প্রতিটি দিন যায় আর আমরা যেন নতুন নতুন পাপের আগমন দেখি। নতুন নতুন বিভীষিকা আমাদের বিবেককে দংশন করার জন্যই যেন আমাদের বেঁচে থাকা। ভেবে আকুল হই, কেন পুরনো ঘটনাটির চেয়ে নতুনটি আরও বহুগুনে বিভতস, বিভীষিকাময় এবং লোমহর্ষক হয়ে দেখা দেয়! গত কয়েক দিনে আমাদের দেশে বিদেশে বেশ কিছু মর্মান্তিক, অবর্ননীয় এবং রীতিমত অমানবিক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। দখলদার ভারতের উগ্রবাদীরা বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মন্দিরকে কিভাবে লাগাতার পালাক্রমে ধর্ষনের জন্য নিরাপদ আস্তানায় পরিনত করা যায়। অষ্টম বর্ষে পদার্পনকারী নিষ্পাপ একটি নাবালিকাকে আট দিন ধরে খুঁচিয়ে খুচিয়ে এমন নির্মম এবং পৈশাচিক উল্লাসে হত্যা করার ঘটনা বিশ্ব বোধ হয়, ইতিপূর্বে প্রত্যক্ষ করেনি। আফগানের কুন্দুজে ঘটে গেল এর আগে আরেক মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক গনহত্যার ঘটনা। পাইকারীভাবে সেখানে মাদরাসার নিরপরাধ কুরআন হিফজ সমাপনকারী ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছে, যা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়ে গেছে।
কুরআনুল কারীম হিফজ করার রীতি রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবদি চলে এসেছে। ইনশা-আল্লাহ তাআ'-লা চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সর্ব প্রথম এবং জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ হাফিজ কে ছিলেন আপনার কি জানা আছে? তিনি আর কেউ নন, রহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুল আমবিয়া ওয়াল মুরছালীন সাইয়িদুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন প্রথম, প্রধান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হাফিজে কুরআন। তিনি কুরআনুল কারীম মুখস্ত করার জন্য তাঁর জিহবাকে দ্রুত চালনা করলে, আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবিবের সেই কষ্টটুকুও বরদাশত করেননি। তিনি সাথে সাথে জিবরাইল আলাইহিসসালামকে ওহি নিয়ে পাঠান-
لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ
তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্যে আপনি দ্রুত ওহী আবৃত্তি করবেন না।
إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ
এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমারই দায়িত্ব।
فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ
অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন।
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ
এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব। (সূরাহ আল ক্কিয়ামাহ, আয়াত ১৬-১৯)
কুরআনুল কারীম হিফজ সমাপনান্তে ক্ষুদে হাফেজদের পাগড়ি প্রদানের রীতিও পুরনো। সম্মানের পাগড়ি তাদের পড়িয়ে দেয়া হয় অানুষ্ঠানিকভাবে। অাফগানিস্তানের কুন্দুজ প্রদেশের একটি মাদ্রাসাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সেখানে আয়োজন করা হয়েছিল পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠানের। কিন্তু সেখানকার নিষ্পাপ কচিকাঁচা হাফেজ ছাত্ররা পাগড়ি পাননি। তাদের জন্য আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পর্যবসিত হয়েছে ভয়াবহ শোকের আবহে। তারা বোমার তাজা স্পিলিন্টার পেয়েছেন। তাদের বুক ঝাঁঝড়া হয়েছে যার আঘাতে। কলিজা বিদীর্ন হয়েছে ছোট্ট কুরআনের পাখিদের। শরীর রক্তাক্ত জখম হয়েছে। ক্ষত বিক্ষত হয়েছে তাদের কচিমুখ। থেঁতলে গেছে তাদের নরম দেহের মাংসপিন্ডগুলো। বোমার আঘাতে ঝলসে গেছে হাত-পা। নিথর নিস্তব্দ হয়ে গেছে তাজা কুরআনের পাখিদের তাজা প্রান। তারা আর গাইবে না। পাখির মত করে পৃথিবীকে তারা আর কুরআনের সুর শোনাতে আসবে না। তারাবীহর জামাআতে কুরআনের মিষ্টি মধুর তিলাওয়াতে তারা আর কখনও মাতিয়ে দিবে না মুসল্লিদের প্রান মন। তাদের তিলাওয়াতের সুমধুর সুরের তন্ময়তায় হারিয়ে যাবেন না তাদের হতভাগা বাবা মায়েরা। তারা পৃথিবীর আলো বাতাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অকালে ঝড়ে গেছেন ফুল হয়ে না ফুটতেই। কুরআনের সুরভিত সুরের মূর্চ্ছনায় জগত আলোকিত করার অভিপ্রায় তাদের পূর্ন বিকশিত হয়ে ধরা দিল না। বোমার আঘাতে তাদের স্বপ্নগুলো পিষ্ট হয়ে গেল কুন্দুজের পাহাড়ি মাটির অন্তরালে।
বর্বরোচিত মানবতার মূলে কুঠারাঘাতকারী নির্মম এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বিশ্বব্যাপী তথাকথিত মানবতার ঠিকাদার ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর নেতৃত্বে দেশটির সেনাবাহিনী। সংবর্ধনাস্থলে, মাদরাসা মসজিদ কম্পাউন্ডের ওপর বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। এতে প্রান হারিয়েছেন প্রায় ১৫০ ক্ষুদে হাফেজ। শুধু নিষ্পাপ ছাত্রগনই নন, তাদের শিক্ষক ও অভিভাবকরাও রয়েছেন লাশের সারিতে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে- নিহতের সংখ্যা অন্তত ২০০ এর কম হবে না। চলতি মাস অর্থাত, ০২ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার এই বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। আল-জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংবাদ মাধ্যম যার সংবাদ প্রচার করেছে।
তালিবানদের না কি খুঁজছিলেন হামলাকারী বোমাবাজগন। বলি, তালিবানদের ধরার নামে তোমরা সাধারন মানুষের উপর নির্বিচার বোমা বর্ষন করলে কেন? নিরীহ হাফেজে কুরআন মাসুম বাচ্চাদের রক্তে তোমাদের হাত রাঙালে কেন? খুনের নেশায় তোমরা কি অন্ধ হয়ে গিয়েছো? শত মায়ের বুক খালি করার স্পর্ধা কেন দেখালে, হে বোমার অধিকারী সভ্যগন? তোমাদের উত্থিত আস্পর্ধা, হিংস্র অমানবিকতা, রোবটতুল্য মমতাহীনতা, এই নিরেট জংলী আচরনের পরেও কি তোমরা নিজেদের সভ্য দাবি কর? করতে পার? করার অধিকার থাকতে পারে? তোমরা কি তোমাদের বিবেকের কাছে একবার প্রশ্ন করে দেখবে, পৃথিবীতে সবচে' বড় জঙ্গী এখন কারা? সে কি তোমরা নও? তোমরা নও?
এই সংক্রান্ত নিউজের কয়েকটি লিঙ্ক-
Afghan Air Attack In Kunduz Killed 101 Hafiz e Quran On Their Awarding Ceremony
Afghanistan: 'Civilians killed' in attack on Kunduz madrassa
কুরআনের ক্ষুদে হাফেজরা পাগড়ির বদলে পেল বোমা
আবারও ফিরে এলাম: হ্যাঁ, আবারও ফিরে এলাম। না বলে পারছি না বলে। পোস্টটি পাবলিশ করার পরে দেখি, শততম পোস্ট এটি। সকলকে মোবারকবাদ এ অধমের শততম পোস্টে। সামু ভাল থাকুক। ভাল থাকুন সকল ব্লগারবৃন্দ। বাংলা ভাষার প্রিয় এই ঠিকানায় স্থান খুঁজে নিক বিশ্বের অগনন মুক্তিকামী মানুষ। তাদের প্রানের কথা মূর্ত হয়ে উঠুক সামুর আলোয়।
আমরা না থাকলেও সামু যেন কথা বলে যায় বঞ্চিত মানবতার পক্ষে। যুগে যুগে। কালে কালে।
পুনশ্চ: নিরাপরাধ হাফেজে কুরআনদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের এই করুন বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন ব্লগার 'ক্স'। তিনি এ বিষয়ে একটি পোস্টও দিয়েছিলেন। ব্যস্ততার কারনে যথাসময়ে পোস্ট দিতে পারিনি। কিছুটা দেরি হল বলে দু:খ প্রকাশ করছি। তাকে উৎসর্গ করছি এই পোস্টটি। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। তার ব্লগ- ক্স এর ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:১৬