somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারানো প্রেম

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট জীবনের সৃতির খাতায় যত ঘটনাই ভীর করুক না কেন। কিছু কিছু ঘটনা হৃদয়ে দাগ কেটে নেয়। ইংরেজিতে একটা কথা আছে “ Human mind is very short’’ মানুষ সহজেই মানুষকে ভুলিয়া যায়। কিন্তু সৃতির খাতায় ময়লা জমিলে অক্ষর গুলো একেবারাই অস্পষ্ট হয়ে যায় না। তাই বার বার কিছু ঘটনা এসে হৃদয়য়ের জানালায় উকি দেয়।কখনো সে ভুলতে পারে না সেটা। যেমনি করে মেঘ কখন ভুলতে পারে নি নিলুকে।



আজ থেকে ১১ বছর আগের। সিলেটের শ্রীমঙ্গলের কোন এক গ্রামের কাহিনি। ছেলেটার নাম মেঘ। বাবার চাকরি সুত্রে ওরা শ্রীমঙ্গলের থাকত।
সে সেখানে চতুর্থ শ্রেণিতে পরত।একদিন ক্লাসে দিদিমুনি এসে পরা ধরতেছিল, পড়াটা একটু কঠিন ছিল তাই ছেলেটি পারলো না।তাই শাস্তি সরূপ তাঁকে বাহিরে গিয়ে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে হবে।এই শাস্তি দেখে যারা পড়া পেরেছিল তারা অনেকেই হেসে ফেল্ল।মেঘ শুধু অসহায় চোখে তাকিয়ে ছিল। দিদিমুনি যে রাগ করছিল আর পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছিল ওতে তার খেয়াল নেই,সে শুধু দেখছিল কাকে হাসলে কেমন লাগে, তখনই তার চোখে পড়লো মেয়েটিকে ।কোঁকড়া কোঁকড়া চুল নিয়ে কেমন করে যেন হাসতেছিল,এটা দেখে মেঘ অনেক মজা পাচ্ছিল। কিন্তু মজা টা বেশি ক্ষণ টিকলো না দিদিমুনি বললো এবার বল মেঘ অনেক বুঝিয়েছি।মেঘ তো পুরাই হা।।আর এক চোট মার খেল। কিন্তু ওর ওই হাসিটি সুমনের মন টা শীতল করে দিয়ে গেল। মেয়েটার নাম নিলু। সেদিনের পর থেকে সুমনের সাথে নিলুর একটা মিল হয়ে যাই। মাঝে মাঝে ওরা এক সাথে স্কুলে আসতো, স্কুল থেকে যেতো এক সাথে।





সুমনের সাথে নিলুর একটা অজানা মিল হয়ে যাই। এদিকে একদিন স্কুলে অভিবাবক দের মিটিং ডাকা হয়।সেখানে পরিচয় হয় মেঘ আর নিলুর মা।এভাবে দিন কাটতে থাকে। স্কুলে ছোট খাটো দুষ্টুমিতে খুঁজে পাওয়া যেত ওদের। স্কুলের নিয়ম ছিল একটা ছেলে আর একটা মেয়ে করে বসবে,মেঝেতে বসতে হতো। তো মেঘ যেয়ে নিলুর কাছে বসে থাকতো। এভাবে তারা চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠে যায়। যেহেতু দুইজন ই বৃত্তি দিবে তাই বিকেলে স্কুলে প্রাইভেট পরতে আসতো। শুধু ওরা না অনেকেই। কিন্তু মেঘ একটু আগে চলে আস্ত,এই ভেবে যে নিলু ভুল করে আগে আসলে ওর সাথে একাকি দেখা হয়ে জাবে,নিলুও যেন সুমনের অবাক্ত ভাষা বুঝতে পারত। নিলু প্রতিদিনই আগে আসতো। এদিকে নিলুর মা ও সুমনের মায়ের মধ্যে বোনের একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।কইদিন পর নিলুরা বাসা বদল করে তাই দূর থেকে নিলু একবার ই আসে টিফিনে র বাসায় যায় না,মাঝে মেঘদের বাসায় খেয়ে আসে। বাসায় খেতে খেতে মেঘ দেখে ওর মা অর থেকে নিলুকে বেশি আদর করছে।।মাঝে মাঝে অর হিংসা হয়। তারপরও ওরা অনেক ভাল বন্ধু। একবার নিলুর ফুফুর বিয়েতে নিলু মেঘকে নিতে এসেছিল। কিন্তু মেঘ যেতে না চাইলে নিলু ওকে জোর করে নিয়ে গেছিল।পরে হয়তো বিয়ের আগের দিন মেঘ পালিয়ে এসেছিল। এই নিয়ে অনেক কাহিনী হয়ে গেছে অনেক কাহিনী।। সেবার পি স সি পরিক্ষা প্রথম শুরু হয়।ওদের পরিক্ষার দিন নিলুর মা মেঘদের দাওয়াত করে কায়েছিল। মেঘ বৃত্তি পায়,কিন্তু দুঃখ এর বিষয় নিলু পায় না। এর পর সুমনের বাবা বদলি হয়ে যাই। তাই তারা নিজ বাড়িতে চলে আসে। যেহেতু ২০০৫ সালের কথা ,মোবাইল নেই বললেই চলে। তাই তাদের যোগাযোগ হয় না।

