মানচিত্রে সাগরতলে হারিয়ে যাওয়া জিলান্ডিয়া
জিলান্ডিয়া কি সাগরতলে নিমজ্জিত অষ্টম মহাদেশ?
স্কুলে, ছোট বেলায় আপনাকে সম্ভবত সাতটি মহাদেশ সম্পর্কে পড়ানো হয়েছিল — আফ্রিকা, এশিয়া, অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা। তবে আপনি কি জানতেন, ভূতাত্ত্বিকদের মতে, আরও একটি লুকানো মহাদেশ রয়েছে? ১৯৯৫ সালে প্রথম তৈরি করা হয় 'জিল্যান্ডিয়া' নামটি, অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে একটি ডুবে যাওয়া মহাদেশীয় সাবক্রাস্টের নাম এটি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা বলছেন যে একটি মহাদেশের স্বীকৃতি পেতে যা যা দরকার, জিলান্ডিয়া তার সবকটিই পূরণ করেছে। এখন আমাদের জানা দরকার একটি ভূখন্ডকে মহাদেশের খাতায় নাম লেখাতে কি কি শর্ত পূরণ করতে হয়। আসুন, দেখে নিই কি কি শর্তে একটি বৃহত্তর অঞ্চলকে মহাদেশ বলে শনাক্ত করা যায়-
১. আশেপাশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে উঁচু হতে হবে।
২. সুস্পষ্ট কিছু ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।
৩. একটি সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকতে হবে।
৪. সমূদ্র তলদেশের চেয়েও পুরু ভূস্তর থাকতে হবে।
কোথায় এর অবস্থান?
এই মহাদেশটির অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া এই মহাদেশটির নাম দেয়া হয়েছে জিলান্ডিয়া (নিউজিল্যান্ড+ইন্ডিয়া)। আকারে নাকি এটি প্রায় ভারতীয় উপমহাদেশের সমান। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২,৬৮,৬৮০ কিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট দেশ নিউজিল্যান্ড আসলে এই মহাদেশের জেগে থাকা একটি অংশ। নিউজিল্যান্ডকে তাই বলা যেতে পারে এই মহাদেশের পবর্তচূড়া।
নিউজিল্যান্ড এর উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কুক, কোনো দিন যদি জিলান্ডিয়াকে মহাদেশের স্বীকৃতি দেয়া হয়, তাহলে এটিই হবে সে মহাদেশের সর্বোচ্চ স্থান
চলছে মহাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা:
বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন তাদের এই নবআবিস্কৃত তলিয়ে যাওয়া ভূখন্ডের জন্য মহাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে। ‘জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা’ Geological Society of America -য় প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘জিলান্ডিয়া’র আয়তন পঞ্চাশ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার, যা পার্শ্ববর্তী অস্ট্রেলিয়ার প্রায় দুই তৃতীয়াংশের সমান।
কিন্তু এই মহাদেশের প্রায় ৯৪ শতাংশই তলিয়ে আছে সাগরের পানিতে। মাত্র অল্প কিছু অঞ্চল পানির ওপর মাথা তুলে আছে; যা নিউজিল্যান্ডের নর্থ এবং সাউথ আইল্যান্ড এবং নিউ ক্যালেডোনিয়া নামে পরিচিত।
নিউজিল্যান্ড এর উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কুক এর আরেকটি ভিউ
উক্ত ‘জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা’ Geological Society of America -য় প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক নিউজিল্যান্ডের ভূ-তত্ত্ববিদ নিক মর্টিমার বলেন, 'জিলান্ডিয়াকে কেন মহাদেশ বলা যাবে না, প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা প্রায় গত দু্ই দশক ধরে চালানো গবেষণায়'।
তিনি আরও বলেন, 'পৃথিবীর মহাদেশের তালিকায় আরেকটি নাম যুক্ত করাটাই কেবল তাদের লক্ষ্য নয়, এর একটা বিরাট বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য রয়েছে। একটি মহাদেশ যে সাগরে তলিয়ে যাওয়ার পরও তা অখন্ড থাকতে পারে, এই বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করার পাশাপাশি একইসাথে কিভাবে পৃথিবীর উপরিভাগের স্তর ভেঙ্গে মহাদেশগুলো তৈরি হয়েছিল তা উদঘাটনেও সহায়ক হবে গবেষনা কর্ম'।
শেষ পর্যন্ত জিলান্ডিয়া কি আরেকটি মহাদেশ হিসেবে যুক্ত হবে পাঠ্য বইতে?
শেষ পর্যন্ত জিলান্ডিয়ার নাম আরেকটি মহাদেশ হিসেবে কি যুক্ত হবে ভূগোলের পাঠ্য বইতে? সেটা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে হয়তো আরও কিছু দিন। কারণ, মহাদেশের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কোন আন্তর্জাতিক ফোরাম বা অর্গানাইজেশন কাজ করে না। বেশিরভাগ বিজ্ঞানী যদি মেনে নেন যে জিলান্ডিয়া আরেকটি মহাদেশ, তাহলে হয়তো কোন একদিন আমাদের সন্তানরা শিখবে, পৃথিবীতে মহাদেশের সংখ্যা সাতটি নয়, বরং আটটি।
নিউজিল্যান্ড এর উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কুক এর সুন্দর দৃশ্য
তথ্য সূত্র:
১. Click This Link
২. বিবিসি।
৩. https://allthatsinteresting.com/zealandia
৪. https://en.wikipedia.org/wiki/Zealandia
৫. https://www.geosociety.org/
৬. Click This Link
ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩৯