আমাদের সব থেকে বড় কি ভুল কি জানো? আমরা কখনো মন খুলে ভালোবাসতে পারিনি। সবকিছুর ভিতর একটা জড়তা ছিল, জড়তা আছে। তুমি যদি একদিনও আমাকে মন উজাড় করে ভালোবাসতে, আমি তোমাকে হয়তো না পেয়েও সুখী হতাম। তুমি আছ আমার সাথে, পাশে বসে চুপ করে কথা শুনছ, এতক্ষণে একবারও সান্ত্বনা দেয়ার কথা মনে জাগেনি? একবারও না? কিসের আশায় তাহলে আমাকে রাত দুটোয় ফোন করো? আর আমিও বোকা, প্রত্যেকটা দিন তোমার পছন্দের রঙয়ের শাড়ি পড়ে নাচতে নাচতে হাজির হই!
একটানা কথাগুলো বলে অধরা মাথা নিচু করে থাকে। হাতের টিস্যুটা ভিজে গেছে। বাইরের আলো ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। বটগাছটাকে কেন্দ্র করে একটা কুকুর পায়চারী করছে। সারা শহরকে ব্যস্ততা থেকে মুক্তি দিয়ে অবশেষে পাখিগুলো নীড়ে ফিরে আসছে।
আজকে একটা আর্ট এক্সিবিশান আছে, দেখতে যাবে? এইতো শাহবাগ থেকে সামনেই। হেঁটে গেলে পাঁচ মিনিট। এক্সিবিশানের বিষয়টা ইন্টারেস্টিং, জানো? ‘ভালোবাসা’। ভালোবাসার তো কোন সূত্র নাই। ব্যাপারটা আপেক্ষিকও বলতে পারো। একেক জন শিল্পী দেখবা একেক ভাবে তাদের ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলছে। হয়তো দেখা যাবে, কেউ একজন বিশাল ক্যানভাসে কালো কুচকুচে কাক এঁকে তার ভালোবাসা প্রকাশ করছে। হা হা হা।
আবিদ ভেবেছিলো অধরা তার কথায় হাসবে। কিন্তু অধরা দুম মেরে বসে থাকলো।
-আর বেশিক্ষণ এখানে থাকলে এমনিতেই এখান থেকে মেরে তাড়িয়ে দিবে। কি যাবেনা??
-আমাকে নিয়ে তোমার আর না ভাবলেও চলবে। এই সোজা পথ ধরে তুমি তোমার শাহবাগ যাবে। আমি তোমার সাথে নেই।
-আচ্ছা চলো বাড়ি পৌঁছে দেই। বড়লোকের মেয়ে বলে কথা। কোথায় আবার হারিয়ে যাবে!
অধরা ব্যাগ গুছিয়ে হনহন করে হাটতে শুরু করলো। তার গতিই বলে দিচ্ছে সে শাহবাগ যাবেনা,আবার সে তার বাড়ির দিকেও যাচ্ছেনা। ভাবাভাবি না করে আবিদও অধরার পিছে হাটতে শুরু করলো। অধরা রিকশা নিলো। আবিদও রিকশা নিলো। দুটো আলাদা রিকশা সন্ধ্যার ঢাকার পথ ছাড়িয়ে এগিয়ে চলছে।
রিকশা চলছে তো চলছেই। ক্রিং ক্রিং ঝক ঝক। অধরা যে রিকশায় বসে আছে তার নাম কুলসুম পরিবহণ। জসিম আর সাবানার ছবি আঁকা। অনেকটা পথ এগিয়ে রিকশা থামলো। অধরা ঝুপ করে রিকশা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে করলো। আবিদ রিকশা থেকে নেমে দৌড়তে শুরু করলো। রিকশাওয়ালা আবিদের পিছে, আবিদ অধরার পিছে।
অধরা ফিরে তাকাতেই দেখে আবিদকে লুঙ্গি পড়া গামছাওয়ালা একজন লোক তাড়া করছে। ‘ঐ মামা ভাড়া না দিয়া পালাইয়া যান ক্যান! এত দূর আইছেন। সাইট ট্যাকা ভাড়া। ভাড়া দিয়া যান’।
দ্রুত শ্বাস নিতে নিতে আবিদ বলে, আমার কাছে বিশ টাকা আছে। মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছি। তোমার পিছু নিতে রিকশা নিয়েছি।
অধরা একশো টাকার নোট বের করে আবিদকে ধরিয়ে দিল।
চল্লিশ টাকা ফেরত দিতে হবেনা। আর আমার পিছুও লাগতে হবেনা। অধরা রাগ করলে আবিদ তার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। যেন এক মনোরম দৃশ্য।
এরকম রেগে থাকলে ফ্রেঞ্চ ভাষা মাথায় ঢুকবেনা। আর্ট এক্সিবিশন ও ভালো লাগবে না। এর থেকে ভালো রাস্তার কিনারায় বসি। বসবা?
-মামা ট্যাকা দ্যান। আমি যাই।
-তোমার টাকা ষাট টাকা না দিয়ে কি পালায় যামু মিয়া? তখন থেকে ঘ্যাণ ঘ্যাণ করতেছ!
-পালায়েই তো যাইতেছিলেন।
-বেশি কথা বলবা না। যাও এইখানে থেকে। এই নাও ভাড়া।
অধরা এতক্ষণে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখতেছে। আবিদ এক কাপ চা হাতে নিয়ে কালপুরুষ সন্ধান করে। বিসিএসটা এবার আর দেয়া হবেনা। একটা উপন্যাস অর্ধেক শেষ হইছে। কাহিনী প্যাচ খাইছে, আর আগাচ্ছে না। ভাবতে ভাবতে অধরা আবিদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
-এখানে কি বসা যায়? কি নোংরা!
-তোমার ফ্রেঞ্চ ল্যাংগুয়েজ?
-আজকে হাঁটতে ইচ্ছা করতেছে।
সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৪২