আজ ২০১৬। মেঘ অনেক বড় হয়েছে।সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরে।নিজের লাইফ টা গুছিয়ে নিয়েছে।তবুও কোথায় যেন নিলুর শূন্যতা। সেদিন সন্ধায়, আচমকা একটা ফোন ,মেঘ আমি নিলু বলছি, , মেঘ নিজেকে চিমটি কেটে দেখে স্বপ্ন কি না,না এ ত স্বপ্ন নয়।তাহলে কি আমি নিলুকে পেলাম, হ্যাঁ। এর পর থেকে শুরু হয় কথা বলা।রাত জেগে ফোনে চ্যাট করতো দুজনে।। যে মেঘকে কখনো ফেসবুকে পওয়া সে এখন ফেসবুকে থাকে,শুধুই নিলুর জন্য। দুইজন ই এখন জীবন সম্পর্কে অনেক ভালো বুঝে। মাঝে মাঝেই নিলু বলে তুমি কবে আসবে আমাদের এখানে,তার উত্তরে মেঘ বলে তোমার বিয়েতে। অনেক কথা হয় ওদের। জীবন নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে। সুমনের জিবন টা যেন নিলুকে পেয়ে পূর্ণ হয়ে যায়।

একদিন নিলুর ফোন,
নিলুঃ হ্যালো মেঘ।
মেঘঃ হ্যাঁ বলো।
নিলুঃ আজ একটা কথা বলবো ,তুমি অনেক খুশি হবে। তবে তোমাকে আসতে হবে এখানে।
মেঘঃ আচ্ছা বলো।।
নিলুঃ না তুমি যদি ২৪ তারিখের ভিতর এখানে আসো তবে বলবো। তবে তুমি শুনে অনেক খুশি হবে।
মেঘঃ বলবে না??
নিলুঃ না।আস আগে।


২৪ তারিখ সকালে,মেঘঃ কোথায় তুমি,
নিলুঃ কেন? বাড়িতে।
মেঘঃ একবার স্কুলে এসো।
নিলুঃ কেন????
মেঘঃ আসো তো
নিলুঃ টা টা।


স্কুলে,
নিলু দূর থেকে দেখে একটা লোক স্কুলে ,কিন্তু ও যে কে সেটা বুজতেছিল না।

কাছে এসে, মেঘ??? হ্যাঁ। অনেক খুশি হয়েছিল দুইজন। ছেলে হলে দুই জন দুজনকে জড়িয়ে ধরতো।।কথা ছিল আবার যেদিন দুইজন এক হবে অনেক ঘুরবে দুইজন। সারাদিন ঘুরে দুইজন। সন্ধ্যার দিক মেঘ যায় নিলুকে বাসায় ছাড়তে। নিলু যখন চলে যাচ্ছে তখন মেঘ জিজ্ঞেস করছে খুশির খবরটা বললে না??
নিলুঃ ও সারাদিন তোমাকে পেয়ে এতো খুশি ছিলাম ওটা ভুলে গেছি,২৮ তারিখ,আমার বিয়ে ।কি?? খুশি হউ নি। তোমাকে আনার জন্য একটু পর বললাম।
মেঘঃ ভাঙ্গা কণ্ঠে, এতো খুসির খবর!!!! আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে।
নিলুঃ শুভ রাত্রি।
মেঘঃ টা টা।

২৫ তারিখ,
নিলুঃ হ্যালো, মেঘ আজ একটু বাজারে এসো
মেঘঃ আমি একটা বন্ধুর সাথে দেখা করবো। পারবো না।
নিলুঃ প্লিজ??
মেঘঃ একটু হেসে ,ওকে বাবা আসছি।

বাজারে,
মেঘ এই দেখ এটা কে?
মেঘঃ উনাকে তো চিনলাম না।
নিলুঃ তোমার হবু ভাই
অনেক কথা হয় ওদের।।সেদিন র মেঘ নিলুকে এগিয়ে দিতে যায় না।।গিয়েছিল ওর হবু বর।



