প্রথম পর্ব-
Click This Link
...এখন ক্লাসে সবাই মনযোগ দিয়ে ম্যাডামের কথা শুনছে।লাবনী ম্যাডাম বায়োলজী বুঝাচ্ছেন কখনো হাত নেড়ে, কখনো মাথা দুলিয়ে আর কখনো চোখ ব্ড় বড় করে।একটা সবুজ নাকি হালকা টিয়া রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছেন আজকে উনি-সাথে সাদা ওড়না।সেই ওড়নার ঢেউ খেলানো ভাজ ঘেঁষে ঘেঁষে সায়েক এর চোখও সদ্য কৈশোর পার হওয়া কৌতূহলে বাঁক খাচ্ছে।সায়েক এর মনে হচ্ছে লাবনী ম্যাডাম লিপটন তাজা চায়ের মডেল যেন এখনই চা বাগানে ছুটোছুটি শুরু করবেন উনি। ম্যাডামের পড়ানোর সময় মাঝে মাঝেই সায়েক দু একটা ফাজলামো করে বসে, এটা ওটা কমেন্ট করে আর ক্লাস শুদ্ধ হেসে ওঠে।একবার সায়েক বলেই বসল -"ম্যাডাম চা খাবো "।মাডাম বললেন "মানে?" মানে বুঝলেন না? আপনি লিপটনের মডেল হয়েছেন আজকে তাই বললাম।"ম্যাডাম অবশ্য তাতে রেগে যান না বরং একটা অদ্ভুত রাগ প্রকাশক হাসি দেন।আসলে রাগ করতে গিয়েও তিনি আর ধরে রাখতে পারেন না।সায়েক এর এই দুষ্টুমি গুলো ম্যাডাম একটা কারনেই ক্ষমা সুন্দর দৃ্ষ্টিতে দেখেন আর তা হল সায়েক পড়াশুনাতে ভাল।প্রতিটা ক্লাস টেষ্টে সে সবার চাইতে বেশি নম্বর পায় ।
--------------------------------------------------------------------------------
অ্যানাটমি ক্লাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গ্যালারীর একদম উপরের সারির মাঝখানে বসেছে লাবনী।সিটটা যেন তার পারমানেন্ট হয়ে গেছে আবার যেতে হবে ক্লাস শেষে ডোম ঘরে।সেখানে ডোম মামা রেডি আছে।আজকে প্রথম সে ডিসেকশন করবে।এতদিন প্রফেসর করতেন আর ওরা দেখতো আজকেই লাবনী লাশগুলাকে কাটবে ফরমালিন মাখা হাতে।মেডিক্যালে গ্লাভস পড়তে দেয়া হয়না ; খালি হাতেই কাটতে হবে তো কি আর করা।লাশটা বেওয়ারিশ- মুখের দিকটা নেই তবে এটা একটা পুরুষ মানুষের লাশ।ওটার বুকের উপর হাতটা রাখতেই লাবনীর শরীরে একটা আচমকা ধাক্কা লাগলো--এই প্রথম কোন পুরুষ মানুষকে সে ছুঁয়েছে অথচ নিথর দেহটা তার অনুভূতি গুলোরমতই নিস্প্রাণ।কখনো লাবনী ছেলেদের সাথে সেভাবে মিশেনি ।খুলনাতে স্কুল কলেজ পাশ করেছে ডাবল স্টান্ড নিয়ে।বাবা মা কখনো ছেলে বন্ধু থাকাটা স্বাভাবিক ভাবে দেখেনি।হয়ত এজন্যই তার মনে একটা কামড় দিয়েছে ,তবে ক্লাস শুরুর আগে এসব ব্যাপারে অনেক লেকচার দেয়া হয়েছিল তার মনে আছে।বলা হয়েছিল মানুষকে একটা "দেহ" হিসেবে দেখতে ।কারন যখন লাশ কাটা ঘরে যাওয়া হয় তখন ছেলে মেয়ে সবার সামনেই লাশগুলোকে যারপরনাই অনাবৃ্তভাবেই রাখা হয়।এটা ভেবে ভেবে ঠিক ভাবেই পার করল সে প্রতিটি স্টেপ।
