বাঁধ, স্লুইসগেট ভেঙ্গে সেতু কর, বড়াল নদী চালু কর
বড়াল নদী রক্ষায় মানব বন্ধন, যোগ দিন, সফল করুন।
প্রিয় এলাকাবাসী
আপনারা অবগত আছেন বড়াল নদী পদ্মার প্রধান শাখা নদী, যা রাজশাহীর চারঘাট থেকে উৎপন্ন হয়ে চলনবিলের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে মুশাখা, নারদ, নন্দকুজা, চিকনাইসহ বেশ কয়েকটি নদীর জন্ম দিয়ে শেষ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি হয়ে হুড়াসাগরের সাথে যুক্ত হয়ে যমুনায় মিলিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২০ কিলোমিটার। বড়াল নদীর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত কমপক্ষে পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ। এই নদী ৪টি জেলা এবং ৮টি উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দেশের বৃহত্তম দুটি নদী পদ্মা-যমুনা এবং বৃহত্তম জলাভূমি চলনবিলের মধ্যে প্রধান সংযোগ নদী হচ্ছে বড়াল।
রাজশাহীর চারঘাট বড়ালের উৎস মুখে একটি স্লুইজগেট, ৪৬ কিঃমিঃ ভাটিতে আটঘড়ি নামক স্থানে আবারও একটি স্লুইস গেট, বড়াইগ্রাম উপজেলায় বনপাড়ায় ব্যাপক দখল, ১২৫ কিঃমিঃ ভাটিতে পাবনা চাটমোহর উপজেলায় বড়ালের বুকের উপর তিনটি ক্রস বাঁধ এবং আরও একটি স্লুইসগেট প্রমত্তা বড়াল নদীকে কয়েকটি বৃহৎ পুকুরে পরিনত করেছে। এছাড়া কয়েকটি শিল্প কারখানার বর্জ্য দ্বারা পানি দুষণ এবং ভূমিদস্যুরা ব্যাপক দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। ফলে ফসলহানি, বদ্ধ পানিতে দুষণ-দুর্গন্ধ-রোগ বালাই, জেলে-কৃষক-ব্যবসায়ীরা আজ বেকার ও দিশেহারা। ব্যবস্থাপনার নামে বিকল স্লুইসগেটগুলো এখন সরকারী টাকা অপচয়ের উৎস। সব জেনে শুনেও প্রশাসন নিরব।
বড়াল নদী চালু ও তা রার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বড়াল রা আন্দোলন, চলনবিল রা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া এবং সর্বস্তরের মানুষ ২০০৮ সাল থেকে আন্দোলনে নেমেছে, বাপা, এএলআরডি ও রিভারাইন পিপল গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেছে। নদীর পাড়ের অনেক স্থানে ও রাজধানী ঢাকায় অনেক সভা, সমাবেশ, মানব বন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, কনভেনশন, সম্মেলনের মাধ্যমে দাবি পেশ করা হয়েছে। চাটমোহরে বিশাল জনসভাও হয়েছে।
ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে আবদ্ধ বড়াল নদীকে চলমান করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে; মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান, নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর), পাবনা-৩ (চটমোহার-ভাঙ্গুরা-ফরিদপুর) ও রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) এলাকার সম্মানিত সংসদ সদস্যবৃন্দ এই আন্দোলনের সাথে একাত্নতা ঘোষনা করেছেন। নদী বিষয়ক টাস্কফোর্সে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় বড়াল নদীর সব বাধা অপসারণ করে নদী চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। রাজশাহী-৬ এর সংসদ সদস্য মহোদয় সংসদেও বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। কিন্তু বাস্তবে বড়াল নদী উদ্ধারে কিছুই করা হয়নি। সর্বশেষ বড়ালে বাঁধ স্লুইসগেট নির্মাতা পানি উন্নয়ন বোর্ডই জনদাবীর মুখে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্স এলাকার মানুষ বা আন্দোলনকর্মীদের সাথে কথাও বলেননি। তারা কি করেছেন-কেউ তা জানে না। বরং কতিপয় স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তার যোগসাজসে বড়াল নদীকে অবয়িত জলাশয় ঘোষণা করে তা খননের নামে চাটমোহর এলাকায় স্বার্থান্বেষী মহল গত অর্থ বছরে ল ল টাকা অপচয় করেছে। তারা এ বছরও আবার কোটি টাকার প্রকল্প মৎস্য অধিদপ্তরে জমা দিয়েছে। অর্থাৎ গরীব জেলে-কৃষক-ুদ্র ব্যবসায়ীদের বেকার বানিয়ে নির্দয় প্রভাবশালীরা নদী ধ্বংসের অপকর্মে নেমেছে। গণ মানুষের প্রাণের বড়াল আজ ধ্বংসের মুখে, অর্ধকোটি অসহায় গ্রামীণ জনতা দিশেহারা। এলাকার জনগণ আজ সচল প্রবাহমান বড়াল ফেরত চায়।
আগামীকাল ১৪ মার্চ ২০১৩ বৃহস্পতিবার “আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা” দিবসে সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত রাজশাহীর চারঘাট থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ২২০ কিঃমিঃ দীর্ঘ এক মানব বন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে। এই মানব বন্ধনে দলে দলে অংশ নিন, নদীর পাড়ে হাতে হাত ধরে দাঁড়ান, উচ্চ কণ্ঠে নদী দখল ও দুষণমুক্ত করার ঐক্যবদ্ধ দাবি তুলে ধরুনঃ
০১. বড়াল নদীর উপর নির্মিত সকল স্লুইসগেট-বাঁধ অপসারণ কর, পূর্ণ প্রস্থ সেতু স্থাপন কর; বড়াল নদী মুক্ত কর।
০২. সিএস রেকর্ড অনুযায়ী বড়াল নদীর সীমানা চিহ্নিত কর, দখলদার উৎখাত কর, নদী উদ্ধার কর, দুষণ বন্ধ কর।
০৩. পদ্মা-যমুনার সাথেই বড়াল নদীকে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের অর্ন্তভূক্ত কর, নদী খনন কর, অচল নদী সচল কর।
০৪. বড়াল নদীকে অবয়িত জলাশয় দেখিয়ে জমাকৃত ভূয়া প্রকল্প বাতিল কর, নদী লুটেরাদের প্রতিহত কর।