২৭ তারিখ নিলুর গায়ে হলুদ,

মেঘ আসি নি।। সালাত এসে নিলুকে বলল মেঘ চলে গেছে।। তবে ও ওর মানি ব্যাগ টা ফেলে যাই। যেটাতে একটা কাগজ ছিল সেটা সালাত পরেছে, ওটা সালাত নিলুকে দিল, নিলু কাগজটা খুলল। ওতে লেখা,







দৃষ্টিতে হয়েছিল কিছু শব্দ বিনিময়
শুধু হয়েছিল না বলা
ভালোবাসি তোমায়
এক টুকরো ভালোবাসা ছিল তোমার জন্য
ভাবনায় ছিলে তুমি এক ও অভিন্ন
I love u
নিলু

পিছনের পেজ এ লেখা ছিল আমার জীবনের অসমাপ্ত গল্প টা শেষ হয়েও হল না। অনেকটা ভালবেসেছিলাম তোমাকে নিলু। এই মুখ নিয়ে আর কখন তোমার সামনে আসবো না।আজিই চলে যাবো। সারাজীবন ভালবেসেয়ে যাবো ,নাইবা জানলে তুমি।
নিলু কেঁদে ফেলে,

কয়েটা ঘণ্টা কেটে গেল,

এদিকে মেঘ বাসে উঠেছে। পাসের সিটে একটা মেয়ে , মুখ একটু আড়াল করে ঘুমিইয়ে আছে।মেঘ ঐ দিকে খেয়াল না করে পাশেই বসে সিটের সাথে মাথা হেলিয়ে নিলুর কথা ভাবছে,এতক্ষন হয়তো ওর গায়ে হলুদ হয়ে গেছে, সবাই কতো খুশি। নিলু হাসিটা ,মেঘ যদি পাশে থাকতো নিলু হয়তো অনেক হাসতো। আচ্ছা গায়ে হলুদ নিলে নিলুকে কি আরও সুন্দর লাগে??মেঘ ভাবছে আজ হয়ত নিলু হলুদে হলুদ হয়ে জাবে,হলুদ শারিতে ওকে, ।। চোখ দুটো লাল আবিরের মতো হয়ে গেছে সুমনের।

এমন সময় বাস হোটেলে থামল,

সারা দিন কিছুই খাই নি সে। তবুও নামছে না বাস থেকে ।।

এমন সময় তার মনে পরল তার পাসে একটা মেয়ে বসে আছে তো। সে পা টা একটু সরিয়ে বলল , এই যে শুনছেন, আপনি কি নামবেন??
মেয়েটা বলল নামবো মানে??? এই তুমি জানো না বিয়ের কণে রা দিনে কম খায়,ক্ষুধা লাগছে ,খাবার নিয়ে আস। মুখ ঘুরতেই মেঘ দেখে নিলু,
মেঘঃ তুমি?? কোথা থেকে উটছো?
নিলুঃ তোমার সামনের স্ট্যান্ড থেকে।
মেঘঃ এগুলো কি ??কেন?? আমি কিছু বুজতেছি না।

নিলুঃ তুমি বুজবে কেমনে।তুমি তো বাচ্চা। আচ্ছা একটা কথা বোলো তো তুমি এতো ভিতু কেন বলত?
মেঘঃমানে?
নিলুঃ ছোটবেলা থেকে কি একাই আপনে আমাকে ভালবাতেন ? তবে আমি কি??
মেঘঃতুমি মানে?
নিলুঃ তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না মেঘ। প্লিজ সারাজীবনের জন্য থেকে যাও।
মেঘঃ বুজলাম না।
নিলুঃ অনেক কেঁদেছে, তাই ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে বললো, শুনো না,ভালবাসি তোমাকে, অনেকটা।
সু্তা।এখন!!! যাও লাগবে না।
নিলুঃ চলে যাই তবে?
মেঘঃ যাও, ধরে রাখি নি।
নিলুঃ এই , মার খাবে কিন্তু
মেঘঃ আচ্ছা মার খাওয়ার চেয়ে থেকে যাওটাই মনে হয় ভালো।
নিলুঃ আমারও তাই মনে হচ্ছে,
তখন নিলুর মুখের কোনে ওই হাসিটা দেখা যাচ্ছিল, যার জন্য আজ এতো কিছু...............




সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমেরিকানরা ভীষণ কনজারভেটিভ

লিখেছেন মুনতাসির, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৬

আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই—এটা প্রথমেই বলে ফেলা ভালো। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকাতে আমার যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুবার। সবগুলো ভ্রমণ যোগ করলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×