মেয়েটি অসহায়ের মতোন তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে বললো- "বাবু, আমি প্রেগন্যান্ট.. কাল যখন কলেজে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় আমি মাথা ঘুরে পরে যাই তখন ক্লাসের ম্যাম ও আমার বান্ধবীরা ধরাধরি করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়; সাথে মাকেও খবর দেওয়া হয় । আমার অসুস্থতার খবর পেয়ে মা খুব দ্রুতই আসলেন হাসপাতালে ।"
ডাক্তার সাহেবা মা'কে বললেন- "মেয়েটি আপনার কে হয়?" । মা বললেন- "আমার মেয়ে । ডাক্তার সাহেবা এই প্রশ্ন কেন করছেন?".. ডাক্তার সাহেব বললেন, "আপনার মেয়ে গর্ভবতী । ওর পেটে ৭ মাসের বাচ্চা । "
জানো বাবু, মা ডাক্তার সাহেবার মুখে আমার গর্ভবতী হওয়ার খবর শুনে কোনোমতে নিজেকে সামলে রেখেছেন । মা কখনো ভাবতে পারেনি যে তাঁর মেয়ে এমন কাজ করবে ।"
জানো বাবু, আমি কখনো ভাবিনি এমন কাজ আমিও করবো, কিন্তু তোমাকে অন্ধভাবে ভালোবাসি বলেই আমি তোমার সব কথা রেখেছি ।
-
ছেলেটি বললো- "কী বলছো । তুমি প্রেগন্যান্ট??"
মেয়েটি- "হ্যাঁ বাবু । বাবু জানো মা'এর সামনে আমি দাঁড়াতে পারছি না আমার এই মুখ নিয়ে ।"
ছেলেটি বললো- "আমার কথা শুনো, তোমার পেটে বাচ্চা আসলো কীভাবে?"..
_ "আমাদের ভালোবাসার টানে খুব কাছে আসার ফল এটা বাবু । বাবু, এখন তো আমার পরিবার জেনে গিয়েছে ব্যাপারটা । সমাজ জানুক চলো তার আগে আমরা বিয়ে করে নিই । তাহলে কেউ কিচ্ছুটি ঠের পাবেনা ।"..
_ "কী বলছো এসব? আমি কোনোমতেই চাকরীর আগে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না । আর হ্যা, কি যেন বললে, 'তোমার পেটে সন্তান?' ওটা কার সন্তান আমি জানিনা । আমি অন্যকারো ছেলের বাবা হতে পারবো না ।"
-
মেয়েটি কিছু বলবে তার আগেই ছেলেটি ফোন কেটে দেয় । পরমুহুর্তে অনেকবার ছেলেটির ফোনে ডুকার চেষ্টা করে মেয়েটি কিন্তু কিছুই কল যাচ্ছিলো না নাম্বারটি ব্ল্যাকলিস্টে থাকায় ।
আপনি কী এখন ভাবছেন যে, 'আসলেই তাদের মধ্যে কী হয়েছিলো?" 'ছেলেটিই-বা কেন এমন করলো?'; অবশ্যই আপনার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে । কি ঠিকতো? তাহলে জানা যাক,
-
প্রায় ১ বছর আগেকার কথা । হঠাৎ একদিন মেয়েটার কলেজেই ছেলেটির সাথে দেখা হয় । ছেলেটাকে ভালো লেগে যায় মেয়েটির কিন্তু কোনোভাবেই বলতে পারছিলো না । ছেলেটির কথাবার্তা ও আচার-আচরণ মেয়েটিকে আরো পাগল করে তুলছিলো । মেয়েটি একদিন সাহস করেই ছেলেটাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় । ছেলেটিও রাজি হয়ে যায় । তারপর থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে । ধীরে ধীরে তারা অনেক গভীরেই চলে যায় । ৩ মাসের মাথায় তাদের মধ্যে কিছু কথাবার্তা হয়-
_ "বাবু?" (ছেলে)
_ "হ্যাঁ বাবু, আই লাভ ইউ.." (মেয়ে)
_ "আই লাভ ইউ টু সোনাপাখি । কী করছিলে সোনামণি?"
_ "এইতো কিছুনা । শুধু তোমাকেই ভাবছিলাম ।"
_ "ওহ তাই বুঝি?"
_ "হ্যাঁ সোনা.."
_ "বাবু, একটা কথা বলবো? রাগ করবে না তো?"
_ "বাবু, কথাটি তো আমাকেই বলবা তাইনা? তাহলে আমার থেকে অনুমতি নিচ্ছো কেন পাগল? আচ্ছা, বলো রাগ করবো না আমি । "
_ "বাবু, তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো?"
_ "বাবু, কতটুকু ভালোবাসি তা মুখে বলে প্রকাশ করা সম্ভব না । তবে এতটুকু বলতে পারবো যে, বাবা-মা'র পরে যদি কাউকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি, সে হলে একমাত্র তুমি ।"
_ "আমার জন্য তুমি কী কী করতে পারবে?"
_ "কি কি করতে পারবো তা বলতে পারবো না । তবে এটা বলতে পারবো যে, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে যত বাঁধা বিপত্তি আসবে সব পেড়িয়ে আমি তোমার কাছেই থাকবো । প্রয়োজনে তোমাকে নিয়ে সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে পারবো ।"
_ "আচ্ছা সবই বুঝলাম, তুমি আগে কথা দাও আমার কথাটি রাখবে?"
_ "কথা দিলাম বাবু । বাবু, তোমার সব কথাই তো রাখি, তাহলে এখন এমন করে বলছো কেন?" (মেয়েটি তখনো জানেনা কীসের জন্য সে তার বয়ফ্রেন্ডকে কথা দিচ্ছে ।)
_ "কথা দাও, কথা দাও আমার কথা রাখবে । না করবে না ।"
_ "আচ্ছা বাবা আচ্ছা কথা দিলাম তুমি যে কথাটি বলবে সেই কথাটাই রাখবো । এবার তো বলোরে কথাটি কী?
_ "কথাটি হলো গিয়ে, আমি তোমাকে খুব কাছে থেকে ভালোবাসতে চাই ।"
_ "খুব কাছে থেকে বলতে?"
_ "নেকা, বুঝোনা নাকি?"
_ "ঝেড়ে কাশো, আমি আসলেই বুঝিনি কথাটি ।"
_ "আমি তোমার সাথে একটা রাত কাটাতে চাই । সোনামণি, তুমি কিন্তু কথা দিয়েছো ।"
_ "কিন্তু.."
_ "কীসের কিন্তু বাবু? আমরা তো দুজন-দুজনকে অনেক ভালোবাসি তাইনা? তাহলে কাছে আসতে এত দ্বিধা কেন?"
_ "বাবু আমি তো তোমার সব কথাই রাখি কিন্তু আজ যে এমন কিছু চাইবে তা আমি ভাবিনি । আমি কি করবো কিচ্ছু বুঝতেছিনা । আচ্ছা সোনা, চলোনা আমরা বিয়ে করে নিই? বিয়ের পর দৈহিক মিলন বৈধ, আর আমরা যদি এভাবে বিয়ের আগে একইসঙ্গে একইঘরে রাত কাটাই তাহলে সেটা অবৈধ হবে এবং আমাদের পবিত্র ভালোবাসাতে কালি লেগে যাবে । প্লিজ বাবু আমার একটু বুঝার চেষ্টা করো ।"
_ "এই তুমি আমাকে ভালোবাসো? বুঝে গেছি তুমি আমাকে কেমন আর কতটুকু ভালোবাসো ।"
_ "এ্যাই শুনো, ভালোবাসার তুলনা দিওনাতো; আমি জানি, আমি তোমায় কতটা আর কি পরিমাণে ভালোবাসি । আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে পারি, পারবো; তোমার সব কথাই তো রাখি । কিন্তু এই ব্যাপারটা একটু অন্যরকম না বাবু? একটু ভেবে দেখো না ।"
_ "আমি ওতোসতো বুঝিনা । আমি যা বলেছি সব ভেবেচিন্তেই বলেছি ।"
_ "কিন্তু.. "
_ "আবার সেই কিন্তু!! রাখো তোমার কাছে তোমার কিন্তু ।"
_ "তুমি এমন করছো কেন? আমাকে একটু বুঝার চেষ্টা করো । এখন আমরা ভালোবাসার টানে কাছে আসলাম ও চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনের খুব কাছাকাছি গেলাম । কিন্তু পরবর্তীতে যদি তুমি আমাকে অস্বীকার করো তখন আমার কী হবে? ভাবো, একটু ভাবো সোনা আমার ।"
_ "কিছুই হবে না । কিচ্ছুটি হবেনা তোমার । আমি তোমার পাশে চিরদিন আছি আর থাকবো । তোমার সুখ-দুঃখে সবসময় তোমার পাশে ছায়া হয়ে থাকবো । কোনো কষ্ট বুঝতে দিবো না তোমায় ।"
_ "বাবু তোমাকে এত্তগুলো ভালোবাসি রে । বাবু, তুমি ভেবোনা যে তোমাকে আমি অবিশ্বাস করছি । তুমি জানোতো একটা মেয়ের কাছে তার ইজ্জতটাই মূল । আর সেই ইজ্জতটা যদি আমি তোমাকে দিয়ে দেই আমাদের বিয়ের আগে তাহলে কী সেটার পর্যাপ্ত মূল্য থাকে বা থাকবে বলো?"
_ "তুমি কী আমাকে শিখাচ্ছো কোন জিনিসের মূল্য আছে আর কোন জিনিসটা মূল্যহীন?"
_ "বাবু, এত কঠিন মেজাজে কথা বলছো কেন? জানোনা তুমি, তোমার থেকে বকা খেলে আমার কান্না চলে আসে? আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার কথাই রাখবো ।"
_ "থ্যাংক ইউ বাবু ।"
_ "আচ্ছা ।"
-
আজ প্রায় ৭ মাস হলো তাদের রিলেশনের । মেয়েটি ছেলেটিকে বললো, "আমি প্রেগন্যান্ট" আর এই ব্যাপারটি আমার মা'ও জেনে গিয়েছেন কিন্তু বাবা'কে এখনো জানাইনি । মা তো আমার সাথে কথাটুকু পর্যন্ত বলছেন না । চলোনা বাবু আমরা দুজনে বিয়ে করে ফেলি । আমি মা-বাবা দুজনকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ম্যানেজ করে নিবো । ছেলেটির উত্তর শোনার জন্য মেয়েটি একদম প্রস্তুত ছিলো না । কী ছিলো সেই উত্তরটি? আসুন জানি-
_ "শুনো সোনা, তুমি এবোরশন করিয়ে নাও চুপিসারে ।"
_ "তুমি এসব কী বলছো? এবোরশন করাবো কেন? ও তো আমাদেরই ফসল, আমাদেরই ভবিষ্যৎ । তাহলে তুমি কেন এবোরশন এর কথা মুখে নিচ্ছো? তুমি আসলে কী বলতে চাচ্ছো?
_ "আমি বলতে চাচ্ছি যে আমি চাকরী পাওয়ার আগে তোমায় বিয়ে করতে পারবো না, আর এই অবৈধ সন্তানের দায়ভার আমি নিতে পারবো না । যার সন্তান তাকে দিয়ে আসো ।"
ছেলেটির মতে- "এটা তার (ছেলেটির) সন্তান নয় । অন্যকারো সন্তান । আর অন্যকারো সন্তানের বাবা সে (ছেলেটি) কেন হতে যাবে?'.. মেয়েটি ছেলেটির মুখে এই কথাটি শুনে হতবাক । মেয়েটি বললো-
_ "থাক!! যা বলেছো বলেছো, আর কথা বাড়িও না । তোমাকে অনেক ভালোবাসতাম বলে ঠকেছি । তোমাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে আজ আমি কলঙ্কীত ।
অপাশ থেকে ছেলেটি ফোন কেটে দিলো । মেয়েটি একেরপর এক টেক্সট ম্যাসেজ পাঠাতে লাগলো-
".. যখন তুমি বলতে, তোমার পাশে আমি সবসময় থাকবো; তখন তোমার কথা শুনে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছিলাম, মা-বাবার পরে কেউতো আছে যে আমাকে তার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে ।
.. যখন তুমি বলতে যে, তোমাকে ছাড়া আমি আর দ্বিতীয় কাউকেই বিয়ে করবো না । তখন ভাবতাম যে, কোনো একসময় হয়তো নিজের অজান্তেই কারো উপকার করেছিলাম, সেজন্যেই তোমার মতো একটা সৎ স্বামী পাবো ।
.. আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই, তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি বলেই, তোমার বুকে মাথা গুজে থাকতে পারবো এটা ভেবেই তোমার সব কথা রাখতাম ও আবদারও পূরণ করেছি । কিন্তু শেষমেশ তুমি এই ফল দিলে?
.. আজ আমার পেটে তোমার বাচ্চা বড় হচ্ছে, কিন্তু আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবো । হয়তো কেউই বুঝতে পারবে না আমার মনের কষ্টটা । কেউই ঠের পাবে না আমার সাথে কী কী হয়েছিলো ।
.. তোমার মতে আমাদে.. নাহ, আমার সন্তান অন্যকারো । আমি ওকে বড় করে তুলবো । পিতৃহীন পরিচয়েই আমি আমার সন্তানকে বড় করে তুলবো । সমাজে উঁচু মাথা নিয়ে যেন বাঁচতে পারে আমি সেই সুযোগই করে দিবো আমার সন্তানকে ।
.. তুমি ঠকিয়েছো । কিন্তু তোমাকে প্রতারক বলবো না । আর না বলবো প্রতিশ্রুতিভঙ্গকারী, আর না বলো বেঈমান । কিন্তু এটাই বলবো যে, আমার ভাগ্যে যা ছিলো তা ছিলো আমার দুর্ভাগ্য । কিন্তু তুমি হারালে, হ্যা তুমি আমার মতো একজন মেয়েকে হারালে, যে মেয়ে তোমাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতো, অন্ধভাবে বিশ্বাস করতো । যাকে যেভাবে ঠকিয়েছো, তার শিকার তুমি একদিন না একদিন হবেই ।"
-
কোনো উত্তর পায়নি মেয়েটি । সেদিনের পর থেকে সে নতুন করে বাঁচতে শিখে । তার মা-বাবা'কে সব সত্যি খুলে বলাতে তাঁরা সবাই মেনে নিয়েছেন । মেয়েটি ভুল করেছে এবং ভুল করে সেটা বুঝতে পেরেছে বলে তাঁর মা-বাবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ।
-
আজ মেয়েটি এক ভদ্র স্বামীর স্ত্রী । যে স্বামী এসব কাহিনী শুনেই মেয়েটিকে বিয়ে করেছে । খুব সুখে-শান্তিতেই কাটছে তাদের সংসার ।
....
কিছু কথাঃ-.. মেয়েরা মন দিয়ে পড়বেন ।
আমার এই পুরো লেখনীটা কাল্পনিক, এর সাথে বাস্তবের কোনোপ্রকার মিল নেই ।
ভালোবাসা হবে দুজনের মন দিয়ে, এখানে ভালোবাসার নামে নোংরামির করার কী দরকার? মন দিয়ে যদি কাউকে ভালো না বাসতে পারো অথবা যদি বুঝতে পারো তোমার প্রেমিক তোমাকে ঠকাচ্ছে তাহলে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে সরে আসো, এতে তোমার ইজ্জত তুমি বাঁচাতে পারবে । নিজেদের নিরাপত্তা নিজেই নাও । সতর্ক হও..
ধন্যবাদ..
-
রাজু দাশ রুদ্র
03 August, 2018
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪০