somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ টুকিটাকি

২৯ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকাল ৭টা; এহ্ মেরেছে মেরেছ, আজকের দিনে এমন বৃষ্টি! সামনে রাস্তায় কাজ চলছে। বরাবর বর্ষাকালেই যা হয়! এখন এই বৃষ্টি কাঁদা মাথায় নিয়ে বাস স্টপেজে পৌছুতেই ঘরমোছার ন্যাকড়া হয়ে যেতে হবে। আর সারাদিন ক্লাস কিভাবে করবো? আজ আবার প্রাকটিক্যাল ক্লাসও আছে। আচ্ছা, ছেলেটা ছাতা কিনেছে তো? নাকি আজকেও ক্লাসের খাতা মাথায় ধরে হল থেকে দৌড়ে যাবে?

বেলা ১টা; আজকের ঝালমুড়িটা জমেনি। এই মামুটা ঝাল, লবন , তেলের মেজারমেন্ট জানেনা। এর চানাচুরটাও মুচমুচে থাকে না। ক্ষিধে বেশী ছিল, কার্জন হলে মিলনের ক্যান্টিনের তেহারীর লাইন ধরার সময় নাই। তাই আজকে ম্যাড়ম্যড়ে ঝালমুড়িই তার নসীবে ছিল। ছেলেটাকে আজ হলে খেতে যেতে দেখা গেল না তো! সেও কি আজ ব্যাস্ত? সাইন্স এনেক্সের কোনো বন খাচ্ছে? কলা বন না ডিম বন, নাকি অন্য কিছু?

বিকাল সোয়া ৫টা; আজকের দিনটা তো দেখি দূর্ধর্ষ খারাপ! ঝুমুর জানালো চৈতালী ৫টারটা আজকে আসবে না । একটা বাস অকেজো হয়ে গ্যারেজে গেছে। পরের বাস ৫:৩০। ইশ্ ! বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসায় পৌছুতে আজ অন্ধ্কার হয়ে যাবে। রাস্তাটা -- । আজ কি ক্ষণিকা বাসও আসবে না? ছেলেটা তো নেই!
৫:৩০ এর চৈতালী দুই বাসের যাত্রীতে কলাভবন থেকেই ওভারলোডেড। দোয়েল চত্বর ঘুরে কার্জন হলের গেটে হাভাতের মতন দাড়িয়ে থাকা ছেলে মেয়েগুলির বুভুক্ষু চেহারার মুখে তীব্র হতাশার কাঁদা ছিঁটিয়ে উত্তাল বেগে ছুটে গেল। বাসের মামুরও বোধহয় খুব অপরাধী লাগছিল। দিন শেষের ক্লান্ত পরিস্রান্ত বাচ্চাগুলো পেছনে পেছনে ছুটে আসছিল। তার কিছুই করার ছিল না।
পরের আর বাস নেই। সবাই শাহবাগ , সেক্রেটারীয়েটের দিকে যাচ্ছে বিকল্প লোকাল বাস ধরতে। মেয়েটার বান্ধবীরা সবাই চলে গেছে। শুধু ঝুমুর হলে থাকে বলে ওর সাথে দাড়িয়ে ছিল, টিএসসিতে নেমে যেত।
- কি রে যাবি নীলক্ষেত? নাকি সিএনজি নিবি?
- নাহ্ সিএনজি এখন গেলে তো! পায়ে ধরতে হবে সিএনজিওয়ালার। একটা আসছে তো ১০ জন ঝাপিয়ে পড়ছে , দেখ্না। আমি এসব ধাক্কাধাক্কিতে বড়ই আনস্মার্ট।
- হ্যা তো করবি কি? সন্ধ্যা হয়ে আসছে না !

- এক্সিউজ মি, আপনি আমার সাথে সেক্রেটারীয়েট যেতে পারেন, যদি মনে করেন।
ঝুমুর আর ও পেছন ফিরে দেখে ছেলেটা বলছে,
- বাস বা টেম্পুতে ফার্মগেট পর্যন্ত যাই, এরপর যার যার রুটের বাস নেব।
মেয়েটি কথা না বাড়িয়ে হাত নেড়ে ঝুমুরের কাছে বিদায় নিয়ে ছেলেটির সাথে এগোয়। ঝুমুর কি বুঝলো কি বুঝলো না কাল ক্লাসে মেটানো যাবে। এই মুহুর্তে ছেলেটাকে সে চেনে এমন ভাব করে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে।
ঝুমুর আড়াল হতেই ছেলেটা মুখ খোলে,
- মীরপুর ২ এ অনেক বাস যায় । ভাববেন না, বাস পাওয়া যাবে।
- আপনি জানেন আমি কোথায় থাকি? আশ্চর্য ! আর আপনি তো হলে থাকেন, তাহলে বাসে কোথায় যান ?
- আমার টিউশনি আছে মহাখালী। ক্ষনিকাতে যেতাম। আপনার জন্য গেলাম না।
ফিরে তাকালো ছেলেটি। হাতে সামান্য ব্যবহার করা বাস কার্ড। মেয়েটার ।
- বাসে উঠতে গিয়ে পরে গেল সেদিন আপনার ব্যগ থেকে। খোঁজও নিলেন না। রেজিস্টার বিল্ডিং এ বলেও রেখেছিলাম। মীরপুরের বাড়িতে আপনার জানালার পাশের মরিচ গাছটায় ফুলও এসেছিল। আপনি কতদিন পানিও দেননি। গাছটা অনাদরে অযত্নে শুকিয়ে মরেই যাচ্ছে। আপনার সেদিকেই দৃষ্টি যায়নি, আর জানাল গলে বারান্দার বিপরীতের রাস্তায় কে দাড়ালো অতো দূরে কি করে দৃষ্টি পৌছুবে আপনার?
মেয়েটা থমকে দাড়িয়ে যায়। ছেলেটা বলেই চলে,
- মনে মনে ফিল্মি স্বপ্ন দেখা , ফেসবুকে ছেলেটাকে ভালবাসি ভালবাসি করে “মিসিং ইউ”, “ফিলিং লোনলি” কাব্য লেখাই যায়। গান শেয়ারও চলে। ভালবাসতে হলে ভালবাসার পথে নামতে হয় । নেমে দেখতে হয় কতটা কাঁদা , কতটা ধুলা সহ্য করে টিকে থাকে সেই টেস্টটিউবের ভালবাসা। লেখাগুলি সবাই দেখবে , কিন্তু আসল মানুষটা তো নাও দেখতে পারে! আমার পথে নামা, বাস কার্ড আগলে চলন্ত বাসের পেছনে ছোটা , সন্ধ্যার বিপদ বাঁচাতে টিউশনি মিস করে এগিয়ে দেয়া টুকিটাকিটা বেঁচে থাকবে আমার মানুষটার কাছে। আজ একসাথে বাড়ি অবধি এগিয়ে দিলাম, বাকীটা পথ হাটবে কিনা তুমি ফের আমাকে এসে বলে যাবে। মনে মনে না, ফেসবুকে না। সরাসরি চোখ রেখে । ঠিক তো?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগ কারা দেয় ?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা ডক্টর ইউনুসকে দেশের ক্ষমতা গ্রহন করার আহবান সেই শহীদ মিনার থেকেই জানিয়েছিল। ডক্টর ইউনুস প্রথমে অরাজি হলেও পরে ছাত্রদের হাজারো অনুরোধের মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমুখী একটি চাওয়া

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০


মানুষের মুখে হাসি ফুটুক,
আঁধার মুছে আলোর ছোঁয়া,
ক্লান্তিহীন পথ চলুক,
নতুন স্বপ্ন আনবে জোড়া।

দিনবদলের শপথ নিয়ে,
কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করে যাই,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
একটি স্রোতে মিলিয়ে যাই।

সবার তরে সমান বিচার,
ধনীর দুঃখীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার একমাত্র অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ

লিখেছেন জ্যাকেল , ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

২৩শে জুন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব জনাব সিরাজ উদ দৌলা ব্রিটিশদের কাছ হেরে যান কেবলমাত্র মীরজাফর, জগৎশেট, রাজভল্লভ, ঘষেটিদের কারণে। বাংলার ইতিহাসে এই দিনটি একটি অভিশপ্ত দিন। এর পর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×