হৃদয়ঙ্গম...
লেখক: নিলয় আহসান নিশো
..
...
(১)
.
বিকেল ৫টা....
:ওই কুত্তা, তোর এতক্ষনে আসার সময় হইলো?
:আরে ঠিক সময়ই তো আসলাম...
:কুত্তা তুই আমার মুখে মুখে কথা বলিস, আমি বলছি তুই দেরী করে আসছিস মানে দেরি করে আসছিস....
:আরে এখন মাত্র ৫টা বাজে বিকেল ৫টা... বিকেল ৫টা দেরী হয় কেমনে?
:কুত্তা তোর জন্য আমার এই অবস্থা... আর তুই আমার সাথে এমন ব্যবহার করিস। আগে তো সব সময় আমার আগে পিছেই থাকতি সব সময়...সারাক্ষন ক্যাম্পাসে আমাকে ছাড়া তোর চলতোই না। এখন আমাকে দেবার মত সময়ই হয় না তোর।
:সময় দেবার জন্যই তো এত তাড়াতাড়ি আসলাম।
:হু বুঝছি এখন আমি মোটা হয়ে গেছি গ্লামার নষ্ট হয়ে গেছে তাই আমার দিকে তাকানোর সময় নাই।
:এখানে গ্লামারের কথা আসলো কেন?
:কুত্তা তুই যদি ছুটির দিনেও আমার কাছে সারাদিন না থাকতি তাহলে আমার এই অবস্থা হইতো? আমার এত স্লিম ফিগার টা তুই নষ্ট করে দিছিস।
:সব মেয়ের ই এমন হয়।তাতে নতুন কি?
:কুত্তা তুই আমার সাথে সব মেয়েত তুলনা করিস? তুই আমার গ্লামার নষ্ট করছিস।এখন এত বড় পেট নিয়ে আমার চলতে হয়।কুত্তা তুই ছুটির দিনেও আমার কাছে থাকতিস কেন?
:ছুটির দিনে তো সবাই বাড়ীতেই থাকে আমিও ছিলাম
:কুত্তা তুই শুধু বাড়িতে ছিলি? তুই আমারে অবলা পাইয়া আমার কি অবস্থা করছিস? আমার এত স্লিম ফিগার টা নষ্ট কইরা মুটকি বানাই দিছোস।এখন এত বড় পেট নিয়া আমি কারো সামনে লজ্জায় যাইতে পারিনা।
:এখানে লজ্জার কি আছে? মেয়ে মানুষ প্রেগন্যান্ট হলে পেট বড় হবেই।
:কুত্তারে আমার এই পেট বড় কে করছে? তুই করছিস আমি তোরে কত বিশ্বাস করতাম আর তুই আমার এই সর্বনাশ করলি কেন?
:আল্লাহ আমাকে বাঁচাও আমি কি সর্বনাশ করছি? এটাকে সর্বনাশ বলে?
:কুত্তা তোর পেট এত বড় হলে বুঝতি।আমার কষ্ট বুঝবি না।
যা আমার জন্য নাস্তা আইসক্রিম নিয়া আয় আইসক্রিম খামু
:৬মাস হয়ে গেছে এখন আইসক্রিম খাওয়া যাবে না
:কুত্তা তোরে আমি আজকে মাইরাই ফালামু, একে তো ছুটির দিনেও আমার কাছে থাইকা থাইকা আমার এই অবস্থা বানাইছোস আবার আমার পছন্দের আইসক্রিম ও খাইতে দিবি না?

আম্মায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া
:হইছে হইছে ২মিনিট আনতেছি।
..
...
কি ভাবছেন? কি হচ্ছে এখানে?
ডিজিটাল যুগ। তাই এগুলো এখন খুব ই সাধারন হয়ে গেছে।
তাই আমরাও খুব সাধারণ ভাবেই এসব মেনে নিতে শিখেতেছি।
ও হ্যা...
বলা হয়নি,
কথা হচ্ছিল নিলয় আর নিরুপমার।
নিরুপমা ৬মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আর তার গর্ভে আমাদের গর্দভ নিলয়ের বাবু।
বেপার টা একটু গোলমেলে।চলুন পরিষ্কার ভাবেই বলি।
..
...
নিলয় আর নিরুপমা সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী।
কিন্তু তারা সেই উচ্চ মাধ্যমিক থেকে গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত বন্ধু ছিল।
তাহলে তাদের বিয়ে টা হল কিভাবে? সেটা একটা বিরাট করুন কাহিনী নিলয়ের জীবনের আর সুখের কাহিনী নিরুপমার।
চলুন তাদের সেই গল্পটাই শুনে আসি।
...
...
(২)
..
...
: ওই কুত্তা গ্রাজুয়েশন তো শেষ হল।কি করবি এখন? জব করবি নাকি তোর বাপের ব্যবসা?(নিরুপমা)
.
:উত্তর টা দিবো তার আগে আমাকে এই কুত্তা বলা টা ছাড় কথায় কথায়। গ্রাজুয়েট হয়ে গেছি রে আমি এখন সেই পিচ্চি নিলয় নাই এখন।
.
:কিরে কুত্তা তুই গ্রাজুয়েট হইছস বইলা তোরে স্যার স্যার বলতে হবে?
যা আমারে আইসক্রিম খাওয়া, আর হ্যা আমি মইরা যাওয়ার আগেও তোরে কুত্তাই বলমু।
.
:তুই কুত্তা বলিস ঠিক আছে কিন্তু তোর কাছে শুনে তোর অন্য বান্ধবী রাও আমাকে কুত্তা বলেই ডাকে।
.
:ওই কুত্তা তোরে শুধু আমি কুত্তা ডাকমু আর কেউ বললে জবাই করমু কুত্তি গুলারে।তুই আমারে এখন আইসক্রিম খাওয়া।আম্মু তাড়াতাড়ি বাসায় যাইতে বলছে।
.
:আচ্ছা আনতেছি।
.
:যা, চকলেট কোন নিয়ে আসিস।
.
:তোর বাপে আমারে টাকা দেয়, চকলেট কোন খাইবো? শখ
.
:অন্য টা খামু না..
.
:নে ধর... তুই কেন বুঝিস না আমি জব করি না।বাপের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা লাগে।তাই টিউশনি করাই চলি।কিন্তু আমার সব টিউশনির টাকা তো তোর আইসক্রিম কিনতেই চলে যায়।
.
:কুত্তা তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড রে একটা আইসক্রিম খাওয়াচ্ছিস সেটার আবার খোটা দিস? কেন তোর কত হোমওয়ার্ক কইরা দিছি, প্রাক্টিক্যাল করাই নিছোস মনে নাই?
.
:আচ্ছা হইছে খাইয়া নে। চল তোরে বাসায় দিয়া আমি বাসায় যামু।
.
:গ্রাজুয়েশন তো শেষ এখন আর বের হওয়া হবে না বাসা থেকে।মাঝে মাঝে বাসায় আসিস।
.
:তোর বাসায় গেলে তুই আমারে দিয়া কাম করাস আর আইসক্রিম খাওয়াইতে হয় তোরে যামু না বইন।
.
:যা কুত্তা তোর আইতে হইবো না।এমনে কইছি।
.
তারপর রিকশা নিয়ে নিরুপমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে আসে নিলয়।
উচ্চ মাধ্যমিক থেকে নিলয় নিরুপমা অনেক ভাল বন্ধু।তাই তাদের বাসায় যাওয়া আসাও আছে। এখন গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেললো দুজনেই।নিলয়ের একটাই বেস্ট ফ্রেন্ড এই নিরুপমা।
নিরুপমার ও এই বেস্ট ফ্রেন্ড নিলয়।
তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বাইরে কখনো কিছুই ছিল না।
না নিলয়ের দিক থেকে না নিরুপমার দিক থেকে।
..
...
(৩)
..
...
মাস খানেক পরে.....
:মা নিরুপমা, বলছিলাম গ্রাজুয়েশন তো হল, একটা ভাল ছেলের সম্বন্ধ আনছে তোর মামা। তোর আব্বু তোর মতামত জানতে চাইছে।(নিরুপমার আম্মু)
.
:আম্মু কেবল তো গ্রাজুয়েশন টা শেষ হল কিছুদিন বিশ্রাম নেই।
.
:মা রে বিয়ে তো আর বললেই হয়ে যায় না অনেক দিন লাগে।তোর কোন পছন্দ থাকলে আমাদের বল, আর না থাকলে এই ছেলেটাকে দেখ, তোর ভাল লাগলে আমরা সব ঠিক করে রাখবো যখন তুই চাইবি তখনি বিয়ে টা হবে। আর ছেলে তোর ভাল না লাগলে বাদ দিয়ে দিবো।তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে।তোর ইচ্ছার বাইরে আমরা কিছুই করবো না রে মা।
.
:আচ্ছা হইছে হইছে ব্লাকমেইল করতে হবে না।তোমরা যা ভাল বুঝো করো।কিন্তু তাড়াহুড়া করে আমাকে বিদায় করতে চাইলে কিন্তু বিয়ে করবো না।
.
:এই তো আমার লক্ষি মেয়ে।তাহলে এই শুক্রবারে তোর মামাকে ওই ছেলেদের নিয়ে আসতে বলি। কথা বার্তা বল,
.
:আম্মু আমি এখন ঘুমাবো তোমাদের যা খুশি কর।
..
...
পরের শুক্রবার...
নিরুপমার মামা ছেলেপক্ষের মা বাবা আর ছেলে কে নিয়ে নিরুপমাদের বাসায় আসছে নিরুপমাকে দেখতে।
নিরুপমার যেমন রুপ, তেমনি গুন উচ্চ শিক্ষিত সাথে সব ধরনের গুনে গুণান্বিতা। নিরুপমা কে যে কারো এক দেখাতেই পছন্দ হবেই।
তাই দেখা সাক্ষাত হবার পর তাদের নিরুপমাকে অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে বলে জানায়।
.
তারা অতিশীর্ঘই এমন লক্ষি মেয়ে কে নিজেদের ঘরে তুলে নিতে চায়।
নিরুপমার আব্বু বলে, তারা সবাই মিলে বসে ভেবে চিনতে একটা শুভ দিন দেখে ছেলে পক্ষ কে জানিয়ে দিবে।
..
...
নিরুপমার আম্মুর ও ছেলেটিকে বেশ পছন্দ হয়ে যায়, যেমন দেখতে তেমনি সরকারী চাকরি করে।নিরুপমার পাশে অনেক মানাবে।
নিরুপমা কে তার আম্মু ডেকে বলে মা তোর কি ছেলে পছন্দ হয়েছে?
আম্মু এক দেখায় কেমনে বলি? আর তাছাড়াও ছেলের বলা সব তথ্য সঠিক কিনা ছেলে কেমন সেটা একবার দেখে কিভাবে বলি?
খোজ খবর নাও আগে ভাল করে।
তখন নিরুপমার আম্মু বলে তোর মামা সব ভাল করেই খোজ নিয়েছে রে মা।
নিরুপমা বলে তবুও মা। আচ্ছা দাড়াও নিলয় কে দিয়ে একটা খোজ নেয়াই।এটা ঠিক বলছিস মা। ছেলেটাকে ডেকে পাঠা আমি কথা বলবো ওর সাথে।
..
...
:কিরে কুত্তা তোরে এতবার কল দিলেও রিসিভ করিস না কেন?
: বাথরুমে ছিলাম রে কুত্তি।
:আম্মু তোকে বাসায় আসতে বলছে আজকে বিকেলে একটু।
:আন্টি বলছে আসতে?
: হ্যা।
:আচ্ছা ঠিক আছে আসবো বিকেলে।
:কুত্তা আমার জন্য একটা চকলেট কোন নিয়ে আসিস, কতদিন ক্যাম্পাস এ যাই নাই আর তুই ও আইসক্রিম খাওয়াস নাই।
:কুত্তি তুই আইসক্রিম এর খাওয়ার জন্য আন্টির কথা বলে ডাকছিস?
: কুত্তা আম্মু ই আসতে বলছে।এই নে আম্মুর সাথে কথা বল..
..
:আস সালামু আলাইকুম আন্টি...
: বাবা নিলয় তুমি একটু বিকেল বেলা এসো তো আমাদের বাসায়। এখন তো আমাদের বাসায় আর আসোই না।
: না আন্টি আসলে, গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটু বিশ্রাম করছিলাম
: আচ্ছা বাবা বিকেলে একটু এসো কিছু দরকারি কথা আছে।
:আচ্ছা আন্টি আসবো।
..
...
(৪)
..
...
:আস সালামু আলাইকুম আন্টি।
: বাবা নিলয় আসছো? বস আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসতেছি।
মা নিরুপমা নিলয় আসছে।
:কিরে কুত্তা আইসক্রিম কই আমার?
:আনতে ভুলে গেছি, অন্য দিন খাস...
:অমনি কলার টা চেপে ধরে কুত্তা এক মাস ধরে আইসক্রিম খাওয়াস নাই এখন বলস আনোস নাই?
: আনছি আনছি এই নে, বলেই লুকিয়ে রাখা আইসক্রিম টা নিরুপমার হাতে দিলাম।
:এই তো ভদ্র ছেলে,
:আন্টি কেন ডাকছে রে?
:আম্মুকেই জিজ্ঞেস কর।
..
:বাবা নিলয়, তুমি তো আমাদের বাড়ির মানুষের মতই।তাই তোমাকেই বিশ্বাস করা যায়।
: আন্টি কিছু হয়েছে?
:না বাবা তেমন কিছু না। এই ছবি টা নাও এই ছেলেটার বাড়ি থেকে নিরুপমার জন্য সম্বন্ধ এসেছে। তুমি একটু ভাল করে খোজ খবর নিয়ে দেখো তো বাবা ছেলেটার পরিবার কেমন আর ছেলেটার কোন বাজে অভ্যাস আছে কিনা।হাজার হোক আমাদের একটা মাত্র মেয়ে।
: আচ্ছা আন্টি আমি ভাল করে খোজ নিয়ে এসে জানাবো।
..
...
কয়েকদিন পর....
নিলয় নিরুপমা দের বাসায় বসে আছে সোফায়।
সামনে নিরুপমার আম্মু আর আব্বু...

:কেমন খোজ খবর নিলে বাবা?
:আন্টি ছেলে মোটামুটি ভাল কিন্তু একটা বাজে অভ্যাস আছে সেটা হল ছেলেটা অনেক জুয়া খেলে। আর বাজে যায়গায় যাওয়ার অভ্যাস আছে।আর পরিবার ঠিক ই আছে কিন্তু ছেলের মা ২টা।মানে তার আব্বুর ২টা বিয়ে।
.
