নারীর সমান অধিকারের কথা আমরা অনেক বছর থেকে বলে আসছি। মানে পুরুষের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার অধিকার, চাকরির অধিকার, পথে ঘাটে নিরাপদে চলার অধিকার এমন আরো অনেক কিছু। কিন্তু সমান উত্তরাধিকারের কথা কি বলছি আমরা কেউ?
কথাগুলো বলার আগে আসুন একটু জেনে নেই প্রচলিত আইন নারীর সম্পত্তি পাবার অধিকার নিয়ে কি বলছে ।
মুসলিম পারিবারিক আইন বলছে, পিতার সম্পত্তির ক্ষেত্রে একজন পুত্র যা পাবে তার অর্ধেক পরিমাণ সম্পত্তি পাবে কন্যা। একজন স্ত্রী তার স্বামীর সম্পদের আট ভাগের এক ভাগ পাবে। কিন্তু স্বামী তার স্ত্রীর সম্পদের চার ভাগের এক ভাগ পাবে। সম্পদের ভাগাভাগির ক্ষেত্রে এমন বেশ কিছু বৈষম্য আমরা দীর্ঘদিন থেকে মেনে আসছি । হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে তো কন্যা কিংবা স্ত্রীর কোনো অংশই নেই। হিন্দু আইনে পিতার সকল সম্পত্তি পাবে পুত্র, পুত্রের পুত্র, পুত্রের নাতি এবং এরা কেউই যদি না থাকে তাহলে কন্যা সম্পত্তি পাবে ঠিকই কিন্তু সেক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে কন্যাকে অবশ্যই পুত্রবতী হতে হবে অর্থাৎ ঘুরেফিরে সম্পত্তি কিন্তু কন্যা পাচ্ছে না , পাচ্ছে তারে ছেলে সন্তান।
এই বৈষম্যমূলক আইনগুলো নিয়ে আমরা উচ্চবাচ্য করিনা কেননা এর সাথে ধর্মের একটা যোগসূত্র আছে। ফলে এই আইনের সংস্কারের কথা বললে অনেকের কাছে মনে হবে হয়তো ধর্মকেই অবমাননা করা হচ্ছে। তাই পুরুষেরা তো বটেই .। নারীরাও এ নিয়ে কথা বলেন না ।
এক্ষেত্রে ধর্মের বিধান যতটা বিবেচ্য তার থেকেও বেশী কাজ করে বোধহয় দীর্ঘকালের আমাদের চিন্তার জড়তা। আমাদের মস্তিষ্কে এটা গেঁথে গেছে যে একজন নারীর সম্পত্তির / বেশী সম্পত্তির প্রয়োজন নেই। কেননা নারীর ভরণপোষণ করবে পুরুষ। পিতা , স্বামী এবং পুত্রের আশ্রিত হয়ে একজন নারীর জীবনকাল অতিবাহিত হব। কোনো নারী যদি তার পিতার গৃহে, স্বামীর গৃহে, পুত্রের গৃহে নিগৃহীত হয় ও তবু তার এখান থেকে বেরুবার উপায় নেই কেননা তার আসলে ভিটেমাটি বলতে কিছু নেই।
আমরা বলছি নারীকে শিক্ষিত হতে । শিক্ষিত হয়ে নারী চাকরি করে যেন স্বাবলম্বী হয়। এটি খুবই ভালো । তবে সম্পদের উত্তরাধিকার পুরুষের যতখানি দরকার , নারীরও ততখানি ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশী দরকার । অথচ আমরা তাকে দিচ্ছি কম , অথবা দিচ্ছিইনা । তার মস্তিষ্কে কতগুলো যুক্তি ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, নারীর সম্পদের দরকার নেই , নারী সম্পদের দেখভাল করতে অক্ষম, নারী সম্পদের যোগ্য উত্তরসুরী হতে পারে না, উপরন্তু কোনো নারী সম্পদের সমান অংশ দাবি যদি করেই বসে সেক্ষেত্রে সমাজ তাকে লোভী আখ্যা দিয়ে বসে।
নারী লোভী হতে পারবেনা , সে উদার হবে। সে সম্পদ দাবী করবে না , ছিটেফোঁটা যা পাবে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে, না পেলে আশ্রিতা হয়ে থাকবে , চাকরি করে নিজেকে স্বাবলম্বী করবে । আধুনিক সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি একজন নারী হিসেবে এই ভ্রষ্ট আইনের সংস্কার চাই । হোক কি মুসলিম আইন , কি হিন্দু আইন .। সকল আইনে পুত্র এবং কন্যা যেন সমান অংশীদারীত্ব পায় , স্বামীর তার স্ত্রীর সম্পদের উপর যতখানি দাবি , স্ত্রীরও যেন তার স্বামীর উপর ততখানিই দাবী থাকে এই সংস্কার হওয়াটা জরুরী। অবশ্যই জরুরি
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০১