২০ রাকাআত তারাবিহ সাহাবায়ে কেরামের আমল
এই বিষয়ক আগের পোস্ট- তারাবীহ নামায বিশ রাকাতঃ একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা
সংক্ষেপে বলতে গেলে রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবিহ নামাজ মসজিদে আদায় করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেননি এই আশঙ্কায় যে, না জানি উম্মতের উপর এই নামাজ ফরজ হয়ে যায়। তাই তিনি তারাবিহ নামাজ ঘরে আদায় করতেন। কিন্তু তিনি মসজিদে জামাআতের সাথে তারাবিহ আদায় একেবারে যে করেননি এমনটা নয়। করেছেন, তবে তা অধিক দিন নয়। যেমনটা নিম্মোক্ত হাদিস থেকে জানা যায়-
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ তারাবিহ আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তাঁরা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিলো, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী)
রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পরে হযরত আবূ বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই পদ্ধতিকেই গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর খেলাফতকালে তিনি ভাবলেন যে, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবিহ নামাজ উম্মতের উপর ফরজ হওয়ার আশঙ্কায় ঘরে পড়েছেন। এখন যেহেতু রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে জীবিত নেই সুতরাং কোনো বিধান উম্মতের উপর নতুন করে আর ফরজ হওয়ারও কোন সুযোগ কিংবা সম্ভাবনা নেই। এই চিন্তা থেকেই মূলতঃ হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাআত নির্দিষ্ট করে দেন এবং সাহাবিদের বিচ্ছিন্নভাবে তারাবিহ নামাজ আদায়ের পরিবর্তে জামাআতে আদায়ের সুন্দর ও সুশৃঙ্খল অদ্যাবধি প্রচলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, 'তোমাদের জন্য জরুরি আমার সুন্নত মান্য করা এবং খোলাফায়ে রাশিদিনদের সুন্নত মান্য করা।' ফতহুল বারী শরহে বুখারি
আর, তারাবিহ নামাজ জামাআতে আদায় করা এবং এই নামাজ বিশ রাকাআত নির্দিষ্ট করার এই বিষয়টি এক জামাআত সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে যার নেতৃত্বে সুসাব্যস্ত হয়েছে তিনি তো আর কেউ নন, স্বয়ং সেই উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যেই উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর মতের পক্ষে পবিত্র কুরআনুল কারিমে একাধিকবার আয়াত নাযিল হয়েছে। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিসই হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর মর্যাদা পরিমাপের জন্য যথেষ্ট। রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'আমার পরে আর কোন নবী বা রাসূল নেই। থাকলে ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নবী হত।' সূত্র - সহীহ আল বোখারী, আধুনিক ৩ঃ৩৪১৪/ তিরমিযি, ইফাবা-৩৬৮৬।
সুতরাং, তারাবিহ নামাজ বিশ রাকাআতের পক্ষে এরচেয়ে শক্ত, পোক্ত, মজবুত এবং নির্ভরযোগ্য, নির্ভেজাল, সহিহ আরও কোনো দলিলের প্রয়োজন আছে কি?
অবশ্য সাহাবায়ে কেরামের যামানার পরবর্তীতে এসে সাহাবিদের চেয়ে, হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর চেয়ে, হযরত আবূ বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর চেয়ে, হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর চেয়ে, হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী, বেশি পরহেযগার, বেশি আল্লাহওয়ালা, বেশি মুত্তাকি যারা তাদের কথা ভিন্ন। তাদের প্রতি আমাদের হৃদয় নিংড়ানো সালাম এবং দুআ কামনা ছাড়া আর কিছুর প্রত্যাশা নেই।
খলিফাতুল মুমিনীন হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু প্রচলিত জামাআতে বিশ রাকাআত তারাবিহ পড়তে যাদের এত আপত্তি, তাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রেখে আলোচনা শেষ করছি- হাদিসের আলোকে জানা যায় যে, রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে মাত্র অল্প সংখ্যক দিন তারাবিহ নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করেছেন এবং বাকি সময়গুলোতে একা একা আদায় করেছেন। মসজিদে না পড়ে ঘরে পড়েছেন। তাই প্রকৃত সত্য হচ্ছে, তারাবিহর জামাআত আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই চালু করেন। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইনতেকালের পরে এই নামাজ জামাআতের সাথে আদায়ের লক্ষ্যে গ্রহনযোগ্য ও সুন্দর একটি পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয় যেটা রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় ছিল না। সুতরাং, যেহেতু রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় বর্তমানে প্রচলিত তারাবিহ নামাজের জামাআতবদ্ধ হুবহু এই পদ্ধতি ছিল না, তো সকলের নিকট একথা পরিষ্কার যে, জামাআতের সাথে তারাবিহ আদায়ের এ আমলটি সাহাবায়ে কেরামগণ দ্বারা প্রবর্তিত ও প্রতিষ্ঠিত। তারাবিহ নামাজকে যারা টুকরো টুকরো করে ছোট করতে চান তাদের নিকট বিনীত প্রশ্ন- তারা যদি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল ব্যতিত সাহাবায়ে কেরামের কোনো আমল গ্রহনযোগ্য মনেই না করেন, তাহলে তারাবিহর জামাআতে তারা দাঁড়ান কিভাবে এবং কোন্ যুক্তির বলে?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩৫