somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

বিশ্ব সভ্যতায় মুসলমানদের গৌরবোজ্জ্বল অবদান, পর্ব-০১।

০১ লা মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে মুসলিম দেশগুলো পেছনে পড়ে যাওয়ায় পাশ্চাত্য তাদের ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কোনো মুসলমানের কাম্য হতে পারে না। আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি যেখানে একটি মুসলিম শিশু মুসলমানদের দুর্দিন ছাড়া আর কিছু দেখছে না। শুধু শিশু নয়, আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মধ্যে এমন একটি ধারনা কাজ করছে যে, বিজ্ঞান মানেই ইউরোপ আর আমেরিকা। তাদের কাছ থেকে আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞান শিখতে হবে। কিন্তু আমাদের অনেকেই জানে না যে, মুসলমানরাই আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মদাতা। আজকের এ অধ:পতিত মুসলমানদের পূর্বপুরুষেরা কয়েক শতাব্দি পর্যন্ত বিশ্বে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে গেছেন। আজকের আলোকিত বিশ্ব তাদের কাছে ঋনী। বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা মুসলমানদের কাছে ঋনী। মুসলমানরাই বিশ্ব সভ্যতাকে রক্ষা করেছেন। এ ব্যাপারে মুসলিম ঐতিহাসিক মোহাইমিনি মোহাম্মাদের একটি উক্তি উল্লেখযোগ্য। তিনি তার 'গ্রেট মুসলিম ম্যাথমেটিশিয়ান' গ্রন্থের ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, 'In the Byzantine and Persian empire were manifesly bent upon mutual destruction. Likewise, India was greatly divided. However, China was steadily expanding, the Turkish in central Asia were disposed to work in an accord with China. During this period, the world was saved by the rise of the Islamic civilization.'

অর্থাত, 'সপ্তম শতাব্দিতে পশ্চিম ইউরোপের পতন ঘটেছিল। অন্যদিকে বাইজাইন্টাইন ও পারস্য সাম্রাজ্য একে অন্যের ধ্বংস সাধনে ছিল সুস্পষ্টরূপে বদ্ধপরিকর। একইভাবে ভারত ছিল মারাত্মকভাবে দ্বিধাবিভক্ত। তবে দৃঢ়তার সঙ্গে চীনের সম্প্রসারন ঘটছিল। মধ্য এশিয়ায় তুর্কিরা চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করতে আগ্রহী ছিল। এসময় ইসলামী সভ্যতার উত্থানে বিশ্ব রক্ষা পায়।'

পৃথিবীর জাতিসমূহের মধ্যে মুসলমানই একমাত্র জাতি যার রয়েছে সর্বাধিক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য। জাতি তাদের মহত ব্যক্তিদের কীর্তিসমূহ সম্পর্কে এমনি নিশ্চিতভাবে জানতে পারে যা সকল প্রকার সংশয় ও সন্দেহ থেকে মুক্ত। মুসলমানদের হোমারের এলিয়ড অথবা হিন্দুদের রামায়ন, মহাভারতের কল্পকাহিনীর প্রয়োজন নেই। কেননা এসব কল্পকাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি বিস্ময়কর ও গৌরবোজ্জ্বল কাহিনীর বাস্তব উদাহরন তাদের ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে, অথচ ঐসব কল্পকাহিনীর মিথ্যাচারিতা ও অবিশ্বস্ততার ছোঁয়াও তাতে লাগেনি। মুসলমানদের ফেরদৌসীর শাহনামা অথবা স্পার্টাবাসীদের কল্পকাহিনীরও কোন প্রয়োজন নেই। কেননা, তাদের ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে রুস্তম ও স্পার্টার ছড়াছড়ি। মুসলমানদের ন্যায়পরায়ন নওশেরওয়া বাদশাহ বা হাতেম তাঈর গল্পেরও কোনই প্রয়োজন নেই। কেননা, তাদের সত্য ইতিহাসের পাতায় পাতায় অসংখ্য হাতেম ও নওশেরওয়া বিদ্যমান। মুসলমানদের এরিস্টটল, বেকন, টলেমী বা নিউটনেরও কোনই প্রয়োজন নেই। কেননা, তাদের পূর্বপুরুষদের মজলিসে এমনসব দার্শনিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিদ্যমান রয়েছেন- যাঁদের পাদুকাবহনকেও উল্লিখিত যশস্বীগন গৌরবের কারন জ্ঞান করতেন।



কতই আক্ষেপ ও বিস্ময়ের ব্যাপার, আজ যখন বিশ্বের তাবত জাতি নিজেদেরকে বিশ্ব দরবারে সমুন্নত করার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তখনও সর্বাধিক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যের অধিকারী মুসলমানগন নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে উদাসীন ও নির্বিকার। মুসলমানদের যে শ্রেনিটাকে অনেকটা শিক্ষিত ও সচেতন মনে করা হয়, তারাও তাদের বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রবন্ধাদিতে কোন মহত ঘটনার উদাহরন দিতে চান তখন মনের অজান্তেই তাঁদের মুখ ও কলম দিয়েও কোন ইউরোপিয়ান বা খ্রিষ্টান মনীষীর নামই নির্দ্বিধায় বেরিয়ে আসে। এক্ষেত্রে তার চেয়েও হাজার গুন উল্লেখযোগ্য কোন মুসলিম মনীষীর নাম তাঁদের জানা থাকে না। এ সত্যকে কে অস্বীকার করতে পারে যে, মুসলমানদের শিক্ষিত শ্রেনি বিশেষত নব্য শিক্ষিত শ্রেনির মুসলমানদের বক্তৃতা-বিবৃতি বা রচনাদিতে নেপোলিয়ান, হ্যানিবল, শেক্সপিয়ার, বেকন, নিউটন প্রমুখ ইউরোপীয় মনীষীর নাম যত নিতে দেখি, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ, সালাহউদ্দিন আইয়্যুবী, হাসসান ইবনে ছাবিত, ফেরদৌসী, তূসী, ইবন রুশদ, বূ-আলী, ইবন সীনা প্রমুখ মুসলিম মনীষীর নাম ততো নিতে দেখা যায় না। এর একটি মাত্র কারন, আর তা হচ্ছে বর্তমান যুগে মুসলমানরা তাদের নিজ ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ ও নির্বিকার। মুসলমানদের এই অজ্ঞতা ও উদাসীনতার কারন হচ্ছে-

প্রথমত এমনিতেই অন্যান্য জাতির তুলনায় মুসলমানদের জ্ঞানস্পৃহা কম।

দ্বিতীয়ত, জ্ঞানান্বেষনের সুযোগ ও অবকাশও তাদের নেই।

তৃতীয়ত, সরকারি কলেজ ও মাদরাসাগুলো ইসলামী শিক্ষায়তনগুলোকে ভারতবর্ষে প্রায় অস্তিত্বহীন করে দিয়েছে।

চতুর্থত, মুসলমানদের যে শ্রেনিটিকে সাধারনত শিক্ষিত বলা হয়ে থাকে এবং মুসলমানদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় বলে গন্য করা হয় তাঁদের প্রায় সকলেই শিক্ষায়তনসমূহে লেখাপড়া করে এসেছেন - যেগুলোতে ইসলামের ইতিহাস পাঠ্যভূক্ত নয়, আর তা পাঠ্যভূক্ত থাকলেও ইসলামের ইতিহাস পদবাচ্য নয়-অন্য কিছু, অথচ তাকে ইসলামের ইতিহাস বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে এবং সেগুলোকেই মুসলিম সন্তানদের গোগ্রাসে গলধকরনে বাধ্য করা হয়। কলেজ থেকে ডিপ্লোমা হাসিল করার পর না জ্ঞানার্জনের বয়স বাকি থাকে আর না তার তেমন কোন অবকাশ বা সুযোগ থাকে। মোটকথা, আমাদের শিক্ষিত মুসলমানদেরকে সেই ইসলামের ইতিহাসের উপরই নির্ভর করতে হয় যা ইসলামের প্রতিদ্বন্দী ও শত্রুরা বিকৃত করে তাদের ইংরেজি পুস্তকাদিতে লিখেছে।



মুসলমানদের পূর্বে পৃথিবীর অন্য কোন জাতির এ সৌভাগ্য হয়নি যে, ইতিহাসকে একটা সঠিক ভিত্তির উপর রীতিমত একটা শাস্ত্ররূপে দাড় করাবে। তাঁদের কেউই তাদের পূর্বপুরুষদের সঠিক ইতিহাস রচনায় সমর্থ হননি। ইসলামের পূর্বে ইতিহাস রচনার মান যে কেমন ছিল বাইবেলের পৃষ্ঠাসমূহ বা রামায়ন মহাভারতের কাহিনীগুলো পাঠই তা উপলব্ধি করার জন্য যথেষ্ট। মুসলমানরা মহনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস সংরক্ষন ও বর্ননায় যে কঠোর সতর্কতা ও নিয়মানুবর্তিতার স্বাক্ষর রেখেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তার কোন নযীর নেই। 'উসূলে হাদিস' ও 'আসমাউর রিজাল' এর মত শাস্ত্রগুলো কেবল হাদিসে নববীর হিফাযত ও খিদমতের উদ্দেশ্যে তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন। রিওয়ায়াত বা বর্ননাসমূহের বাছ-বিচার ও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যে সুদৃঢ় নীতিমালা তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন পৃথিবী তার সুদীর্ঘ আয়ুষ্কালে কোন দিন তা প্রত্যক্ষ করেনি।

মুসলমানদের ইতিহাস সংক্রান্ত সর্বপ্রথম কীর্তি হচ্ছে ইলম হাদিসের বিন্যাস ও সংকলন। ঠিক সেই নীতিমালার ভিত্তিতেই তাঁরা তাঁদের খলীফাগন, আমীর-উমরা ও সুলতানগন, বিদ্বজ্জন ও মনীষীগনের জীবন-চরিত লিপিবদ্ধ করেছেন। এসবের সমাহার হচ্ছে ইসলামের ইতিহাস। দু:খজনক যে, মুসলমানদের ইতিহাস হয় না পৃথিবীর জন্য এক অভাবিত, অভূতপূর্ব অথচ অপরিহার্য উপাদান। অন্যান্য জাতি যেখানে তাদের বাইবেল ও মহাভারত পৃভৃতিকেই তাদের গৌরবজনক 'ঐতিহাসিক' সম্পদ বলে বিবেচনা করতে অভ্যস্ত ছিল, তখন বিশ্বের মানুষ সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করল যে, মুসলমানরা খতীবের 'তারীখ' বা ইতিহাস গ্রন্থকে তাদের নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থের আলমারী থেকে বের করে সরিয়ে রাখছে।



আজ ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদেরকে ইতিহাস শাস্ত্রের অনেক খুঁটিনাটি তত্ত্ব নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখা যায়। মুসলমানরা তা দেখে অনেকটা হকচকিয়ে যান এবং পূর্ন আন্তরিকতার সাথে তাদের স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের একথাটিও জানা নেই যে, উত্তর আফ্রিকায় বসবাসকারী জনৈক স্পেনীয় আরব বংশোদ্ভূত মুসলমান ঐতিহাসিক ইবন খালদূনের ইতিহাসের ভূমিকা 'মুকাদ্দামায়ে তারীখ' -এর উচ্ছিষ্ট ভোগই গোটা ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বকে ইতিহাস শাস্ত্র সম্পর্কে এমনি জ্ঞানদান করেছে যে,
ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের সমস্ত ঐতিহাসিক গবেষনাকর্মকে ইবন খালদূনের মাজারের ঝাড়ুদারকে অর্ঘ্য-স্বরূপ বিনীতভাবে পেশ করা চলে। কিন্তু মুসলিম ঐতিহাসিকদের ইতিহাসকর্ম যে কত উঁচুমানের ছিল তা এ থেকেই অনুমিত হয় যে, মুসলিম বিজ্ঞজনের মজলিসে ইবন খালদূনের অনন্যসাধারন 'মুকাদ্দামা' বাদ দিলে তাঁর আসল ইতিহাসের তেমন কোন মূল্য নির্বিবাদে স্বীকৃত হয়নি।

ইবন হিশাম, ইবনুল আছীর, তাবারী, মাসউদী প্রমুখ থেকে নিয়ে আহমদ ইবন খাওন্দশাহ এবং যিয়াউদ্দিন বারনী পর্যন্ত বরং মুহাম্মদ কাসিম ফিরিশতা এবং মোল্লা বদায়ূনী পর্যন্ত হাজার হাজার মুসলিম ঐতিহাসিকের বিপুল গবেষনা কর্ম যে বিশালায়তন ভলিউমসমূহে সংরক্ষিত রয়েছে, এদের প্রত্যেকটি মুসলমানদের বিস্ময়কর অতীত ইতিহাসের এক একটি খন্ডচিত্র এবং এদের প্রত্যেকের লিখিত ইসলামের ইতিহাস এমনি উল্লেখযোগ্য যে, মুসলমানরা তা অধ্যয়ন করে অনেক শিক্ষনীয় বিষয়ের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত অাক্ষেপ ও পরিতাপের বিষয় যে, আজ শতকরা একজন মুসলমানও নিজেদের জাতীয় ইতিহাস জানার জন্য ঐসব মনীষীর রচনাবলী পাঠের এবং তার মর্ম উপলব্ধি করার সামর্থ্য রাখে না। অথচ সেই তুলনায় মিল, কার্লাইল, ইলিয়ট, গিবন প্রমুখের লিখিত ইতিহাস পাঠ করার এবং তার মর্ম উপলব্ধি করার মত যোগ্য মুসলমানের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।



মুসলমানদের অবস্থা আজকের মতো এত শোচনীয় অতীতে ছিল না। তারা ছিলেন একসময় বিশ্বের প্রভূ। অতীত নিয়ে একটি মুসলিম শিশু গর্ব করতে পারে। ইউরোপ ও আমেরিকাকে লক্ষ্য করে বুক ফুলিয়ে সে বলতে পারে, আমরাও তোমাদের মতো ছিলাম। জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমরা তোমাদের পেছনে নই। এমন কথা বলার পূর্বে তাকে জানতে হবে তার আত্মপরিচয়। নিজের জাতীয় পরিচয়। ইসলামের স্বর্নযুগের ইতিহাস প্রতিটি মুসলিমকে অহেতুক হীনমন্যতা থেকে রক্ষা করতে পারে। মহিমান্বিত সে যুগের আলোচনা সামনে সময়মত পর্যায়ক্রমে করার ইচ্ছে থাকলো। তার পূর্বে আসুন প্রাতস্মরনীয় ক'জন মুসলিমদের নামোচ্চরন করি। দেখি, যাচাই করি, এদের আমরা ইতিপূর্বে চিনতাম কি না-

রসায়নের জনক জাবির ইবনে হাইয়ান, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ আল বিরুনী, আধুনিক চিকিতসা বিজ্ঞানের জনক ইবনে সিনা, হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল আবিষ্কারক ইবনুন নাফিস, বীজগনিতের জনক আল খাওয়ারিজমি, পদার্থ বিজ্ঞানে শুন্যের অবস্থান নির্নয়কারী আল ফারাবি, আলোক বিজ্ঞানের জনক ইবনে আল হাইছাম, এনালাইটিক্যাল জ্যামিতির জনক ওমর খৈয়াম, সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী আল কিন্দি, গুটিবসন্ত আবিষ্কারক আল-রাজি, টলেমির মতবাদ ভ্রান্ত প্রমানকারী আল-বাত্তানি, ত্রিকোনমিতির জনক আবুল ওয়াফা, স্ট্যাটিক্স এর প্রতিষ্ঠাতা ছাবিত ইবনে কোরা, পৃথিবীর আকার ও আয়তন নির্ধারনকারী বানু মূসা, মিল্কিওয়ের গঠন শনাক্তকারী নাসিরুদ্দিন তুসি, এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী আবু কামিল, ল' অব মোশনের পথ প্রদর্শক ইবনে বাজাহ, এরিস্টোটলের দর্শন উদ্ধারকারী ইবনে রুশদ, ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক ইবনে ইউনূস, পৃথিবীর ব্যাস নির্নয়কারী আল-ফারগানি, পৃথিবীর প্রথম নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কনকারী আল-ইদ্রিসী, বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবিষ্কারক আল-জাজারি, সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমানকারী আল-জারকালি, মানব জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রনেতা আবুল ফিদা, বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের অগ্রদূত ইবনে আল-শাতির, ভূগোল বিশ্বকোষ প্রনেতা আল-বাকরি, প্লানেটরি কম্পিউটার আবিষ্কারক আল-কাশি, বীজগনিতের প্রতীক উদ্ভাবক আল-কালাসাদি, প্রথম এশিয়া ও আফ্রিকা সফরকারী নাসির-ই-খসরু, অঙ্কনে ব্যবহৃত কম্পাসের উদ্ভাবক আল-কুহি, বিশ্ববিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতাসহ এরকম হাজারও প্রাত:স্মরনীয় মুসলিম ব্যক্তিত্বদের এ পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে যাদের অবদান বিশ্ব তার অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরন করে যাবে। বিশ্ব সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে যাদের অবদান চিন্তা করলে বিধর্মী পন্ডিতগন পর্যন্ত শ্রদ্ধা-সম্মানে মস্তক অবনত করে দেন।

