সুস্থতা সবচে' বড় নেআমত। এর মূল্য আমরা যারা সুস্থ, আমাদের হয়তো অতটা বুঝে আসবে না। অসুস্থ হওয়ার পরেই কেবল সুস্থতার মূল্য অনুধাবন করা সম্ভব।
আমরা যা খাই প্রতি দিন
আচ্ছা, প্রতি দিন আমরা যা খাই, একটিবার ভেবে দেখেছেন কখনও? আমরা কী খাচ্ছি? ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। কথায় রয়েছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত ছাড়া আমাদের চলে না। চাল ফুটিয়ে, সিদ্ধ করা এই যে ভাতের লোকমাটি মুখে তুলে নিচ্ছেন পরম তৃপ্তি-পরিতৃপ্তিতে, একবারও কি ভেবে দেখেছেন, আপনার পছন্দের খাবার এই নিরীহ বীজ চালের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বিষ? পাকা সুদর্শন যে কলাটি আপনি কিনে নিয়ে এসেছেন এই মাত্র বাজার থেকে। আপনার কি জানা আছে, কতটা ধাপে নিরুপদ্রব এই কলাটিতে প্রবেশ করানো হয়েছে বিষের বীজ? শুধু কলা কেন? বানিজ্যিকভাবে চাষ করা প্রতিটি ফল এবং ফসলেরই এখন এক অবস্থা। মাত্রাতিরিক্ত বিষের প্রয়োগে ত্রাহি ত্রাহি কান্ড এদের। গাছের বীজ বোনার পূর্ব থেকে শুরু হয় মাটিতে সার দেয়ার কাজ। এরপরে চারা গজানোর পরে আবার দেয়া হয় সার। ছিটানো হয় কীটনাশক। কীটনাশকের পরিষ্কার বাংলা, বিষ। জীবনঘাতী এই বিষের সাথে গাছ, শস্যলতা ইত্যাদির পরিচয় ঘটে একেবারে জন্মের পরপরই। শিরা-উপশিরায় তারা বহন করে বিষের এই যন্ত্রনা। আজীবন। অত:পর নরম শরম এই চারাটিতে ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হয় সার। এই সারের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে লকলকিয়ে বেড়ে ওঠে বৃক্ষ সন্তানের কচি কোমল দেহ। একসময় গাছ কিংবা লতাটি পূর্নবয়স্ক হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে দেয় উপযু্ক্ত বয়স হবার পূর্বেই। সন্তানবতী হওয়ার তাড়না অনুভব করে সে তার ভেতরে। ফুলের কলি মেলে দেয় সে। সার, কীটনাশকের প্রভাবে তার ভেতরে তৈরি হয় ভিন্ন এক অবস্থা। বিষের পরে বিষ। ফুল ফোটার পরপরই কচি ফুলের ডগায় আবার দেয়া হয় বিষের স্প্রে। একসময় ফুল থেকে মুকুল আসে। আবার করা হয় স্প্রে। বিষের ছোঁয়ায় আবারও দ্বিধাবিভক্ত হয় সে। জাগ্রত-মোহাচ্ছন্ন হয় সে। ফুলের সংক্ষিপ্ত জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে তার। ঝড়ে যায় সে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে। ফলের গুটি আসে বৃক্ষ লতায়। কিন্তু প্রশান্তির পরশ নেই কোথাও। ছোট্ট এই গুটিকে অভিবাদন জানানো হয় আবার বিষের ছিটে দিয়ে। পোকা মাকড় থেকে মুক্ত রাখার প্রচেষ্টায় তাকে আবারও বিষ হজম করে যেতে হয়। এবং এই ফলটি পাকা অবদি কয়েক ধাপে আরও বার কয়েক তাকে এই স্প্রের কবলে পড়তে হয়।
একসময় ফল ফসল হয়ে ঘরে আসার সময় হয়। বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারজাত করার সময় এটির শরীরের কমনীয়তা ধরে রাখার জন্য এর উপরে নতুন এক জিনিষের স্প্রে করা হয়। এর পোষাকি নাম ফরমালিন।
অত:পর আমাদের মত ক্রেতাদের হাতে উঠে আসে পেলব কোমল মসৃন দৃষ্টিনন্দন সব ফল। আমরা গোগ্রাসে গিলতে থাকি বাজার থেকে সদ্য কিনে আনা ফল ফলাদি। আমরা ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করি না- কি কঠিন যাতনাময়, বিষাক্ত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে এসেছে লোভনীয় খাদ্যের এই রসালো ফলটি। একটিবারের জন্যও আমাদের ভাবনায় আসে না, ফলের সাথে, খাদ্যের সাথে কতটা তিক্ত পয়জন অনায়াসে হজম করতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত।
তো, আমরা অসুস্থ হব না, অসুস্থ হবে কে? আমরা কেন সুস্থ থাকব? আমাদের কি সুস্থ থাকার কথা? আমাদের নীতিহীনতাই কি আমাদের ধ্বংস করছে না?
যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে এগুলোর কারনে
ফল ফলাদিতে দেয়া সার, বিষ ও বিষের প্রভাবে খাদ্যের স্বাভাবিক পুষ্টিমান নষ্ট হচ্ছে। স্বাভাবিক ক্রিয়া থাকছে না এগুলোতে। উল্টো নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছি আমরা। সহজ হচ্ছে, শরীরে রোগ-জীবানুর অবাধ অনুপ্রবেশ । সাধারন অসুস্থতা, ছোটখাট শারিরীক সমস্যা থেকে জটিল কঠিন রোগ-ব্যধি বাসা বাঁধছে মানব শরীরে। বড়দের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার ফলে তাদের আক্রমনের পরিমানও কম। শিশু ও রুগ্ন ব্যক্তিগন যাদের, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এসব ফল খেয়ে তারা আক্রান্ত হন সহজে এবং দ্রুত।
বাঁচার জন্য আমাদের করনীয় কী?
যে কেনো ফল, বাজার থেকে ক্রয়ের পরে ঘরে নিয়ে ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত বালতি কিংবা বড় কোনো পাত্রের পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে পুরোটা না হলেও অন্তত: বিষক্রিয়া কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।
জ্ঞানী গুনী ব্লগার বন্ধুদের নিকট থেকে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ, মূল্যবান মতামতের জন্য তাদের আগাম অভিনন্দন। সকলের কল্যান কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০