আমাদের কোথাও কি শেখানো হয় বিয়ে করার জন্য কী কী ভাবা উচিত? না না, এটাতো কোথাও শেখানোর কথা নয়। এ তো পরম্পরা আমরা শিখেই আসছি!
তো কী শিখে আসছি ? কেনো মেয়ের জন্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর ছেলের জন্য ধনী বাবার লম্বা, ফর্সা, দোহারা রূপসী কন্যা! এই তো বিয়ের ফর্মূলা!
দুপক্ষই কিন্তু এখানে বাণিজ্য চিন্তা করছে! দিতে পারুক বা না পারুক। ধনী বা দরিদ্র প্রতিটি পরিবারই চায় মেয়ের জন্য ডাক্তার পাত্র, ইঞ্জিনিয়ার পাত্র। কিন্তু এতো ডাক্তার তো আর প্রতিবছর পাশ করে না! তাছাড়া যে সব ছেলেরা ডাক্তার নয়, তাদেরও তো বিয়ে করতে হবে! নাকি!!
যখন দেশটা অত্যন্ত গরীব ছিলো, তখনো যেই চিন্তা – এখনো সেই চিন্তা। কেমন বর চাই , এ নিয়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রা একটা দারুণ সার্ভে করতো প্রতি বছর। সেখানে আমাদের লোভী মানসিকতা কতো ভয়াবহ তা প্রকাশ পেতো। বরাবরি মেয়েদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকতো প্রকৌশলী পাত্র কিন্তু চাকুরি হতে হবে সরকারি! আমার আয় হতে হবে প্রচুর! (মানেটা খুব পরিষ্কার, ঘুষের টাকায় সুখের স্বপ্ন!)।
কিন্তু এবার দেখি তো সংসার আসলে কী? সংসারের সাথে ‘পজিশন’ এর সম্পর্কটা কতো? কিংবা অঢেল টাকার সম্পর্কটাই বা কতো?
বিয়ের করার সময় আমাদের হিসাব নিকাশ থাকে শুধুই বাণিজ্যিক। কিন্তু আমাদের দেখা উচিত কী? অবস্থাটা এমন যে একটা বুয়েটের বা ঢাকা মেদিকেলের ছেলের সাথে প্রেম করতে পারলেই জীবন স্বার্থক মনে করে অনেকে মেয়ে। আর বাবা মায়েরা ঘুষ আছে প্রচুর এমন ছেলের কাছে মেয়ে দিতে পারলেই স্বর্গসুখ অনুভব করে।
সংসারটা কিন্ত্য স্বর্গসুখের জায়গা। সেটা সত্যি। কিন্তু আমাদের ভাবনাটা কিন্তু নরকের রাস্তা।
এখন কেউ একটা ভালো ছেলে চায় না, একটা ভালো মেয়েও চায় না। চায়, ‘পজিশন’ – বিয়েটা মানুষের সাথে হচ্ছে নাকি পজিশনের সাথে হচ্ছে নাকি মেয়ের বাবার টাকার সাথে হচ্ছে?
ঠিক আছে গল্পটা শেষ করে আনি।
তোমরা যারা বিয়ে করবা, একটা মানুষকে বিয়ে করবা। বয়সটা যখন ৪০ পার হয়ে যাবে তখন বুঝবা সংসার মানে ডাক্তার নয়, সংসার মানে ইঞ্জিনিয়ার নয় – সংসার মানে একটা ‘মানুষের’ সাথে বসবাস। মানুষ মানুষ হলে সংসার ভালো হবে, না হলে হবে না।
বয়সটা ৪০ পার হলেই বুঝবা এইসব পজিশন, ঘুষের টাকা সম্পূর্ণ অর্থহীন, জাস্ট বোগাস। সংসারটাই অর্থহীন, যদি সম্পর্ক মধুর না হয়। টাকার পিছনে যে ছোটা শুরু করে সে কিন্তু থা্মবে না, দৌড়াতেই থাকবে। টাকার পিছনে, মিথ্যা ভাবের রাজ্যে যত দৌড়াবে, মানুষকে নিজের চাকচিক্য দেখানোর অসুস্থতা বাড়তে থাকবে।
তবে কমবে কোনটা? কমবে সংসারের বন্ধন। তোমরা যারা বিয়ে করবে, তারা কথা বলো চল্লিশোর্ধ দম্পতিদের সাথে। তাদের জিজ্ঞেস করো, বিয়ের সময় ভাবনা কী হওয়া উচিত!
এই ঢাকা শহরে ৩ লক্ষের বেশি নারী আছে যাদেরকে তোমরা কলগার্ল, প্রোস যে নামেই ডাকো না কেন, তাদের কাছে যায় কারা, জানো? অফিস মিটিং এর নামে স্বামীধনটি আসলে কী করে? আর স্বামীর সাথে পাল্লা দিয়ে স্ত্রীও কিন্তু বসে নেই!
অবৈধ টাকা হলে, পজিশন হলে অনেক প্রলোভন আসে। প্রলোভনের সামনে টিকে থাকতে পারে এমন মানুষটিই হতে হবে তোমার হাবি!
সংসার এক দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা। এবং জীবনের শেষ ধাপে আমরা যাত্রা শুরু করি। এই যাত্রায় যার যার সঙ্গি তার তার সাথেই থাকতে হবে, ভালোভাবে থাকতে হবে, পুরোপুরি থাকতে হবে (৯৯% হলেও চলবে না)। যদি না থাকে, তবে যে বিশাল আশা আর আনন্দ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিলো – তা হয়ে যাবে এক নরকযাত্রা।
কিন্তু এই নরকযাত্রাটা কিন্তু আমাদেরই তৈরি। সমাজের কিছু ‘ফাঁদ’ এ পড়ে এই অবস্থা হয়। বিয়ের সময় বাণিজ্যিক চিন্তাটা মূলত এর প্রধান কারণ। আর ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি আমাদের এই নষ্ট চিন্তায় বেশি বেশি ধাবিত করছে।
তবে স্মার্ট ছেলেমেয়ে আগেও ছিলো, এখনো আছে – তারা জানে কাকে তার বিয়ে করা উচিত এবং তারা তাই করে। এরাই সুখী দম্পতির সামনে আছে।
বিয়ের সময় লোভ আর বাণিজ্যিক চিন্তার যে অপসংস্কৃতি আমাদের গড়ে উঠেছে, তার ফাঁদে যারা পড়বে, তার মরবে। যারা মরেছে, তারা নীরবে তা সয়ে যায়, শেয়ার করে কম।
জীবনে যাকে বিয়ে করতে মন সায় দিবে, তাকেই বিয়ে করবা আর জীবনে যা হতে মন চায়, তাই হতে হবে। ক্যারিয়ার আর সংসার – এই দুই ক্ষেত্রে অন্যের মতামতকে ‘জিরো টলার্যা ন্স’ – নো অ্যাকসেস- কোন পাত্তা দেয়া যাবে না।গুগলের সিইও বলেছেন - বিয়ে ক্যারিয়ারের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সবার সংসার জীবন সুখের হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