somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ তেলিয়াপাড়ায় গেরিলা আক্রমণ

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন একেকটা অসামান্য বীরত্বের অমরগাথা। হবিগঞ্জ মহকুমা সদর থেকে হবিগঞ্জের দক্ষিণপ্রান্তে মাধবপুর থানার পূর্বদিকে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত এলাকায় তেলিয়াপাড়ার অবস্থান। তেলিয়াপাড়ায় তখন ক্যাপ্টেন মতিনের কোম্পানি ডিফেন্সে ছিল। এদিকে কলকলিয়া সাব-সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট হেলাল মোর্শেদ খান তাঁর প্লাটুন নিয়ে মনতলা থেকে তেলিয়াপাড়া চলে যান। তাঁকে তাঁর প্লাটুনসহ ক্যাপ্টেন মতিনের কোম্পানির কোম্পানি কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে তেলিয়াপাড়াসহ মুক্তিবাহিনীর ছাউনি থেকে ১২জন মুক্তিযোদ্ধা বের হন অপারেশনে। সময়টা ১৯৭১ সালের ১৪ মে। রাত তখন গভীর। দুইটা বাজে। ভুতুড়ে আঁধারে আচ্ছন্ন সমগ্র এলাকা। নিঝুম নিস্তব্ধ চারিদিক। অন্ধকারে মিশে এগিয়ে যেতে থাকেন বাংলার ১৩জন দামাল সন্তান। সঙ্গে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন, গোলাবারুদ ও প্রচলিত অস্ত্র। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তেলিয়াপাড়া ছিল ৩নং সেক্টরভুক্ত এলাকা।

অল্পক্ষণের মধ্যে নামে ঝুম বৃষ্টি। অবিরাম বৃষ্টিতে সবাই ভিজে একাকার। তবুও থেমে নেই তাঁদের পথচলা। সব বাঁধা ডিঙিয়ে সবাই ছুটছেন অভীষ্ট লক্ষ্যে। হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় তাঁদের চোখে-মুখে। অতি সতর্কতার সাথে পৌঁছলেন তাঁরা। পাকিস্তানি বাহিনীর বিকল্প রাস্তায় তাঁরা স্থাপন করেন ২টি ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন। তারপর শুরু হল প্রতীক্ষার পালা।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটতে লাগলো শত্রু হননের অপেক্ষায়। একসময় রাতের অন্ধকার কেটে পুব আকাশে উদিত হয় ভোরের সূর্য। কিন্তু পাক বাহিনীর চিহ্নমাত্রও নেই। এইদিকে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে প্রায় অবসন্ন ক্লান্ত মুক্তিসেনারা। বিশ্রাম চাইছে তাঁদের দেহমন। তাই পরদিন ৮টার দিকে বিকল্প সড়ক ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে প্রবেশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিশ্রামের উদ্যোগ নিতেই খবর আসে বিকল্প সড়কপথ ধরে আসছে এক ব্যাটালিয়ন পাকিস্তানি সৈন্য। সামনে একটি জীপ। তারা আসছে সিলেটের দিক থেকে, যাবে ঢাকার দিকে। নির্ভাবনায় অগ্রসর হচ্ছে তারা।

বিকল্প রাস্তা ব্যবহার যে ভুল ছিল একটু পরেই তারা তা হাড়েহাড়ে টের পেলো। বিস্ফোরিত হল মাইন, ধ্বংস হল সামনের জীপটি। দ্বিতীয় গাড়িটিও দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগুতে গিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হল। এটাই চেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এরই অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা। উল্লাসের ঝড় বয়ে যায় তাঁদের মনে। জীবিত পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগুতে থাকে গ্রামের দিকে। ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে সমগ্র গ্রাম। লেফটেন্যান্ট মোর্শেদের নেতৃত্বে মুক্তিসেনাদের অস্ত্রও গর্জে উঠলো। তাঁরা পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকেন এবং একই সঙ্গে পিছু হটে সেনাদের নাগালের বাইরে চলে যান। এই যুদ্ধে পাক বাহিনীর অপরিসীম ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইনের এটাই ছিল প্রথম ঘটনা।

১৬ মে । ক্লান্ত মোর্শেদ কোম্পানির আক্রমণ, অভিযান আর এ্যামবুশ তখনও থেমে নেই। তেলিয়াপাড়ায় অবস্থানকালে লেফটেন্যান্ট মোর্শেদ তার কোম্পানি নিয়ে বেশ কয়েকটি এ্যামবুশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ মে তেলিয়াপাড়া রাস্তার ৮১ মাইল পোস্টের নিকট একটি এ্যামবুশ করেন তাঁরা। ঐ এ্যামবুশে দু’টি পাকিস্তানি ট্রাক ধ্বংস হয়; সাথে একটা ট্রাক দখলেও আসে। এছাড়া প্রায় ৫০জন সৈন্য হতাহত হয়। চোখে পানি এসে যাওয়া আর গর্বে বুক ভরে ওঠার মতো এমন হাজার হাজার ঘটনা নিয়ে গঠিত হয় আমাদের সংগ্রামমুখর উত্তাল একাত্তরের সেই রণাঙ্গনের দিনগুলি।


কলকলিয়া সাব-সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট হেলাল মোর্শেদ খান

সূত্রঃ
১. বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস – সেক্টর তিন
২. সিলেটের যুদ্ধকথা
৩. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র - দশম খণ্ড


রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ অপারেশন জাতিসংঘ গ্যারেজ
রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক অপারেশন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×