:কি বলো এসব?
.
:জি আন্টি, আপনি চাইলে মামা কে(নিরুপমার মামাকে নিলয় ও মামা ডাকে) ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন।
ঐ ছেলের পাশের বাসাতেই আমার খালার বাসা আমার খালু সাহেব নিজেই সব কিছুই আমাকে বলেছেন আর আমি নিজেই গিয়েছিলাম ওখানে....
.
নিরুপমার আম্মু নিরুপমাকে ডেকে নিলয়ের সাথে গল্প করতে বলে নিরুপমার আব্বু কে পাশের রুমে ডেকে নিল।
.
:এই রকম ঘরে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিবো না নিরুপমার আব্বু
.
:এই বয়সে একটু আধটু এমন হয় ছেলেরা।পরে ঠিক হয়ে যাবে।

:যদি না হয়? তার উপর ছেলের বাপের ২টা বিয়ে। শুনছো, বললাম ছেলে হিসেবে কিন্তু নিলয় ও ভালই। আমাদের অনেক দিনের চেনা জানা, ওদের পরিবার ও ভালই কাছেই থাকে আর আর্থিক অবস্থা ও ভালই। সব থেকে বড় কথা মেয়েটার সাথে ওর বোঝাপড়া ভালই আর ওর সাথে বিয়ে হলে মেয়ে টা চোখের সামনেই থাকবে আমাদের।আমার একটা মাত্র মেয়ে দূরে কোথাও বিয়ে দিয়ে আমি থাকতে পারবো না।
.
: কিন্তু তোমার মেয়ে কি রাজি হবে? ওর বন্ধুর মতই তো।
.
:আরে মেয়ে মানুষ তার কথায় উঠবে বসবে এমন শিক্ষিত নম্র ভদ্র অল্পভাষী ছেলেকেই জামাই হিসেবে চায়।তাইই এখন ঠিক না হলেও আমাদের মেয়ে মেনে নিবে মনে হচ্ছে।
.
:তোমার মেয়ের সাথে কথা বলে যা খুশি করো।কিন্তু আমার মেয়ে যেন কখনো কষ্ট না পায় নিরুপমার মা।মনে রেখো।
.
: আমি বুঝি আমাদের মেয়ে রাজি হবে। তবুও আমি জিজ্ঞেস করে নিবো।
..
:বাবা নিলয় তুমি তোমার আব্বু আম্মু কে একদিন সময় করে আমাদের বাসায় আসতে বইলো তো। কত দিন ভাইসাহেব রা বেড়াতেও আসেন না।

:আসলে আন্টি আব্বু ব্যবসা নিয়েই একটু ব্যস্ত থাকেন। আচ্ছা আমি বলবো।
:তুমি খাওয়া দাওয়া করে যাইও বাবা।
..
...
রাতে নিরুপমার ঘরে,
:মা নিরুপমা। একটা কথা বলি?
:তোমার কিচ্ছু বলতে হবে না।তোমরা একটা জুয়াচোর এর সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছিলা। ভাগ্যিস নিলয় ছিল।তাই রক্ষা পেলাম।
নিলয় টা না থাকলে আমার যে কি হত?
.
:নিলয় কে এত ভরসা যখন তখন নিলয় কে বিয়ে করলেই পারিস।
.
:দরকার হলে গাধা টাকেই বিয়ে করবো।তবু তোমাদের সরকারী চাকুরিওয়ালা জুয়াচোর, লুচ্চা রে বিয়ে করতে পারবো না
.
:আমি তোর আব্বু কে বলে দিচ্ছি তুই নিলয় কে বিয়ে করতে চাস..
.
:যাও যাও বল বল।তোমাদের লুচ্চার থেকে নিলয় অনেক ভাল আছে।
.
নিরুপমার আম্মু মুচকি হাসতে হাসতে হাসতে নিরুপমার ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে নিরুপমার সাথে কি কথা হল সেটা নিরুপমার আব্বু কে বলে
তিনি মহাখুশি।
.
নিরুপমা ভাবছে, আল্লাহ এটা কি বললাম? এইই গাধা টারে কেমনে বিয়ে করবো আমি? এইটারে নিয়া সংসার করা যায় নাকি?
..
কয়েকদিন পরে...
নিরুপমাদের বাসায় নিলয়ের আব্বু আম্মু,

:আসলে ভাই সাহেব বলছিলাম আমাদের মেয়ে আর আপনার ছেলের যদি.....
:থাক থাক ভাবি বলতে হবে না।
.
:আমি নিজেই আসলে নিরুপমা মা কে আমার গাধা টার জন্য চাই। ব্যবসায় ব্যস্ত থাকার জন্য কথা টা বলতে আসতেই পারি নাই।
আপনাদের আপত্তি না থাকলে আপনাদের মেয়ে টাকে আমাকে দিবেন ভাবি?
.
:দিয়ে দিলাম বেয়াই সাহেব(নিরুপমার আব্বু...)
..
...
(৫)
..
...
মহা ধুম ধামের মাধ্যমে বিয়ে টা হয়ে গেল....
রাত ১টায় বাসর ঘরে ঢুকলো নিলয়....
:ওই কুত্তা তুই এতক্ষন কই ছিলি রে? তোর ঘরে ফ্রিজে আইসক্রিম নাই কেন?
:শোন তুই এইটা কি করলি? তুই আমাকে কেন ফাসালি?
: চুপ কুত্তা আমি কি তোকে বিয়ে করতে চাইছি নাকি? আমি কইছি ওই লুচ্চার থেকে তোর মত গাধাকেই বিয়ে করা ভাল।
: আচ্ছা হইছে এখন বিয়ে টা হইছে তো কুত্তা বলা টা বন্ধ কর।আর তুই তুকারি করিস না আমি তোর স্বামী এখন।
:ওই কুত্তা, তুই তো আরো বড় লুচ্চা রে।বিয়ে হইতে না হইতেই স্বামিত্ব দেখাস।আমি তোরে কুত্তাই কমু, আর তুই তুকারি ইই করমু।
আর ভুলেও এদিক আসবি না সোফায় ঘুমা গিয়া।
: আজ আমাদের বাসর রাত নিরুপমা।
:তোহ? ওই লুচ্চা আমার দিকে কুনজর দিলে তোর চোখ উঠাই নিমু।
কত সুন্দর করে সাজসি আমার সাজ নষ্ট করমু তোর জন্য?
: আচ্ছা থাক তুই কুত্তি।
: ওই কুত্তা নতুন বউরে কেউ তুই তুকারি করে?? তুমি করে বলবি আমাকে তুই।
..
...
নিলয় বেচারা বুঝতেছে তার বাকি জীবন টা তেজপাতা হয়ে যাবে।
পরের মাসে নিলয়ের একটা সরকারি ব্যাংকে চাকরি হয়ে যায়।
নিলয় কে নিরুপমা তুই তুকারি এ করে আর নিলয় নিরুপমাকে তুমি করে বলে এখন।
কিন্তু ওখনো নিরুপমার বিছানায় নিলয়ের যায়গা হয়নাই।
নিরুপমার লজিক... তুই কেমন ছেলে রে একটা মেয়ের সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে চাস লজ্জা নাই তোর?
..
...
এভাবেই কাটে ২মাস....
সন্ধ্যা বেলা নিলয় অফিস থেকে আসে। আকাশ মেঘলা কিন্তু বৃষ্টি নেই।বাসায় শুধু নিরুপমা। আব্বু আম্মু কয়েক দিনের জন্য গ্রামে একটা কাজে গেছে সকালে।
নিরুপমা বললো, নিলয় আমার জন্য একটা চকলেট আইসক্রিম নিয়ে আসবি? অনেক খেতে ইচ্ছে করছে ছাদে বসে। মনে হয় বৃষ্টি আসবে।বৃষ্টির সময় আমার আইসক্রিম লাগে তুই তো জানিস।
নিরুপমা বাবুনি, আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেই?
তুই এখন অজুহাত দিচ্ছিস আমাকে? তোর বাসায় সারাদিন কাজ করার জন্য কাজের বেটি আনছোস আমারে?
আমার শখ আহ্লাদ সব শেষ।
হইছে বাবুনি আনতেছি।
এই তো লক্ষি ছেলে।তুই আইসক্রিম নিয়ে আয় আমি তোর কফি বানিয়ে ছাদে যাচ্ছি।
..
...
নিলয় আইসক্রিম এনে ছাদে এসে দেখে নিরুপমা রেলিঙ এ হেলে ঠান্ডা বাতাসে চুল উড়াচ্ছে...
নিলয় নিরুপমার পাশে যেতে নিরুপমার চুল নিলয়ের মুখের উপর উড়ে আসে নিলয় বুক ভরে নিরুপমার চুলের ঘ্রান নেয়।
তারপর নিরুপমার হাতে আইসক্রিম টা দেয় আর নিরুপমা কফি টা একটা চুমুক দিয়ে নিলয়ের হাতে দেয়।
নিলয় আর নিরুপমা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে অনেক্ষন।অনেক সুন্দর ঠান্ডা বাতাস। হটাত গুড়িগুড়ি ২-১ফোটা বৃষ্টি পড়তে লাগলো।নিরুপমা আরো আনমনা হয়ে যায়।
..
নিলয় বললো বৃষ্টি হবে মনে হয় বাবুনি... চল রুমে,
যাবো না। তুই ও থাক। বৃষ্টি তে ভিজবো।
নিলয় অগত্যা ভিজতে লাগলো।নিলয় হটাত লক্ষ্য করলো নিরুপমা একটা নীল শাড়ি পড়েছে।আর বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে নিরুপমা কে স্বর্গের পরীর মত লাগছে। আসলেই নিরুপমা অনেক সুন্দরি সাথে ভেজা শাড়িতে নিরুপমাকে সিক্ত নীলাম্বরী লাগছে।
..
