somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এশিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দর "ফেনী বিমানবন্দর"

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


✈ (ছবিটি নেট থেকে সংগৃহীত)

১৯৩৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জাপানের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিমানবন্দরটি নির্মাণ করে ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ সরকার বিমান ঘাঁটি ও বিমানগুলো রক্ষায় বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আলাদা অবয়বে তৈরি করে ফেনী বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের উত্তর-দক্ষিণে তৈরি করা হয় বিশাল রানওয়ে। ফেনী শহরের উত্তরাংশের সুলতানপুর, বারাহিপুর, মজলিশপুর, বিরিঞ্চি, ধর্মপুর ও দেবীপুর এলাকার প্রায় সাড়ে তিনশ’ একর ভূমির ওপর এটি গড়ে তোলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ফেনী বিমানবন্দরটিই ছিল এশিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দর


✈ছবিঃ ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেনী বিমানবন্দরের রানওয়ে (নেট থেকে সংগৃহীত)

এখান থেকে ব্রিটিশ বাহিনীর বিমান বোমা বর্ষণ করতে যেত জাপানে। জাপানের বিমান আক্রমণ থেকে কুমিল্লায় অবস্থিত ব্রিটিশ সেনানিবাসের প্রতিরক্ষা কাজে এ বিমান ঘাঁটি ব্যবহৃত হতো। ফেনী দশম এয়ার ফোর্স ১২ তম বোমার্ডমেন্ট গ্রুপের প্রাথমিক আবাসস্থল ছিল , যা দক্ষিণ ইতালির ১২তম এয়ারফোর্স পুনর্নির্মাণের পর বিমানবন্দর থেকে "বি -২৫ মিচেল" মাঝারি বোমা হামলা করেছিল । গ্রুপটি ১৯৪৪ সালের জুলাই থেকে ১৯৪৫ সালের জুন পর্যন্ত ফেনী থেকে পরিচালিত হয়েছিল এবং ব্রিটিশ ফোর্টিন্থ আর্মি বার্মার বিরুদ্ধে এখান থেকে যুদ্ধ মিশন পরিচালনা করেছিলো।


✈ছবিঃ হ্যাঙ্গার ওয়াল (Hangar Wall)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমানবন্দরের চারদিকে অনেক হ্যাঙ্গার তৈরি করা হয় যুদ্ধবিমান লুকিয়ে রাখার জন্য। গাছগাছালির ভেতর লুকিয়ে রাখা হতো এসব বিমান। ওপর থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না গাছগাছালির ভেতর হ্যাঙ্গার রয়েছে। এখনও বিমানবন্দর এলাকায় ২৭টি হ্যাঙ্গার রয়েছে। জাপানিদের বোমা হামলায় হ্যাঙ্গারগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হ্যাঙ্গারে বিমান আনা-নেয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল পাকা রাস্তা। আজও প্রশস্ত এসব সড়ক স্থানীয়রা ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করছে।


✈ছবিঃ হ্যাঙ্গার ওয়াল (Hangar Wall)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ফেনী বিমানবন্দর ছেড়ে চলে যায় ব্রিটিশ বাহিনী। এরপর থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিমানবন্দরের বিশাল এলাকা দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে আসছে। তবে দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিমানবন্দর বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। পাকিস্তান আমলে ফেনী বিমানবন্দরটি সচল করা হয়নি। ত্রিপুরা সীমান্তের খুব কাছে হওয়ার কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান সরকার এটি চালু করেনি। বিমানবন্দর এলাকার ২ কিলোমিটারের মধ্যে ত্রিপুরা সীমান্ত। আজও বিমানের রানওয়ের একটি অংশ পড়ে রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়।


✈ছবিঃ ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের মূল ভবন (নেট থেকে সংগৃহীত)

বিগত ৪ দলীয় জোট সরকার আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিমানবন্দরের রানওয়ের ৪৯ একর জমির ওপর ২০০৬ সালে গড়ে ওঠে দেশের দ্বিতীয় গার্লস ক্যাডেট কলেজ। এ ক্যাডেট কলেজ চালু হওয়ার পর ফেনী বিমানবন্দর পুনরায় চালু হওয়ার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও ফেনী পৌর এলাকার ও পার্শ্ববর্তী ধর্মপুর ইউনিয়নের বিশাল এলাকা জুড়ে স্থাপিত বিমানবন্দরের প্রায় ৩২৫ একর জায়গা পড়ে আছে অরক্ষিত অবস্থায়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এখানে বাড়িঘর নির্মাণ, রাইচ মিল, কৃষি আবাদ ও খামার গড়ে তুলে শত শত একর জমি জবর দখল করে রেখেছে। বিমানবন্দরের রানওয়ে ও সড়কের ইট খুলেও লুটপাট করে নিয়ে গেছে অনেকে।


✈ছবিঃ ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের গেইট।

২০০৭ সালে ফেনী বিমানবন্দর এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেই সাথে হারিয়ে যায় একসময়কার এশিয়ার বৃহত্তম এই বিমানঘাঁটি। তবে ঐ স্থানে এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) স্থাপনের ঘোষণা দিলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাঁধার মুখে সরকার পিছু হটেছে। সীমানা নির্ধারণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এগিয়ে নিলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ইপিজেড বাস্তবায়ন করা যায়নি। এরপর আওয়ামীলীগ সরকার দেশে আর কোনো ইপিজেড করা হবে না বলে ঘোষণা দেয়ায় জবর দখলকারীরা স্বস্তিতে রয়েছে।


✈প্যানোরোমা মুডে পুরো হ্যাঙ্গার ওয়াল (Hangar Wall) এর ছবি

আবার সরকার ইপিজেডের পরিবর্তে স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) স্থাপনের কথা বললেও উল্লিখিত ভূমি উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেদখল হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর। এখন শুধু স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে এই হ্যাঙ্গার ওয়ালগুলো। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে হ্যাঙ্গারে যাওয়ার রাস্তাগুলো কিছু কিছু এখনো আছে। প্রশস্ত এই রাস্তার উপরেই বর্তমানে ফেনী-পরশুরাম বাসস্ট্যান্ড রয়েছে।


✈ যেভাবে যাবেন এই হ্যাঙ্গার ওয়াল (Hangar Wall) দেখতেঃ দেশের যেকোন স্থান থেকে ফেনীর মহিপাল বা ট্রাংকরোড় চলে আসুন। সেখান থেকে বাস বা সিএনজি যোগে চলে আসুন সদর হাসপাতাল মোড়। হাসপাতাল মোড় থেকে সামান্য একটু পায়ে হেঁটেই চলে যান পরশুরাম বাসস্ট্যান্ডে। সেখানেই পেয়ে যাবেন এই হ্যাঙ্গার ওয়ালটি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৪
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×