কীভাবে জানি খুশিতেই আমার চোখে জল চলে আসলো । সবাই অনেক খুশি হয়েছেন ।
..
কদিন পর রুদ্রশীর সিট কেটে দেওয়া হলো । ডাক্তার সাহেবা বললেন- "এবার আপনারা উনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন । উনি সুস্থ্য আছেন । আর হ্যা, উনার ডেলিভারি হয়েছে সিজারে তাই ভাড়ি উত্তোলন কাজ উনাকে দিয়ে করাবেন না । ডাক্তার সাহেবার মুখে হাসি রেখে উনি চলে গেলেন অন্য কেবিনে । আমরাও চলে আসলাম । আমার শাশুড়ির কাছে আমার বাচ্চা আর আমার মা রুদ্রশীকে ধরে নিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে লাগলেন আর আমার বাবা আর আমার শশুর খুশিতে কী যেন বলাবলি করছেন । আর আমি সবকিছু নিয়ে যাচ্ছি বাসায় ।
..
আজ আমার মেয়ের নাম রাখার দিন । বিয়ের আগে থেকেই রুদ্রশী নাম বাছাই করে রেখেছে, মেয়ে হলে নাম রাখবে "রুশা" আর ছেলে হলে নাম রাখবে "শৈশব" । আমাদের মেয়ে হয়েছে তাই ও নিজেই নাম রেখেছে "রুশা" । রুদ্রশী সবসময়েই বলতো আমাদের মেয়ে হলে অনেক শান্তিপ্রিয় হবে । তাই ভেবেই ওর এই নাম রাখা ।
..
আজ আমাদের মেয়ের ৪র্থ তম জন্মদিবস । আমি কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে ফিরলাম । কেনাকাটা যা আছে সব মা মেয়ে মিলেই করলো । রুদ্রশী একবারো ওর হাত ছাড়া হতে দেয়না রুশা কে ।
বাসা মানুষভর্তি । সবাই অনেক আনন্দ, ফুর্তি করছে । আমি তাঁকিয়ে দেখছি মা-মেয়ের আনন্দ । আজ আমার মেয়েকে রাজকন্যার মতো লাগছে । ও হয়েছে ঠিক ওর মায়ের মতোন । বার বার হাত দিয়ে নাক ঝাড়ে, রুদ্রশীও এমন করে ।
কেক কাটা হলো, রুশা আমাকে আর রুদ্রশীকে খাওয়ালো, আর আমি আর রুদ্রশী দুজনে আমাদের মেয়েকে খাওয়ালাম ।
..
আজ আমাদের মেয়ের বয়স ৬ বছর পূর্ণ হলো । এরমধ্যেই সব পারে ও । অ আ, ক খ, ১ ২, A B C D, বিভিন্ন লেখক-লেখিকার কবিতাও পারে । রুদ্রশী নিয়ে গেলো স্কুলে আর ভর্তি করিয়ে নিয়ে আসলো ।
..
আমাদের ৪ জনের সুখের সংসার খুবই সুখে কাটছিলো । একদিন আমাদের জীবনে ঝড় নেমে আসলো । হঠাৎ আমার কাছে ফোন আসলো- "বাবু, আমাদের রুশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । বাসায় ছিলো, আমি ঘুম পাড়িয়ে স্নান করছিলাম । স্নান করে এসে দেখি ও ওর রুমে নেই । তুমি জলদি বাসায় আসো ।"
.. রুদ্রশী সেদিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো । আমি নিজেকে কোনোরকমে ঠিক রেখে গেলাম বাসায় গেলাম । পুরো কাহিনী শুনে আমি পুলিশে একটা জিডি করলাম ।
.. আজ প্রায় ৩ দিন হয়ে গেলো কিন্তু এখনো আমরা বা পুলিশ আমাদের রুশার খবর পাইনি । এদিকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে রুদ্রশী । এই তিনদিন থেকে একটা দানাপানিও পড়েনি ওর মুখে । শুকিয়ে গেছে ও । এর আগে এমন হতে দেখিনি ওকে । ওদিকে আমাদের মেয়ে কি খাচ্ছে, কি পড়ছে সেটাও জানিনা । কে অপহরণ করতে পারে আমাদের মেয়েকে? এই প্রশ্ন শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিলো । আমার তো কোনো শত্রু নেই । তাহলে কে অপহরণ করতে পারে? অপহরণের ভয়ে আমি আজ পর্যন্ত বাসায় কাজের বুয়া রাখিনি ।
..
হঠাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো-
_ "হ্যালো?" (অপহরণকারী)
_ "হ্যালো কে বলছেন?" (আমি)
_ "আপনার মেয়ে আমার কাছে আছে । আপনার স্ত্রীর সাথে একটু কথা বলতে পারি?"