অধ্যাপক জি. সারটন তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য হিস্টোরি অব সায়েন্স' -এ লিখেছেন, 'It will suffice here to evoke few glorious names without contemporary equivalents in the West: Jabir ibn Haiyan, Al-Kindi, Al-Khwarizmi, Al-Fargani, Al-Razi, Thabit ibn Qurra, Al-Battani, Hunain ibn Ishaq, Al-Farabi, Ibrahim ibn Sinam, Al-Masudi, Al-Tabari, Abul Wafa, Ali ibn Abbas, Abul Qasim, Ibn Al-Jazzari, Al-Biruni, Ibn Sina, Ibn Yunus, Al Kashi, Ibn Al-Haitham, Ali Ibn Al-Ghazali, Al-Zarqab, Omar Khayyam. A magnificent array of names which it would not be difficult to extend. If anyone tells you that the Middle Ages were scientifically sterile, just quote these name to him, all of whom flourished within a short period, 750 to 1100 A.d.'

অর্থাৎ 'এখানে মুষ্টিমেয় কিছু নাম উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে। সমসাময়িককালে পাশ্চাত্বে তাদের সমতুল্য কেউ ছিল না। তারা হলেন:
জাবির ইবনে হাইয়ান, আল-কিন্দি, আল-খাওয়ারিজমি, আল-ফারগানি, আল-রাজি, ছাবিত ইবনে কোরা, আল-বাত্তানি, হুনাইন ইবনে ইসহাক, আল-ফারাবি, ইবরাহীম ইবনে সিনান, আল-মাসউদি, আল-তাবারি, আবুল ওয়াফা, আলী ইবনে আব্বাস, আবুল কাসিম, ইবনে আল-জাজারি, আল-বিরুনি, ইবনে সিনা, ইবনে ইউনূস, আল-কাশি, ইবনে আল-হাইছাম, আলী ইবনে ঈসা আল গাজালি, আল-জারকাব, ওমর খৈয়াম। গৌরবোজ্জ্বল নামের তালিকা দীর্ঘ করা মোটেও কঠিন হবে না। যদি কেউ আপনার সামনে উচ্চারন করে যে, মধ্যযুগ ছিল বৈজ্ঞানিক দিক থেকে অনুর্বর তাহলে তার কাছে এসব নাম উল্লেখ করুন। তাদের সবাই ৭৫০ থেকে ১১০০ খৃস্ট সাল পর্যন্ত একটি সংক্ষিপ্ত সময়ে বিশ্বকে আলোকিত করেছিলেন।'



কিন্তু আফসোস, আজকের মুসলিম সন্তানরা বিশ্ব সভার আলোকিত মুকুটধারী এই মহা মনীষীদের অবদানকে তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকেন। কিংবা ইতিহাস না জানার কারনে, মূর্খতার আস্ফালনে স্বজাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সম্মন্ধে অজ্ঞই থেকে যান তারা। আর এ অজ্ঞতাই তাদের হীনমন্যতার কারন। ভুলে গেলে চলবে না, হীনমন্যতা এমনি দূরারোগ্য এক ব্যধি যে, একটি জাতিকে অকর্মন্য, অথর্ব আর আবর্জনাতুল্য হীন জাতিতে পরিনত করার জন্য এরচে' বড় কোন অস্ত্র নেই।

অফটপিক: এই পোস্টটি প্রিয় ব্লগার রাজীব নূরকে শুভেচ্ছাসহ। তার একটি পোস্টকে কেন্দ্র করেই এই বিষয়ে লেখার কথাটা মাথায় আসে। চেষ্টা থাকবে, ধারাবাহিকভাবে আরও কয়েকটি পর্বে এই পোস্টটিকে কন্টিনিউ করার। সকলের কল্যান হোক।

তথ্যসূত্র:

১। উইকিপিডিয়া।
২। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ অনূদিত ও প্রকাশিত ইসলামের ইতিহাস, মাওলানা আকবর খান নজিবাবাদী।
৩। Shornojuge Muslim Bigganider Abishkar - Shahdat Hossain Khan
৪। অন্যান্য।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:০৩
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×