হঠাত খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।আর অনেক জোরে বাজ পরে।নিরুপমা ভয় পেয়ে অনেক জোরে নিলয় কে জরিয়ে ধরে।
নিলয়কে এত শক্ত করে বুকে চেপে ধরে যেন ছাড়তেই চায় না। অনেক্ষন এভাবেই নিলয় কে জড়িয়ে ধরে থাকে নিরুপমা।বৃষ্টি বাড়তেই থাকে।নিরুপমা নিলয়কে ছাড়ে না। হঠাত নিরুপমা মাথা তুলে নিলয়ের চোখের দিকে তাকায়।
তারপর আস্তে করে নিলয়ের ঠোট গুলো কে নিজের ঠোটের মধ্যে নিয়ে নেয়। নিলয়কে পাগলের মত চুমু দিতে থাকে।
নিলয় নিরুপমাকে কোলে তুলে নিয়ে নিরুপমার কপালেলে একটা চুমু দেয় আর নিচে নিয়ে যায়।তখনো নিরুপমা নিলয় কে বুকে জড়িয়েই ধরে থাকে..
..
...
পরেরদিন ছিল শুক্রবার
সকাল ১০টায় ঘুম ভাঙে নিরুপমার....
উঠে দেখে নিলয় নাস্তা রেডি করে বসে আছে নিরুপমার ঘুম ভাঙার।
নিরুপমা নিলয়কে দেখে লজ্জা পেয়ে যায়। আর দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।শাওয়ার নিয়ে ভেজা চুলে নিলয়ের সাথে নাস্তায় বসে যায়।
নিলয়ের দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছিল অনেক নিরুপমা।
নিলয় আসতে করে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে একটা ব্রেড এ মাখন লাগিয়ে নিরুপমার মুখের সামনে ধরে।নিরুপমা ব্রেড টা কামড় ধরে রাখে আর নিলয় বাকিটা কামরে ধরে।
নিরুপমা ব্রেড টা ছেড়ে দিয়ে নিলয়ের ঠোটে কামর বসিয়ে দিয়ে নিলয় কে জরিয়ে ধরে লজ্জায় নিলয়ের বুকে মুখ লুকায়।নিলয় নিরুপমার কপালে একটা চুমু দিয়ে নিরুপমাকে কোলে তুলে বেডরুমে নিয়ে যায়....
এভাবেই শুরু হয় নিলয় নিরুপমার সংসাররের.....
নিরুপমার কিন্তু নিলয় কে তুই তুকারি করা আর কথায় কথায় কুত্তা বলা ছাড়ে নাই।
..
...
কেটে যায় আরো ৮মাস....
নিরুপমা ৬মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায়। ডাক্তার এর কাছে চেক আপ করালে ডাক্তার বলে। প্রথম বাচ্চা, এই সময় মেয়েদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে সব সময়।তাই অযথাই রাগারাগি করতে পারে।
তাই চেষ্টা করবেন যাতে কম রাগারাগি করে।
আর সবসময় হাসি খুশি রাখবেন।
..
...
(৬)
..
...
নিলয় আইসক্রিম এনে দেয়... আর নিরুপমা রাগ থামিয়ে মজা করে আইসক্রিম খায় আর নিলয় কে বলে।

:নিলয় তুই জানিস তোর হাতের আইসক্রিম এ জাদু আছে।আমি অনেক আইসক্রিম খাইছি কিন্তু তোর টাকার আইসক্রিম সব থেকে বেশি মজার।
:বলছে তোমারে? এই আইসক্রিম কি আমি বানাই?
:তুই না বানালেও। তুই আনলেই অনেক মজা লাগে। আচ্ছা নিলয় তোর কি লাগবে?
: আমার কি লাগবে মানে কি?
:কুত্তা ঢং করস আমার লগে? এত্ত বড় পেট টা দেখিস না? কি বানাইসিস এটা? তুই আমার গ্লামার টা নষ্ট করে দিছিস। এমনে এমনে তো করিস নাই। বল তোর ছেলে বাবু লাগবে নাকি মেয়ে?
:আল্লাহ যা দিবে তাতেই খুশি আমি।
:কুত্তা পন্ডিতি কম কর।যেকোন একটা বল।
:আম্মু বলে প্রথম বাচ্চা মেয়ে ভাল।তাই আমার নিলিমা চাই....
:তাইলে আমার ছেলে হইবো... আমার জুনিয়র নীল... আমার ছেলে।
:তুমি না এখনি বললা আমার কি চাই? আমার তো মেয়ে চাই।
:এজন্যই তো আমার ছেলে লাগবে। তুই আমার এই অবস্থা করছিস। তাই এটা তোর শাস্তি।এজন্যই তোর কাছে জানতে চাইছি।যাতে তোর উলটো টা চাইতে পারি।
..
...
:তুই ভাল হবি না রে কুত্তি...
:তুমি...তুমি বল তুমি... বউ এর সাথে তুই তুকারি? তোর জন্য এত কষ্ট করতেছি এত বড় পেট নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। কত কষ্ট জানোস? রেস্পেক্ট চাই...
:অকে বাবুনি I LOVE U... ঊম্মাহ... আমি ফ্রেস হয়ে আম্মুর কাছে নাস্তা নিয়ে আসতেছি...
..
...
নিলয় ফ্রেশ হয়ে কিছু ফল কেটে নিয়ে নিরুপমার কাছে আসে।
বলে,
:নাও বাবুনি খাও এগুলো।
:না খাবো না..
:কেন?
:আমাকে কোলে নাও তোর...
কোলে নিয়ে খাইয়ে দিলে খাবো...
:নিলয় নিরুপমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আস্তে করে নিরুপমাকে কোলে নিয়ে আপেল গুলো খাইয়ে দিতে থাকে...
.
নিরুপমা বলে,
নিলয় তুই জানিস? তুই কত ভাল একটা ছেলে, কত ভাল একটা স্বামী কত টা ভাগ্যবতী আমি তুই বুঝবি না।কত টা ভাগ্যবতী হলে তোর মত একটা স্বামী পাওয়া যায় জানিনা।নিলয় আমি তোকে অনেক ভালবেসে ফেলছি রে।বলেই নিলয়ের কপালে একটা চুমু দেয়।
নিলয় আমার কপালে এত সুখ ছিল আমি জানতাম নারে।
তুই আমার হিরো, আমার সুপার হিরো তুই।
নিলয় আসতে করে নিরুপমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে আমিও তোমাকে অনেক ভাল বাসি নিরুপমা... তোমার মত লক্ষি একটা মেয়ে কে পেতে সাত জন্মের পুন্য লাগে।তুমি আমার উপমাহীন নিরুপমা...
...
...
(৭)
..
...
নিরুপমার তখন ৭মাস চলছিল....
হঠাত একদিন মাথা ঘুরে পড়ে যায়।
আম্মু চেক আপ করাতে নিয়ে যায়।ডাক্তার চেক আপ করে নিরুপমা আর আম্মু কে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।আর রাতে আমাকে গিয়ে রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলে।
আমি রিপোর্ট নিতে গেলে ডাক্তার যা বলে সেটা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না...
নিরুপমার ব্লাড ক্যান্সার... বড় জোর ৬মাস বাঁঁচবে নিরুপমা।
আমি ডাক্তার কে বলি ডাক্তার সাহেব যেভাবে পারেন আমার নিরুপমা কে সুস্থ করেন।
ডাক্তার সাহেব বলেন, শান্ত হোন নিলয় সাহেব আমরা আমাদের যথা সাধ্য চেষ্টা করবো। আপনারা তার যন্ত নিন।
উনার ডেলিভারি হবার পর আপনা রা উনাকে সিঙাপুর এ নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেন।
উনার ডেলিভারিরর আর ২মাস বাকি আছে। আপনি উনাকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করে নিন এখনি।তাতে আমরা ২৪ঘন্টা অব্জার্ভেশন এ রাখতে পারবো উনাকে।
আমি ডাক্তার এর চেম্বার থেকে রিপোর্ট নিয়ে সোজা নিরুপমার আব্বু আম্মুর কাছে যাই।উনারা আমাকে কি বলে শান্তনা দিবেন বুঝতে পারছিলেন না।
.
পরের দিন সবাইকে নিয়ে নিরুপমাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই।
আমি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে দিন রাত নিরুপমার কাছে পড়ে থাকি।
নিরুপমা দিন দিন শুকাই যেতে লাগলো।
একটা কেমো দেবার পর নিরুপমার চুল সব পড়ে গেল।
ডাক্তার যা বলেছিলেন তার থেকে দ্রুত নিরুপমার অবস্থার অবনতি হতে লাগলো।
..
...
৮মাস ২৩দিনের মাথায় নিরুপমার লেবার পেইন শুরু হয়ে যায়।নিরুপমার দুর্বল শরির এত ব্যথা নিতে পাচ্ছিল না।
নিরুপমা আমার দিকে তাকাই দাতে দাত চেপে ধরে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করছিল।
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম... নিরুপমা তখন হেঁসে ফেলেছিল আর বলছিল... কিরে কুত্তা তোর পেট এ বাচ্চা নাকি আমার পেটে?
