ফের লিখতে বসলাম। ভাবছি কেমন হবে আমার ব্লগ। হ-য-ব-র-ল ব্লগ হবে মনে হচ্ছে। ভ্রমন কাহিনী থাকবে কখনো, অভিজ্ঞতা থাকবে কখনো, কোনকিছুর মূল্যায়ন থাকবে কখনো। যাই হোক, মূল কথায় আসি। আজ ভ্রমন ব্লগ থাকবে। আজ ২৫শে ডিসেম্বর, বড়দিন। বেড়াতে যাচ্ছি এখন জার্মানির একটি প্রসিদ্ধ শহর এসেন এ।
শিল্প বিপ্লব থেকে এসেন শহর বিখ্যাত মূলত কয়লা উত্তোলনে এবং লৌহ শিল্পে। রূহর গেবিট ও বলা হয় এই শহরকে। আজ অবশ্য এসেনে দাওয়াত আছে, শ্রদ্ধেয়া এক বড় আপুর বাসায়, ইনাস আপু। খুব মেধাবিনী এবং ভালো একজন মানুষ । প্ল্যান আপুর বাসায় খেয়ে বিকেলে আমার আর এক পছন্দের শহর ডুইসেলডর্ফ ঘুরিয়ে দেখাবো। অপরুপ সুন্দর, গুছানো শহর ডুইসেলডর্ফ । এই বিভাগের ( নর্ড রাইন ভেস্টফালেন ) রাজধানী। যদিও শহরটা কোলনের থেকে বেশী সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ, তবুও কোলনই ভালো লাগে মনে প্রানে।
গুরুত্বপূর্ণ বলেছি কারন এই বিভাগের পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ডুইসেলডর্ফ এ। রাজধানী করা নিয়ে কোলন এবং ডুইসেলডর্ফের মাঝে কন্টেষ্ট হয়েছিলো বলে আমার বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম।আর একটা ছোট্ট তথ্য পাঠকের জন্য, জার্মানিতে ১৬ টি স্টেট বা বিভাগ এবং এরা সবাই স্বাধীন। ডুইসেলডর্ফে এবার ৮টি মেলা বসেছে বড়দিন উপলক্ষে । মেলা গুলো নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত চলে, তবে মাঝে ২৫শে নভেম্বর এবং ২৫শে ডিসেম্বর বন্ধ থাকে সবগুলো দোকান। অনেক রকম হাতে বানানো সামগ্রী থাকে মেলাতে যা অনায়াসেই যে কারো মন কেড়ে নিতে পারে। আমি সবশেষ গত নভেম্বরে কোলনে গিয়েছিলাম সবগুলো মেলাতে। সবচেয়ে ভালো লেগেছিল তারার দোকানটা। অদ্ভুত সুন্দর হাতে বানানো তারা গুলো। ব্লগ লিখতে লিখতে কোলন থেকে ডুইসেলডর্ফ এ চলে আসলাম।
ঝটপট ট্রেন পরিবর্তন করে মুইনষ্টার গামী ট্রেনে চড়ে বসলাম। পথে এসেন নেমে যাবো। ছাত্র হওয়ার কারনে এ স্টেটের সকল যানবাহন ফ্রি আমাদের জন্য। অবশ্য ফ্রি না, আমরা সেমিষ্টার কন্ট্রিভিউসন হিসেবে আমরা প্রতি সেমিষ্টারে কিছু টাকা পরিশোধ করি, যার সিংহভাগ আমাদের সেমিষ্টার টিকেটে যায়, বাকি টাকা স্টুডেন্ট ইউনিয়নে আস্তা এবং স্টুডেন্টেনভেয়ার্কে যায়। খুবই নগন্য এই টাকার পরিমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়ানো হয়। মাঝেমধ্যে তো এতোসব সুবিধার জন্য রাজার হালতে আছি বলে মনে হয়। এতোসব কারনেই এতো বেশী ভালোবাসি জার্মানিকে। ডুইসেলডর্ফ বিমানবন্দর পার করছি আর ২৩ মিনিট লাগবে গন্তব্যে পৌঁছাতে। বিমানবন্দরের সবচেয়ে সুন্দর অংশ মনে হয় আমার রানওয়েকে, রানওয়ের লাইটিং। অদ্ভুত একটা সম্পর্ক আমার বিমানবন্দরের সাথে। সেই গল্প অন্যদিন করবো। এই মুহূর্তে আমার বিশ্ববিদ্যালয় পার করছি, হ্যাঁ, আমার বিশ্ববিদ্যালয় আমার বাসা থেকে প্রায় ৬২ কিঃমিঃ দূরে। কোলনের প্রতি ভালোবাসার কারনে কোলন ত্যাগ করিনি এখনো। এজন্য খুব কষ্ট করে সকাল ৫.৩০ এ বের হতে হয় ৮ টার ক্লাস ধরতে। এতোক্ষনে সত্যিই লেখাটা হ-য-ব-র-ল ব্লগ মনে হচ্ছে। ডুইসবুর্গ শহর পার করলাম মাত্র। এই শহরটা দেখলে ভারতের নোংরা কিছু শহর মনে হয়। পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশের নাগরিক, অভিবাসী, রিফিউজি এরা এই শহরের জনসংখ্যার সিংহভাগ প্রায় ৭২ ভাগ দখল করে আছে। রূহর গেবিটের আর একটি শহর এই ডুইসবুর্গ। বাকি অংশ থাকবে আমার পরবর্তী ব্লগে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:২৫