এক ছিল রাজা। রাজার ছিল এক রানি আর তিন কন্যা। তিন কন্যাকে নিয়ে রাজা বেশ সুখেই ছিলেন। রাজ্যেও ছিল সুখ আর শান্তি। তারপর একদিন রাজা তাঁর কন্যাদের জিজ্ঞেস করলেন এক সহজ প্রশ্ন। কে তাঁকে কী রকম ভালোবাসে?
বড় কন্যা জবাবে বলল, ‘বাবা, আমি তোমাকে চিনির মতো ভালোবাসি।’
রাজা মুচকি হাসলেন।
মেজ কন্যা বলল, ‘বাবা, আমি তোমাকে গুড়ের মতো ভালোবাসি।’
রাজার মুখে দেখা গেল হাসির রেখা।
ছোট কন্যা বলল, ‘বাবা, আমি তোমাকে নুনের মতো ভালোবাসি।’
সঙ্গে সঙ্গে রাজার মুখ হয়ে গেল কালো। রানিও শুনে অবাক। এ কেমন কথা! রাজা বেশ অস্থির। ডাকলেন উজির, নাজির আর সেনাপতিকে। হুকুম দিলেন ছোট কন্যাকে গভীর জঙ্গলে রেখে আসতে।
রাজার হুকুম বলে কথা, পরদিন ছোট রাজকন্যাকে পাঠানো হলো বনবাসে। গভীর অরণ্য, জনপ্রাণী নেই। ছোট রাজকন্যা একা বসে আছে। এমন সময় সেখানে হাজির হলো এক পথিক। রাজকন্যাকে দেখে জানতে চাইল, ‘গভীর অরণ্যে তুমি একা কেন?’
রাজকন্যা সব ঘটনা খুলে বলল। পথিকের খুব কষ্ট হলো সেসব কথা শুনে। কিছু একটা করতে ইচ্ছে করল তার। কিন্তু পথিকের তখন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা। তারপরও পথিক রাজকন্যাকে তার সঙ্গে নিতে চাইল। রাজকন্যাও রাজি। দুজনে চলল পথিকের ঘরের দিকে।
এদিকে রাজা তঁার বড় কন্যাকে ভিনরাজ্যের এক রাজপুত্রের সঙ্গে বিয়ে দিলেন। সেই রাজপুত্রের আবার চিনির ব্যবসাও আছে। মেজ কন্যারও বিয়ে দিলেন ঘটা করে। এই পাত্রের আছে বেশ বড় গুড়ের আড়ত। এভাবেই কেটে গেল দিন। একদিকে আনন্দ...আর অন্য দিকে।
বছরখানেক পরের কথা। একদিন এক লবণচাষি রাজাকে নিমন্ত্রণ করল তার বাড়িতে। রাজা বড় বিনয়ী। তাই লবণচাষির নিমন্ত্রণও তিনি রক্ষা করলেন। কিন্তু চাষির বউ রাজাকে খাবার খেতে দিলেন নুন ছাড়া তরকারি দিয়ে! খাবার মুখে দিয়েই রাজার মুখ বিস্বাদে কুঁচকে গেল। নুন ছাড়া আবার তরকারি হয় নাকি? চাষির বউ বলল, ‘রাজা তো নুন অপছন্দ করেন। তা ছাড়া নুনের কেজি এখন ৪৫ টাকা।’
নুনের এত দাম শুনে রাজার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো দশা হলো। নুন এতই মূল্যবান? এমনিতেই চিনি-গুড় খেতে খেতে রাজার শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে। তার ওপর এই নুনের কারণেই রাজ্য থেকে বের করে দিয়েছিলেন তাঁর ছোট কন্যাকে! সব মনে পড়ে গেল রাজার।
এদিকে রাজা হঠাৎ দেখতে পেলেন, আসলে চাষির বউ হলো তাঁরই ছোট কন্যা! আর লবণচাষিটি হলো সেই পথিক, যে রাজকন্যাকে ঘরে তুলেছিল। লবণ চাষ করে তাদের এখন রমরমা অবস্থা। সব দেখে রাজা তঁার ছোট কন্যাকে আবার প্রাসাদে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। সবার মুখে ফুটে উঠল হাসি। তারপর থেকে সেই রাজ্যে সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
রিপোস্ট: গতবছর নুনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রথম আলোর রস+আলোতে প্রকাশিত রম্য। এই বছর চালের দাম নিয়ে একটা লিখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