হাফ ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এসেই সে হলের পথে রওনা হল রিক্সা করে।কিছু দূর যেতেই চোখ পড়ল অপর পাশ থেকে আসা রিক্সাতে পরিচিত কেউ বসে আছে ।আর একটু সামনে আসতেই চোখে থাকা সানগ্লাসটা দেখে চিনতে বাকী রইল না এটা সায়েক। ম্যডামকে দেখে হাত নাড়ল আর রিক্সা থামিয়ে দিল।"আরে ম্যাডাম কি খবর ?আমি বঙ্গবাজারে যাই জিন্সের প্যন্ট কিনতে আপনি কই যান?" "এই তো বাসায় ফিরছি" -লাবনীর উত্তর।আপনি না বলেছেন এই দিকে আসলে আপনি আমাকে ঢাকা ভার্সিটি ঘুরিয়ে দেখাবেন--এখন দেখান"।অনেক চেষ্টা করেও নাছোড়বান্দা সায়েককে ছাড়ানো গেল না ।সেদিন শহীদ মিনার থেকে টিএস সি হয়ে দোয়েল চত্তরে পাক খেয়ে খেয়ে কখনো কার্জন হল আর কখনো দূরে বুয়েট প্রাঙ্গন চষে দুটা অসম বয়সের ছেলে মেয়ে শেষে নিরব হোটেলে ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময় পৃ্থিবীকে পদ্যময় করার ব্রতে নিয়োজিত হল।খাওয়া দাওয়া শেষে বিলটা দিয়ে ম্যাডাম বললেন "এই ট্রিপটা তোমার গত পরীক্ষার পুরস্কার মনে কর।এখন বাসায় যাও রাত হয়ে যাবে নাহলে।"
বাসায় ফিরে সায়েক পড়তে বসল ।পড়ার টেবিলে বসলেই রাজ্যোর যাবতীয় চিন্তা মাথায় এসে ভর করে তার।বলা বাহুল্য আজকের রিক্সা ভ্রমন তার চিন্তারাজ্যোর মূল উপজীব্য বিষয়।কোচিং এর একটা বুকলেট বের করল সে শেলফ থেকে।একটা দুটা পাতা উল্টাতেই লাবনী ম্যাডামের ছবি দেখতে পেল।তখন আগের চশমাটা পড়া ম্যাডাম।ছবিটাকে সে আস্তে করে সমান করে ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে ।এবার ছবিটা তার একটা ছবির পাশে রেখে দেখতে থাকে।পর মুহূর্তেই মা দেখে ফেললে কি ভাববে তা মনে করে ছবিটাকে তার ড্রয়ের এর গোপন চিপায় রেখে দেয়।এটাই সেই গোপন যায়গা যেখানে সে ক্লাস সেভেন এইটে থাকতে পাতলা চটিসদৃ্শ্য বইগুলো লুকিয়ে রাখত।এবার নিশ্চিন্তে পড়াশুনা শুরু করল কিন্তু তবুও কেন জানি আজকের দিনটাই মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকল আর সে অপেক্ষা করতে থাকলো পরবর্তী মঙ্গলবারের যেদিন ম্যাডামের ক্লাস পাওয়া যাবে।
হলে ফিরে লাবনীও পড়াশুনাতে মনোযোগ দিল।আধা ঘন্টা পড়ার পর মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছিল তার তাই চা বানিয়ে খেতে গেল ।হঠাৎই হিহি করে হেসে উঠল সে।কি হয়েছে লাবনী হাসছিস ক্যন?? বান্ধবী জিজ্ঞেস করল।লিপটনের কথাটা বান্ধবীকে শুনালো সে।এবার সে কাপড় বদলিয়ে সেদিনের ড্রেসটা পরে এল গিয়ে ।সত্যি সত্যি ওরকমই লাগছে তাকে ।হাতে চা এর কাপটা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবারও হেসে দিল সে।আজকের সারা দিন কি না করেছে সায়েক ।কথায় কথায় চুটকি কাটা আর বান্দরামি করে জ্বালাতন করে খেয়েছে তাকে ।এসব মনে করতে করতে জুড়ে দিল সায়েক এর পাগলামির গল্প বান্ধবীর সাথে ।বান্ধবী হেসে হেসে বলল,- "দেখিস বাচ্চাটার প্রেমে পড়ে যাস না যেন...হিহিহি।"একটা অজানা অনুভূতি কেন যেন নাড়া দিয়ে উঠল লাবনীর মনে।সে চুপ হয়ে গেল কোন কথা বলল না আর....
চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৪