কুত্তা আইসক্রিম খাওয়া আমাকে।
আমি আইসক্রিম এনে খাওয়াচ্ছিলাম নিরুপমাকে।
এমন সময় আম্মু আম্মু আর নিরুপমার আব্বু আম্মু সবাই নিরুপমার বেড এর পাশে।
ডাক্তার সাহেব এসে বললেন রোগীর যা অবস্থা তাতে নরমাল ডেলিভারি অনেক রিস্কি হয়ে যাবে রোগীর জন্য।
তাই আপনারা রাজি থাকলে সিজারিয়ান অপারেশন করে ডেলিভারি করাতে হবে।
..
...
সবাই রাজি হলেও নিরুপমা রাজি না।কারন অপারেশন থিয়েটারে তো শুধু ডাক্তার রা থাকবে... যদি অপারেশন থিয়েটারে আমাকে নিরুপমার হাত ধরে থাকতে দেয় তবেই নিরুপমা সিজার করবে।
আর হ্যা নিরুপমা কে অজ্ঞান করা যাবে না।দরকার হলে এনেস্থিসিয়া ইঞ্জেক্ট করে অপারেশন করতে হবে।
.
উপায় না দেখে ডাক্তার রাজি হয়ে যায়।
..
...
রাত ১০টা নাগাদ নিরুপমাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়।সাথে আমিও।নিরুপমা শক্ত করে আমার হাত টা ধরে ছিল পুরো টা সময়....
অপারেশন শেষ হয়... আমাদের ফুটফুটে একটা ছেলে হয়।
নিরুপমা অনেক খুশি হয়...
আমাকে বলে, কিরে কুত্তা বলেছিলাম না আমাদের জুনিয়র নীল হবে.... আমি তখন আমাদের জুনিয়র নীল কে নিরুপমার কোলে দিয়ে সবাইকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছিলাম।
.
পরের দিন ডাক্তার এর সাথে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব নিরুপমাকে সিঙাপুর নেবার কথা....
নিরুপমা কে রাতেই কেবিনে দেয়া হয়...
আমি নিরুপমার মাথার কাছে বসে ছিলাম আর নিরুপমা ঘুমাচ্ছে...
বাবু কাদলে আম্মু এসে বাবু কে কোলে নেয়...
.
হঠাত ভোর রাতে নিরুপমা প্রচন্ড খিচুনি দিতে শুরু করে।আমার হাত খামছে ধরে রাখে আর বলে নিলয় আমার হাত টা ছাড়িস না।
আমি চিৎকার করে উঠি ভয়ে।
আমার আব্বু আর আম্র স্বশ্বুর সাহেব ডাক্তার কে ডাকতে যায়।
ডাক্তার সাহেব এসে পালস মাপতে মাপতেই নিরুপমা শান্ত হয়ে নিথর হয়ে যায়....
আমি ডাক্তার এর দিকে তাকাতেই ডাক্তার বলে

"সরি"

আমি চিৎকার করে পাগলের মত কাঁদতে শুরু করি আমার নিরুপমাকে জরিয়ে ধরে...
তারপর কিছু মনে পড়ে না.......
.
.
আমি যখন বেড থেকে উঠি তখন দেখি একটা বাচ্চা ছেলে আমার বুকের উপর শুয়ে আমার গালে মুখে চুমু দিচ্ছে।
আমি উঠতেই ছেলেটা নেমে দৌড় দিয়ে আমার আম্মু কে নিয়ে আসে।
দাদি দাদি দেখো আব্বুর ঘুম ভাংছে....

আমার মা আমাকে বুকে জড়াই ধরে কাঁদছিলেন....
আমি বললাম মা নিরুপমা কই?
আমি নিরুপমাকে দাফন করবো না আমার কাছে রাখবো...
তখন আম্মু ছোট্ট ছেলে টাকে আমার কোলে দিয়ে বলে এই নে তোর ছেলে নীল....
ওর বয়স ৩বছর ৪মাস...
তুই সাড়ে তিন বছর ধরে কোমায় আছিস...
আর তোর ছেলে প্রতিদিন তোর বুকে উঠে তোর ঘুম ভাঙাতে চায়...
.
দাদু ভাই তোমার আব্বু কে আম্মু কাছে নিয়ে যাও বলেই আম্মু আচলে মুখ লুকিয়ে কাদতে কাদতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আর ছোট্ট নীল আমার আঙুল ধরে টানতে টানতে উঠোনে একটা নতুন শ্বেতপাথরে বাধাণো কবরের কাছে নিয়ে বলে আব্বু দেখো আম্মু ঘুমায়...
তুমিও আমাকে কোলে নাও না আম্মুও নেয় না....
দাদী শুধু কাঁদে..
আমাকে কোলে নাও.......
আমি তখন আমার নীল কে বুকে জরিয়ে ধরলাম...
এখন থেকে নিবো বাবা... আমার নীল.. আমাদের নীল...
নিরুপমা.. আমি তোমার নীল অনেক বড় করবো...
তখনি জুনিয়র নীল আমার কানে কানে বললো,

"আব্বু আমি চকলেট কোন আইসক্রিম খাবো"
আমি নীল এর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম এত্ত গুলা খাবা...
আমার নীল খাবে.....
.