.. আমার কেমন জানি সন্দেহ হলো, অচেনা অজানা ছেলে আমার স্ত্রীর সাথে কেন কথা বলবে? এই প্রশ্নটা নিজের মধ্যেই রাখলাম । ফোন দিলাম রুদ্রশীর কাছে-
.. ওরা কি কি কথা বললো আমি কিছুই জানিনা । কিছুক্ষণ পর আমি লক্ষ্য করলাম রুদ্রশীর হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেলো । আর কেমন করে জানি এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে নিচের দিকে ।
আমি কি হয়েছে জানতে চাইলে ও কিছু বলতে পারলো না । ফোনটা পড়ে থাকা অবস্থায় আমি ফোনটা তুলে কানে লাগালাম- "আমাকে ভালো থাকতে দাওনি, তাই তোমাকেও ভালো থাকতে দিলাম না ।" তারপরেই ফোন কেটে দিলো । আমি কল রেকর্ড শুনলাম, আর যা শুনলাম-
_ "রুদ্রশী আমি মাহবুব বলছি, মনে পড়ে? আমি সেই মাহবুব । যাকে তুমি অবহেলা করতে আর ভালোবাসতে রুদ্রকে । তোমাদের একসাথে দেখে, একসাথে হাত ধরে হাঁটতে দেখে আমার হিংসে হতো । আমি রুদ্রকে পছন্দ করতাম না কিন্তু তুমি ওকে তোমার চেয়েও বেশি পছন্দ করতে । আমি এটা দেখে সহ্য করতে পারতাম না । একদিন তোমাদের বিয়ে হয়ে গেলো, আর আমি এটা একদম মেনে নিতে পারিনি । সবসময় সুযোগে থাকতাম কীভাবে তোমাদেরকে উচিত শিক্ষা দেওয়া যায় । কিন্তু আমি সুযোগ পাচ্ছিলাম না । অনেক ভেবেছি কিন্তু কোনোভাবেই আমি কিছু করতে পারছিলাম না । তারপর একদিন ভাবলাম যে, তোমার গর্ভের সন্তান আমি নষ্ট করবো আর সেজন্যেই তোমাদের সিড়িতে সেদিন তেল ঢেলে দিই যেটাতে পা দিয়ে তুমি পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলে । কিন্তু সেদিন সেই প্রতিবেশী মহিলার জন্য বেঁচে গিয়েছিলো তোমার বাচ্চা । তারপর যখন তোমার বাচ্চা হলো, আমি সবসময় লক্ষ্য করতাম যে তোমরা তোমাদের মেয়েকে তোমাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসো । তাই আমি ঠিক করলাম যে, এটাই মোক্ষম সুযোগ । যেই ভাবা সেই কাজ, তোমাদের বাচ্চাকে আমি অপহরণ করি এবং তারপর মেরে ফেলি । খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছি । আমার যত রাগ ছিলো ওর উপর ঝেড়েছি । এখন আমি শান্ত, এখন আমার মনে কোনো কষ্ট নেই । আমাকে তোমরা খুঁজেও পাবে না ।
-..
সেদিনের পর থেকে আমরা দুজনেই ভেঙ্গে পড়ি । আমি কোনোমতে নিজেকে সামলে নিতে পেরেছি কিন্তু রুদ্রশী সেদিনের পর থেকে 'হ্যাঁ, হুঁ' ছাড়া আর কোনো কথা বলেনি । আমি এখনো চেষ্টায় আছি আমার রুদ্রশীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ।
- - - - - - - - - - - - -সমাপ্ত- - - - - - - - - -
..
পরিশেষে আমার আরো কিছু কথাঃ-
আমার এই লেখাটি পুরোই কাল্পনিক, এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই । আমি আমার ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই গল্পটি লিখেছি ।
আপনারা আপনার জীবনসঙ্গিনীকে কোনোদিনো ঠকাবেন না । কে জানে যদি আপনিও এমন কিছু শিকার হন । ভালোবাসলে তাকেই বাসুন যাকে বিয়ে করতে পারবেন । এই ছোট্ট জীবনে কী দরকার নিজেদের পিছনে শত্রু রাখার?
.-. .-.
আমার খুব ইচ্ছে আমার কোনো লেখা দিয়ে একটা শর্টফিল্ম বানানোর । তাই কোনো সহৃদয়বান থাকলে আমার লিখা দিয়ে একটা শর্টফিল্ম বানাবেন? আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে আমি ততটুকু অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করবো ।
..
রাজু দাশ রুদ্র
৩১/০৮/২০১৭ (শুক্রবার)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:০১